Friday, November 12, 2021

ধর্ম ক্ষেত্রে আবেগ নয়, বিবেকে প্রাধান্য দেয়া অবশ্য প্রয়োজন.

 ধর্ম ক্ষেত্রে আবেগ নয়, বিবেকে প্রাধান্য দেয়া  অবশ্য প্রয়োজনঃ

 আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে আবেগের চেয়ে বিবেকের প্রাধান্য দেয়া  প্রয়োজন।তবে ধর্মক্ষেত্রে বিবেকের প্রাধান্য দেয়া অবশ্য প্রয়োজন ।


কর্তব্য কী এবং অকর্তব্য কী, প্রবৃত্তি কাকে বলে এবং নিবৃত্তি কাকে বলে, ধর্ম কী, অধর্মই বা কী? স্বধর্ম কাকে বলে এবং পরধর্মই কাকে বলে  - একে কর্তব্য অকর্তব্যের জ্ঞান বা বিবেক  বলা হয়।অর্থাৎ আমাদের কি কাজ করা উচিত, আর কি কাজ করা অনুচিত, আসক্তি বা অনাসক্তি, কোনটা ধর্মসম্মত, কোনটা অধর্মসম্মত এবং কোনটা নিজের ধর্ম, কোনটা অন্যের ধর্ম তা বিবেচনা করে যা করা হয় তা হলো  বিবেক ।

এখানে স্বধর্ম বলতে নিজেদের বর্ণোচিত কর্তব্য এবং পরধর্ম বলতে অন্যের বর্ণোচিত কর্তব্য বলা হয়েছে ।অর্থ্যাৎ যার উপর যে কাজ অর্পিত তা স্বধর্ম এবং যে কাজ অন্যের উপর অর্পিত তা পরধর্ম ।বিশ্লেষণাত্মক অর্থে বিবেক হলো যার দ্বারা ন্যায়- অন্যায়, ভালো- মন্দ, ধর্মাধর্ম বিচার করা যায় ।

আবেগ হলো অনুভূতির প্রাবল্য বা ব্যাকুলতা বা 

 চিত্তচাঞ্চল্য ।

আমরা কেউ কেউ আবেগের বশে ধর্ম পালন করি।যেমন কোনো ধর্মগ্রন্থ পাঠের আসরে ধর্মীয় বক্তার অভিনয়সুলভ অশ্রু বিসর্জনের দৃশ্য দেখে নিজেরাও কান্নায় ভেঙে পড়ি।নামকীর্তনের কীর্তনীয়ার  ক্রন্দনের অভিনয়  দেখে নিজেরা ক্রন্দনে ঢলে পড়ি।একে অপরকে জড়িয়ে ধরি।কিন্তু পরদিনই যার সাথে গলাগলি করলাম তার থেকে ব্যবসা বা পেশার ক্ষেত্রে জুলুম করে অর্থ আদায় করি।কেউ কেউ মাথায় আঘাত করতেও দ্বিধাবোধ করি না।আর তা যদি বিবেকের তাগিদে হয়  তাহলে আমরা কোনো অনুচিত বা অনৈতিক কাজ করতে পারি না।


কেউ কেউ উপাসনালয়ে প্রবেশ করার পূর্বে অনৈতিক কাজ করেও ভগবানের কাছে নিজ কৃত কর্মের জন্য অশ্রুসজল নয়নে ক্ষমা প্রার্থনা করি।এগুলো হলো আবেগ ।বিবেক থাকলে অনৈতিক কর্ম থেকে বিরত থেকে ঈশ্বর নির্দেশিত কাজ তথা মানবসেবা করবো- তাই হলো প্রকৃত ধর্ম ।আমরা বুঝতে পারি না যে,চিত্তশুদ্ধি না হলে কোনো প্রার্থনাই অনেক সময় কাজে লাগবে না।অনৈতিক কাজও করবো আবার উপাসনালয়ে ঢুকে ক্ষমা চাইবো তা তো খেলার মতোই হলো ।অবশ্য ভীষণ পাপী ব্যক্তি ও যদি তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে উক্ত খারাপ কর্মের পুনরাবৃত্তি না করে তাহলে ভগবান হয়তো ক্ষমা করে দিতে পারেন।

আবেগের বশে মানুষের ক্ষতি করা এবং মনে আঘাত দেয়া ধর্মবিরোধী যার পরিণতি ভালো নয়।তবে আমার দর্শন হলো, যে মানসিক অশান্তিতে ভোগে সে নিজে মানুষের অশান্তি সৃষ্টি করে ।সে নিজে অশান্তি সৃষ্টি করে অথবা অশান্তি সৃষ্টি করতে অন্যকে প্ররোচিত করে।ভগবান তাকে রোগ, সন্তান অথবা স্বামী, স্ত্রী দিয়ে অশান্তিতে রাখেন ।অবশ্য আমাদের সনাতন ধর্মে পূর্বজন্মকৃত কর্ম ফলের উপর ভিত্তি করেও ভগবান  শান্তি বা অশান্তি দেন।

যাহোক, ভগবানের কাছে প্রার্থনা তিনি যেন আমাকে এবং পরম হিতৈষীদের আবেগ দমন করে বিবেককে জাগরিত করার কৃপা করেন তাই প্রার্থনা ।আমার মতে, যাদের  শুধু আবেগ আছে,বিবেক নেই তারা ধার্মিক তো দূরের কথা মানুষই হতে পারে না।কারণ পশুদের ও তো আবেগ আছে ।একমাত্র মানুষেরই বিবেক আছে ।তাই আমাদের বিবেকের সদ্ব্যবহার করা উচিত ।তবেই আমরা ইহলোকে শান্তি  পাবো এবং পরকালে পরম গতি হবে ।

আমার লিখায় আমি অধমও যদি উপকৃত হই তবেই আমার লিখা সার্থক ।

১ -চন্দ্র ২ - পক্ষ,৩- নেত্র।

 🙏নমস্কার সকলকে,

আমরা সকলেই ছোটবেলায় ১ থেকে ১০ এর সংখ্যামালা মনে রাখিবার জন্য একে চন্দ্র, দুয়ে পক্ষ ইত্যাদি পড়িতাম। প্রত্যেকটি সংখ্যার পিছনেই এইরকম কিছু বিশেষ নাম যোগ করা হত। ছড়ার মত করে এইভাবে পড়িলে সহজে মনে রাখা যায় ।

তবে শুধু সংখ্যা মনে রাখিবার জন্য নয় বরং এর মাধ্যমে যে বিশিষ্ট নাম গুলি বলা হতো সেইগুলিও মনে রাখিতে এই ভাবে পড়া হইত।

এই সংখ্যাগুলির পিছনে যে নামগুলি বলা হইত তাহা হইল – ১-এ  চন্দ্র, ২-এ পক্ষ, ৩-এ নেত্র, ৪-এ বেদ, ৫-এ পঞ্চবাণ, ৬-এ ঋতু, ৭-এ সমুদ্র,৮-এ অষ্টবসু, ৯-এ নবগ্রহ এবং ১০-এ দশ দিক। তবে সংখ্যাগুলির পিছনের এই কথাগুলো বলা হইয়াছে যেইগুলির ব্যাপারে কেউ কেউ জানেন আবার অনেকেই সবগুলির ব্যাপারে জানেন না তাই সব কয়টির ব্যাপারে সাধ্যানুসারে কিছু বিবরণ দিবার চেষ্টা করিলাম ।


১) ১-এ চন্দ্র বলিতে চাঁদকে বোঝায়। যেইহেতু চাঁদ একটি রয়েছে তাই এক সংখ্যার সাথে চাঁদের কথা বলা হইয়া থাকে।


২)  এরপরে যাহা বলা হয় তাহা ২-এ পক্ষ। এখানে দুয়ে পক্ষ বলতে মাসের দুটি পক্ষ কে বোঝানো হয়। পক্ষ দুটি হইল কৃষ্ণপক্ষ এবং শুক্লপক্ষ।


৩)  এরপর আসে ৩-এ  নেত্র। এখানে ৩টি নেত্র বলিতে আসলে তিনটি চোখের কথা বলা হয়ে থাকে। আমরা সকলেই দু চোখ বিশিষ্ট আর তৃতীয় চক্ষু হল জ্ঞান চক্ষু। 


৪)  ৪-এ  বলা হয়ে থাকে বেদ। অর্থাৎ এখানে সর্ব প্রসিদ্ধ চারটি বেদের কথা বলা হয়। যেহেতু বেদ  চার সংখ্যাবিশিষ্ট তাই তাহাকে চার সংখ্যার সাথে ধরা হয়। এই চারটি বেদ হইল ঋক্, সাম, যজু এবং অথর্ববেদ।


৫)  এরপর যাহার কথা বলা হয় সেইটি হইল ৫-এ পঞ্চবান। তবে এর ব্যাপারে জানা থাকে না অনেকেরই। হিন্দু ধর্ম অনুসারে কামদেব অথবা মদন দেবের পাঁচটি বাণের কথা বলা হইয়া থাকে। এই পাঁচটি বাণ  হইল---সম্মোহন তাপন, শোষণ, উন্মাদন এবং স্তম্ভন। 


৬)  এরপর আসে ৬-এ  ঋতু। এর ব্যাপারে জানে সকলেই তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ছয়টি ঋতু হইল গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল, শরৎকাল, হেমন্তকাল, শীতকাল ও বসন্তকাল।


৭)। এরপর ৭-এ সমুদ্র বলা হয়। পুরাণে বর্ণিত হইয়াছে সাতটি সমুদ্রের নাম। এইগুলি হইল – লবণ, ইক্ষু, সুরা, ঘৃত (সর্পি) দধি-দুগ্ধ ও জল এই হইল   সপ্তসাগর।  এখানে অনেকে মনে করেন

