Friday, May 17, 2019

সনাতন ধর্মকে নিয়ে অহেতুক সমালোচনা কাম্য নয়,
ইসলাম ধর্মের লোকদের মাঝে কেউ কেউ সনাতন ধর্মের ঈশ্বরের একত্ববাদ এবং মূর্তি পূজা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ।কেউ কেউ হিন্দু ধর্ম কোন ধর্ম নয়, স্রষ্টার একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম এবং পবিত্র কোরআন নাযিল হওয়ার পর অন্য ধর্মগ্রন্থ বাতিল এবং ইসলাম ধর্ম নিরাকার ঈশ্বরে বিশ্বাসী,সনাতনধর্মের লোক  নিরাকার ঈশ্বরে বিশ্বাসী নয় বলে থাকেন ।এতদবিষয়ে সনাতন ধর্মের লোকদের মাঝে সন্দেহের বা খটকার সৃষ্টি করা হয় ।আমি সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্ম গ্রন্থ পবিত্র বেদের আলোকে আলোচনায় ব্রতী হলাম ।সনাতন ধর্মের মহাবাক্য, একমেবাদ্বিতীয়ম (ছান্দোগ্য উপনিষদ-৬|২|১)। ঋকবেদে বলা হয়েছে, একং সদ্বিপ্রা বহুধা বদন্তি (১|১৬৪|৪৬)। অর্থাৎ সদ্বস্তু এক,বিপ্ররা বহু নামে অভিহিত করে থাকেন ।সুতরাং, পবিত্র বেদ নিখুঁত একত্ববাদের ধারক।ব্রহ্মসূত্রে বলা হয়েছে, একং ব্রহ্ম, দ্বৈত নাস্তি নাহিনা নাস্তি,কিঞ্চন ।অর্থাৎ, ব্রহ্ম বা পরমেশ্বর এক, তার মতো কেউ নেই, কেউ নেই, সামান্য ও নেই ।কেউ কেউ ব্রহ্ম আর ব্রহ্মাকে এক করে ফেলেন ।ব্রহ্ম হলেন স্রষ্টা এবং ব্রহ্মা হলেন ব্রহ্মের সৃষ্ট ।ব্রহ্মার স্ত্রীলিঙ্গ ব্রহ্মাণী আছে ।ব্রহ্মের কোন লিঙ্গান্তর নেই ।ব্রহ্মের স্বরূপ ওঁ যার কোন লিঙ্গান্তর বা বচনান্তর নেই ।সনাতন ধর্মে র লোক বহুদেবতাবাদী, বহু ঈশ্বরবাদী নন ।ঈশ্বর ও দেবতা এক নন।দেবতা সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের এক একটি গুণের প্রতীক বা শক্তি ।আর সনাতন ধর্মের লোক মূর্তি পূজা করেন না,মূর্তিতে ঈশ্বর বা দেবতার পূজা করে থাকেন ।যদি মূর্তিকে ঈশ্বর ভেবে পূজা করা হতো, তাহলে পূজার পর মূর্তিকে বিসর্জন না দিয়ে বা গাছ তলায় না রেখে ঘরেই রাখা হতো ।দেবতা পূজা করে ঈশ্বরের সাথে অংশীদারিত্ব করা হয় সে ধারণা সঠিক নয় ।ঈশ্বর নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তা ,আর দেবতারা ঈশ্বর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ।ঈশ্বর এক একটি কর্মভার একেকজন দেবতার উপর অর্পণ করেন ।সকল দেবতার পূজা সমাপন করে বিষ্ণুর নামে সমর্পণ করা হয় ।ঈশ্বর সর্বব্যাপী বলে ঈশ্বরের গুণবাচক নাম বিষ্ণু ।সনাতন ধর্মের লোক পৌত্তলিক নয়,প্রতিমা পূজক ।ইসলাম ধর্ম প্রচারের আগে আরববাসী পৌত্তলিক ছিল ।তাদের পূজিত দেবতার সাথে সনাতন ধর্মের দেবতার কোন মিল নেই ।সনাতন ধর্মের দেবতা কালী, দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী দেবতার নামে কোন দেবতা আরববাসীর ছিল না ।আরববাসীর লোকদের নামের সাথে সনাতন ধর্মের লোকদের নামের কোন মিল নেই ।