Tuesday, March 15, 2022

মুখাগ্নি' শব্দটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা

 'মুখাগ্নি' শব্দটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা 


কেউ কেউ মুখাগ্নি বলতে শবের মুখে আগুন বুঝে থাকেন ।কেউ কেউ মুখ্য অগ্নি বা মুখ্যাগ্নি বলে থাকেন ।অর্থাৎ  শব্দটি তা হওয়া উচিত ছিলো বলে মনে করেন ।আমি ও তাই ভাবতাম ।আবার কেউ কেউ বলেন, মুখাগ্নি শব্দটি শাস্ত্রের কোথাও নেই ।অগ্নিদাতা অর্থে মুখ্য অগ্নিদাতা আছে বলে কেউ কেউ বলেন ।আমি ও ধর্মশাস্ত্রে অগ্নিদাতা শব্দটি পেয়েছি।মুখাগ্নি শব্দটি না পেলেও দীর্ঘদিন যাবত এ শব্দটি শুনে এসেছি ।আবার কেউ কেউ মুখাগ্নি বলতে চুলার মুখে আগুন বলে থাকেন ।অনেকের কাছে সে কথাটি নতুনই মনে হবে ।আমার কাছে ও নতুন ।মুখ শব্দের অর্থ মুখ্য বলে গত পর্বে আলোচনা করেছি ।কেউ কেউ সমর্থন করেছেন ।আবার কেউ কেউ পরিষ্কার কোনো মত দেননি ।যাহোক, আজ  এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দেবার জন্য আবার আলোচনা করতে ব্রতী হলাম ।


আমি বাংলা অভিধানে 'মুখাগ্নি ' শব্দটি পেয়েছি।

অভিধানে 'মুখাগ্নি ' শব্দের অর্থ 'হিন্দুদের শব দাহকালে শাস্ত্রবিধি অনুসারে শবের শিরঃস্থানে ( মুখে নয়) অগ্নি দান বা স্পর্শ ' বলা হয়েছে ।সুতরাং 'মুখাগ্নি ' শব্দটির অস্তিত্ব ছিলো বলেই অভিধানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস ।এবার মুখ শব্দের সমার্থক শব্দ বা সরাসরি কোনো অর্থ না পেলেও তা দ্বারা যে মুখ্য বুঝায় তা প্রমাণ করবার চেষ্টা করবো ।


যেমন 'মুখটি ' শব্দের অর্থ হলো 'মুখ্য ' বা প্রধান ।'মুখবংশ ' শব্দের অর্থ হলো ' মুখ্য বা প্রধান বংশ।তাহলে এখানে মুখ শব্দের অর্থ যে মুখ্য বা প্রধান হয় তা দিবালোকের মতো পরিষ্কার ।তাছাড়া মুখোপাধ্যায় =মুখ + উপাধ্যায় অর্থাৎ প্রধান বা মুখ্য উপাধ্যায় ।অবশ্য মুখোপাধ্যায় ব্রাহ্মণদের উপাধিও আছে ।এভাবে মুখাগ্নি = মুখ + অগ্নি অর্থাৎ মুখ্য অগ্নি ।তদনুসারে শব দাহের প্রধান অধিকারী হিসেবে শবের সর্বোত্তম স্থানে অগ্নি দান বা স্পর্শকে মুখাগ্নি বলা হয় বলে আমি মনে করি ।

আমি অন্বেষণ করে জ্ঞান শেয়ার করবার চেষ্টা করি যা আমার ছাত্রজীবন থেকেই নেশা ও পেশা যা অনেকের নেই ।আমি অনেক ক্ষেত্রে মনে করি, যা করছি তা বর্তমান যুগে অচল।তাছাড়া নিজের কেউ গ্রহণ করবার মতো উত্তরসূরি নেই ।আমার নিজের ও কোনো পুত্র সন্তান নেই ।তবে আমাদের বংশে একটি ভ্রাতুষ্পুত্র আছে ।তার  সবেমাত্র উপনয়ন সংস্কার হয়েছে ।শাস্ত্রীয় বিষয় ধারণ করার ক্ষমতা নেই ।আপন দুটো ভাই ও চাকরি ও  বিভিন্ন কারণে শাস্ত্র চর্চায় অনাগ্রহী । আর দুটো মেয়ে ।ওরাও পড়াশোনা ও চাকরির খাতিরে শাস্ত্রবাক্য গ্রহণ করতে অনাগ্রহী ।তবে ভাই ও কন্যা সন্তানরা   আমার উপর নির্ভরশীল এবং আমার শাস্ত্রীয় মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।তাই নিজের স্বার্থ যেখানে নেই সেক্ষেত্রে শাস্ত্র আলোচনা কিছুটা নিষ্ফল ও বটে ।কারণ নিজের আত্মীয়স্বজন ও কিছু ফেইসবুক বন্ধু বলে থাকেন, এগুলো লিখে কোনো লাভ নেই এবং শত্রুতা বাড়ানো।শত্রুতা বাড়ানো  শব্দটির সাথে আমি একমত ।কারণ শাস্ত্রীয় সত্য বিষয় কারো দর্শনের বাহিরে গেলেই বিরাগভাজন হন।তবে কারো না কারো কিছু লাভ  হলেও হতে পারে ।তবে বেশির ভাগই নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত ।আর তা লেখালিখির সুবাদে ও বুঝতে পেরেছি ।


