অমৃতের পুত্র আর্যরা জানেন ইহকালের পরেও একটি কাল আছে শাস্ত্রে তাকে পরকাল বলে।সনাতন আদর্শ পরম্পরাগত সন্তানেরা ইহকাল পরকাল উভয়কালের বিধায়ক।পিণ্ড দান করায় সন্তানের অন্য অভিধা পুত্র। পিণ্ডদান পদ্ধতিকে কেন্দ্র করেই শ্রাদ্ধ পদ্ধতি প্রচলিত।এই শ্রাদ্ধ কথাটি ঋকবেদের পিতৃমেধার স্মার্ত রুপ।সকল শ্রাদ্ধই নৈমিত্তিক কর্মের অন্তর্ভূক্ত। যদিও তা কখনো নিত্য কখনো বা কাম্য বলেও প্রশংসিত হয়েছে।
আজ আমরা গয়াশ্রাদ্ধ ও বার্ষিক শ্রাদ্ধ নিয়ে আলোচনা করবো।গয়াশ্রাদ্ধ, গয়াকৃত্য সনাতন শাস্ত্রে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়েছে।শুধু আলোচিত বললে ভুল হবে মান্যতাও পেয়েছে । গয়াশ্রাদ্ধ সনাতন পরম্পরাতে পবিত্রতার সাথে পালিত হচ্ছে। এনিয়ে কারও মধ্যে দ্বিধা নেই,নেই কোন সংশয়।গয়াশ্রাদ্ধের নিত্যতা,ও নৈমিত্তিকতা হেতু সকলেই সময় করে পিতৃমাতৃ প্রভৃতি উদ্দেশ্যে তার অনুষ্ঠান করে থাকে।এই শ্রাদ্ধ করলে মৃতক তৃপ্তি লাভ করেন।গয়াশ্রাদ্ধকে নিত্যশ্রাদ্ধ বলা হচ্ছে কারণ তা না করলে পাপ হয়।আর প্রত্যেক শ্রাদ্ধই নৈমিত্তিক তাই গয়াশ্রাদ্ধও নৈমিত্তিক ।সম্প্রতি বিচার না করেই কারো কারো দ্বারা গয়াকৃত্যের পর আর মৃতকের আত্মার তৃপ্তিকর সাম্বৎসরিক শ্রাদ্ধ করতে হবে না এরুপ মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিবেশিত হওয়ায় অনেকে বিভ্রান্ত হচ্ছেন।পক্ষে বিপক্ষে বেশ আলোচনা হচ্ছে কেউ কেউ এতে শালিনতা হারায়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতেও পিছপা হচ্ছেননা। তাই এ বিষয়ে আলোচনা প্রাসঙ্গিক মনে করছি। বার্ষিক একোদ্দিষ্ট শ্রাদ্ধ গয়াশ্রাদ্ধের ন্যায় নিত্য ও নৈমিত্তিক। বহুবিধ শাস্ত্রে এই শ্রাদ্ধের নিত্যতা নিরুপিত হয়েছে। আমরা এবিষয়ে মীমাংসার জন্যে যথা সম্ভব প্রমান ও যুক্তি যুক্ত আলোচনায় ব্রতী। বিশ্বাস রাখি সকলে সাগ্রহে তা গ্রহণ করবেন।জগদ্বীশ্বরের কৃপালাভে আর্য শাস্ত্রে দুটি পথ লোক মান্যতা পেয়েছে একটি দেবপূজা অপরটি পিতৃপূজা। এদুকর্মের গুরুত্ব- প্রকাশ করতে গিয়ে বায়ুপুরাণ বলেছে-" পিতৃদৈবতভক্তা যে তে২পি যান্তি পরাং গতিম্ " যাহারা পিতৃ ও দেবভক্ত তাহারা পরমগতি লাভ করে। গয়াকৃত্য ও সাম্বৎসরিক শ্রাদ্ধ উভয়ে একই উদ্দেশ্য সিদ্ধির উপায় অথচ শাস্ত্রবাক্য বোধের তারতম্য হেতু কেউ কেউ সাম্বৎসরিক শ্রাদ্ধকে গুরুত্বহীন বলে মত প্রকাশ করছে।পিতা প্রসন্ন হলে সমস্ত দেবতাই সন্তুষ্ট হন।যে সন্তান প্রাণপনে জীবিত ও মৃত পিতৃমাতৃর তুষ্টি সাধন করতে পারে তাদের জীবন ধন্য,তার জীবন সার্থক।
