'মুখাগ্নি' শব্দটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা
কেউ কেউ মুখাগ্নি বলতে শবের মুখে আগুন বুঝে থাকেন ।কেউ কেউ মুখ্য অগ্নি বা মুখ্যাগ্নি বলে থাকেন ।অর্থাৎ শব্দটি তা হওয়া উচিত ছিলো বলে মনে করেন ।আমি ও তাই ভাবতাম ।আবার কেউ কেউ বলেন, মুখাগ্নি শব্দটি শাস্ত্রের কোথাও নেই ।অগ্নিদাতা অর্থে মুখ্য অগ্নিদাতা আছে বলে কেউ কেউ বলেন ।আমি ও ধর্মশাস্ত্রে অগ্নিদাতা শব্দটি পেয়েছি।মুখাগ্নি শব্দটি না পেলেও দীর্ঘদিন যাবত এ শব্দটি শুনে এসেছি ।আবার কেউ কেউ মুখাগ্নি বলতে চুলার মুখে আগুন বলে থাকেন ।অনেকের কাছে সে কথাটি নতুনই মনে হবে ।আমার কাছে ও নতুন ।মুখ শব্দের অর্থ মুখ্য বলে গত পর্বে আলোচনা করেছি ।কেউ কেউ সমর্থন করেছেন ।আবার কেউ কেউ পরিষ্কার কোনো মত দেননি ।যাহোক, আজ এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দেবার জন্য আবার আলোচনা করতে ব্রতী হলাম ।
আমি বাংলা অভিধানে 'মুখাগ্নি ' শব্দটি পেয়েছি।
অভিধানে 'মুখাগ্নি ' শব্দের অর্থ 'হিন্দুদের শব দাহকালে শাস্ত্রবিধি অনুসারে শবের শিরঃস্থানে ( মুখে নয়) অগ্নি দান বা স্পর্শ ' বলা হয়েছে ।সুতরাং 'মুখাগ্নি ' শব্দটির অস্তিত্ব ছিলো বলেই অভিধানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস ।এবার মুখ শব্দের সমার্থক শব্দ বা সরাসরি কোনো অর্থ না পেলেও তা দ্বারা যে মুখ্য বুঝায় তা প্রমাণ করবার চেষ্টা করবো ।
যেমন 'মুখটি ' শব্দের অর্থ হলো 'মুখ্য ' বা প্রধান ।'মুখবংশ ' শব্দের অর্থ হলো ' মুখ্য বা প্রধান বংশ।তাহলে এখানে মুখ শব্দের অর্থ যে মুখ্য বা প্রধান হয় তা দিবালোকের মতো পরিষ্কার ।তাছাড়া মুখোপাধ্যায় =মুখ + উপাধ্যায় অর্থাৎ প্রধান বা মুখ্য উপাধ্যায় ।অবশ্য মুখোপাধ্যায় ব্রাহ্মণদের উপাধিও আছে ।এভাবে মুখাগ্নি = মুখ + অগ্নি অর্থাৎ মুখ্য অগ্নি ।তদনুসারে শব দাহের প্রধান অধিকারী হিসেবে শবের সর্বোত্তম স্থানে অগ্নি দান বা স্পর্শকে মুখাগ্নি বলা হয় বলে আমি মনে করি ।
আমি অন্বেষণ করে জ্ঞান শেয়ার করবার চেষ্টা করি যা আমার ছাত্রজীবন থেকেই নেশা ও পেশা যা অনেকের নেই ।আমি অনেক ক্ষেত্রে মনে করি, যা করছি তা বর্তমান যুগে অচল।তাছাড়া নিজের কেউ গ্রহণ করবার মতো উত্তরসূরি নেই ।আমার নিজের ও কোনো পুত্র সন্তান নেই ।তবে আমাদের বংশে একটি ভ্রাতুষ্পুত্র আছে ।তার সবেমাত্র উপনয়ন সংস্কার হয়েছে ।শাস্ত্রীয় বিষয় ধারণ করার ক্ষমতা নেই ।আপন দুটো ভাই ও চাকরি ও বিভিন্ন কারণে শাস্ত্র চর্চায় অনাগ্রহী । আর দুটো মেয়ে ।ওরাও পড়াশোনা ও চাকরির খাতিরে শাস্ত্রবাক্য গ্রহণ করতে অনাগ্রহী ।তবে ভাই ও কন্যা সন্তানরা আমার উপর নির্ভরশীল এবং আমার শাস্ত্রীয় মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।তাই নিজের স্বার্থ যেখানে নেই সেক্ষেত্রে শাস্ত্র আলোচনা কিছুটা নিষ্ফল ও বটে ।কারণ নিজের আত্মীয়স্বজন ও কিছু ফেইসবুক বন্ধু বলে থাকেন, এগুলো লিখে কোনো লাভ নেই এবং শত্রুতা বাড়ানো।শত্রুতা বাড়ানো শব্দটির সাথে আমি একমত ।কারণ শাস্ত্রীয় সত্য বিষয় কারো দর্শনের বাহিরে গেলেই বিরাগভাজন হন।তবে কারো না কারো কিছু লাভ হলেও হতে পারে ।তবে বেশির ভাগই নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত ।আর তা লেখালিখির সুবাদে ও বুঝতে পেরেছি ।
সনাতন ধর্ম বিশাল জ্ঞানের ভাণ্ডার ।এ ভাণ্ডার থেকে জ্ঞান আহরণ করা কঠিন ।আমি ফেইসবুকে পোস্ট করে অনেক জ্ঞানী বন্ধুর জ্ঞানগর্ভ মন্তব্য থেকেও অনেক জ্ঞান আহরণ করতে পারি।সেটা আমার কিছুটা লাভ ।তবে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি ।কারণ মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতি ।আসলে এ যুগে কে শুনে কার কথা? আমার এক ফেইসবুক বন্ধু বলেছেন, " আমরা সবাই রাজা ।" আমি বলি,সবাই ভাবে," আমরা সবাই পণ্ডিত ।"
যাহোক,মুখাগ্নি শব্দটি নিয়ে আমার স্বজ্ঞানপ্রসূত ব্যাখ্যা সন্তোষজনক মনে হলে একজন ও যদি মন্তব্য করেন তবে আমার শ্রম সার্থক মনে করবো ।আর সন্তোষজনক না হলে ভদ্রোচিত ভাষায় মন্তব্য করলে আমি মন্থন করে ননী উত্তোলন করতে সক্ষম হবো।
No comments:
Post a Comment