সাতটি মহাসাগর । আধ্যাত্মিকভাবে কিন্তু তাহা নহে বলিয়া মনে হয় । 


৮) ৮-এ অষ্টবসু বলা হয়ে থাকে। হয়তো আজকের সময় অনেকেরই জানা নাই অষ্ট বসুর ব্যাপারে। এই অষ্ট বসু যাদেরকে বলা হত তারা দক্ষ রাজ কন্যার পুত্র। মহাভারতে আটজন বসুর কথা বলা হয়। এরা হইলেন দক্ষ রাজ কন্যা বসুর পূত্র। মহাভারতে ভীষ্ম একটি অতি উল্লেখযোগ্য এবং প্রসিদ্ধ নাম। আর এই ভীষ্ম কোন সাধারণ ব্যক্তি ছিলেন না তিনি ছিলেন অষ্ট বসুর শেষ বসু।  পুরাণ অনুসারে এই অষ্ট বসুদের কখনও দেবতা আবার কখনও মানব কুলে জন্ম নেওয়ায় উপদেবতা বলা হয় ।  অষ্ট বসুর নামগুলি হইল-- ধর, সোম, ধ্রুব, অহ, অনিল, অনল প্রত্যুষ ও প্রভাস। অভিশপ্ত হইয়াই অষ্ট বসুগণ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন। ঘটনাচক্রে সাত জনই জন্মের পর-পরই মুক্তি লাভ করেন অভিশাপ থেকে। কিন্তু শেষ বসু অর্থাৎ প্রভাস থেকে যায়। তিনি রাজা শান্তনু এবং দেবী গঙ্গার পুত্র দেবব্রত। যিনি পরে ভীষ্ম নামে পরিচিতি লাভ করেন। 


৯)  এরপরে ৯-এ নবগ্রহ বলা হইয়া থাকে।  আমরা জানি সৌরমণ্ডলের যে নবগ্রহের নাম রয়েছে সেগুলি হইল –সোম (চাঁদ) মঙ্গল, বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি,শনি, ইউরেনাস, নেপচুন ও প্লুটো।  এখানে  নেপচুন ও প্লূটো বাদ পড়িয়াছে , যোগ হইয়াছে রাহু ও কেতু । ৯ সংখ্যার সাথে এখানে যেই নবগ্রহের কথা বলা হইয়াছে সেগুলি হইল রবি, চন্দ্র, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, রাহু ও কেতু। 


১০)  সবশেষে বলা হয় ১০-এ দিকের কথা। যাহা আমাদের  দিকগুলিকে উদ্দেশ্য করিয়া বলা হয়। এগুলি হইল পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ, ঈশান, বায়ু, অগ্নি, নৈঋত, উর্দ্ধ ও অধঃ।

Wednesday, November 10, 2021

সনাতনী সকল মতবাদী এক হোন, sokol sonatoni ebng sokol motobadi ek hon.

 সনাতনী সকল মতবাদী এক হোন( ১ম পর্ব):

সনাতন ধর্মে বিভিন্ন মতবাদী দেখা যায়।কেউ বৈষ্ণব, কেউ শাক্ত,কেউ শৈব, কেউ সৌর, কেউ গাণপত্য ।আবার বৈষ্ণব ও স্মার্ত মতবাদী এ দুটো প্রধান দুভাগে ও বিভক্ত ।

আবার সনাতন মতবাদী বিভিন্ন অবতার, মহাপুরুষ ও গুরুদেবের অনুসারী ।কেউ কৃষ্ণ, কেউ রাম,কেউ ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র, কেউ জগদ্বন্ধু সুন্দর, কেউ বাবা লোকনাথ, কেউ স্বরূপানন্দের, কেউ রাম ঠাকুরের,কেউ শ্যামানন্দ বাবা, কেউ সংযোগানন্দ গিরি, কেউ হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুসারী ও শিষ্য ।কেউ কেউ তাদের গুরুদেবকে ঈশ্বর, কেউ অবতার, কেউ মহাপুরুষ হিসেবে দেখেন ও প্রচার করেন। কোনো কোনো মতবাদী অন্য মতবাদীকে কটাক্ষ করে কথা বলেন । আমার কথা হলো, আপনারা ধর্মশাস্ত্রের আলোকে সিদ্ধান্ত নেবেন কে ঈশ্বর ,কে অবতার, কে মহাপুরুষ, কে গুরুদেব।তবে কাউকে কটাক্ষ করা ঠিক নয়।তাদেরকে বুঝিয়ে বলতে হবে ।গ্রহণ করা না করা যার যার ইচ্ছা ।বেদ,গীতা ও প্রকৃত পুরাণের আলোকে বুঝতে হবে কে ঈশ্বর, কে অবতার ও কে গুরুদেব, কে মহাপুরুষ ।আমরা নিজেরা ঈশ্বর বা অবতার বানিয়ে ফেলা ঠিক নয়।কারো অলৌকিক শক্তি থাকলে তাঁকে ঈশ্বর বা অবতার বলা উচিত নয়।কারণ আদি যুগে মুনিঋষিগণ ও অলৌকিক শক্তির অধিকারী ছিলেন ।তাই বলে কেউ অবতার নন।অবশ্য কেউ কেউ অংশাবতার বলে গণ্য ।তাই বলে তাঁরা ঈশ্বর নন।তবে ভগবান হতে পারেন।ঈশ্বরকে ও আমরা ভগবান বলি।তবে অবতার, মহাপুরুষ বা গুরুদেবকে ভগবান বলা যেতে পারে ষড় ঐশ্বর্যের অধিকারী হিসেবে, কিন্তু ঈশ্বর হিসেবে নন।



কেউ কেউ নিজেদের মতবাদ শ্রেষ্ঠ,আবার কেউ কেউ তাদের মতবাদ একমাত্র মতবাদ এবং অন্য মতবাদ কোনো মতবাদ নয় বলে মন্তব্য করেন । কেউ কেউ বলেন,অমুক মতবাদী মোক্ষ বা মুক্তি লাভ করবেন,অমুক মতবাদী স্বর্গে যাবেন,অমুক মতবাদী নরকে যাবেন এসব আলোচনা সনাতন ধর্ম সমর্থন করে না। কোন কাজ করলে কি ফল হয় তাই মূল ধর্মগ্রন্থের আলোকে আলোচনা করা কর্তব্য, কারো রচিত চটিগ্রন্থ বা নিজের নোট করা দর্শনের আলোকে নয়।সনাতন ধর্মের আলোকে  মতবাদ হলে সকল মতবাদই সমান ।ধর্ম কোনো বিজ্ঞাপনের পণ্য নয় যে তার জন্য প্রচার করে বেড়াতে হবে নিজের দল ভারী করার জন্য ।তাদেরকে ধর্মীয় প্রবক্তা তো দূরের কথা ধর্মীয় বক্তাই বলা যায় না।তাদেরকে ধর্ম ব্যবসায়ী বলা যায় ।কে মুক্তি লাভ করবে, কে স্বর্গে যাবে,কে নরকে যাবে তা পরমেশ্বর জানেন।মানুষ বলতে পারেন না।আমার মতে, যারা ধর্ম নিয়ে নিন্দা ও চর্চা করেন এবং কোন্দল করেন তারা প্রকৃত ধার্মিক তো নয়, তারা মানুষ কি না তাই বিচার্য বিষয় ।তবে একথা ঠিক, ভগবান আমাদেরকে সূতা ধরে পুতুলের মতো ঘুরাচ্ছেন এবং যাকে যে ফল দেবার যোগ্য সেই কর্ম তাকে দিয়ে করাচ্ছেন।আমাদেরকে বিবেক দিয়েছেন এবং  কোনটি ভালো ,কোনটি মন্দ তা করার জন্য বিবেক বুদ্ধি দিয়েছেন।যে যেমন কর্ম করবে তেমন ফল পাবে।এমতাবস্থায় ,ধর্ম নিয়ে আমাদের মতানৈক্য মোটেই ঠিক নয়।


আমাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ ।তারপর উপনিষদ ও গীতা ।তারপর স্মৃতি ও পুরাণ ।তবে স্মৃতি ও পুরাণের বাক্য শ্রুতির সাথে সাংঘর্ষিক হলে তা মান্য নয়।তাই মূল ধর্মগ্রন্থ ভালোভাবে পাঠ করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।

শ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ বলেছিলেন, " যত মত তত পথ ।সব মতেই ঈশ্বরকে পাওয়া যায় তাঁর কাছে ভক্তের কোনো জাত পাতের বিচার নেই ।হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সবাই যে নামেই তাঁকে ডাকুক সবই তাঁর কাছে পৌঁছায়।" উনার মতবাদকে শ্রদ্ধা রেখে আমি অন্যান্য ধর্ম বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।তবে যত মত তত পথ বলতে আমি একই পথকেই বুঝি ।কারণ শাক্ত মতের মতে চৌষট্টি রকমের মার্গ বা  পথ আছে তাকেই আমি বুঝি  ।বৈষ্ণব মতের ও চৌষট্টি রকমের মার্গ আছে ।আমার ধারণা অন্যান্য মতেও আছে ।কাজেই, সকল মতবাদীরই একটি পথ এবং গন্তব্যস্থল ও একই।আর তা হলো ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করা।


এমতাবস্থায়, আমার সবিনয়ে নিবেদন হলো, আসুন আমরা সনাতনী সকল মতবাদী এক হই।নিজ মতবাদে পরম নিষ্ঠা রেখে অন্য মতবাদকে শ্রদ্ধা করি এবং সঠিক বিষয় জানানোর জন্য উদারনীতি প্রয়োগ করি।ধর্ম নিয়ে চর্চা ও নিন্দা না করার জন্য দৃপ্ত শপথ নেই।আমার আলোচনা আমার উপদেশ নয়, পরামর্শ ।গ্রহণ করা না করা আপনাদের ইচ্ছা.

