Friday, November 12, 2021

ধর্ম ক্ষেত্রে আবেগ নয়, বিবেকে প্রাধান্য দেয়া অবশ্য প্রয়োজন.

 ধর্ম ক্ষেত্রে আবেগ নয়, বিবেকে প্রাধান্য দেয়া  অবশ্য প্রয়োজনঃ

 আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে আবেগের চেয়ে বিবেকের প্রাধান্য দেয়া  প্রয়োজন।তবে ধর্মক্ষেত্রে বিবেকের প্রাধান্য দেয়া অবশ্য প্রয়োজন ।


কর্তব্য কী এবং অকর্তব্য কী, প্রবৃত্তি কাকে বলে এবং নিবৃত্তি কাকে বলে, ধর্ম কী, অধর্মই বা কী? স্বধর্ম কাকে বলে এবং পরধর্মই কাকে বলে  - একে কর্তব্য অকর্তব্যের জ্ঞান বা বিবেক  বলা হয়।অর্থাৎ আমাদের কি কাজ করা উচিত, আর কি কাজ করা অনুচিত, আসক্তি বা অনাসক্তি, কোনটা ধর্মসম্মত, কোনটা অধর্মসম্মত এবং কোনটা নিজের ধর্ম, কোনটা অন্যের ধর্ম তা বিবেচনা করে যা করা হয় তা হলো  বিবেক ।

এখানে স্বধর্ম বলতে নিজেদের বর্ণোচিত কর্তব্য এবং পরধর্ম বলতে অন্যের বর্ণোচিত কর্তব্য বলা হয়েছে ।অর্থ্যাৎ যার উপর যে কাজ অর্পিত তা স্বধর্ম এবং যে কাজ অন্যের উপর অর্পিত তা পরধর্ম ।বিশ্লেষণাত্মক অর্থে বিবেক হলো যার দ্বারা ন্যায়- অন্যায়, ভালো- মন্দ, ধর্মাধর্ম বিচার করা যায় ।

আবেগ হলো অনুভূতির প্রাবল্য বা ব্যাকুলতা বা 

 চিত্তচাঞ্চল্য ।

আমরা কেউ কেউ আবেগের বশে ধর্ম পালন করি।যেমন কোনো ধর্মগ্রন্থ পাঠের আসরে ধর্মীয় বক্তার অভিনয়সুলভ অশ্রু বিসর্জনের দৃশ্য দেখে নিজেরাও কান্নায় ভেঙে পড়ি।নামকীর্তনের কীর্তনীয়ার  ক্রন্দনের অভিনয়  দেখে নিজেরা ক্রন্দনে ঢলে পড়ি।একে অপরকে জড়িয়ে ধরি।কিন্তু পরদিনই যার সাথে গলাগলি করলাম তার থেকে ব্যবসা বা পেশার ক্ষেত্রে জুলুম করে অর্থ আদায় করি।কেউ কেউ মাথায় আঘাত করতেও দ্বিধাবোধ করি না।আর তা যদি বিবেকের তাগিদে হয়  তাহলে আমরা কোনো অনুচিত বা অনৈতিক কাজ করতে পারি না।


কেউ কেউ উপাসনালয়ে প্রবেশ করার পূর্বে অনৈতিক কাজ করেও ভগবানের কাছে নিজ কৃত কর্মের জন্য অশ্রুসজল নয়নে ক্ষমা প্রার্থনা করি।এগুলো হলো আবেগ ।বিবেক থাকলে অনৈতিক কর্ম থেকে বিরত থেকে ঈশ্বর নির্দেশিত কাজ তথা মানবসেবা করবো- তাই হলো প্রকৃত ধর্ম ।আমরা বুঝতে পারি না যে,চিত্তশুদ্ধি না হলে কোনো প্রার্থনাই অনেক সময় কাজে লাগবে না।অনৈতিক কাজও করবো আবার উপাসনালয়ে ঢুকে ক্ষমা চাইবো তা তো খেলার মতোই হলো ।অবশ্য ভীষণ পাপী ব্যক্তি ও যদি তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে উক্ত খারাপ কর্মের পুনরাবৃত্তি না করে তাহলে ভগবান হয়তো ক্ষমা করে দিতে পারেন।

আবেগের বশে মানুষের ক্ষতি করা এবং মনে আঘাত দেয়া ধর্মবিরোধী যার পরিণতি ভালো নয়।তবে আমার দর্শন হলো, যে মানসিক অশান্তিতে ভোগে সে নিজে মানুষের অশান্তি সৃষ্টি করে ।সে নিজে অশান্তি সৃষ্টি করে অথবা অশান্তি সৃষ্টি করতে অন্যকে প্ররোচিত করে।ভগবান তাকে রোগ, সন্তান অথবা স্বামী, স্ত্রী দিয়ে অশান্তিতে রাখেন ।অবশ্য আমাদের সনাতন ধর্মে পূর্বজন্মকৃত কর্ম ফলের উপর ভিত্তি করেও ভগবান  শান্তি বা অশান্তি দেন।

যাহোক, ভগবানের কাছে প্রার্থনা তিনি যেন আমাকে এবং পরম হিতৈষীদের আবেগ দমন করে বিবেককে জাগরিত করার কৃপা করেন তাই প্রার্থনা ।আমার মতে, যাদের  শুধু আবেগ আছে,বিবেক নেই তারা ধার্মিক তো দূরের কথা মানুষই হতে পারে না।কারণ পশুদের ও তো আবেগ আছে ।একমাত্র মানুষেরই বিবেক আছে ।তাই আমাদের বিবেকের সদ্ব্যবহার করা উচিত ।তবেই আমরা ইহলোকে শান্তি  পাবো এবং পরকালে পরম গতি হবে ।

আমার লিখায় আমি অধমও যদি উপকৃত হই তবেই আমার লিখা সার্থক ।

No comments:

Ekadoshi

তর্পণ বিধি

 আমি প্রথমেই মহালয়া বিষয়ে দু'একটা কথা বলে নিই, তারপর  তর্পণ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করবো।  মহালয়া মানে শুধু মায়ের আগমন নয়, মহাল...

চারবর্ণের অশৌচ ব্যবস্তা