আবু তালেব, আব্দুল মোতালেব, ওসমান, আলী,আবুবকর( রাঃ),আমেনা, ইত্যাদি নাম সনাতন ধর্মের লোকদের নেই ।।কাজেই  ,পৌত্তলিক আরববাসীকে সনাতন ধর্মের লোক বলে অভিহিত করা যথাযথ নয়। হযরত মুহাম্মদ ( সাঃ) এর নির্যাতনকারী সীমার ও এজিদ এর নাম সনাতন ধর্মে নেই ।হিন্দু ধর্ম একটি ধর্ম নয়,সেই সমালোচনার বিরূপ সমালোচনা না করে বলছি ,হিন্দুধর্ম কোন ধর্ম নয়, আমাদের ধর্মের নাম সনাতন ধর্ম ।সনাতন মানে শাশ্বত ও চিরন্তন ।হিন্দু একটি সম্প্রদায় যারা সনাতনী নামে পরিচিত ।হিন্দু তথা সনাতনীদের ধর্মের নাম সনাতন ধর্ম ।যেমন মুসলমান একটি সম্প্রদায় এবং তাদের ধর্মের নাম ইসলাম ধর্ম ।ইসলাম ধর্মের লোকদের কেউ কেউ বলে থাকেন, কোরআন নাযিল হওয়ার পর অন্য ধর্ম গ্রন্থ বাতিল হয়ে গিয়েছে ।আমার মতে, সনাতন ধর্ম যেহেতু ইসলাম ধর্মের অন্তর্ভুক্ত নয়,কাজেই তাদের ধর্ম গ্রন্থ নাযিল হওয়ার পর সনাতন ধর্মের ধর্ম গ্রন্থ বাতিল হওয়ার প্রশ্ন উঠে না ।ইসলাম ধর্মের মোট একশত চারখানা আসমানী কিতাব এবং প্রধান আসমানী কিতাব চারখানা ।একশত আসমানী কিতাবের মধ্যে সনাতন ধর্মের প্রধান ধর্ম গ্রন্থ বেদসহ কোন ধর্ম গ্রন্থ থাকার কথা নয় ।কাজেই, বাতিল হওয়ার প্রশ্ন কী যুক্তিযুক্ত? ইহুদি ও খ্রিস্টান আহেলে ইসলাম বা আহেলে কিতাব ।আহলে কিতাব হলো প্রত্যাদিষ্ট ধর্মের অনুসারী ।তাদের ধর্মগ্রন্থ তাওরীত ও ইঞ্জিল বিকৃত হয়ে থাকলে তারা তা বাতিলের দাবি করতে পারেন, সনাতন ধর্মের কোনো ধর্ম গ্রন্থ নয় ।সনাতন ধর্মের সাথে ইসলাম ধর্মের কোনো বিরোধ নেই, সর্ব ক্ষেত্রে মিল ও  নেই ।স্ব স্ব ধর্মের লোকের কাছে স্ব স্ব ধর্ম শ্রেষ্ঠ ধর্ম ।কোনো ব্যক্তিকে সমালোচনা করা যায়, কোন ধর্মকে সমালোচনা করা সৃষ্টির সেরা মানবজাতির ধর্ম নয় ।সনাতন ধর্মের কোনো প্রবর্তক নেই, স্বয়ং ঈশ্বর সেই ধর্মের স্রষ্টা ।বেদের ঋষিগণ প্রধান ধর্ম গ্রন্থ বেদের দ্রষ্টা।বেদ ঈশ্বরের বাণী ।তাই, বেদ বাতিলের প্রশ্নই উঠে না ।পবিত্র বেদে ঈশ্বর নিরাকার ।তবে, দ্রষ্টা ঋষিগণ কর্তৃক বেদের কোন জায়গায় ঈশ্বরের সাকার রূপের বর্ণনা পাওয়া যায় । যজুর্বেদে বলা হয়েছে, তিনি ( পরমাত্মা) সর্ব ব্যাপক, সর্ব শক্তিমান, শরীর রহিত,রোগ রহিত, জন্ম রহিত, শুদ্ধ,নিষ্পাপ,      সর্বজ্ঞ, অন্তর্যামী, দুষ্টের দমনকর্তা ও অনাদি।তিনি তাঁর শাশ্বত প্রজা জীবের জন্য যথাযথ ফলের বিধান করেন(৪০|৮)।, এখানে ঈশ্বরের নিরাকারত্ব বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে ।ঋকবেদে আরো বলা হয়েছে, পুরুষের অনন্ত মস্তক, অনন্ত নয়ন,অনন্ত চরণ।তিনি বিশ্ব জগতকে- সর্বতোভাবে পরিব্যাপ্ত করে ও জীবদেহে নাভির দশাঙ্গুল উর্দ্ধে হৃদয়মধ্যে অবস্থিত আছেন ১০|৯০|১)।এখানে কিছুটা সাকার রূপের ইংগিত পেলেও পরোক্ষভাবে নিরাকারত্ব প্রকাশ পেয়েছে ।