সনাতন ধর্ম জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসীঃ,Transmigration in Hinduism
সনাতন ধর্ম জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস করে ।গীতায় বলা হয়েছে, " মানুষ জীর্ণ বস্ত্র ত্যাগ করে অন্য নতুন বস্ত্র গ্রহণ করে ।আত্মাও তেমনি জীর্ণ দেহ ত্যাগ করে অন্য নতুন দেহ গ্রহণ করেন(২|২২)।"
আরো বলা হয়েছে, " তাঁরা সেই বিপুল স্বর্গলোক ভোগ করেন ।ভোগের পর পূণ্য ক্ষয় হলে আবার মর্ত্যলোকে ফিরে আসেন ।এভাবে ত্রিবেদোক্ত ধর্মেরঅনুষ্ঠান করে ভোগকামী ব্যক্তিগণ সংসারে যাতায়াত করে( ৯|২১)।"
এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে পূণ্য বা ভালো কাজের ফলে মানুষ স্বর্গে গমন করে ।যখন পূণ্য ক্ষয় হয়ে যায়, তখন পৃথিবীর মতো কোনো গ্রহে জন্ম নিতে হয়।কর্মের ফল অনুসারে আবার পরবর্তী জন্ম নির্ধারিত হয়।এভাবে ভালো কাজের জন্য স্বর্গেএবং খারাপ কাজের জন্য নরকে গমন করতে হয়।ইহার নাম সংসারচক্র।
শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে, "জীবের উপাধিরূপ লিঙ্গ শরীর তো তার মোক্ষলাভ পর্যন্ত তার সাথে থাকে এবং সূক্ষ্ম পঞ্চভভূত, দশ ইন্দ্রিয় ও মনের কার্যরূপ এই স্থূল শরীর হলো তার ভোগাধিষ্টান ।এই দুটি পরস্পর মিলিত হয়ে কার্য না করার নামই' মৃত্যু ' এবং এই দুইয়ের পরস্পর মিলিত হয়ে একসাথে প্রকাশ হওয়াকেই 'জন্ম ' বলা হয়(৩|৩১|৪৪)।"
এই শ্লোকে মৃত্যুর সংজ্ঞা বর্ণনা করা হয়েছে ।আত্মা পূর্বের কর্মানুসারে নতুন দেহ প্রাপ্ত হয়।ইহার নাম আত্মার জন্ম এবং যখন বিশেষ কর্মের ফল শেষ হয় আত্মা উক্ত শরীর ত্যাগ করে ইহার নাম মৃত্যু ।প্রকৃত প্রস্তাবে আত্মার কোনো মৃত্যু নেই, শুধু দেহের পরিবর্তন হয় মাত্র ।এই আত্মা সম্পর্কে যার এই জ্ঞান আছে তিনি আত্মার পরিবর্তনের জন্য শোক করেন না।
পবিত্র গীতায় আরো বলা হয়েছে, "যদি রজোগুণের বৃদ্ধিকালে মৃত্যু ঘটে ,তবে কর্মাসক্ত মনুষ্য- যোনিতে জন্ম হয়।আর যদি তমোগুণের বৃদ্ধিকালে মৃত্যু ঘটে তবে পশ্বাদি মূঢ় যোনিতে জন্মে( ১৪|১৫)।"
এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে, রজগুণ সম্পন্ন মানুষ পরবর্তী জন্মে কর্মাসক্ত মানুষ হয় এবং তমগুণ সম্পন্ন মানুষ অর্থাৎ পশু স্বভাবের মানুষেরা মৃত্যুর পর পশু হয়।মানুষ জন্মের পরও কর্ম অনুসারে বিভিন্ন জন্ম হতে পারে ।শুধুমাত্র মানব জন্মের কর্মের বিচার হয়,অন্য কোনো জন্মের বিচার হয় না।যেমন কুকুরের কর্মের জন্য কোনো বিচার হবে না ।কুকুর জন্মটাই একটি শাস্তিস্বরূপ ।
শ্রীমদ্ভাগবতে আরো বলা হয়েছে, " সব নরক ভোগের পর এবং শূকর কুকুরাদি প্রজাপতিতে যত ক্লেশ আছে সেই সমস্ত ভোগ করে শুদ্ধ হবার পর সে আবার মনুষ্য প্রজাতিতে জন্মলাভ করে( ৩|৩০|৩৪)।"
সুতরাং দেখা যায় যে, সনাতন ধর্মে জন্মান্তরবাদের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে ।তবে যারা জন্মান্তরবাদ বিশ্বাস করেন না বা করতে চান না তাদেরকে বুঝানোর জন্য পরবর্তী পোস্টে যথাসাধ্য চেষ্টা করবো । উল্লেখ্য, আমার বিগত পোস্টে পুত্রহীনদের স্বর্গ ও গতি না থাকার বিষয়ে গরুড় পুরাণ থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছিলাম এবং এই বিষয়ে জানার অভিপ্রায় নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম ।কিন্তু সন্তোষজনক উত্তর পাইনি ।তবে আমার আজকের পোস্ট পুত্রহীন এবং সন্তানহীনদের মনের কষ্ট দূরীভূত হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস ।ভগবানের মুখনিঃসৃত বাণী গীতার আলোকে সুস্পষ্ট যে, মানুষের কর্ম অনুযায়ী ফললাভ হয়।কোনো পুত্র সন্তান মা বাবার প্রার্থিত ফলদান করতে পারে না।তবে ভগবানের কাছে আবেদন করতে হবে ।আবেদন মঞ্জুর করা না করা ভগবানের ইচ্ছা ।আর শাস্ত্র নির্দেশিত সকল সদাচার পালন করা কর্তব্য ।নমস্তে কর্মভ্য নমঃ ।ফলদাতা হলেন ভগবান স্বয়ং যার যার কর্মের উপর ভিত্তি করে।আমার লিখা ভালোভাবে পাঠ করে ভদ্রোচিত ভাষায় মন্তব্য ও গঠনমূলক সমালোচনা কাম্য ।আপনাদের মন্তব্য আমার লিখার উৎসাহ বাড়ায়।জানি," গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না।" তবুও আমার ব্লগ বন্ধুদের আন্তরিকতাও একাগ্রতা সহকারে আমার লিখা পাঠ করে মূল্যায়ন কাম্য।
No comments:
Post a Comment