Tuesday, May 4, 2021

শ্রাদ্ধ বিষয়ে শাস্ত্রীয় আলোচনা,

 শ্রাদ্ধকর্ম কি বিষয়ে শাস্ত্রে কি উল্লেখ  আছে, আসুন দেখে নেই,


পবিত্র গীতায় বলা হয়েছে, 

"সঙ্করো নরকায়ৈব কুলঘ্নানাং কুলস্য চ ।

পতন্তি পিতরো হ্যেষাং লুপ্তপিণ্ডোদকক্রিয়াঃ ।"

অন্বয়ঃকুলস্য সঙ্কর ( কুলের মিশ্রণ) কুলঘ্নানাং চ নরকায় ( কুলনাশকদের নরকের জন্যই)  চ এষাম্ ( এবং এদের) পিতরো হি (পিতৃপুরুষগণও) লুপ্তপিণ্ড + উদকক্রিয়া (পিণ্ডদান ও তর্পণ লুপ্ত হওয়ায়) পতন্তি ( পতিত হন)

সরলার্থ হলো, "যদি কুলের মিশ্রণ ঘটে, কুলনাশকগণ নরকবাসী হন এবং পিণ্ডদান ( শ্রাদ্ধ) ও তর্পণ ক্রিয়া লুপ্ত হওয়ায় তাঁদের পিতৃপুরুষগণও নরকে গমন করেন ।" উক্ত শ্লোকে বুঝানো হয়েছে, বৈধ সন্তানের অভাবে পিতৃপুরুষদের পিণ্ডদানের বা শ্রাদ্ধের অভাব ঘটে ।তাহলে গীতায় পিণ্ডদান তথা শ্রাদ্ধ ক্রিয়ার কথা পরিষ্কার উল্লেখ আছে ।

তাহলে, উপরোক্ত ব্যক্তির ভাষায় শ্রাদ্ধ ক্রিয়া ব্রাহ্মণ্য ধান্দাবাজি হলে তো কোনোদিন তা ভগবান কৃষ্ণের ধান্দাবাজি বলতে ও তার  মুখে  আটকাবে না।এমন বললে কি তাকে সনাতনী বলা যাবে? 

তাছাড়া পবিত্র বেদে বলা হয়েছে, "যাদের যথাবিধি ঊর্ধদৈহিক কার্য হয়েছে এবং যাদের তা হয়নি সে পিতৃগণ স্বর্গের মধ্যে স্বকর্মোচিত অন্নে সুখ লাভ করে।স্বরাট যম তাদের প্রার্থনা অনুযায়ী প্রাণযুক্ত মনুষ্য শরীর প্রদান করেন ( ( ১৯|৬০)।" সুতরাং দেখা যায়, বেদেও ঊর্ধদৈহিক ক্রিয়া তথা শ্রাদ্ধ ক্রিয়ার কথা উল্লেখ আছে ।সুতরাং বেদের ভাষ্য মানলে তো শ্রাদ্ধবিরোধীরা বলবেন ' শ্রাদ্ধকর্ম পরমেশ্বরের ধান্দাবাজি '।তা বলা কি ধর্মোচিত হবে? 



তাছাড়া শ্রাদ্ধ ক্রিয়া ব্রাহ্মণদের ধান্দাবাজি হলে ব্রাহ্মণগণ শ্রাদ্ধ ক্রিয়া করতেন না।ব্রাহ্মণদের শ্রাদ্ধ ক্রিয়া না করার নিদর্শন কি উনি বা উনার অনুসারীরা দেখাতে পারবেন? 