Wednesday, November 3, 2021

ঈশ্বরের নিরাকারত্ব বিষয়ে বেদ ও উপনিষদের মন্ত্র সম্পর্কে আলোচনা

 ঈশ্বরের নিরাকারত্ব বিষয়ে বেদ ও উপনিষদের মন্ত্র সম্পর্কে আলোচনা এবং কিছু ভ্রান্তি নিরসনের ক্ষুদ্র প্রয়াসঃ

সনাতন ধর্মে ঈশ্বর সাকার ও নিরাকার উভয়েই বলা হয়েছে ।পবিত্র বেদ ও উপনিষদে সাকার ও নিরাকার উভয় বিষয়ে বর্ণিত আছে ।

সনাতন ধর্মের কিছু সংখ্যক লোক ঈশ্বরের সাকারত্ব স্বীকার করতে চান না।তারা ও কিছু ধর্মীয় বক্তা নিজেদের মতবাদ রেখে অন্য মতবাদ বিষয়ে অনধিকার চর্চা করেন ।যে যে  মতবাদে বিশ্বাসী সেই মতবাদ নিয়ে থাকেন ,অন্য মতবাদ খণ্ডণ করার কাজে  মহা ব্যস্ত থাকলে নিজ মতবাদ লালন ও পালন করার সময় পাবেন কোথায়? তাছাড়া পরনিন্দা ও পরচর্চা সনাতন ধর্মে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ।অন্য মতবাদের সমালোচনা করা পরনিন্দা ও পরচর্চার শামিল বলে আমি মনে করি।তাছাড়া আজকাল কিছু সংখ্যক আত্মজ্ঞানী বক্তা কিছু কিছু মন্ত্রের ভুল ব্যাখ্যা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন । এমন ও বক্তা আছেন যারা মন্ত্র ও শ্লোকের পার্থক্য বুঝেন না।গীতার শ্লোককেও মন্ত্র বলে চালিয়ে দেন।যারা কোনটি মন্ত্র কোনটি শ্লোক বুঝেন না তাদের ব্যাখ্যা কতটুকু সঠিক তা বুঝে নেবার ভার পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলাম।  কেউ বুঝে না বুঝে বাহবা দিয়ে থাকেন ।আমি মহামূর্খ এসব মহাজ্ঞানীদের  বেদ ও উপনিষদের মন্ত্রের ভুল ব্যাখ্যা বিষয়ে আলোচনা করবো ।

যজুর্বেদের ৪০|৮নং মন্ত্রের সরলার্থ হলো, "যে এরূপ আত্মাকে জানে, সে ব্রহ্ম লাভ করে ।ব্রহ্ম শুদ্ধ, বিজ্ঞানানন্দ স্বভাব ও অচিন্ত্য শক্তিবিশিষ্ট; তিনি প্রাকৃত শরীর রহিত, অক্ষয়, স্নায়ুরহিত; সত্ত্ব, রজ ও তমগুণের দ্বারা অস্পৃষ্ট এবং কোনো পাপ তাকে স্পর্শ করে না।সে এরূপ উপাসক, সে অনন্তকাল যথাস্বরূপ নিজ প্রয়োজন ভোগ করে থাকে ।তিনি ক্রান্তদর্শী, মনীষী, জ্ঞান বলে সর্বরূপ ও ব্রহ্মরূপ হয়ে ব্রহ্ম লাভ করে থাকেন ।" মহাজ্ঞানীরা 'শরীররহিত' এ শব্দটির উপর ভিত্তি করে ঈশ্বরের কোনো শরীর বা অবয়ব নাই ব্যাখ্যা করে নিরাকারত্ব প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন ।কিন্তু এখানে 'প্রাকৃত শরীররহিত ' বলা হয়েছে ।অর্থ্যাৎ আমাদের মতো শরীর নেই ।ঈশ্বরের শরীর চিন্ময় ।তবে শরীর নেই বলা ঠিক নয়,তাঁর প্রাকৃত শরীর নেই বলতে হবে ।

শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের ৬|৯নং মন্ত্রের সরলার্থ হলো, "এ জগতে তাঁর প্রভু কেহ নেই ,নিয়ন্তা ও কেহ নেই ।এমন কোনো লিঙ্গ বা চিহ্ন নেই যা দ্বারা তাঁকে অনুমান করা চলে ।তিনি সকলের কারণ, ইন্দ্রিয়াধিষ্ঠাতা দেবতাদেরও অধিপতি; তাঁর কোনো জনক বা অধ্যক্ষ নেই ।" মহাজ্ঞানীরা লিঙ্গ শব্দটিকে পুরুষ লিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ ইত্যাদি অর্থে প্রয়োগ করে বলেন যে,ঈশ্বরের কোনো লিঙ্গ নেই ।অর্থাৎ ঈশ্বর স্ত্রী বা পুরুষ নহেন।অথচ সনাতনীদের কেউ কেউ  পুরুষ ও স্ত্রী দেবতা তৈরি করে ঈশ্বর হিসেবে পূজা করে ।এ হলো সাকারবাদীদের বিরোধীতাকারী সনাতনীদের বক্তব্য ।প্রকৃতপক্ষে, এখানে লিঙ্গ শব্দের অর্থ চিহ্ন বা প্রতীক ।অর্থাৎ ঈশ্বরের কোনো  নির্দিষ্ট চিহ্ন বা প্রতীক নেই ।আর ঈশ্বর ও দেবতাকে একত্রে গুলিয়ে ফেলে সনাতনীদের বৃহদাংশ বহু ঈশ্বরবাদী বলে ভুল ধারণা দেন।আসলে দেবতা ও ঈশ্বর এক নয় তা উপনিষদের মন্ত্রেও পরিষ্কার ।উক্ত শ্লোকে ইন্দ্রিয়াদি সকল দেবতার অধিপতি যে ঈশ্বর তা বলা হয়েছে যাতে প্রমাণিত হয় যে, ঈশ্বর ও দেবতা এক নন।


অন্যদিকে সমালোচনাকারীরা জনক অর্থে পিতা বুঝে থাকেন এবং বলেন যে,ঈশ্বরের অবতারদের জনক বা পিতা আছে ,লৌকিক পিতা।কিন্তু তা ঈশ্বরের জনক বা পিতা বলা গ্রহণযোগ্য নয়।আলোচ্য মন্ত্রে  জনক শব্দের অর্থ প্রভু বা মালিক বুঝানো হয়েছে । একটি শব্দের বিভিন্ন অর্থ থাকতে পারে।

প্রসঙ্গক্রমে  ২০|২৫বছর আগের একটি সত্য ঘটনার কথা বলছি।আমি একবার হবিগঞ্জ থেকে গ্রামের বাড়ি যাবার সময় এক ভদ্রলোক তার পাশে বসা লোকদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন, " বাংলাদেশের মাইনষে ( মানুষে) কইন (বলেন)  শেখ মুজিব আমরার জাতির জনক মাইনে ( মানে)  জাতির  বাবা মাইনে  আমরার মার জামাই ( স্বামী)।কতো বড় বেক্কল  আমরা ? "  তবে তিনি  বেক্কল এর সমার্থক  আঞ্চলিক কাঁচা শব্দ ব্যবহার করেছিলেন  যা   ফেইসবুকে উল্লেখ করবার মতো নয়।শব্দটি আ+চু যোগে।কেউ প্রতিবাদ করলো না।আমার ও উনার ভঙ্গি দেখে মান সম্মানের ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস হলো না।উনি যদিও আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছিলেন; কিন্তু উনার বেশভূষা দেখে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত মনে হলো ।কিন্তু এখানে বঙ্গবন্ধুকে জাতির তথা বাঙালী জাতির জনক বলা হয়েছে, কোনো বাঙালী লোকের তথা জনগণের জনক বা পিতা বলা হয়নি ।আর এখানে জাতির জনক মানে জাতির তথা বাঙালী জাতির প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ বলা হয়েছে ।তাহলে বুঝুন কি অপব্যাখ্যা? এভাবে বিভিন্ন শাস্ত্রের সহজ শব্দেরই যাচ্ছেতাই ব্যাখ্যা করা হচ্ছে ।আর বেদবাক্যের সঠিক ব্যাখ্যা আমার মতো শত পণ্ডিতের পক্ষে ও দুরূহ ।


আর অবতার সরাসরি ঈশ্বর নন, ঈশ্বরের ছায়া শক্তি যার ক্ষমতা ঈশ্বরের মতো বলে সাকারবাদীরা বিশ্বাস করেন।আর দেবতারা হলেন মায়াশক্তি ।কাজেই, এভাবে ভুল বুঝিয়ে দলভারী করা ঠিক নয়।সনাতন ধর্মে দেবতা পূজা বিরোধী একদল মতবাদী আছেন তা জানতাম ।অবশ্য তাদের কেউ কেউ দেবতা পূজা না করলেও দেবতাকে অবজ্ঞা করেন না এবং বলেন যে,কৃষ্ণের পূজা করলে অন্য দেবতার পূজার দরকার নেই ।কিন্তু ফেইসবুক সুবাদে জানতে পারলাম, সনাতনীদের একদল দেবতার অস্তিত্বই অস্বীকার করেন ।আর ঈশ্বর নিরাকার এ বিষয়ে গুরুত্ব দেন । দেবতা ঈশ্বরের শক্তি অস্বীকার করায় অবাক হলাম ।আমি সনাতনী  নিরাকারবাদীদেরকেও সনাতন ধর্মের অংশীদার বলে মনে করি ।তাদের মতবাদকেও শ্রদ্ধা করি।কিন্তু কেউ সাকারবাদীদের বিরোধীতা করলে আমার গুরুতর আপত্তি ।

