Tuesday, April 13, 2021

সনাতন ধর্মে সাত্ত্বিক খাবার প্রসঙ্গেঃ

 সনাতন ধর্মে সাত্ত্বিক খাবার প্রসঙ্গেঃ 


সনাতন ধর্মে খাবার নিয়ে আলোচনা সমালোচনার শেষ নেই ।কেউ কেউ সনাতন ধর্মের আহার বা খাবার বিষয়ে আলোচনা করার অনুরোধ করায় আজ আলোচনায় ব্রতী হলাম ।

সনাতন ধর্মের কোনো ধর্মগ্রন্থে খাবার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আমার চোখে পড়েনি ।তবে পবিত্র গীতার সপ্তদশ অধ্যায়ের ৭-৯নং শ্লোকে প্রত্যক্ষভাবে বা সরাসরি বলা  না হলেও  পরোক্ষভাবে আহার বা খাবার বিষয়ে আলোচিত হয়েছে ।আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানপ্রসূত ধারণা থেকে এবার  আলোচনা করছি ।

পবিত্র গীতায় বলা হয়েছে, "আয়ুঃসত্ত্ববলারোগ্যসুখপ্রীতিবিবর্ধনাঃ।রস্যাঃ স্নিগ্ধাঃ স্থিরা হৃদ্যা আহারাঃ সাত্ত্বিকপ্রিয়াঃ( ১৭|৮)।।"উক্ত শ্লোকের সরলার্থ হলো, ,  "আয়ু, সত্ত্বগুণ, বল, আরোগ্য, সুখ,প্রীতি তথা চিত্তপ্রসন্নতা বৃদ্ধিকারী  এবং স্থায়ী, হৃদয়ে শক্তি বর্ধনকারী, সরস, স্নিগ্ধ- এরূপ আহার্য সাত্ত্বিক ব্যক্তিদের প্রিয় ।"

ব্যাখ্যাঃস্থিরাঃ- যা স্থায়ী বা পুষ্টিকর অর্থাৎ যা দুষ্পাচ্য নয়,সুপাচ্য এবং বহুদিন ধরে শক্তি প্রদান করে; ' হৃদ্যাঃ- হৃদয়,ফুসফুস ইত্যাদিকে শক্তি প্রদান করে ও বুদ্ধিতে সৌম্যভাব আনে; রস্যাঃ- ফল, দুধ,শর্করা জাতীয় খাদ্য; স্নিগ্ধাঃ-'ঘি,মাখন,বাদাম,কাজু, কিশমিশ  জাতীয় স্নেহযুক্ত সাত্ত্বিক ভোজ্য পদার্থ যেগুলো সুপুষ্ট,সুপক্ক এবং টাটকা ।

কেউ কেউ বলেন, মাছ, মাংস ও সাত্ত্বিক খাবার ।আমি তাদের কথার সাথে একমত নহি ।কারণ, মাছ মাংস উত্তেজক পদার্থ ।উত্তেজক পদার্থ সাত্ত্বিক হতে পারে না। তাছাড়া মনুসংহিতার পঞ্চম অধ্যায়ে মাছ মাংস খাবার বিষয়ে পরস্পরবিরোধী শ্লোক লক্ষ্য করা যায় ।কোনো শ্লোকে সংস্কৃত মাছ মাংস এবং কোনো কোনো শ্লোকে কিছু নির্দিষ্ট মাছ খাবারের বিধান দেখা যায় ।আবার উপসংহারে 'মাংসত্যাগ মহাফলা '  বলা হয়েছে ।কাজেই, এসব বিবেচনায় মাছ মাংস সাত্ত্বিক খাবার হতে পারে না।( ৫|৫৬)। আবার যারা শাকাহারী বা প্রসাদভোজী বলে দাবি করেন তাদের যুক্তি হলো ,মাছ মাংস অমেধ্য অর্থে তামসিক খাবার যা বর্জনীয় ।আমার মতে তাদের কথা ও সঠিক নয়।কারণ'  অমেধ্য ' শব্দ দ্বারা অপবিত্র বা অশুদ্ধ বা নিষিদ্ধ বুঝায়।সনাতন ধর্মে মাছ মাংস আহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়নি ।আমার মতে মাছ মাংস রাজসিক খাবার ।


 আমার মতে, উদ্ভিজ খাবারই সাত্ত্বিক খাবার, প্রাণিজ খাবার সাত্ত্বিক হতে পারে না।তবে দুধ প্রাণিজ হলেও খাদ্যগুণে সাত্ত্বিক ।উদ্ভিজ খাবার সাত্ত্বিক বলেই আমরা দেবতার ভোগে নিবেদন করি।কেউ কেউ হয়তো বলবেন যে,দেবতার উদ্দেশ্যে তো পশু বলি দেয়া হয়।পশু আমরা উৎসর্গ করি, ভোগ হিসেবে নিবেদন করি না।যদিও শক্তি পূজায় বিশেষতঃ ভৈরব পূজায় মাংস ভোগ দেয়া হয় বলে জনশ্রুতি আছে ।কিন্তু আমি মাংসের ভোগ লাগানো সমর্থন করি না।

আমরা কোনো পূজা করতে হলে আগের দিন সংযম করে শাকাহার করি।ইন্দ্রিয় সংযমের জন্যই তো নিরামিষ আহার করি।একাদশী, পূর্ণিমা, অষ্টমী, শিব চতুর্দ্দশীর উপবাস করে ফলমূলাদি আহার করি,মাছ মাংস ভক্ষণ করি না।মৃতাশৌচ কালীন মাছ মাংস পরিহার করি।এগুলোকে আমরা সংযম বলে থাকি।সাত্ত্বিক আহার হিসেবে আমরা উদ্ভিজ খাবার ও ফলমূল  আহার করি। উপনয়ন সংস্কারে ব্রহ্মচর্য পালন অবস্থায় ফলমূল ও পায়েস আহার করি।প্রাণিজ খাবার সাত্ত্বিক হলে আমরা সংযম পালনকালীন তা আহার করতাম।

আমার জ্ঞানবশতঃ আমি আলোচনা করলাম ।বিজ্ঞ বন্ধুগণ আলোচনা করলে প্রীত হবো ।

No comments:

Ekadoshi

তর্পণ বিধি

 আমি প্রথমেই মহালয়া বিষয়ে দু'একটা কথা বলে নিই, তারপর  তর্পণ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।  মহালয়া মানে শুধু মায়ের আগমন নয়, মহাল...

চারবর্ণের অশৌচ ব্যবস্তা