Friday, May 17, 2019

চার বর্ণের অশৌচ বিভ্রান্তির সমাধান

চার বর্ণের অশৌচ নিয়ে আজও বিভ্রান্তির শেষ নেই ।আজকাল কেউ কেউ সর্ববর্ণে দশাহাশৌচ পালনের পক্ষপাতী ।এর সমর্থনে গরুড় পুরাণের পূর্ব খণ্ডের ৬|১০ও ৬|৪০নং এবং মনুসংহিতার ৫|৫৯নং শ্লোকের উদ্ধৃতি দেন।বলা হয়েছে, শ্রীকৃষ্ণ বলেন, সপিণ্ডদিগের মরণাশৌচ দশাহ; যারা নিপূণভাবে শুদ্ধি আকাঙ্ক্ষা করেন তারা পুত্রাদি  জননে ও দশাহাশৌচ পালন করেন (৬|১০)আরো বলা হয়েছে,শ্রীকৃষ্ণ বলেন,  যে প্রেতের উদ্দেশ্য একাদশ দিনে বৃষোৎসর্গ না হয়,তার উদ্দেশ্য শত শত শ্রাদ্ধ করলে ও প্রেতত্ব বিমুক্ত হয় না ৬|৪০)।এখানে বক্তা শ্রীবিষ্ণু এবং শ্রোতা ব্রাহ্মণ কশ্যপ মুনির সন্তান বিষ্ণুভক্ত গরুড় ।উল্লেখ্য,গরুড় পুরাণে উল্লিখিত শ্রীকৃষ্ণ হলেন চতুর্ভুজা শ্রীবিষ্ণু ।কারণ, বিষ্ণুর সহস্র নামের এক নাম কৃষ্ণ ।যাহোক, তাদের ভাষায় ভগদ্বাক্য অলঙ্ঘনীয় ।আমি ও তাই বলি।এ শ্লোকগুলো কেবলমাত্র বিপ্রদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ।কারণ উক্ত শ্লোকে' সর্বেষামেব বর্ণানাং ' অর্থাৎ সর্ববর্ণের উল্লেখ নেই ।তাছাড়া গরুড়ের জিজ্ঞাসার উত্তরে ভগবান বিষ্ণু অন্তেষ্টি ক্রিয়া থেকে শ্রাদ্ধ ক্রিয়া পর্যন্ত বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, বিপ্রগণ বিধি অনুসারে সমস্ত কার্য করবেন ( উঃখঃ ৫|১৮০)। এই কথা বলার পর ষষ্ঠ অধ্যায়ের ১০নং শ্লোক পর্যন্ত কোন বর্ণের উল্লেখ না থাকায় তা বিপ্রদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে তা শতভাগ নিশ্চিত ।গরুড় পুরাণেই একাধিকবার চার বর্ণের ভিন্ন ভিন্ন অশৌচ বিষয়ে বলা হয়েছে ।গরুড় পুরাণের পূর্ব খণ্ডের ৫০|৮১-৮৩,১০৬|১৯,২২৬|৩৮নং শ্লোকে চার বর্ণের আলাদা আলাদা অশৌচ বর্ণনা করা হয়েছে । এবিষয়ে এখানে নিন্মে প্রদত্ত ভিডিও আলোচনাটি দেখলে আরো ক্লিয়ার হতে পারবেন, 

