Wednesday, November 10, 2021

সনাতনী সকল মতবাদী এক হোন, sokol sonatoni ebng sokol motobadi ek hon.

 সনাতনী সকল মতবাদী এক হোন( ১ম পর্ব):

সনাতন ধর্মে বিভিন্ন মতবাদী দেখা যায়।কেউ বৈষ্ণব, কেউ শাক্ত,কেউ শৈব, কেউ সৌর, কেউ গাণপত্য ।আবার বৈষ্ণব ও স্মার্ত মতবাদী এ দুটো প্রধান দুভাগে ও বিভক্ত ।

আবার সনাতন মতবাদী বিভিন্ন অবতার, মহাপুরুষ ও গুরুদেবের অনুসারী ।কেউ কৃষ্ণ, কেউ রাম,কেউ ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র, কেউ জগদ্বন্ধু সুন্দর, কেউ বাবা লোকনাথ, কেউ স্বরূপানন্দের, কেউ রাম ঠাকুরের,কেউ শ্যামানন্দ বাবা, কেউ সংযোগানন্দ গিরি, কেউ হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুসারী ও শিষ্য ।কেউ কেউ তাদের গুরুদেবকে ঈশ্বর, কেউ অবতার, কেউ মহাপুরুষ হিসেবে দেখেন ও প্রচার করেন। কোনো কোনো মতবাদী অন্য মতবাদীকে কটাক্ষ করে কথা বলেন । আমার কথা হলো, আপনারা ধর্মশাস্ত্রের আলোকে সিদ্ধান্ত নেবেন কে ঈশ্বর ,কে অবতার, কে মহাপুরুষ, কে গুরুদেব।তবে কাউকে কটাক্ষ করা ঠিক নয়।তাদেরকে বুঝিয়ে বলতে হবে ।গ্রহণ করা না করা যার যার ইচ্ছা ।বেদ,গীতা ও প্রকৃত পুরাণের আলোকে বুঝতে হবে কে ঈশ্বর, কে অবতার ও কে গুরুদেব, কে মহাপুরুষ ।আমরা নিজেরা ঈশ্বর বা অবতার বানিয়ে ফেলা ঠিক নয়।কারো অলৌকিক শক্তি থাকলে তাঁকে ঈশ্বর বা অবতার বলা উচিত নয়।কারণ আদি যুগে মুনিঋষিগণ ও অলৌকিক শক্তির অধিকারী ছিলেন ।তাই বলে কেউ অবতার নন।অবশ্য কেউ কেউ অংশাবতার বলে গণ্য ।তাই বলে তাঁরা ঈশ্বর নন।তবে ভগবান হতে পারেন।ঈশ্বরকে ও আমরা ভগবান বলি।তবে অবতার, মহাপুরুষ বা গুরুদেবকে ভগবান বলা যেতে পারে ষড় ঐশ্বর্যের অধিকারী হিসেবে, কিন্তু ঈশ্বর হিসেবে নন।



কেউ কেউ নিজেদের মতবাদ শ্রেষ্ঠ,আবার কেউ কেউ তাদের মতবাদ একমাত্র মতবাদ এবং অন্য মতবাদ কোনো মতবাদ নয় বলে মন্তব্য করেন । কেউ কেউ বলেন,অমুক মতবাদী মোক্ষ বা মুক্তি লাভ করবেন,অমুক মতবাদী স্বর্গে যাবেন,অমুক মতবাদী নরকে যাবেন এসব আলোচনা সনাতন ধর্ম সমর্থন করে না। কোন কাজ করলে কি ফল হয় তাই মূল ধর্মগ্রন্থের আলোকে আলোচনা করা কর্তব্য, কারো রচিত চটিগ্রন্থ বা নিজের নোট করা দর্শনের আলোকে নয়।সনাতন ধর্মের আলোকে  মতবাদ হলে সকল মতবাদই সমান ।ধর্ম কোনো বিজ্ঞাপনের পণ্য নয় যে তার জন্য প্রচার করে বেড়াতে হবে নিজের দল ভারী করার জন্য ।তাদেরকে ধর্মীয় প্রবক্তা তো দূরের কথা ধর্মীয় বক্তাই বলা যায় না।তাদেরকে ধর্ম ব্যবসায়ী বলা যায় ।কে মুক্তি লাভ করবে, কে স্বর্গে যাবে,কে নরকে যাবে তা পরমেশ্বর জানেন।মানুষ বলতে পারেন না।আমার মতে, যারা ধর্ম নিয়ে নিন্দা ও চর্চা করেন এবং কোন্দল করেন তারা প্রকৃত ধার্মিক তো নয়, তারা মানুষ কি না তাই বিচার্য বিষয় ।তবে একথা ঠিক, ভগবান আমাদেরকে সূতা ধরে পুতুলের মতো ঘুরাচ্ছেন এবং যাকে যে ফল দেবার যোগ্য সেই কর্ম তাকে দিয়ে করাচ্ছেন।আমাদেরকে বিবেক দিয়েছেন এবং  কোনটি ভালো ,কোনটি মন্দ তা করার জন্য বিবেক বুদ্ধি দিয়েছেন।যে যেমন কর্ম করবে তেমন ফল পাবে।এমতাবস্থায় ,ধর্ম নিয়ে আমাদের মতানৈক্য মোটেই ঠিক নয়।


আমাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ ।তারপর উপনিষদ ও গীতা ।তারপর স্মৃতি ও পুরাণ ।তবে স্মৃতি ও পুরাণের বাক্য শ্রুতির সাথে সাংঘর্ষিক হলে তা মান্য নয়।তাই মূল ধর্মগ্রন্থ ভালোভাবে পাঠ করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।

শ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ বলেছিলেন, " যত মত তত পথ ।সব মতেই ঈশ্বরকে পাওয়া যায় তাঁর কাছে ভক্তের কোনো জাত পাতের বিচার নেই ।হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সবাই যে নামেই তাঁকে ডাকুক সবই তাঁর কাছে পৌঁছায়।" উনার মতবাদকে শ্রদ্ধা রেখে আমি অন্যান্য ধর্ম বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।তবে যত মত তত পথ বলতে আমি একই পথকেই বুঝি ।কারণ শাক্ত মতের মতে চৌষট্টি রকমের মার্গ বা  পথ আছে তাকেই আমি বুঝি  ।বৈষ্ণব মতের ও চৌষট্টি রকমের মার্গ আছে ।আমার ধারণা অন্যান্য মতেও আছে ।কাজেই, সকল মতবাদীরই একটি পথ এবং গন্তব্যস্থল ও একই।আর তা হলো ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করা।


এমতাবস্থায়, আমার সবিনয়ে নিবেদন হলো, আসুন আমরা সনাতনী সকল মতবাদী এক হই।নিজ মতবাদে পরম নিষ্ঠা রেখে অন্য মতবাদকে শ্রদ্ধা করি এবং সঠিক বিষয় জানানোর জন্য উদারনীতি প্রয়োগ করি।ধর্ম নিয়ে চর্চা ও নিন্দা না করার জন্য দৃপ্ত শপথ নেই।আমার আলোচনা আমার উপদেশ নয়, পরামর্শ ।গ্রহণ করা না করা আপনাদের ইচ্ছা.

No comments:

Ekadoshi

লক্ষ্মীপুর চন্দ্রগঞ্জ থানা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন

  চন্দ্রগঞ্জ  প্রতিনিধি : বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন...

চারবর্ণের অশৌচ ব্যবস্তা