সনাতন ধর্ম বিশাল জ্ঞানের ভাণ্ডার ।এ ভাণ্ডার থেকে জ্ঞান আহরণ করা কঠিন ।আমি ফেইসবুকে পোস্ট করে অনেক জ্ঞানী বন্ধুর জ্ঞানগর্ভ মন্তব্য থেকেও অনেক জ্ঞান আহরণ করতে পারি।সেটা আমার কিছুটা লাভ ।তবে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি ।কারণ মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতি ।আসলে এ যুগে কে শুনে কার কথা? আমার এক ফেইসবুক বন্ধু বলেছেন, " আমরা সবাই রাজা ।" আমি বলি,সবাই ভাবে," আমরা সবাই পণ্ডিত ।" 

যাহোক,মুখাগ্নি শব্দটি নিয়ে আমার স্বজ্ঞানপ্রসূত ব্যাখ্যা সন্তোষজনক মনে  হলে একজন ও যদি মন্তব্য করেন তবে আমার শ্রম সার্থক মনে করবো ।আর সন্তোষজনক না হলে ভদ্রোচিত ভাষায় মন্তব্য করলে আমি মন্থন করে  ননী উত্তোলন করতে সক্ষম হবো।

Monday, March 14, 2022

পাপপুরুষ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা

 পাপপুরুষ প্রসঙ্গেঃ

পাপপুরুষ কে? ' আমি এ  বিষয়ে সংক্ষিপ্ত  আলোচনা করার চেষ্টা করেছি ।

পদ্মপুরাণে বর্ণিত আছে, " সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমেশ্বর ভগবান এ জড় সংসারে স্থাবর জঙ্গম সৃষ্টি করলেন ।মর্ত্যলোকবাসী মানুষদের শাসনের জন্য একটি পাপপুরুষ নির্মাণ করলেন ।এ পাপপুরুষের অঙ্গগুলো বিভিন্ন পাপ দিয়ে নির্মিত হলো ।পাপপুরুষের মাথাটি ব্রহ্মহত্যা পাপ দিয়ে, চক্ষু দুটো মদ্যপান, মুখ স্বর্ণ অপহরণ,দুই কর্ণ গুরুপত্নীগমন, দুই নাসিকা স্ত্রী হত্যা, দুই বাহু গোহত্যা পাপ,গ্রীবা ধন অপহরণ, গলদেশ ভ্রূণহত্যা, বক্ষ পরস্ত্রী গমন,উদর আত্মীয় স্বজন বধ,নাভি শরণাগত বধ,কোমর আত্মশ্লাঘা, দুই উরু গুরু নিন্দা, শিশ্ন কন্যা বিক্রি,মলদ্বার গুপ্ত কথা প্রকাশ পাপ,দুই পা পিতৃহত্যা,শরীরের রোম সমস্ত উপপাতক।এভাবে সমস্ত পাপ দ্বারা ভয়ঙ্কর পাপপুরুষ তৈরি হলো ।" এই পাপপুরুষের নির্মাণ বিষয়ে আজ আমার বিদ্যা দ্বারা মর্মার্থ উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না।আরো ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে ।তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত রহিলাম ।অবশ্য আমার সংগ্রহে পদ্মপুরাণ না থাকায় মিলিয়ে দেখতে পারছি না।

বলা হয়ে থাকে একাদশীতে শস্য মধ্যে সমস্ত পাপ অবস্থান করে।তাই চাল,ডাল,আটা, ময়দা, সুজি,সরিষা আদি জাতীয় খাদ্যদ্রব্য একাদশী দিনে বর্জন করা উচিত ।নির্জলা উপবাসে অসমর্থ হলে জল,দুধ, ফলমূল, এমনকি আলু,পেঁপে, কলা, ঘিয়ে বা বাদাম তেল অথবা সূর্যমুখী তেলে রান্না অনুকল্প প্রসাদরূপে গ্রহণ করা যেতে পারে ।রবিশস্য ( ধান,গম,ভুট্টা, ডাল ও সরিষা)ও সোয়াবিন তেল অবশ্যই বর্জনীয় ।

আমার কথা হলো, সনাতন ধর্মে বিভিন্ন মতবাদীরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিন দিনে একাদশীর উপবাস পালন করেন।স্মার্ত বা শাক্ত মন্ত্রে দীক্ষিতরা যেদিন পালন করেন, গোস্বামী মতে তার পরের দিন এবং নিম্বার্কমতে তার পরের দিন পালন করেন ।তবে পাপপুরুষের অবস্থান কোন দিন বুঝতে হবে? তাহলে কারো ভাষায়,  যেকোনো মতবাদীরা তো পাপান্ন ভক্ষণ করছেন।তাহলে সমাধান কি? 