  
গরুড় পুরাণের পূর্ব খণ্ডের ১০৭|১০-১১নং শ্লোকে অশৌচ বিষয়ে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, ব্রহ্মবিৎ ব্রাহ্মণ প্রেতাশৌচ ও জননাশৌচ হলে তিন দিনে শুদ্ধি লাভ করবেন ।এরূপ ব্রহ্মবিৎ ক্ষত্রিয় দশ দিনে, ব্রহ্মবিৎ বৈশ্য বারদিনে এবং ঐরূপ শূদ্র ত্রিশ দিনে শুদ্ধি লাভ করবেন ।যিনি জাতি মাত্র বিপ্র তিনি দশ দিনে, জাতিমাত্রে ক্ষত্রিয় বার দিনে, জাতিমাত্র বৈশ্য পনেরো দিনে এবং জাতিমাত্র শূদ্র এক মাসে শুদ্ধ হবেন ।কাজেই, দেখা যায়, শূদ্র ব্রহ্মবিৎ হলে ও অশৌচের শিথিলতা নেই অর্থাৎ অশৌচ ত্রিশ দিন ।তাছাড়া গরুড় পুরাণের আদি বক্তা হরি বা বিষ্ণু ।তাই, সকল শ্লোক শ্রীহরি কর্তৃক সমর্থিত ।একটা জিনিস লক্ষ্য করুন, গরুড় পুরাণে শ্রীবিষ্ণুর বাচনীক বৃষোৎসর্গ না হলে শত শত শ্রাদ্ধ করলে ও প্রেতত্ব বিমুক্ত হয় না উল্লেখ থাকলেও বৃষোৎসর্গ শ্রাদ্ধ করার বিষয়ে কোন বক্তব্য সভা সমিতিতে দেয়া হয়নি ।কেবল এগারো দিনে শ্রাদ্ধ প্রতিষ্ঠিত করতে উক্ত শ্লোকের উদ্ধৃতি দেয়া হয় ।বিষ্ণু পুরাণে বলা হয়েছে, সপিণ্ডের জননে ও মরণে ব্রাহ্মণের অশৌচ দশাহ, ক্ষত্রিয়ের দ্বাদশাহ, বৈশ্যের পঞ্চদশাহ এবং শূদ্রের একমাস (১৩|১৯,১১/১-৩)।বিষ্ণু পুরাণের শ্লোকগুলো গরুড় পুরাণের চার বর্ণের অশৌচ বিষয়ে শ্লোকগুলোকে পূর্ণ সমর্থন করে এবং বিপ্রদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শ্লোকেরও সমর্থন দেয় ।মনুসংহিতার ৫|৫৯নং শ্লোকটি যে ব্রাহ্মণদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা ৫/৮৩নং শ্লোকের দ্বারা প্রমাণিত হয় ।সরলার্থ ও তাৎপর্যে বলা হয়েছে, সপিণ্ডের মৃত্যু হলে নির্গুণ ব্রাহ্মণের দশ দিন এবং গুণের তারতম্য অনুসারে চারদিন, তিন দিন কিংবা এক অহোরাত্র মাত্র অশৌচ হবে ।ব্রাহ্মণের বেদ জ্ঞান ও অগ্নিচর্যা বিবেচনা করে অশৌচ কালের এরকম তারতম্য হয়( ৫/৫৯)।উক্ত শ্লোকে ব্রাহ্মণ শব্দটি উল্লেখ না থাকলেও সর্ববর্ণের উল্লেখ না থাকায় ব্রাহ্মণদের ক্ষেত্রেই বুঝতে হবে ।১০০নং শ্লোকে বলা হয়েছে, হে দ্বিজ শ্রেষ্ঠগণ! সপিণ্ডের মৃত্যুতে অন্যান্য সপিণ্ডের পক্ষে শৌচ লাভ করার যে সব বিধান আছে, তা তোমাদের বললাম ।এখন অসপিণ্ড মরণে যে রকম অশৌচ হয়, তা আপনারা এবার শুনুন।এখানে দ্বিজ শ্রেষ্ঠ বলতে ব্রাহ্মণকে বুঝানো হয়েছে ।তাছাড়া ৮৩নং শ্লোকে বলা হয়েছে, উপনীত সপিণ্ডের মরণে বা জননে ব্রাহ্মণেরা দশ দিনে শুদ্ধ হন, ক্ষত্রিয়েরা দ্বাদশ দিনে, বৈশ্যেরা পঞ্চদশ দিনে এবং শূদ্র এক মাসে শুদ্ধ হন ।৫৯নং শ্লোকে গুণের তারতম্য অনুসারে তিন দিন ও এক অহোরাত্র অশৌচের কথা বলা হয়েছে ।যে ব্রাহ্মণ সাগ্নিক ও স্বাধ্যায় পাঠে নিরত তাঁর একদিন অশৌচ হয় ।নিরগ্নি ও কেবলমাত্র স্বাধ্যায় পাঠে নিরত ব্রাহ্মণের তিন দিন এবং জাতিমাত্রে ব্রাহ্মণের দশদিন অশৌচ হয় ।একাহাচ্চুদদ্ধতে বিপ্রোহযাগ্নি বেদ সমন্বিতঃ।ত্র্যহং কেবল বেদস্তুদ্বিহীন দশভির্দ্দিনৈঃ।।কাজেই, ৫৯নং শ্লোকটি কেবল ব্রাহ্মণদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তা প্রমাণিত ।সর্ববর্ণে দশাহাশৌচ এর সমর্থনে, 'এই শ্লোকের উদ্ধৃতি  দেয়া হয়, ' সর্ব্বেষামেব বর্ণানাং সূতকে মৃতকে তথা ।দশাহাচ্ছুদ্ধিরেতষামিতি শাতাতপঃ অব্রবীৎ।।মিতাক্ষরায় উক্ত অঙ্গিরা বচন ।উক্ত শ্লোকে বুঝা যায় অঙ্গিরা ঋষি শাতাতপঃ ঋষির বরাত দিয়ে বলেছেন সর্ববর্ণে দশাহাশৌচ ।এই শ্লোকটির কোন শ্লোক সংখ্যা উল্লেখ নাই।