আমি নিজে একজন ব্রাহ্মণ সন্তান এবং পৌরহিত্য ও মাঝে মাঝে করি।আমরা গত ৪ফাল্গুন, ১৭,ফেব্রুয়ারি আমাদের প্রয়াত মাতৃদেবীর স্বর্গ কামনায় ষোড়শ ও আদ্যৈকোদিষ্ট শ্রাদ্ধ ক্রিয়া করেছি।আমরা তিন ভাই ।অন্য দুইভাই হাইস্কুল শিক্ষক ।আমি নিজেও নামে মাত্র পণ্ডিত ।আমরা তিন ভাই মিলে যথাসাধ্য দানাদি কর্ম করেছি।অনেক যজমান আমাদের দান দ্রব্য দেখে অবাক হয়েছে ।কারণ, আমরা যজমানদের ক্ষেত্রে অনেক ত্যাগ স্বীকার করি।আমাদের মায়ের জন্য বৃষোৎসর্গ করার ইচ্ছা ছিলো ।বিভিন্ন কারণে করতে পারিনি ।শ্রাদ্ধকর্ম যদি ব্রাহ্মণদের ব্যবসা মনে করতাম তাহলে তো আমরা শ্রাদ্ধ ক্রিয়া ও দানাদি কর্ম করতাম না।

আমি প্রায় ২০বছর পূর্বে এক যজমানের মৃত্যুতে আদ্যশ্রাদ্ধ ও ষোড়শ দান করিয়েছি।মাত্র দুটো ধূতি ও চারটি গামছা যজমান এনেছিল ।বাকিগুলো বাড়ি থেকে নিয়ে কুলিয়েছি।বৈতরণী দেবার মতো ক্ষমতা ছিল না।এক বছর পর দুই শত টাকা দক্ষিণা দিয়েছে।

এভাবে অনেক ব্রাহ্মণই যজমানের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেন ।

প্রকৃতপক্ষে, শ্রাদ্ধক্রিয়া করানো এবং দান দ্রব্য গ্রহণ করা শাস্ত্রে ব্রাহ্মণদের জন্য  নিষেধ আছে ।তবু ও যজমানদের মঙ্গলার্থে আমরা শ্রাদ্ধ ক্রিয়া করাই এবং অনটনের কারণে দান দ্রব্য বিসর্জন না দিয়ে আমরা গ্রহণ করি।

আর প্রতিটি ধর্মেই দান করার কথা বলা হয়েছে এবং দানকর্ম পূণ্যকর্ম বলে অভিহিত করা হয়েছে ।আমরা ব্রাহ্মণরা মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পিতৃপুরুষ ও দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে দান গ্রহণ করি। তা যদি  ব্রাহ্মণদের ধান্দাবাজি হতো তাহলে মন্ত্র পাঠ করে গলা ভেঙে বা নাড়ি ফুলিয়ে নেবার পদ্ধতি চালু  না করে সরাসরি দান গ্রহণ করার পদ্ধতি চালু করতাম।


যাহোক, ব্রাহ্মণদের মধ্যে ও কিছু ব্রাহ্মণ আছেন যারা অনেক সময় যজমানের সামর্থ্যের বাহিরে লিস্ট দেন তা অনস্বীকার্য ।তবে শ্রাদ্ধ ক্রিয়া যে শাস্ত্রবিরোধী তা মোটেই ঠিক নয়।বিভিন্ন শাস্ত্রে তার প্রমাণ আছে ।

সুতরাং, শ্রাদ্ধক্রিয়া ব্রাহ্মণ্যদের ধান্দাবাজি নয় তা শাস্ত্রের আলোকে ক্রিয়াকাণ্ড তথা আমাদের মূল ধর্মগ্রন্থ বেদ ও গীতা সমর্থিত এবং অনুমোদিত ।আর ধান্দা হয়ে থাকলে তা চোখের তথা দৃষ্টির এবং মনের ধান্দা।

তবে কেউ চার্বাক দর্শনের অনুসারী হলে আমার বলার কিছু নেই ।

ভগবান সবাকে সুমতি দান করুন এবং আমার আত্মীয়স্বজনসহ সবাকে করোনা এবং দুরারোগ্য ব্যাধি মুক্ত রাখুন তা করজোড়ে প্রার্থনা ।

পরিশেষে, আমার প্রয়াত পিতৃদেবতা ও মাতৃদেবী যেন সাধনোচিত ধামে প্রবেশ করে পরম শান্তি লাভ করেন তার জন্য সকল  বন্ধুদের ঐকান্তিক প্রার্থনা কামনা করি ।

ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।

Ekadoshi

লক্ষ্মীপুর চন্দ্রগঞ্জ থানা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন

  চন্দ্রগঞ্জ  প্রতিনিধি : বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন...

চারবর্ণের অশৌচ ব্যবস্তা