এবার সনাতনী শুধু  নিরাকারবাদীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ঈশ্বরের যদি চোখ না থাকে, তাহলে সবকিছু দেখেন কীভাবে, আর কান না থাকলে আমাদের সবকথা শুনেন কীভাবে? তাহলে ঈশ্বর সবকিছু দেখেন এবং শুনেন তা কি নিরাকারবাদী সনাতনীরা অস্বীকার করবেন ?তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো, নিরাকারবাদীরা ও বেদ মানেন এবং বেদ ঈশ্বরের বাণী বলে বা ঐশী বাণী বলে মানেন ।ঈশ্বরের মুখ না থাকলে বাণী দেবেন কীভাবে? হয়তো বলবেন, ঈশ্বরের বাণী বা সত্য মুনিঋষিরা উপলব্ধি করেছেন ।দৈববাণী না হলে তাঁরা শুনলেন কীভাবে? আর  বেদ ঈশ্বরের বাণী না হলে তো বুঝতে হবে তা মুনিঋষিগণের চিন্তার ফসল ।

তবে হ্যাঁ, ঈশ্বরের চক্ষু, কর্ণ, মুখ কিরূপ তা ঈশ্বরই জানেন।অবতার হিসেবে ঈশ্বরের সাকার রূপ মানুষ দর্শন করতে পারে; কিন্তু ঈশ্বরের প্রকৃত রূপ দর্শন করা ও উপলব্ধি করা কঠিন ।

সনাতন ধর্মের বেদকে সনাতনী সবাই মানেন, এমনকি অন্য ধর্মের লোক ও স্বীকার করেন।কিন্তু কোনো কোনো সময় নিজ মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে মন্ত্র ও শ্লোকের ভুল ব্যাখ্যা কাম্য নয়।

আমরা সনাতনীরাই যদি ঈশ্বরের সাকার  নিরাকার নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হয় তাহলে অন্য ধর্মের লোক সনাতন ধর্ম সম্পর্কে  নেতিবাচক ধারণা নিলে কি করবেন ? কাজেই ,সনাতনী ভাইবোনদের কাছে অনুরোধ, আসুন আমরা সকল মতকে শ্রদ্ধা করে একই ছায়াতলে আশ্রয় নেই এবং অন্য ধর্মকে ও শ্রদ্ধা করি।তারপরও যদি কেউ নিজস্ব মতবাদ আঁকড়ে ধরতে চান তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই ।তবে অন্য মতবাদের সমালোচনা করতে বিবেক ও বুদ্ধি খাটাবেন।সাকার থেকে নিরাকারে পৌঁছা যায় ।কিন্তু আমরা সনাতনীরা যদি নিরাকার নিয়ে বসে থাকি তাহলে শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়েই সন্দেহ সৃষ্টি হবে যা চার্বাক মুনির হয়েছিল ।আমরা কেউ চার্বাক মুনি হতে চাই না,চাই না চার্বাক দর্শনের অনুসারী হতে।

আমার পোস্টের গুরুত্ব অনুধাবন করে আলোচনাসহ ভদ্রোচিত ভাষায় মন্তব্য করলে আমি কৃতার্থ হবো ।আমার জ্ঞান বুদ্ধির জোরে আলোচনা করলাম ।ভুল ভ্রান্তির পরম করুণাময় ও প্রাজ্ঞজনের নিকট ক্ষমা প্রার্থী ।

রাধা তত্ত্ব নিয়ে সংশয় নিরসনের জন্য কিছু প্রামাণিক দলিলাদি সম্পর্কিত কিছু লেখা।

 রাধা তত্ত্ব নিয়ে সংশয় নিরসনের জন্য কিছু প্রামাণিক দলিলাদি সম্পর্কিত কিছু লেখা।

আজ থেকে ৭/৮ বছর আগের কথা। নব্য কিছু পন্ডিতদের পাল্লায় পরেছিলাম। তারা বিভিন্নভাবে শ্রীকৃষ্ণের রাধার কথা অস্বীকার করতো। তারা শ্রীকৃষ্ণকে যোগেশ্বর মানেন, কিন্তু ভগবান মানতে নারাজ। তারা বলে থাকেন শ্রীকৃষ্ণ সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব। ভগবান তথা বিষ্ণুর অবতার নয়। তারা অবশ্য নিরাকারবাদী। বেদ মানে, তবে নিজেদের অনুবাদেরটা।  সায়াণাচার্য কিংবা মহীধরের ভাষ্য তারা মানেন না। 


তাদের একজন আছে, নাম মেনশন করবো না। তিনি অনলাইনে/অফলাইনে সারাদিন রাধাকে নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করতেন।


তারা বলতেন, বৈষ্ণব গ্রন্থ ভাগবতপুরাণেও রাধার উল্লেখ নাই। একজন বিশেষ গোপীনির কথা বলা আছে, কিন্তু রাধার নাম উল্লেখ নাই। মহাভারতে শুধুমাত্র রুক্মীনি দেবীর উল্লেখ আছে। 


কিন্তু,

অনেক ঘাটাঘাটি করার পর, অনেকদিন পর কিছু প্রামাণিক দলিল পেলাম। চাইলে আপনারাও সংগ্রহে রাখতে পারেন।

কিন্তু 'রাধা' হচ্ছেন স্বয়ং ভগবতী। ভগবতীর আরেক অবতার। 


আজ দেখবো আমরা যে সকল শাস্ত্রে শ্রীরাধিকার নানান লীলা প্রত্যক্ষভাবে উল্লেখ আছে 


১)পুরুষবোধিনী ঊপনিষদ

২)গর্গসংহিতা( গোলকখন্ড ১৬ অধ্যায়, দ্বারকাখন্ড ১৮ অধ্যায় প্রভৃতি)

৩)সনদকুমার সংহিতা (৩০২-৩০৩, ৭২, ৭৪)

৪)নারদপঞ্চরাত্রম(২য়,৩য় ও ৫ম অধ্যায় জুড়ে)

৫)বৃহত-গৌতম তন্ত্র

৬)ঊর্ধ্বামনায় তন্ত্র

৭)পদ্মপুরাণ (#ভূমিখন্ডের ৭ম ও ২০তম অধ্যায়, #পাতালখন্ডের বহু অধ্যায় যেমন-৩৯-৪৫,৭১ অধ্যায় জুড়ে, #ব্রহ্মখন্ডের বিস্তৃত অংশজুড়ে যেমন -৭-৯ম অধ্যায়, স্বর্গখন্ডম ৪৬ অধ্যায় প্রভৃতি )

৮)দেবীভাগবতম (সমস্ত ৯ম স্কন্ধ জুড়ে),

৯) ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ( প্রকৃতিখন্ড ও শ্রীকৃষ্ণজন্মখন্ড জুড়ে)

১০)ব্রহ্মান্ডপুরাণ( সমগ্র উত্তরখন্ড জুড়ে, উপদগত পর্ব ৪২,৪৩ অধ্যায়)

১১)নারদপুরাণ ( ৩য় খন্ড ৮৯ অধ্যায় সহ অনেক স্থানে)

১২)শিবপুরাণ(রুদ্রসংহিতার ৩০,৩১ অধ্যায়)

১৩)মৎস্য পুরাণ(১৩ অধ্যায়)

১৪)স্কন্দ পুরাণ(বিষ্ণুখন্ডের শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্মের ১/২২ ও ২/১১-১৩,১৯, বাসুদেব মাহাত্ম্যের ১৬,১৭ প্রভৃতি অধ্যায়, প্রভাসখন্ডের দ্বারকামাহাত্ম্যম ১২ অধ্যায় প্রভৃতি)

১৫)শংকরাচার্যের জগন্নাথ-অষ্টকম(৬ নং শ্লোক)

১৬)শংকরাচার্যের যমুনা-অষ্টকম

১৭)রাধাতন্ত্র

১৮)রাধাপোনিষদ

১৯) মায়াতন্ত্র ২য় পটল

২০) নীলতন্ত্র (২২/৯-১১)

২১)মুক্তমালা তন্ত্র

২২) গোপালতাপনী ঊপনিষদ( আদি ও উত্তরে গান্ধর্বীদেবী হলেন শ্রীরাধিকা)

২৩) চৈতন্যচরিতামৃত( সমস্ত জুড়ে বিবিধ স্থানে)

২৪) চৈতন্য ভাগবত

২৫) বায়ুপুরাণ ১০৪/৫২

২৬) বরাহপুরাণ (১৬৪/৩৩,৩৪)

২৭) সৌভাগ্য লক্ষ্মী তন্ত্র ( ১৩ অধ্যায়) 

২৮) শংকরাচার্যের অচ্যুত অষ্টকম( ৪ নং শ্লোক)

২৯) নির্বাণতন্ত্র (৫ম অধ্যায়)

৩০) শংকরাচার্যের নারায়ন গীতি-স্ত্রোত (১০ নং শ্লোক)


প্রভৃতি.....


যে সকল শাস্ত্রে #পরোক্ষভাবে শ্রীরাধিকার উল্লেখ আছে-

১) মহাভারত( বিশেষ এক গোপীকার উল্লেখ যিনি শ্রীকৃষ্ণ এর প্রাণস্বরূপা)

২) গীতা ( ৭ম ও ৯ম অধ্যায়, গীতায় বর্ণিত উতকৃষ্ট প্রকৃতিই শ্রীরাধিকা- পদ্মপুরাণ, দেবীভাগবতম, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ,নারদপঞ্চরাত্রমে উল্লেখিত)

৩) শ্রীমদ্ভাগবতম(১০ম স্কন্ধের ৩০ ও ৪৭ অধ্যায় সহ সমস্ত ভাগবতমের অসংখ্য স্থানে)

৪) ব্রহ্মসংহিতা(৫ম অধ্যায়)

৫)বিষ্ণুপুরাণ (১৩/৩২-৩৮)

৬)গোপালতাপনী উপনিষদ

৭)হরিবংশ( বিশেষ এক গোপীকার উল্লেখ)

প্রভৃতি....


