🙏নমস্কার সকলকে,
আমরা সকলেই ছোটবেলায় ১ থেকে ১০ এর সংখ্যামালা মনে রাখিবার জন্য একে চন্দ্র, দুয়ে পক্ষ ইত্যাদি পড়িতাম। প্রত্যেকটি সংখ্যার পিছনেই এইরকম কিছু বিশেষ নাম যোগ করা হত। ছড়ার মত করে এইভাবে পড়িলে সহজে মনে রাখা যায় ।
তবে শুধু সংখ্যা মনে রাখিবার জন্য নয় বরং এর মাধ্যমে যে বিশিষ্ট নাম গুলি বলা হতো সেইগুলিও মনে রাখিতে এই ভাবে পড়া হইত।
এই সংখ্যাগুলির পিছনে যে নামগুলি বলা হইত তাহা হইল – ১-এ চন্দ্র, ২-এ পক্ষ, ৩-এ নেত্র, ৪-এ বেদ, ৫-এ পঞ্চবাণ, ৬-এ ঋতু, ৭-এ সমুদ্র,৮-এ অষ্টবসু, ৯-এ নবগ্রহ এবং ১০-এ দশ দিক। তবে সংখ্যাগুলির পিছনের এই কথাগুলো বলা হইয়াছে যেইগুলির ব্যাপারে কেউ কেউ জানেন আবার অনেকেই সবগুলির ব্যাপারে জানেন না তাই সব কয়টির ব্যাপারে সাধ্যানুসারে কিছু বিবরণ দিবার চেষ্টা করিলাম ।
১) ১-এ চন্দ্র বলিতে চাঁদকে বোঝায়। যেইহেতু চাঁদ একটি রয়েছে তাই এক সংখ্যার সাথে চাঁদের কথা বলা হইয়া থাকে।
২) এরপরে যাহা বলা হয় তাহা ২-এ পক্ষ। এখানে দুয়ে পক্ষ বলতে মাসের দুটি পক্ষ কে বোঝানো হয়। পক্ষ দুটি হইল কৃষ্ণপক্ষ এবং শুক্লপক্ষ।
৩) এরপর আসে ৩-এ নেত্র। এখানে ৩টি নেত্র বলিতে আসলে তিনটি চোখের কথা বলা হয়ে থাকে। আমরা সকলেই দু চোখ বিশিষ্ট আর তৃতীয় চক্ষু হল জ্ঞান চক্ষু।
৪) ৪-এ বলা হয়ে থাকে বেদ। অর্থাৎ এখানে সর্ব প্রসিদ্ধ চারটি বেদের কথা বলা হয়। যেহেতু বেদ চার সংখ্যাবিশিষ্ট তাই তাহাকে চার সংখ্যার সাথে ধরা হয়। এই চারটি বেদ হইল ঋক্, সাম, যজু এবং অথর্ববেদ।
৫) এরপর যাহার কথা বলা হয় সেইটি হইল ৫-এ পঞ্চবান। তবে এর ব্যাপারে জানা থাকে না অনেকেরই। হিন্দু ধর্ম অনুসারে কামদেব অথবা মদন দেবের পাঁচটি বাণের কথা বলা হইয়া থাকে। এই পাঁচটি বাণ হইল---সম্মোহন তাপন, শোষণ, উন্মাদন এবং স্তম্ভন।
৬) এরপর আসে ৬-এ ঋতু। এর ব্যাপারে জানে সকলেই তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ছয়টি ঋতু হইল গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল, শরৎকাল, হেমন্তকাল, শীতকাল ও বসন্তকাল।
৭)। এরপর ৭-এ সমুদ্র বলা হয়। পুরাণে বর্ণিত হইয়াছে সাতটি সমুদ্রের নাম। এইগুলি হইল – লবণ, ইক্ষু, সুরা, ঘৃত (সর্পি) দধি-দুগ্ধ ও জল এই হইল সপ্তসাগর। এখানে অনেকে মনে করেন
সাতটি মহাসাগর । আধ্যাত্মিকভাবে কিন্তু তাহা নহে বলিয়া মনে হয় ।
৮) ৮-এ অষ্টবসু বলা হয়ে থাকে। হয়তো আজকের সময় অনেকেরই জানা নাই অষ্ট বসুর ব্যাপারে। এই অষ্ট বসু যাদেরকে বলা হত তারা দক্ষ রাজ কন্যার পুত্র। মহাভারতে আটজন বসুর কথা বলা হয়। এরা হইলেন দক্ষ রাজ কন্যা বসুর পূত্র। মহাভারতে ভীষ্ম একটি অতি উল্লেখযোগ্য এবং প্রসিদ্ধ নাম। আর এই ভীষ্ম কোন সাধারণ ব্যক্তি ছিলেন না তিনি ছিলেন অষ্ট বসুর শেষ বসু। পুরাণ অনুসারে এই অষ্ট বসুদের কখনও দেবতা আবার কখনও মানব কুলে জন্ম নেওয়ায় উপদেবতা বলা হয় । অষ্ট বসুর নামগুলি হইল-- ধর, সোম, ধ্রুব, অহ, অনিল, অনল প্রত্যুষ ও প্রভাস। অভিশপ্ত হইয়াই অষ্ট বসুগণ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন। ঘটনাচক্রে সাত জনই জন্মের পর-পরই মুক্তি লাভ করেন অভিশাপ থেকে। কিন্তু শেষ বসু অর্থাৎ প্রভাস থেকে যায়। তিনি রাজা শান্তনু এবং দেবী গঙ্গার পুত্র দেবব্রত। যিনি পরে ভীষ্ম নামে পরিচিতি লাভ করেন।
৯) এরপরে ৯-এ নবগ্রহ বলা হইয়া থাকে। আমরা জানি সৌরমণ্ডলের যে নবগ্রহের নাম রয়েছে সেগুলি হইল –সোম (চাঁদ) মঙ্গল, বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি,শনি, ইউরেনাস, নেপচুন ও প্লুটো। এখানে নেপচুন ও প্লূটো বাদ পড়িয়াছে , যোগ হইয়াছে রাহু ও কেতু । ৯ সংখ্যার সাথে এখানে যেই নবগ্রহের কথা বলা হইয়াছে সেগুলি হইল রবি, চন্দ্র, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, রাহু ও কেতু।
১০) সবশেষে বলা হয় ১০-এ দিকের কথা। যাহা আমাদের দিকগুলিকে উদ্দেশ্য করিয়া বলা হয়। এগুলি হইল পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ, ঈশান, বায়ু, অগ্নি, নৈঋত, উর্দ্ধ ও অধঃ।
No comments:
Post a Comment