বলা হয়েছে, ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহদ যশঃ ।অর্থাৎ, তার কোনো প্রতিমা নেই যাঁর নাম মহৎ যশ আছে ( যজুর্বেদ-৩২|৩)।কেউ কেউ প্রতিমা শব্দকে প্রতিম হিসেবে ধরে নিয়ে তাঁর তুলনা নেই বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন ।যাহোক ঈশ্বরের সাকার নিরাকার উভয় ব্যাখ্যা থাকলেও ঈশ্বরের অস্তিত্ব অস্বীকার করা হয় নাই ।তাই সনাতন ধর্মের লোকের ঈশ্বরকে সাকার নিরাকার বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তাদেরকে মাইনাস করার সুযোগ নেই ।সনাতন ধর্মাবলম্বী ভাই গিরিশচন্দ্র সেন সর্ব প্রথম কোরান শরীফ বাংলা  ভাষায় অনুবাদ করেন ।সনাতন ধর্মে যদি সারবত্তা না থাকতো অথবা সনাতন ধর্ম কোনো ধর্ম না হতো, তাহলে তিনি অবশ্যই ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণ করতেন ।সনাতন ধর্ম আদি ধর্ম।সনাতন ধর্ম শাশ্বত ও চিরন্তন যার নামের মধ্যে লুকিয়ে আছে ।সনাতন ধর্মের কোনো ধর্ম সভায় অন্য ধর্মের সমালোচনা করা হয় না ।নিজের ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে অন্য ধর্মের সমালোচনা ঠিক নয় ।কোনো ধর্ম সম্পর্কে জেনে না জেনে, বুঝে না বুঝে সমালোচনা করা প্রকৃত ধার্মিকের পরিচয় নয়।সনাতন ধর্ম এমন একটি ধর্ম যা সব সময় শুধু সনাতন ধর্মের লোকদের জন্য নয়,সারা বিশ্ববাসীর মঙ্গল কামনা করে ।জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সনাতন ধর্মের ধর্মগ্রন্থের আলোকে অনেক কবিতা,গান ও শ্যামা সংগীত লিখেছেন ।তিনি ইসলাম ধর্মের গজল লিখার পাশাপাশি সনাতন ধর্ম নিয়ে লিখতে ভুল করেননি ।যাহোক, সনাতন ধর্মের মতো কিছু সংখ্যক প্রজ্ঞাবান উদারপন্থী লোকও ইসলাম ধর্মে রয়েছেন যারা অন্য ধর্মের সমালোচনা করেন না ।তাদের কাছে সবিনয়ে অনুরোধ, তারা যেন সনাতন ধর্মের সমালোচনাকারীদেরকে প্রজ্ঞার বলে বুঝিয়ে সনাতন ধর্মকে অহেতুক সমালোচনার হাত থেকে রক্ষা করেন । ।কাউকে আঘাত করার জন্য আমার লিখার উদ্দেশ্য নয়, অকারণে ভুল বোঝাবুঝির অবসান ও সনাতন ধর্ম সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনার নিরসনের ক্ষুদ্র প্রয়াস মাত্র ।আমার সতীর্থ সনাতনী ভাইবোনদের কাছে বিনীত অনুরোধ, আমার লিখার সহমত পোষণ করতে যেয়ে ইসলাম ধর্মকে আঘাত না করে মন্তব্য করবেন।পরিশেষে বলি,সনাতন ধর্মকে নিয়ে অহেতুক সমালোচনা কাম্য নয় । ।আমার লিখাকে নেতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে দর্শন করার বাসনা রইলো । আমার লিখার ভুল ভ্রান্তির জন্য ক্ষমা প্রার্থী ।

No comments:

Ekadoshi

তর্পণ বিধি

 আমি প্রথমেই মহালয়া বিষয়ে দু'একটা কথা বলে নিই, তারপর  তর্পণ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।  মহালয়া মানে শুধু মায়ের আগমন নয়, মহাল...

চারবর্ণের অশৌচ ব্যবস্তা