(পিডিএফ ফাইল থেকে কিছু স্ক্রিনশট জুড়ে দেওয়া আছে, আপনারাও মিলিয়ে দেখুন 

জয় রাধে /




Monday, November 1, 2021

দেবীকে দ্বীপমালা উৎসর্গ করার বিধান।


 দেবীর দীপযাত্রা

কালীকুলসদ্ভাবে-তুলারাশি গতে ভানৌ যেহর্চ্চয়ন্তি মাহেশ্বরীং।দেববন্মানবা ভূত্বা লভতে সিদ্ধিমুত্তমাম্।।

অর্থাৎ সূর্য্য তুলারাশিতে গমন করলে দেবীর পূজার কথা  বলা হয়েছে।

প্রাণতোষিণী ধৃত বামকেশ্বর বচনে

কার্তিকেহমাতিথৌ দেবী দীপযাত্রাং সমাচরেৎ।

রাত্রৌ মহানিশাযোগে দীপাদিভিঃ অলঙ্কৃতম্।।

কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে দেবীর দীপযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।দেবীকে দীপমালা উৎসর্গের বিধান পাওয়া যায়।যার জন্য এটি দীপান্বিতা অমাবস্যা নামে প্রচলিত।

এটি দেবীর ষোড়শ যাত্রার অন্যতম।

বলা হয়েছে ঘৃতপ্রদীপাভাবে তু তৈলদীপং সমাচরেৎ।

ঘৃতপ্রদীপ উত্তম,অভাবে তৈলপ্রদীপ দাতব্য।

Thursday, October 28, 2021

আদিত্য চক্রবর্তীর অন্নপ্রাশন।



অন্নপ্রাশনের খন্ডিত অংশ। 

অন্নপ্রাশন 


নবজত বালক বালিকার অশৌচ বিধি।

 নবজাত বালক বালিকার অশৌচ বিধি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। 


Tuesday, October 26, 2021

নবগৃহ প্রবেশের দিন নির্ধারণ করার নিয়ম

 নবগৃহ প্রবেশের দিন নির্ধারণ করার নিয়ম। 


আমাদের ধর্মবোধ বিশ্বাস ও সংস্কৃতির চেতনা সনাতন

 আমরা বাঙালি।আমাদের ধর্মবোধ বিশ্বাস ও সংস্কৃতির চেতনা সনাতন ; শাশ্বত ও চিরন্তন। যে জাতির জীবনী শক্তি আছে তার আত্মপ্রত্যয় শক্ত বুনিয়াদের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়।তারা নিজের সম্বন্ধে কোনও অপ্রিয় সত্য শুনতে যেমন ভয় পায় না, নিজের দোষ ধরতে সঙ্কোচ বোধ করে না তেমনি অন্যের অন্যায়কেও প্রশ্রয় দেয় না। ভাবী বিপদের আশঙ্কায় বিচলিতও হয় না।প্রতিকারের  হিসাব করতে ভয় পায় না।দুর্বল জাতি নিজের শক্তিতে এতো অবিশ্বাসী হয় যে,বিপদের কথাতেই আতঙ্কিত হয়ে ওঠে।মৃত্যুর আগেই তাদের মৃত্যু ঘটে।মরার আগে মরে যাওয়া বাঙালির শোভা পায় না।বাঙালি সত্যপ্রিয় শান্তিকামী জাতি।  গোয়ার্তুমি করে বিভৎস অত্যাচার, ধর্ষণ, পরধন লুণ্ঠন ও ঠুনকো কারনে নরহত্যা তার শোভা পায় না।সে সহসা অশান্তি কলহ- ঝগড়ায় নিজেকে জড়ায় না।তবে নিজ বাস ভূমে পরবাসী করবার অন্যায় পদক্ষেপকে তুড়ি মেরে সঅধিকার প্রতিষ্ঠা করে।হাজার বছরের ইতিহাস তার প্রমাণ দেয়।এর জন্য ঐক্যের বিকল্প নেই।বাঙালী ঐক্যবদ্ধ হও।তবেই গৌরব অক্ষুণ্ণ থাকবে।

Saturday, October 23, 2021

কন্যাসন্তানের জননী বিধবার প্রয়াত স্বামীর মুখাগ্নি ও শ্রাদ্ধ করার অগ্রাধিকার প্রসঙ্গেঃ

 কন্যাসন্তানের জননী বিধবার প্রয়াত স্বামীর মুখাগ্নি ও শ্রাদ্ধ করার অগ্রাধিকার প্রসঙ্গেঃ

 কোনো লোক তার স্ত্রী ও কন্যা সন্তান রেখে মারা গেলে  মুখাগ্নি ও শ্রাদ্ধ ক্রিয়ার অধিকারী নিয়ে সনাতনীদের মাঝে মতানৈক্য দেখা দেয় ।কেউ নিজের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে ,আবার কেউ নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন বিধান দিতে চেষ্টা করেন এবং কেউ বিধান নিতে চেষ্টা করেন যা স্মৃতিশাস্ত্রের সাথে সাংঘর্ষিক ।

কেউ কেউ বলেন, ভ্রাতুষ্পুত্র বা ভাতিজা জীবিত থাকলে সে শ্রাদ্ধ করার অধিকারী । কারণ ভাতিজা  পুত্র তুল্য।এমনকি ভাতিজা ধরাও নিতে পারে।তাহলে মাথা মুণ্ডণ ও করতে পারে।

আমার শাস্ত্রীয় জ্ঞানমতে এরূপ ক্ষেত্রে উনার বিধবা স্ত্রী মুখাগ্নি ও  শ্রাদ্ধের অগ্রাধিকারী ।পতি হলেন স্ত্রীর মহাগুরু ।মহাগুরু নিপাতে স্ত্রীকে এক বছর কালাশৌচ পালন করতে হয়।

শাস্ত্রীয় ব্যবস্থায় বলা হয়েছে, পুরুষের ক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে অধিকারী হলো, জ্যেষ্ঠপুত্র, তার অভাবে পরবর্তী কনিষ্ঠ পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র, অপুত্রা পত্নী,পুত্রবতী পত্নী, অদত্তা কন্যা, বাগদত্তা কন্যা, দত্তা কন্যা, দৌহিত্র, কনিষ্ঠ সহোদর, জ্যেষ্ঠ সহোদর, কনিষ্ঠ বৈমাত্রেয়, কনিষ্ঠ সহোদর পুত্র, জ্যেষ্ঠ সহোদর পুত্র ( ভাতিজা)। তাহলে দেখা যায়, ভাতিজা অনেক পরে।কিন্তু কেউ কেউ নিজ স্বার্থে অথবা নিজের ইগো প্রতিষ্ঠিত করতে ভাতিজাকে ছেলের জায়গায় এনে বিধান দেন।এমনকি ভাতিজাকে ধরা লওয়ান,মাথা মুণ্ডণ করে শ্রাদ্ধাদি ক্রিয়া করান।কেউ কেউ মৃত ভাইয়ের সম্পত্তি পাবার লোভে এরূপ করাতে পুরোহিতকে গাইড করার চেষ্টা করেন ।

আমি শাস্ত্রজ্ঞ নহি ।তবে শাস্ত্র নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করি এবং অনেক ক্ষেত্রে নিজে জানলেও পণ্ডিত বা শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তিদের শরণাপন্ন হই এবং শেয়ার করে শাস্ত্র ও বিবেকের সাথে মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নেই।

শাস্ত্র নিয়ে লেখালেখি করতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছি ।কারণ কিছু কিছু আত্মজ্ঞানী বলেন এগুলো লিখার কোনো অর্থ নেই ।অথচ কেউ কেউ বিভিন্ন ফেইসবুক বন্ধুর লিখা সংগ্রহ করে অন্য জায়গায় গিয়ে বাহাদুরি করেন।তাই আমি শাস্ত্রীয় আলোচনায় নিজেকে বোকাই ভাবি।বোকা না হলে কি নিজের খেয়ে মানুষকে জ্ঞান দিতে যাই।বলা হয় বিদ্যা দান করলে বিদ্যা বাড়ে ।এভাবে জ্ঞান দান করলে জ্ঞান বাড়ে ।কিন্তু শাস্ত্রে আবার অপাত্রে জ্ঞান দান নিষেধ করা হয়েছে ।ফেইসবুকে পাত্র বা অপাত্র থাকা অস্বাভাবিক নয়।আমার একটি ছেলে সন্তান ও নেই যে আমার লিখা পাঠ করে কিছু শিখতে পারবে ।অবশ্য ভাতিজা আছে ।সেও ছোট ।দুটো মেয়ে আছে ।হয়তো কিছু শাস্ত্রীয় বিষয় শেখার আছে ।কিন্তু স্মৃতি শাস্ত্রের বিষয় তো তাদের জানার প্রয়োজন নেই ।যাহোক, মনের দুঃখে এ কথাগুলো বললাম কিছু কুলাঙ্গারের জন্য ।অথচ এসব কুলাঙ্গার যুক্তিবাদী হলেও অধমের প্রয়োজন যে পরতে পারে তা ভাবে না।আমি মনে করি সবার প্রয়োজন আছে ।কিন্তু অনেক সময় মনটা নষ্ট হয়ে যায় ।

যাহোক, এ সঙ্কটময় মুহূর্তে আমি আমার ব্যক্তিগত প্রয়োজনেই স্মৃতি শাস্ত্রের বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম ।আমার এক পিসতুতো ভাই আজ বিকালে দেহত্যাগ করেছেন ।উনি এক বিধবা স্ত্রী ও তিনটি কন্যা সন্তান ( বিবাহিতা) রেখে দেহত্যাগ করেন ( ওঁ দিব্যান্ লোকান স গচ্ছতু)।"আমি আমার আলোচনা মোতাবেক বিধান দিয়েছি ।তবু অধিকতর নিশ্চিত হবার জন্য আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম ।সেটা আমার নিজের ব্যাপার।তাই শাস্ত্রজ্ঞ বন্ধুদের মতামত পেলে আমার পূর্ণ সন্তুষ্টি আসবে ।আমার দাদার বিদেহী আত্মার পরম শান্তি কামনা করার জন্য সবিনয়ে অনুরোধ করা হলো ।