তাছাড়া অঙ্গিরা সংহিতায় বলা হয়েছে, ব্রাহ্মণ দশ দিনে শুদ্ধ হন,ক্ষত্রিয় বার দিনে, বৈশ্য এক পক্ষে  এবং শূদ্র এক মাসে শুদ্ধ হন (৫১নং শ্লোক)।অন্যত্র বলা হয়েছে, শাতাতপ ঋষি বলেছেন, ক্ষত্রিয় এগার দিনে, বৈশ্য বার দিনে এবং শূদ্র বিশ দিনে শুচি হবে ( লেখকঃ জিতেন্দ্রিয় দাসের শ্রাদ্ধ তত্ত্ব বিচার- ইসকন) উক্ত লেখক প্রাগোক্ত সর্ববর্ণে দশাহাশৌচ পালনের শ্লোকটি উপহার দিয়ে সর্ববর্ণেদশাহাশৌচ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন ।কিন্তু আঙ্গিরা ও শাতাতপার আলোচ্য শ্লোক থেকে আপনারাই বিচার করুন কোনটা সঠিক হবে?ইসকন প্রকাশিত :শ্রীল রূপ গোস্বামী প্রভুপাদ বিরচিত  ভক্তি রসামৃত গ্রন্থে অষ্টম অধ্যায়ে বর্জনীয় অপরাধ বিষয়ে বলা হয়েছে, দূষিত অবস্থায় মন্দিরে প্রবেশ করা উচিত নয় (বৈদিক শাস্ত্রের নির্দেশ অনুযায়ী পরিবারের পরিবারে কারো মৃত্যু হওয়ার পর সমস্ত পরিবারই কিছু দিনের জন্য অশুচি হয়ে যায় ।ব্রাহ্মণদের এই অশৌচ অবস্থা বারো দিন থাকে ।ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যদের পনেরো দিন এবং শূদ্রের জন্য ত্রিশ দিন ।তাহলে বিচার করুন,জিতেন্দ্রিয় দাসের সর্ববর্ণে দশাহাশৌচ কতটুকু গ্রহণযোগ্য তাছাড়া অত্রি সংহিতার"৮৫নং,যাজ্ঞবল্ক্য সংহিতার ৩|২২, উশন সংহিতার ৬|৩৪,সংবর্ত্ত সংহিতার ৩৮নং শ্লোক, পরাশর সংহিতার ৩|৪, শংখ সংহিতার১৫|২-৩,গৌতম সংহিতার চৌদ্দ অধ্যায়ে, কুর্ম পুরাণের ২৩|৩৮, পদ্ম পুরাণ,ব্রহ্ম পুরাণ, অগ্নি পুরাণ, মার্কণ্ড পুরাণ, ব্রহ্ম বৈবর্ত পুরাণ,মৎস পুরাণসহ অসংখ্য পুরাণ ও সংহিতায় চার বর্ণের আলাদা আলাদা অশৌচ বর্ণনা করা হয়েছে ।এতগুলো পুরাণ ও স্মৃতি অস্বীকার করার সুযোগ নেই ।তাছাড়া কেউ কেউ বার দিন, আবার কেউ পনেরো দিন অশৌচ পালন করে শ্রাদ্ধাদি কার্য করে থাকেন ।সুবিধাবাদী ব্যবস্থাপকরা ব্যবস্থা  দিয়ে থাকেন ।সর্ববর্ণে দশাহাশৌচ শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্ত থাকলে বারো দিন ও পনের দিনের অশৌচ পালনের সিদ্ধান্ত দিতেন না ।কেউ কেউ বলেন, বর্তমান যুগে মানুষের চাকুরি বা অন্যান্য  সমস্যার কথা বিবেচনা করে অশৌচ কমিয়ে দেন।শাস্ত্রীয় বিধান পরিবর্তন করার কী সুযোগ আছে সভা সমিতি করে ।তবে অশৌচ বিধি যদি শাস্ত্রীয় সিদ্ধান্ত না হয়ে থাকে তাহলে তো তিন দিনে বা একদিনে শ্রাদ্ধ করা যায় ।আর শূদ্রের শ্রাদ্ধে ব্রাহ্মণ না আনলেও তো হয় ।মনু বলেছেন, স্ত্রী ও শূদ্র অমন্ত্রক শ্রাদ্ধ করতে পারবে ।ব্রাহ্মণের ব্যবসায় হাত দিলাম ।একথা বললাম এজন্য, আজও ব্রাহ্মণরাই তো কেউ কেউ অশৌচ থাকতে, কেউ অশৌচান্তে শ্রাদ্ধ ক্রিয়া করাচ্ছেন ।সকল ব্রাহ্মণ শাস্ত্রীয়ভাবেএক মতে নিজের ও যজমানের মঙ্গলের কথা ভাবেন, ইহকাল ও পরকালের কথা ভাবেন ।আমি কাউকে উপদেশ দিচ্ছিনা ।উপদেশ দেবার মতো ক্ষমতা ও আমার নেই ।সমাজের দায় বদ্ধতা থেকেলও ফেইসবুক বন্ধুদের প্রশ্নের আলোকে আমার লিখা ।বর্তমান যুগের পরিবেশ ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে অশৌচ কমানোর বিষয়ে মত প্রকাশ করতে প্রবল ইচ্ছে থাকলে ও শাস্ত্র পাঠ করে শাস্ত্রের বাহিরে সিদ্ধান্ত দিতে বিবেক বাধা দেয় ।যাহোক, শাস্ত্রের আলোকে বলি ,ব্রাহ্মণদের অশৌচ দশদিন, ক্ষত্রিয়র বার দিন, বৈশ্যের পনেরো দিন এবং শূদ্রের একমাস ।আর শাস্ত্রের আলোকে সিদ্ধান্ত নেবার ভার আপনাদের সর্বোচ্চ আদালত বিবেকের উপর ছেড়ে দিলাম ।সুদীর্ঘ লিখায় ভুল ভ্রান্তি র জন্য ক্ষমা প্রার্থী ।