জীবিত পিতা মাতার সেবা ও দেহান্তরিত পিতা-মাতা প্রভৃতির শ্রাদ্ধ করে বিশ্বের অনেকেই মহাপুরুষের মর্যাদা পেয়েছেন।বৃহন্নারদীয় পুরানের স্পষ্ট নির্দেশনা -" পিতৃন্ যজন্তি যে শ্রাদ্ধে তৈশ্চ বিষ্ণু প্রপূজিত" পিতৃ পূজা করে, বিষ্ণু পূজাই তাদের করা হয়। "একোদ্দিষ্টন্তু যচ্ছ্রাদ্ধং তন্নৈমিত্তিকমুচ্যতে " একজনের উদ্দেশ্য যে শ্রাদ্ধ তা নৈমিত্তিক শ্রাদ্ধ। শ্রাদ্ধে পিতা মাতাই দেবতা।দালভ্য মুনির মতে
নিত্যং নৈমিত্তিকং কার্য্যং নিত্যং তু পরিলঙ্ঘয়েৎ।
আদৌ নৈমিত্তিকং কুর্য্যাৎ পশ্চান্নিত্যং সমাচরেৎ।
নিত্য ও নৈমিত্তিক কার্য্য একদিনে প্রাপ্ত হলে নিত্য কর্ম না করেও নৈমিত্তিক কর্মের অনুষ্ঠান করবে,কারণ এতে করে নিত্যকর্মও সিদ্ধ হবে।দ্বাদশ মহাজনের অন্যতম মহাজন ভগবান কপিল উল্লেখ করেন
সর্বেভ্যঃ স্মার্তকর্মভ্যঃ শ্রাদ্ধমেকং মহৎ স্মৃতম্।
ন সদ্য: স্মার্ত্তকর্ম বৈ কিন্তু বৈদিককর্ম হি।
সকল স্মার্ত্তকর্ম হতে একমাত্র শ্রাদ্ধকর্মই মহৎ কর্ম; কারণ তা প্রত্যক্ষ শ্রুতিমূলক হওয়ায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞতুলয।।
কপিল মুনি আবার বলেন
এতচ্ছ্রাদ্ধল প্রকথিতং নান্যদিত্যেব সূরভি:।
তস্মাৎ শ্রাদ্ধং তদ্দিনৈব অকৃত্বৈ কদাচন।
যেহেতু পণ্ডিতগণ নৈমিত্তিক কর্মকেই শ্রাদ্ধ বলে মত দিয়েছেন সে কারণে শ্রাদ্ধ দিনে শ্রাদ্ধ না করে অন্য কর্মের অনুষ্ঠান কদাপি করা যাবেনা এতে ঐ অনুষ্ঠিত কর্মও পণ্ড হবে। কণ্বস্মৃতির ৭৮৮ নং শ্লোক- বলছে
"শ্রাদ্ধং কুর্য্যাৎ প্রযত্নেন শ্রাদ্ধং কৃত্বা বিধানত।"
সযত্নে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান কর্তব্য।শ্রাদ্ধ ইহলোক ও পরলোকের মানুষের সাথে অকৃত্রিম যোগসূত্র বজায় রাখে।সাম্বৎসরিক শ্রাদ্ধে বিদেহী আত্মা পরম তৃপ্তি লাভ করে থাকে।তাই গয়াশ্রাদ্ধ করার পরেও এই শ্রাদ্ধ অবশ্য যথা নিয়মে করতে হবে প্রমান পাওয়া যায় পুলস্থ ঋষির বচনে-
মহালয়ে গয়াশ্রাদ্ধে গতাসুনাং ক্ষয়ে অহনি।
তন্ত্রেণ শ্রবণং কৃত্বা শ্রাদ্ধং কুর্যাৎ পৃথক পৃথক।