আসলে আমার যেকোনো পোস্ট করার পেছনে একটা মহৎ উদ্দেশ্য থাকে ।আজ শাস্ত্রবাক্য ভুল ব্যাখ্যার কারণেই সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে ।আর এগুলো করছে কিছু ধর্ম ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থে অথবা শাস্ত্রবাক্যে পরিপক্ব জ্ঞানের অভাবে।জ্ঞানের অভাবে ভুল ব্যাখ্যা দিলে আমার কিছু নেই ।কিন্তু জেনে শুনে ভুল ব্যাখ্যা দিলে তার বিচারের ভার পরমেশ্বরের উপর এবং যুক্তিবাদীদের বিচারের ভার প্রকৃতির উপর দিলাম ।

Saturday, June 5, 2021

সনাতন ধর্মে বৈষ্ণব ও অবৈষ্ণব ধর্মে বিভাজনের অবসান প্রয়োজন

 সনাতন ধর্ম বৈষ্ণব ও অবৈষ্ণব ধর্মে বিভাজনের অবসান প্রয়োজন ( ৪র্থ পর্ব):


কিছু কৃষ্ণভক্ত দেবতা পূজার বিরোধীতা করেন ।তারা বলেন যে,যাদের জ্ঞান নেই তারা দেবতার পূজা করেন।তারা গ্রামে গঞ্জে পর্যন্ত এগুলোর প্রচার করেন এবং কেউ কেউ বলেন যে,এগুলো ব্রাহ্মণদের ব্যবসা ।অবশ্য কিছু সংখ্যক কৃষ্ণভক্ত অন্যভাবে বলেন ।তারা বলেন, গাছের গোড়ায় জল দিলে যেমন শাখা প্রশাখা পুষ্ট হয়, তেমনি শ্রীকৃষ্ণের সন্তুষ্টি বিধানের মাধ্যমেই দেব দেবীকে সন্তুষ্ট করা যায় ।ভগদ্ভক্তগণ শ্রদ্ধা সহকারে বিষ্ণুতত্ত্ব বা বিগ্রহের আরাধনা করেন ।তাতেই অন্যান্য দেবদেবী সন্তুষ্ট হন।তাদের একথার মাঝে কিছুটা দেব ভক্তির পরিচয় পাওয়া যায় ।আমরা দেবতাপূজকগণ বলবো, আমরা গাছেরও গোড়ায় জল দেই প্রয়োজন বোধে শাখা প্রশাখাকে ছেঁটে দিয়ে গাছের পরিচর্যা করি।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজে দেবতা, ঋষি, পিতৃপুরুষ ও ব্রাহ্মণদের পূজা করেছেন ।শ্রীমদ্ভাগবতের দশম স্কন্ধে বলা হয়েছে, "উপস্থায়ার্কমুদ্যন্তং তর্পয়িত্বাহহত্মনঃ কলাঃ।দেবানৃষীন্ পিতৃন্ বৃদ্ধান্ বিপ্রানভ্যর্চ্য চাত্মবান।।" উক্ত শ্লোকের সরলার্থ হলো,  সূর্যোদয়কালে তিনি (শ্রীকৃষ্ণ) সূর্যের উপাসনা করেন এবং নিজ কলাস্বরূপ দেবতা, ঋষি, পিতৃপুরুষদের তর্পণ করেন ।অতঃপর তিনি কুলবয়োবৃদ্ধ ও ব্রাহ্মণদের বিধিপূর্বক পূজা করেন ।" তাহলে দেখা গেলো কৃষ্ণভক্তদের বিনা বাক্য ব্যয়ে  মান্য শ্রীমদ্ভাগবতে ও ভগবান কৃষ্ণের দেবোপসনার কথা বলা হয়েছে ।তাহলে সরলমনা সনাতনীদের কাছে আমার প্রশ্ন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যেখানে দেবদেবীর পূজা করেছেন সেখানে আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের দেবতা পূজা করতে বাধা কোথায়? এখন আপনারা কিছু সংখ্যক কৃষ্ণভক্তদের কথা মানবেন না শ্রীকৃষ্ণকে অনুসরণ করবেন তা আপনাদের বিবেকের উপর ছেড়ে দিলাম ।

সবকিছু যুক্তি দিয়ে হয় না।যুক্তির খাতিরে যদি কেউ বলেন, শ্রীকৃষ্ণ যেখানে দেবতা পূজা করেন সেখানে শ্রীকৃষ্ণের পূজা করে লাভ কি,দেবতা পূজা করলেই তো হয়, তাহলে কি ঠিক হবে? আমি ও এভাবে প্ররোচিত করছি না।আমার কথা হলো , আমরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা ও করবো এবং দেবতার পূজা ও করবো  ।তবে সবকিছু যেন সাত্ত্বিকভাবে হয়।

কোনো মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে যেয়ে বা নিজ সম্প্রদায়ের দল ভারী করতে মানুষকে ভুল ব্যাখ্যা দ্বারা প্ররোচিত বা প্রলোভিত করা ঠিক নয়। আর বৈষ্ণব ধর্ম কোনো ধর্ম নয় তা মতবাদ ।সনাতন ধর্মে বিভিন্ন মতবাদ আছে ।যে যে পন্থায় ঈশ্বর বা দেবতাকে ডাকেন তাতেই সাড়া দেবেন ।

কেউ কেউ হয়তো বলবেন, বর্তমানে কৃষ্ণভক্তদের বিরাট অংশ ইসকন ভক্ত সনাতন ধর্ম প্রচারে ও অন্য ধর্মের লোকদের ধর্মান্তরিত করে  প্রসারে বিরাট ভূমিকা রাখছেন।আমার মতে, সনাতন ধর্ম বিমুখ  সনাতনীদের মাঝে প্রচার করুন, প্রসারের প্রয়োজন নেই ।অন্য ধর্ম থেকে আমাদের সনাতন ধর্মে আনার প্রয়োজন নেই ।আমার জানামতে, খ্রিস্টান ধর্মের কিছু সংখ্যক লোককে সনাতন ধর্মে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে । এছাড়া অন্য ধর্মের লোক আনা হয়েছে বলে আমার জানা নেই ।

আমার মতে, অন্য ধর্মের মায়ের কোল খালি করে আমাদের সনাতন ধর্মে আনার প্রয়োজন নেই ।খ্রিস্টান ধর্ম আহলে কিতাব বা আহলে ইসলাম ।অর্থাৎ তারা  কিতাবী এবং ইসলাম ধর্মের অন্তর্ভূক্ত ছিল ।ইসলাম ধর্মের লোক তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে তাদের ধর্মে নিলে ভালো হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস ।

সনাতন ধর্মের লোক হয়ে অন্য ধর্মের লোককে আমন্ত্রণ ও নিমন্ত্রণ দেয়া ধর্ম অনুমোদন করে না বলে আমার ধারণা ও দৃঢ় বিশ্বাস ।তবে আমার জানামতে, বেদে সকলকে আর্য ধর্মে দীক্ষিত করতে বলা  হয়েছে।সনাতন ধর্ম আর্য ও অনার্য দুই ভাগে বিভক্ত ।আমার মনে হয় অনার্যকে আর্য ধর্মে দীক্ষিত করার কথা বলা হয়েছে ।অন্য ধর্মের মায়ের কোল খালি করে আনলে মা বাবার রোদন ভগবান ও সহ্য করবেন না।জনশ্রুতি আছে, কোনো কোনো সংগঠন মা বাবার অনুমতি ছাড়া তাদের সন্তানদেরকে তাদের মতবাদে দীক্ষিত করার জন্য মঠে নিয়ে আসেন।তাও ঠিক নয়।মা বাবার অশ্রুতে ঈশ্বরের বৈকুন্ঠ নড়ে উঠবে ।কেউ কেউ বলেন, অভক্ত মা বাবার কাছ থেকে সন্তান আনলে কোনো পাপ বা অপরাধ হবে না।ঈশ্বরের চোখে ঈশ্বরের অভক্ত কেউ নেই ।তাঁর প্রিয় ও নেই অপ্রিয় নেই ।মা বাবার সন্তান যেমন  তাদের চোখে কুসন্তান হতে পারে না,ঈশ্বরের চোখে ও কুসন্তান বা অভক্ত নেই ।কাজেই, সনাতন ধর্মে আগমনের জন্য বা মতবাদী করতে কাউকে প্ররোচিত বা প্রলোভিত করে নিমন্ত্রণ দিয়ে আনা ধর্মোচিত ও মানবোচিত নয়।

কেউ কেউ হয়তো বলবেন, অন্য ধর্মের লোকেরা তো আমাদের ধর্মের লোককে ধর্ম গ্রহণের জন্য নিমন্ত্রণ দেয়।অন্য ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ আমি পাঠ করিনি ।তাই, প্রকৃত ধার্মিকরা তা ভালো জানেন আমার প্রস্তাব হলো, যদি অন্য ধর্মের লোককে সনাতন ধর্মে আনতে হয় তবে বৌদ্ধ ধর্মের লোককে নিমন্ত্রণ জানাতে পারেন ।কারণ, বৌদ্ধ ধর্ম সনাতন ধর্মের একাংশ ছিল ।বৌদ্ধ ধর্মের অবতার গৌতম বুদ্ধ সনাতন ধর্মের অবতার বলেও স্বীকৃত। সনাতন ধর্মের সদাচার ও মূলনীতির সাথে বৌদ্ধ ধর্মের অনেক মিল আছে ।যদিও গৌতম বুদ্ধ  সনাতন ধর্মের অবতার কি না এই বিষয়ে আমার কিছু খটকা আছে ।খ্রিস্টান ধর্মের লোক আমাদের সনাতন ধর্মে নিমন্ত্রণ করে আনা আমি সমর্থন করি না।কারণ প্রত্যেক ধর্মের নিজস্ব কালচার আছে যা জন্মের সাথে সাথে রক্তের সাথে মিশে থাকে ।অনেক নিষিদ্ধ জিনিস আছে তা বর্জন করতে সময় লাগবে ।তাছাড়া দুই ধর্মের স্বামী ও স্ত্রীর মিলনে সন্তান হলে তা বর্ণ সঙ্কর হবে ।সনাতন ধর্মের প্রতি এবং তার বর্তমান ধর্মের পূর্ব পুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান নাও থাকতে পারে ।এতে শ্রাদ্ধ ও পিণ্ডদানের অভাবে পিতৃপুরুষ পতিত হতে পারেন ।কাজেই, অন্য ধর্ম তথা খ্রিস্টান ধর্ম থেকে এনে আমাদের সনাতন প্রসারে সাহায্য করছেন বলে আমি মনে করি না।

