সনাতন ধর্ম বৈষ্ণব ও অবৈষ্ণব ধর্মে বিভাজনের অবসান প্রয়োজন ( ৪র্থ পর্ব):
কিছু কৃষ্ণভক্ত দেবতা পূজার বিরোধীতা করেন ।তারা বলেন যে,যাদের জ্ঞান নেই তারা দেবতার পূজা করেন।তারা গ্রামে গঞ্জে পর্যন্ত এগুলোর প্রচার করেন এবং কেউ কেউ বলেন যে,এগুলো ব্রাহ্মণদের ব্যবসা ।অবশ্য কিছু সংখ্যক কৃষ্ণভক্ত অন্যভাবে বলেন ।তারা বলেন, গাছের গোড়ায় জল দিলে যেমন শাখা প্রশাখা পুষ্ট হয়, তেমনি শ্রীকৃষ্ণের সন্তুষ্টি বিধানের মাধ্যমেই দেব দেবীকে সন্তুষ্ট করা যায় ।ভগদ্ভক্তগণ শ্রদ্ধা সহকারে বিষ্ণুতত্ত্ব বা বিগ্রহের আরাধনা করেন ।তাতেই অন্যান্য দেবদেবী সন্তুষ্ট হন।তাদের একথার মাঝে কিছুটা দেব ভক্তির পরিচয় পাওয়া যায় ।আমরা দেবতাপূজকগণ বলবো, আমরা গাছেরও গোড়ায় জল দেই প্রয়োজন বোধে শাখা প্রশাখাকে ছেঁটে দিয়ে গাছের পরিচর্যা করি।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজে দেবতা, ঋষি, পিতৃপুরুষ ও ব্রাহ্মণদের পূজা করেছেন ।শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্ধে বলা হয়েছে, "উপস্থায়ার্কমুদ্যন্তং তর্পয়িত্বাহহত্মনঃ কলাঃ।দেবানৃষীন্ পিতৃন্ বৃদ্ধান্ বিপ্রানভ্যর্চ্য চাত্মবান।।" উক্ত শ্লোকের সরলার্থ হলো, সূর্যোদয়কালে তিনি (শ্রীকৃষ্ণ) সূর্যের উপাসনা করেন এবং নিজ কলাস্বরূপ দেবতা, ঋষি, পিতৃপুরুষদের তর্পণ করেন ।অতঃপর তিনি কুলবয়োবৃদ্ধ ও ব্রাহ্মণদের বিধিপূর্বক পূজা করেন ।" তাহলে দেখা গেলো কৃষ্ণভক্তদের বিনা বাক্য ব্যয়ে মান্য শ্রীমদ্ভাগবতে ও ভগবান কৃষ্ণের দেবোপসনার কথা বলা হয়েছে ।তাহলে সরলমনা সনাতনীদের কাছে আমার প্রশ্ন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যেখানে দেবদেবীর পূজা করেছেন সেখানে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের দেবতা পূজা করতে বাধা কোথায়? এখন আপনারা কিছু সংখ্যক কৃষ্ণভক্তদের কথা মানবেন না শ্রীকৃষ্ণকে অনুসরণ করবেন তা আপনাদের বিবেকের উপর ছেড়ে দিলাম ।
সবকিছু যুক্তি দিয়ে হয় না।যুক্তির খাতিরে যদি কেউ বলেন, শ্রীকৃষ্ণ যেখানে দেবতা পূজা করেন সেখানে শ্রীকৃষ্ণের পূজা করে লাভ কি,দেবতা পূজা করলেই তো হয়, তাহলে কি ঠিক হবে? আমি ও এভাবে প্ররোচিত করছি না।আমার কথা হলো , আমরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা ও করবো এবং দেবতার পূজা ও করবো ।তবে সবকিছু যেন সাত্ত্বিকভাবে হয়।
কোনো মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে যেয়ে বা নিজ সম্প্রদায়ের দল ভারী করতে মানুষকে ভুল ব্যাখ্যা দ্বারা প্ররোচিত বা প্রলোভিত করা ঠিক নয়। আর বৈষ্ণব ধর্ম কোনো ধর্ম নয় তা মতবাদ ।সনাতন ধর্মে বিভিন্ন মতবাদ আছে ।যে যে পন্থায় ঈশ্বর বা দেবতাকে ডাকেন তাতেই সাড়া দেবেন ।
কেউ কেউ হয়তো বলবেন, বর্তমানে কৃষ্ণভক্তদের বিরাট অংশ ইসকন ভক্ত সনাতন ধর্ম প্রচারে ও অন্য ধর্মের লোকদের ধর্মান্তরিত করে প্রসারে বিরাট ভূমিকা রাখছেন।আমার মতে, সনাতন ধর্ম বিমুখ সনাতনীদের মাঝে প্রচার করুন, প্রসারের প্রয়োজন নেই ।অন্য ধর্ম থেকে আমাদের সনাতন ধর্মে আনার প্রয়োজন নেই ।আমার জানামতে, খ্রিস্টান ধর্মের কিছু সংখ্যক লোককে সনাতন ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে । এছাড়া অন্য ধর্মের লোক আনা হয়েছে বলে আমার জানা নেই ।