আর তাহলে তো তিনদিন নিষিদ্ধ খাবার বর্জন করতে হবে ।অবশ্য প্রায় একাদশী একই দিনে পড়ে ।একই দিনে না পড়লে তো যারা এসব খাবার ভক্ষণ করছেন তাদের পাপ হচ্ছে ।আমি তা মনে করি না।আমার মতে যারা একাদশীর উপবাস করছেন তারা যদি একাদশী তিথিতে নিষিদ্ধ দ্রব্য গ্রহণ করেন তাদের পাপ হবে, যারা ব্রত পালন করেন না তাদের নয়।


তবে যারা কুম্ভীপাক নরকের এবং বিভিন্ন পাপের পরিণামের ভয় দেখান তাদের কাছ থেকে সঠিক উত্তর জানতে আগ্রহী ।উল্লেখ্য, কেউ কেউ ব্রাহ্মণদের ক্রিটিসাইজ করে বলেন," ব্রাহ্মণদের তো একাদশী লাগে না, কারণ তারা দেবতা ।" উনাদের ধারণা ব্রাহ্মণরা একাদশী করেন না।তা সর্বাংশে সত্য নয়।তবে যারা একাদশী ব্রত বা অন্যান্য ব্রত পালন করেন তাদেরকে সাধুবাদ জানাই ।কিন্তু যারা বাহাদুরি করেন তাদেরকে বলতে হবে তারা সঠিকভাবে শাস্ত্রবিধি  পালন করছেন তো? 

তাছাড়া আমার মনে খটকা লাগে, রবিশস্য ভগবান বা দেবতাকে নিবেদন করে খেতে দোষ কি? পাপপুরুষ কি ভগবানের চেয়ে ও শক্তিশালী ।প্রসাদের মধ্যে ও কি  পাপপুরুষ থাকবে? একথাটা এজন্য বললাম, আমরা সারাজীবন আটা, মুগ, সাগু একাদশীতে তথা একাদশীর উপবাস ভেঙে খেতে দেখেছি।অথচ আজকাল নিষেধাজ্ঞা ।বুঝতে পারছি না।আর সোয়াবিন খাবার কথা বলেন।সোয়াবিন কি আদিযুগে ছিল? আর আলু, সেতো এক দেশের লোকদের প্রধান খাদ্য ।একটি খাওয়া যাবে আরেকটি খাওয়া যাবে না তাতে তো খটকা লাগবেই ।আমাকে অযথা কেউ ভুল না বুঝে সঠিক সমাধান দেবেন বলে আশাবাদী ।আর রবিশস্য খাওয়া যাবে না এ কথাটি কোথায়  আছে উদ্ধৃতি দিলে খুশি হবো।

আমরা জানি, ভগবান সর্বশক্তিমান ।তিনি সর্বত্র বিরাজমান ।পাপপুরুষ খাদ্যের মধ্যে অবস্থান করলে তো বুঝতে হবে পাপপুরুষ একাদশীর দিনে বিভিন্ন খাদ্যে বিরাজমান ।আমার কাছে কিছুটা আশ্চর্য লাগছে ।আর ভগবানের নামে নিবেদন করলেও পাপপুরুষের অস্তিত্ব থাকবে তা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে ।অথচ আমরা' অন্নে ব্রহ্ম রসে বিষ্ণু, ভোক্তাদেব জনার্দন 'এ মন্ত্রটি পাঠ করে খাবার গ্রহণ করি।এ মন্ত্রের শক্তির চেয়ে ও কি পাপপুরুষ শক্তিশালী? 


যাহোক, আমি আবারও বলি, সনাতন ধর্মের বিভিন্ন ব্রত উপবাস পালন করেন তাতে আমার আপত্তি নেই, তবে শাস্ত্রের মর্মার্থ সঠিকভাবে অনুধাবন না করে কাউকে ভয় লাগানো ঠিক নয়।আমার জানামতে, সনাতন ধর্মে কারো উপর ধর্ম পালনে জোর করে না।কার সদগতি হবে কার হবে না তা ভগবান ভালো জানেন।তবে যথাসম্ভব সদাচার বিষয়ে সনাতনীদেরকে পরামর্শ দেয়া কর্তব্য,তবে আতঙ্ক সৃষ্টি করে নয়।

আমার লিখায় ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য পরমেশ্বরের নিকট নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থী এবং বিবেকবান সনাতনীদের কাছেও ক্ষমা প্রার্থী ।

Ekadoshi

লক্ষ্মীপুর চন্দ্রগঞ্জ থানা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন

  চন্দ্রগঞ্জ  প্রতিনিধি : বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন...

চারবর্ণের অশৌচ ব্যবস্তা