তবে প্রকৃত সনাতনী হিসেবে নিজের ধর্মে পরম নিষ্ঠা ও দৃঢ় বিশ্বাস এবং অন্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা বাঞ্ছনীয় ।

পরিশেষে বলি, আমাদের মূল ধর্মগ্রন্থ ভালোভাবে পাঠ করে মতভেদ ভুলে সব সনাতনী এক হওয়া প্রয়োজন।ব্লগের বন্ধুদের কাছে আমার অনুরোধ আমার পোস্ট ভালো না লাগলেও অবসর কাটানোর উপায় হিসেবে আমার পোস্টটি ভালোভাবে পাঠ করবেন বার বার আশা করি, আমার মূল উদ্দেশ্য বুঝতে পারবেন ।

দয়া করে আমার পোস্টটিভালো ভাবে পর্যালোচনা করে আলোচনাসহ মন্তব্য করার জন্য অনুরোধ করা হলো ।

আমার শব্দচয়ন ও বাক্যচয়ন জনিত ত্রুটি ও সকল প্রকার ত্রুটি বিচ্যুতি এবং কাউকে অহেতুক আঘাত জনিত কারণে ক্ষমা প্রার্থী ।

Tuesday, May 4, 2021

শ্রাদ্ধ বিষয়ে শাস্ত্রীয় আলোচনা,

 শ্রাদ্ধকর্ম কি বিষয়ে শাস্ত্রে কি উল্লেখ  আছে, আসুন দেখে নেই,


পবিত্র গীতায় বলা হয়েছে, 

"সঙ্করো নরকায়ৈব কুলঘ্নানাং কুলস্য চ ।

পতন্তি পিতরো হ্যেষাং লুপ্তপিণ্ডোদকক্রিয়াঃ ।"

অন্বয়ঃকুলস্য সঙ্কর ( কুলের মিশ্রণ) কুলঘ্নানাং চ নরকায় ( কুলনাশকদের নরকের জন্যই)  চ এষাম্ ( এবং এদের) পিতরো হি (পিতৃপুরুষগণও) লুপ্তপিণ্ড + উদকক্রিয়া (পিণ্ডদান ও তর্পণ লুপ্ত হওয়ায়) পতন্তি ( পতিত হন)

সরলার্থ হলো, "যদি কুলের মিশ্রণ ঘটে, কুলনাশকগণ নরকবাসী হন এবং পিণ্ডদান ( শ্রাদ্ধ) ও তর্পণ ক্রিয়া লুপ্ত হওয়ায় তাঁদের পিতৃপুরুষগণও নরকে গমন করেন ।" উক্ত শ্লোকে বুঝানো হয়েছে, বৈধ সন্তানের অভাবে পিতৃপুরুষদের পিণ্ডদানের বা শ্রাদ্ধের অভাব ঘটে ।তাহলে গীতায় পিণ্ডদান তথা শ্রাদ্ধ ক্রিয়ার কথা পরিষ্কার উল্লেখ আছে ।

তাহলে, উপরোক্ত ব্যক্তির ভাষায় শ্রাদ্ধ ক্রিয়া ব্রাহ্মণ্য ধান্দাবাজি হলে তো কোনোদিন তা ভগবান কৃষ্ণের ধান্দাবাজি বলতে ও তার  মুখে  আটকাবে না।এমন বললে কি তাকে সনাতনী বলা যাবে? 

তাছাড়া পবিত্র বেদে বলা হয়েছে, "যাদের যথাবিধি ঊর্ধদৈহিক কার্য হয়েছে এবং যাদের তা হয়নি সে পিতৃগণ স্বর্গের মধ্যে স্বকর্মোচিত অন্নে সুখ লাভ করে।স্বরাট যম তাদের প্রার্থনা অনুযায়ী প্রাণযুক্ত মনুষ্য শরীর প্রদান করেন ( ( ১৯|৬০)।" সুতরাং দেখা যায়, বেদেও ঊর্ধদৈহিক ক্রিয়া তথা শ্রাদ্ধ ক্রিয়ার কথা উল্লেখ আছে ।সুতরাং বেদের ভাষ্য মানলে তো শ্রাদ্ধবিরোধীরা বলবেন ' শ্রাদ্ধকর্ম পরমেশ্বরের ধান্দাবাজি '।তা বলা কি ধর্মোচিত হবে? 



তাছাড়া শ্রাদ্ধ ক্রিয়া ব্রাহ্মণদের ধান্দাবাজি হলে ব্রাহ্মণগণ শ্রাদ্ধ ক্রিয়া করতেন না।ব্রাহ্মণদের শ্রাদ্ধ ক্রিয়া না করার নিদর্শন কি উনি বা উনার অনুসারীরা দেখাতে পারবেন? 

আমি নিজে একজন ব্রাহ্মণ সন্তান এবং পৌরহিত্য ও মাঝে মাঝে করি।আমরা গত ৪ফাল্গুন, ১৭,ফেব্রুয়ারি আমাদের প্রয়াত মাতৃদেবীর স্বর্গ কামনায় ষোড়শ ও আদ্যৈকোদিষ্ট শ্রাদ্ধ ক্রিয়া করেছি।আমরা তিন ভাই ।অন্য দুইভাই হাইস্কুল শিক্ষক ।আমি নিজেও নামে মাত্র পণ্ডিত ।আমরা তিন ভাই মিলে যথাসাধ্য দানাদি কর্ম করেছি।অনেক যজমান আমাদের দান দ্রব্য দেখে অবাক হয়েছে ।কারণ, আমরা যজমানদের ক্ষেত্রে অনেক ত্যাগ স্বীকার করি।আমাদের মায়ের জন্য বৃষোৎসর্গ করার ইচ্ছা ছিলো ।বিভিন্ন কারণে করতে পারিনি ।শ্রাদ্ধকর্ম যদি ব্রাহ্মণদের ব্যবসা মনে করতাম তাহলে তো আমরা শ্রাদ্ধ ক্রিয়া ও দানাদি কর্ম করতাম না।

আমি প্রায় ২০বছর পূর্বে এক যজমানের মৃত্যুতে আদ্যশ্রাদ্ধ ও ষোড়শ দান করিয়েছি।মাত্র দুটো ধূতি ও চারটি গামছা যজমান এনেছিল ।বাকিগুলো বাড়ি থেকে নিয়ে কুলিয়েছি।বৈতরণী দেবার মতো ক্ষমতা ছিল না।এক বছর পর দুই শত টাকা দক্ষিণা দিয়েছে।

এভাবে অনেক ব্রাহ্মণই যজমানের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেন ।

প্রকৃতপক্ষে, শ্রাদ্ধক্রিয়া করানো এবং দান দ্রব্য গ্রহণ করা শাস্ত্রে ব্রাহ্মণদের জন্য  নিষেধ আছে ।তবু ও যজমানদের মঙ্গলার্থে আমরা শ্রাদ্ধ ক্রিয়া করাই এবং অনটনের কারণে দান দ্রব্য বিসর্জন না দিয়ে আমরা গ্রহণ করি।

আর প্রতিটি ধর্মেই দান করার কথা বলা হয়েছে এবং দানকর্ম পূণ্যকর্ম বলে অভিহিত করা হয়েছে ।আমরা ব্রাহ্মণরা মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পিতৃপুরুষ ও দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে দান গ্রহণ করি। তা যদি  ব্রাহ্মণদের ধান্দাবাজি হতো তাহলে মন্ত্র পাঠ করে গলা ভেঙে বা নাড়ি ফুলিয়ে নেবার পদ্ধতি চালু  না করে সরাসরি দান গ্রহণ করার পদ্ধতি চালু করতাম।


যাহোক, ব্রাহ্মণদের মধ্যে ও কিছু ব্রাহ্মণ আছেন যারা অনেক সময় যজমানের সামর্থ্যের বাহিরে লিস্ট দেন তা অনস্বীকার্য ।তবে শ্রাদ্ধ ক্রিয়া যে শাস্ত্রবিরোধী তা মোটেই ঠিক নয়।বিভিন্ন শাস্ত্রে তার প্রমাণ আছে ।

সুতরাং, শ্রাদ্ধক্রিয়া ব্রাহ্মণ্যদের ধান্দাবাজি নয় তা শাস্ত্রের আলোকে ক্রিয়াকাণ্ড তথা আমাদের মূল ধর্মগ্রন্থ বেদ ও গীতা সমর্থিত এবং অনুমোদিত ।আর ধান্দা হয়ে থাকলে তা চোখের তথা দৃষ্টির এবং মনের ধান্দা।

তবে কেউ চার্বাক দর্শনের অনুসারী হলে আমার বলার কিছু নেই ।

ভগবান সবাকে সুমতি দান করুন এবং আমার আত্মীয়স্বজনসহ সবাকে করোনা এবং দুরারোগ্য ব্যাধি মুক্ত রাখুন তা করজোড়ে প্রার্থনা ।

পরিশেষে, আমার প্রয়াত পিতৃদেবতা ও মাতৃদেবী যেন সাধনোচিত ধামে প্রবেশ করে পরম শান্তি লাভ করেন তার জন্য সকল  বন্ধুদের ঐকান্তিক প্রার্থনা কামনা করি ।

