কন্যাসন্তানের জননী বিধবার প্রয়াত স্বামীর মুখাগ্নি ও শ্রাদ্ধ করার অগ্রাধিকার প্রসঙ্গেঃ
কোনো লোক তার স্ত্রী ও কন্যা সন্তান রেখে মারা গেলে মুখাগ্নি ও শ্রাদ্ধ ক্রিয়ার অধিকারী নিয়ে সনাতনীদের মাঝে মতানৈক্য দেখা দেয় ।কেউ নিজের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে ,আবার কেউ নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন বিধান দিতে চেষ্টা করেন এবং কেউ বিধান নিতে চেষ্টা করেন যা স্মৃতিশাস্ত্রের সাথে সাংঘর্ষিক ।
কেউ কেউ বলেন, ভ্রাতুষ্পুত্র বা ভাতিজা জীবিত থাকলে সে শ্রাদ্ধ করার অধিকারী । কারণ ভাতিজা পুত্র তুল্য।এমনকি ভাতিজা ধরাও নিতে পারে।তাহলে মাথা মুণ্ডণ ও করতে পারে।
আমার শাস্ত্রীয় জ্ঞানমতে এরূপ ক্ষেত্রে উনার বিধবা স্ত্রী মুখাগ্নি ও শ্রাদ্ধের অগ্রাধিকারী ।পতি হলেন স্ত্রীর মহাগুরু ।মহাগুরু নিপাতে স্ত্রীকে এক বছর কালাশৌচ পালন করতে হয়।
শাস্ত্রীয় ব্যবস্থায় বলা হয়েছে, পুরুষের ক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে অধিকারী হলো, জ্যেষ্ঠপুত্র, তার অভাবে পরবর্তী কনিষ্ঠ পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র, অপুত্রা পত্নী,পুত্রবতী পত্নী, অদত্তা কন্যা, বাগদত্তা কন্যা, দত্তা কন্যা, দৌহিত্র, কনিষ্ঠ সহোদর, জ্যেষ্ঠ সহোদর, কনিষ্ঠ বৈমাত্রেয়, কনিষ্ঠ সহোদর পুত্র, জ্যেষ্ঠ সহোদর পুত্র ( ভাতিজা)। তাহলে দেখা যায়, ভাতিজা অনেক পরে।কিন্তু কেউ কেউ নিজ স্বার্থে অথবা নিজের ইগো প্রতিষ্ঠিত করতে ভাতিজাকে ছেলের জায়গায় এনে বিধান দেন।এমনকি ভাতিজাকে ধরা লওয়ান,মাথা মুণ্ডণ করে শ্রাদ্ধাদি ক্রিয়া করান।কেউ কেউ মৃত ভাইয়ের সম্পত্তি পাবার লোভে এরূপ করাতে পুরোহিতকে গাইড করার চেষ্টা করেন ।
আমি শাস্ত্রজ্ঞ নহি ।তবে শাস্ত্র নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করি এবং অনেক ক্ষেত্রে নিজে জানলেও পণ্ডিত বা শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তিদের শরণাপন্ন হই এবং শেয়ার করে শাস্ত্র ও বিবেকের সাথে মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নেই।
শাস্ত্র নিয়ে লেখালেখি করতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছি ।কারণ কিছু কিছু আত্মজ্ঞানী বলেন এগুলো লিখার কোনো অর্থ নেই ।অথচ কেউ কেউ বিভিন্ন ফেইসবুক বন্ধুর লিখা সংগ্রহ করে অন্য জায়গায় গিয়ে বাহাদুরি করেন।তাই আমি শাস্ত্রীয় আলোচনায় নিজেকে বোকাই ভাবি।বোকা না হলে কি নিজের খেয়ে মানুষকে জ্ঞান দিতে যাই।বলা হয় বিদ্যা দান করলে বিদ্যা বাড়ে ।এভাবে জ্ঞান দান করলে জ্ঞান বাড়ে ।কিন্তু শাস্ত্রে আবার অপাত্রে জ্ঞান দান নিষেধ করা হয়েছে ।ফেইসবুকে পাত্র বা অপাত্র থাকা অস্বাভাবিক নয়।আমার একটি ছেলে সন্তান ও নেই যে আমার লিখা পাঠ করে কিছু শিখতে পারবে ।অবশ্য ভাতিজা আছে ।সেও ছোট ।দুটো মেয়ে আছে ।হয়তো কিছু শাস্ত্রীয় বিষয় শেখার আছে ।কিন্তু স্মৃতি শাস্ত্রের বিষয় তো তাদের জানার প্রয়োজন নেই ।যাহোক, মনের দুঃখে এ কথাগুলো বললাম কিছু কুলাঙ্গারের জন্য ।অথচ এসব কুলাঙ্গার যুক্তিবাদী হলেও অধমের প্রয়োজন যে পরতে পারে তা ভাবে না।আমি মনে করি সবার প্রয়োজন আছে ।কিন্তু অনেক সময় মনটা নষ্ট হয়ে যায় ।
যাহোক, এ সঙ্কটময় মুহূর্তে আমি আমার ব্যক্তিগত প্রয়োজনেই স্মৃতি শাস্ত্রের বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম ।আমার এক পিসতুতো ভাই আজ বিকালে দেহত্যাগ করেছেন ।উনি এক বিধবা স্ত্রী ও তিনটি কন্যা সন্তান ( বিবাহিতা) রেখে দেহত্যাগ করেন ( ওঁ দিব্যান্ লোকান স গচ্ছতু)।"আমি আমার আলোচনা মোতাবেক বিধান দিয়েছি ।তবু অধিকতর নিশ্চিত হবার জন্য আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম ।সেটা আমার নিজের ব্যাপার।তাই শাস্ত্রজ্ঞ বন্ধুদের মতামত পেলে আমার পূর্ণ সন্তুষ্টি আসবে ।আমার দাদার বিদেহী আত্মার পরম শান্তি কামনা করার জন্য সবিনয়ে অনুরোধ করা হলো ।
আসলে আমার যেকোনো পোস্ট করার পেছনে একটা মহৎ উদ্দেশ্য থাকে ।আজ শাস্ত্রবাক্য ভুল ব্যাখ্যার কারণেই সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে ।আর এগুলো করছে কিছু ধর্ম ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থে অথবা শাস্ত্রবাক্যে পরিপক্ব জ্ঞানের অভাবে।জ্ঞানের অভাবে ভুল ব্যাখ্যা দিলে আমার কিছু নেই ।কিন্তু জেনে শুনে ভুল ব্যাখ্যা দিলে তার বিচারের ভার পরমেশ্বরের উপর এবং যুক্তিবাদীদের বিচারের ভার প্রকৃতির উপর দিলাম ।
No comments:
Post a Comment