6 comments:

Unknown said...

পাগলেরপ্রলাপ

Unknown said...

শ্রাদ্ধ সম্পর্কে মহাপভুর কথিত বচন উল্লেখকরেন নি কেন??

Unknown said...

শ্রাদ্ধ সম্পর্কে মহাপভুর কথিত বচন উল্লেখকরেন নি কেন??

Unknown said...

স্ত্রী ও শূদ্র অমন্ত্রক শ্রাদ্ধ করিতে পারবে যদি একটু প্রমাণ উল্লেখ করেন তা ভালো হয়..... নমস্কার

Unknown said...

পিতা অপুত্রক।তাঁর দুই কন্যা- একজন বিবাহিত, অপর জন অবিবাহিতা।পিতার মৃত্যু হয়েছে- অবিবাহিত কন্যাটি মুখাগ্নি হইতে আরম্ভ করে " আদ্যশ্রাদ্ধ" পর্যন্ত কর্ম করেছে ।এরপর সপিন্ডকরন কর্মটি উক্ত অবিবাহিত কন্যাটি করতে চাই- এখন প্রশ্ন হল :
1) উক্ত অবিবাহিত কন্যা কি সপিন্ডকরন করার শাস্ত্রীয় অধিকারী?
2) অবিবাহিতা কন্যার পিতা মাতার " মৃত্যুতে " একদিন অশৌচ- সে কি দশদিন অশৌচ পালন করতে পারে? সে একদিন অশৌচ পালন করলে ঞ্গাতি ভায়াদ্ দের অশৌচ কতদিনে যাবে?
*** দয়া করে প্রমাণ বচন সহ প্রশ্নগুলির সমাধানের আবেদন ।।

Manik chakraborty said...

1/সপিণ্ডিকরণের বিষেশ প্রয়োজন নেই,
2/অবিবাহিতা কন্যার অশৌচ শাস্ত্রীয়ভাবে একদিন বিধান থাকলেও জ্ঞাতীবর্গের পূর্ণাশৌচেই বিধেয়, আর অবিবাহিত কন্যা সে যেহেতু পিতৃালয়ে অবস্থান করে বা করতে হবে, সেহেতু তাকে পিতৃান্ন গ্রহন করতে হবে, তাই অবিবাহিত কন্যাকেও জ্ঞাতীবর্গের সমান পূর্ণাশৌচ ভোগ করে শ্রাদ্ধ করতে হবে।

Ekadoshi

তর্পণ বিধি

 আমি প্রথমেই মহালয়া বিষয়ে দু'একটা কথা বলে নিই, তারপর  তর্পণ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।  মহালয়া মানে শুধু মায়ের আগমন নয়, মহাল...

চারবর্ণের অশৌচ ব্যবস্তা