ওঁ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।

Tuesday, April 13, 2021

সনাতন ধর্মে সাত্ত্বিক খাবার প্রসঙ্গেঃ

 সনাতন ধর্মে সাত্ত্বিক খাবার প্রসঙ্গেঃ 


সনাতন ধর্মে খাবার নিয়ে আলোচনা সমালোচনার শেষ নেই ।কেউ কেউ সনাতন ধর্মের আহার বা খাবার বিষয়ে আলোচনা করার অনুরোধ করায় আজ আলোচনায় ব্রতী হলাম ।

সনাতন ধর্মের কোনো ধর্মগ্রন্থে খাবার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা আমার চোখে পড়েনি ।তবে পবিত্র গীতার সপ্তদশ অধ্যায়ের ৭-৯নং শ্লোকে প্রত্যক্ষভাবে বা সরাসরি বলা  না হলেও  পরোক্ষভাবে আহার বা খাবার বিষয়ে আলোচিত হয়েছে ।আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানপ্রসূত ধারণা থেকে এবার  আলোচনা করছি ।

পবিত্র গীতায় বলা হয়েছে, "আয়ুঃসত্ত্ববলারোগ্যসুখপ্রীতিবিবর্ধনাঃ।রস্যাঃ স্নিগ্ধাঃ স্থিরা হৃদ্যা আহারাঃ সাত্ত্বিকপ্রিয়াঃ( ১৭|৮)।।"উক্ত শ্লোকের সরলার্থ হলো, ,  "আয়ু, সত্ত্বগুণ, বল, আরোগ্য, সুখ,প্রীতি তথা চিত্তপ্রসন্নতা বৃদ্ধিকারী  এবং স্থায়ী, হৃদয়ে শক্তি বর্ধনকারী, সরস, স্নিগ্ধ- এরূপ আহার্য সাত্ত্বিক ব্যক্তিদের প্রিয় ।"

ব্যাখ্যাঃস্থিরাঃ- যা স্থায়ী বা পুষ্টিকর অর্থাৎ যা দুষ্পাচ্য নয়,সুপাচ্য এবং বহুদিন ধরে শক্তি প্রদান করে; ' হৃদ্যাঃ- হৃদয়,ফুসফুস ইত্যাদিকে শক্তি প্রদান করে ও বুদ্ধিতে সৌম্যভাব আনে; রস্যাঃ- ফল, দুধ,শর্করা জাতীয় খাদ্য; স্নিগ্ধাঃ-'ঘি,মাখন,বাদাম,কাজু, কিশমিশ  জাতীয় স্নেহযুক্ত সাত্ত্বিক ভোজ্য পদার্থ যেগুলো সুপুষ্ট,সুপক্ক এবং টাটকা ।

কেউ কেউ বলেন, মাছ, মাংস ও সাত্ত্বিক খাবার ।আমি তাদের কথার সাথে একমত নহি ।কারণ, মাছ মাংস উত্তেজক পদার্থ ।উত্তেজক পদার্থ সাত্ত্বিক হতে পারে না। তাছাড়া মনুসংহিতার পঞ্চম অধ্যায়ে মাছ মাংস খাবার বিষয়ে পরস্পরবিরোধী শ্লোক লক্ষ্য করা যায় ।কোনো শ্লোকে সংস্কৃত মাছ মাংস এবং কোনো কোনো শ্লোকে কিছু নির্দিষ্ট মাছ খাবারের বিধান দেখা যায় ।আবার উপসংহারে 'মাংসত্যাগ মহাফলা '  বলা হয়েছে ।কাজেই, এসব বিবেচনায় মাছ মাংস সাত্ত্বিক খাবার হতে পারে না।( ৫|৫৬)। আবার যারা শাকাহারী বা প্রসাদভোজী বলে দাবি করেন তাদের যুক্তি হলো ,মাছ মাংস অমেধ্য অর্থে তামসিক খাবার যা বর্জনীয় ।আমার মতে তাদের কথা ও সঠিক নয়।কারণ'  অমেধ্য ' শব্দ দ্বারা অপবিত্র বা অশুদ্ধ বা নিষিদ্ধ বুঝায়।সনাতন ধর্মে মাছ মাংস আহার পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়নি ।আমার মতে মাছ মাংস রাজসিক খাবার ।


 আমার মতে, উদ্ভিজ খাবারই সাত্ত্বিক খাবার, প্রাণিজ খাবার সাত্ত্বিক হতে পারে না।তবে দুধ প্রাণিজ হলেও খাদ্যগুণে সাত্ত্বিক ।উদ্ভিজ খাবার সাত্ত্বিক বলেই আমরা দেবতার ভোগে নিবেদন করি।কেউ কেউ হয়তো বলবেন যে,দেবতার উদ্দেশ্যে তো পশু বলি দেয়া হয়।পশু আমরা উৎসর্গ করি, ভোগ হিসেবে নিবেদন করি না।যদিও শক্তি পূজায় বিশেষতঃ ভৈরব পূজায় মাংস ভোগ দেয়া হয় বলে জনশ্রুতি আছে ।কিন্তু আমি মাংসের ভোগ লাগানো সমর্থন করি না।

আমরা কোনো পূজা করতে হলে আগের দিন সংযম করে শাকাহার করি।ইন্দ্রিয় সংযমের জন্যই তো নিরামিষ আহার করি।একাদশী, পূর্ণিমা, অষ্টমী, শিব চতুর্দ্দশীর উপবাস করে ফলমূলাদি আহার করি,মাছ মাংস ভক্ষণ করি না।মৃতাশৌচ কালীন মাছ মাংস পরিহার করি।এগুলোকে আমরা সংযম বলে থাকি।সাত্ত্বিক আহার হিসেবে আমরা উদ্ভিজ খাবার ও ফলমূল  আহার করি। উপনয়ন সংস্কারে ব্রহ্মচর্য পালন অবস্থায় ফলমূল ও পায়েস আহার করি।প্রাণিজ খাবার সাত্ত্বিক হলে আমরা সংযম পালনকালীন তা আহার করতাম।

আমার জ্ঞানবশতঃ আমি আলোচনা করলাম ।বিজ্ঞ বন্ধুগণ আলোচনা করলে প্রীত হবো ।

Sunday, January 17, 2021

সমগ্র মানব জাতির পিতা ভগবান মনুকে কেনো বলা হয়েছে?

 সমগ্র মানব জাতির পিতা ভগবান মনু।

কিন্তু আমরা সকলেই দিব্য মহামুনি ঋষি গণের বংশধর।।


মনুও শতরূপার- দুই পুত্র প্রিয়ব্রত, উত্তানপাদ ও তিন কন্যা-আকূতি,দেবহূতি,প্রসূতি 

।অন্য দিকে মরিচী,অঙ্গিরা, অত্রি,পুলস্থ্য, পুলহ, ক্রতু, ভৃগু,বৈশিষ্ট, দক্ষ,ওঁরা কেউও মনুর পুত্র না,বা মনু বংশ না,কিন্তু উনাদের পুত্র পৌত্রাদি ক্রমে বংশ আছে,।

মনুর বংশধর আমরা যদি সবাই হই তবে একই রক্তের নারীপুরুষের সাথে বিবাহ নিষেদ করা হত না।কিন্তু স্বয়ং মনু নিজেই একই বংশের বা রক্তের সম্পর্কের মধ্যে নারীপুরুষের বিবাহ নিষেদ করেছেন।

এমন কি মনুর কন্যাগনের আপন ভাই থাকা সত্ত্বেও, পুত্রিকা ধর্ম অনুযায়ী প্রথম কন্যা আকূতিকে প্রজাপতি রুচির সাথে বিবাহ দেন।

২য় কন্যা দেবহূতি কে কর্দম মুনির সাথে বিবাহ দেন।তৃতীয় কন্যা প্রসূতি কে দক্ষের সাথে বিবাহ দেন।

 এতে সুস্প্রষ্ট যে সকলেই মনুর  বংশধর নয়, তবে মনু প্রথম প্রজাপতি রুপে /কন্যা বিবাহ দিয়ে প্রজাবৃদ্ধি তে মহৎভূমিকা রাখেন এবং এই হতে প্রজাবৃদ্ধি সূচনা হয়, তাই

সকল মানব জাতির পিতা মনু,তাই মনুর পত্নী শতরুপা হওয়াতে পিতার পত্নী মাতা হন। পরিশেষে বলি সনাতন শাস্ত্রের গোত্র বিষয়ে বিচার করলেই এবং একই রক্তের বন্ধন থাকলে বিবাহ নিষিদ্ধ করণ, তা মনু নিজেই বিধান দিয়াছেন,।তা হতে প্রমানিত যে মনু বংশ সকলে নয় বরং মুনিঋষিগনে বংশধর আমরা,আর মনু মানব সভ্যতাকে বিকশিত করেছে মানবের উৎস -মানে শক্তি, শান্তি, ধর্ম,জ্ঞান বিজ্ঞান,শাষণ, সুশৃঙ্খলা প্রদান করেছেন, মনুষ্যের ধর্ম (মনুর আচরণ ই মনুধর্ম্ম অর্থাৎ মনুষ্যধর্ম্ম)প্রজার ধর্ম শিখাইয়াছেন তাই মনুর শাষণে সমগ্র পৃথিবী ছিল। তাই মনুর নাম অনুসারে মানব জাতি পরিচিত।

আর এই মানব জাতির উৎস মনু, তাই মনুকে পিতা বা জনক বলা হয়।


উদাহরণ স্বরুপ বলা যাইতে পারে -বর্তমানে প্রতিটি স্বাধীন দেশেরই জাতির পিতা আছে, যেমন -বাঙ্গালির জাতির পিতা,ভারতবাসীর জাতির, পাকিস্তানিদের জাতির পিতা--তা লক্ষ্য করলেই বোঝিয়া যাবেন আশা করি।

                ((জয় শ্রীকৃষ্ণ))

          (শ্রী সমীরণ ভট্টাচার্য্য)

Ekadoshi

লক্ষ্মীপুর চন্দ্রগঞ্জ থানা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন

  চন্দ্রগঞ্জ  প্রতিনিধি : বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন...

চারবর্ণের অশৌচ ব্যবস্তা