আমার মতে, অন্য ধর্মের মায়ের কোল খালি করে আমাদের সনাতন ধর্মে আনার প্রয়োজন নেই ।খ্রিস্টান ধর্ম আহলে কিতাব বা আহলে ইসলাম ।অর্থাৎ তারা কিতাবী এবং ইসলাম ধর্মের অন্তর্ভূক্ত ছিল ।ইসলাম ধর্মের লোক তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে তাদের ধর্মে নিলে ভালো হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস ।
সনাতন ধর্মের লোক হয়ে অন্য ধর্মের লোককে আমন্ত্রণ ও নিমন্ত্রণ দেয়া ধর্ম অনুমোদন করে না বলে আমার ধারণা ও দৃঢ় বিশ্বাস ।তবে আমার জানামতে, বেদে সকলকে আর্য ধর্মে দীক্ষিত করতে বলা হয়েছে।সনাতন ধর্ম আর্য ও অনার্য দুই ভাগে বিভক্ত ।আমার মনে হয় অনার্যকে আর্য ধর্মে দীক্ষিত করার কথা বলা হয়েছে ।অন্য ধর্মের মায়ের কোল খালি করে আনলে মা বাবার রোদন ভগবান ও সহ্য করবেন না।জনশ্রুতি আছে, কোনো কোনো সংগঠন মা বাবার অনুমতি ছাড়া তাদের সন্তানদেরকে তাদের মতবাদে দীক্ষিত করার জন্য মঠে নিয়ে আসেন।তাও ঠিক নয়।মা বাবার অশ্রুতে ঈশ্বরের বৈকুন্ঠ নড়ে উঠবে ।কেউ কেউ বলেন, অভক্ত মা বাবার কাছ থেকে সন্তান আনলে কোনো পাপ বা অপরাধ হবে না।ঈশ্বরের চোখে ঈশ্বরের অভক্ত কেউ নেই ।তাঁর প্রিয় ও নেই অপ্রিয় নেই ।মা বাবার সন্তান যেমন তাদের চোখে কুসন্তান হতে পারে না,ঈশ্বরের চোখে ও কুসন্তান বা অভক্ত নেই ।কাজেই, সনাতন ধর্মে আগমনের জন্য বা মতবাদী করতে কাউকে প্ররোচিত বা প্রলোভিত করে নিমন্ত্রণ দিয়ে আনা ধর্মোচিত ও মানবোচিত নয়।
কেউ কেউ হয়তো বলবেন, অন্য ধর্মের লোকেরা তো আমাদের ধর্মের লোককে ধর্ম গ্রহণের জন্য নিমন্ত্রণ দেয়।অন্য ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ আমি পাঠ করিনি ।তাই, প্রকৃত ধার্মিকরা তা ভালো জানেন আমার প্রস্তাব হলো, যদি অন্য ধর্মের লোককে সনাতন ধর্মে আনতে হয় তবে বৌদ্ধ ধর্মের লোককে নিমন্ত্রণ জানাতে পারেন ।কারণ, বৌদ্ধ ধর্ম সনাতন ধর্মের একাংশ ছিল ।বৌদ্ধ ধর্মের অবতার গৌতম বুদ্ধ সনাতন ধর্মের অবতার বলেও স্বীকৃত। সনাতন ধর্মের সদাচার ও মূলনীতির সাথে বৌদ্ধ ধর্মের অনেক মিল আছে ।যদিও গৌতম বুদ্ধ সনাতন ধর্মের অবতার কি না এই বিষয়ে আমার কিছু খটকা আছে ।খ্রিস্টান ধর্মের লোক আমাদের সনাতন ধর্মে নিমন্ত্রণ করে আনা আমি সমর্থন করি না।কারণ প্রত্যেক ধর্মের নিজস্ব কালচার আছে যা জন্মের সাথে সাথে রক্তের সাথে মিশে থাকে ।অনেক নিষিদ্ধ জিনিস আছে তা বর্জন করতে সময় লাগবে ।তাছাড়া দুই ধর্মের স্বামী ও স্ত্রীর মিলনে সন্তান হলে তা বর্ণ সঙ্কর হবে ।সনাতন ধর্মের প্রতি এবং তার বর্তমান ধর্মের পূর্ব পুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান নাও থাকতে পারে ।এতে শ্রাদ্ধ ও পিণ্ডদানের অভাবে পিতৃপুরুষ পতিত হতে পারেন ।কাজেই, অন্য ধর্ম তথা খ্রিস্টান ধর্ম থেকে এনে আমাদের সনাতন প্রসারে সাহায্য করছেন বলে আমি মনে করি না।
তবে প্রকৃত সনাতনী হিসেবে নিজের ধর্মে পরম নিষ্ঠা ও দৃঢ় বিশ্বাস এবং অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা বাঞ্ছনীয় ।
পরিশেষে বলি, আমাদের মূল ধর্মগ্রন্থ ভালোভাবে পাঠ করে মতভেদ ভুলে সব সনাতনী এক হওয়া প্রয়োজন।ব্লগের বন্ধুদের কাছে আমার অনুরোধ আমার পোস্ট ভালো না লাগলেও অবসর কাটানোর উপায় হিসেবে আমার পোস্টটি ভালোভাবে পাঠ করবেন বার বার আশা করি, আমার মূল উদ্দেশ্য বুঝতে পারবেন ।
দয়া করে আমার পোস্টটিভালো ভাবে পর্যালোচনা করে আলোচনাসহ মন্তব্য করার জন্য অনুরোধ করা হলো ।
আমার শব্দচয়ন ও বাক্যচয়ন জনিত ত্রুটি ও সকল প্রকার ত্রুটি বিচ্যুতি এবং কাউকে অহেতুক আঘাত জনিত কারণে ক্ষমা প্রার্থী ।