Saturday, December 10, 2022

লক্ষ্মীপুর চন্দ্রগঞ্জ থানা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন

  চন্দ্রগঞ্জ প্রতিনিধি :



বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন সম্পুন্ন হয়েছে।


শনিবার (১০ ডিসেম্বর)২০২২ইং চন্দ্রগঞ্জের রাজমুকুট কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ।

লক্ষ্মীপুর জেলাধীন চন্দ্রগঞ্জ থানা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য  পরিষদের ত্রি- বার্ষিক সম্মেলন অত্যন্ত সুন্দর,মনোরম,নান্দনিক,আনন্দঘন ও উৎসব মুখর  পরিবেশে চন্দ্রগঞ্জ রাজমুকুট কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়।উক্ত সম্মেলনে জনসাধারণের সরব ও স্বঃস্ফুর্ত উপস্থিতিতে রাজমুকুট কমিউনিটি সেন্টারে সনাতনীদের হৃদ্যতাপূর্ণ এক মিলন মেলায় পরিণত হয়েছিল। সম্মেলনে গীতা পাঠের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান কর্মসূচী, গীতা পাঠে ছিলেন চন্দ্রগঞ্জ সার্ব্বজনীন শ্রী শ্রী রক্ষা কালী মন্দিরের পুরোহিত  শ্রী_মানিক_চক্রবর্তী তারপর জেলা নেতৃবৃন্দ ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের আলোচনান্তে এক পর্যায়ে  কমিটি গঠনে  চন্দ্রগঞ্জ থানা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য  পরিষদের গঠনতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক বিধি সম্পূর্ণরূপে অনুসরণ করা হয়।সম্মেলনে প্রান্তিক পর্যায়ে যারা উপস্থিত ছিলেন,  জনসাধারণের ১০০% অকুণ্ঠ সমর্থনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায়  চন্দ্রগঞ্জ থানার সুপরিচিত মুখ #বাবু- সমীর কর্মকার  মহোদয় পুনরায়  সভাপতি  নির্বাচিত হয়েছেন,  তিনি ব্যক্তি জীবনে সৎ,দক্ষ,স্থিতধী,কর্মঠ,সদালাপী,সদা হাস্যোজ্বল, সুদর্শন ও পরিচ্ছন্ন চরিত্রের অধিকারী।এসব গুণাবলী তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে করেছে মহিমান্বিত। যা উপস্থিত ও আগত সনতনীরা ব্যক্ত করেছেন, এবং উনারা আশা করচ্ছেন উনার হাত ধরে চন্দ্রগঞ্জ থানা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য  পরিষদ এগিয়ে যাবে অনেক দূর, 
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন, সংগঠনটির জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট রতন লাল ভৌমিক।
চন্দ্রগঞ্জ থানা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি সমীর কর্মকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক গৌতম মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক স্বপন দেবনাথ, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শংকর মজুমদার, কেন্দ্রীয় যুব ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিমুল সাহা প্রমুখ।
সভায় বক্তাগণ বাংলাদেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ উল্লেখ করে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জনে সাবলীল বক্তব্য রাখেন।

Thursday, September 8, 2022

ব্রাহ্মণাদি বর্ণসমূহের বিভাগ জন্মের দ্বারা মান্য করা কি উচিত , নাকি কর্মের দ্বারা ?

 শ্রীমদ্ভাগবত গীতার পঞ্চম অধ্যায়ের ১৩নং শ্লোকের  তাৎপর্য নিয়ে সংক্ষিপ্ত  আলোচনা----


ব্রাহ্মণাদি বর্ণসমূহের বিভাগ জন্মের দ্বারা মান্য করা কি উচিত , নাকি কর্মের দ্বারা ?

-------------------------------------------------------------------


উত্তর ---যদিও জন্ম আর কর্ম দুইই বর্ণের অঙ্গ 

হওয়ায় বর্ণের পূর্ণতা তো ঐ দুই থেকেই হবে । কিন্তু

প্রাধান্য হয় জন্মের জন্যই । এই  জন্য জন্ম হতেই 

ব্রাহ্মণাদির বর্ণ বিভাগ মানা উচিত । কেননা এই 

দুইয়ের মধ্যে প্রাধান্য তো জন্ম হতেই হয় । যদি মাতা-পিতা একই বর্ণের হন, এবং কোনও প্রকারেই জন্মে  ,সঙ্করতা না আসে, তাহলে  সহজে কর্মেও সঙ্করতা প্রায়ই আসে না।  কিন্তু সঙ্গদোষ,আহার দোষ এবং দূষিত  শিক্ষা-দীক্ষাদির কারণে কর্মে কখনও কিছু  ব্যতিক্রম যদিও হয়ও , তাহলেও 

জন্ম হতে বর্ণ মেনে  নিলে বর্ণ রক্ষা হতে পারে । তবুও কর্মশুদ্ধির  প্রয়োজন কম নয় ।  কর্ম  সর্বতোভাবে  বিনষ্ট হলে বর্ণের  রক্ষা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে ।  এইজন্য জীবিকা ও বিবাহ  আদিতে  তো জন্মের  প্রাধান্য এবং কল্যাণপ্রাপ্তির  জন্য কর্মের প্রাধান্য  মানতে হবে । কেননা,  জাতিতে

 হবার পরও যদি কর্ম ব্রাহ্মণোচিত  না হয়, তাহলে 

তার কল্যাণ হতে পারে না এবং সামান্য ধর্মের অনুসারে শম-দমাদি  পালনকারী এবং শুদ্ধ  আচরণশীল শূদ্রও  যদি ব্রাহ্মণোচিত যজ্ঞাদি কর্ম 

করতে থাকে এবং  তার দ্বারা  নিজের জিবিকা নির্বাহ  করে, তাহলে  সেও পাপের ভাগী হবে।


 বর্তমান সময়ে  যখন বর্ণ ব্যবস্থা বিনষ্ট হয়ে গেছে, তখন জন্ম দ্বারা বর্ণ না মেনে মানুষের আচরণ  অনুসারে তার বর্ণ মেনে নিলে ক্ষতি কি ?

--------------------------------------------------------------------


উত্তর---এইটি মানা উচিত নয় , কেননা প্রথমতঃ  বর্ণ ব্যবস্থাতে  কিছু শৈথিল্য এলেও , তা নষ্ট হয়ে যায়নি ।   দ্বিতীয়তঃ জীবকে কর্মফল  ভোগের জন্য ঈশ্বরই তাদের পূর্ব  কর্মানুসারে বিভিন্ন  বর্ণ জন্মদান করেন । ঈশ্বরের  বিধানকে পাল্টে  দেবার 

 অধিকার  মানুষের নাই । তৃতীয়তঃ, আচরণ  দেখে 

বর্ণের কল্পনা  কারও অসম্ভব । একই মাতাপিতার 

 সন্তান ভিন্ন  আচরণ বা স্বভাবের হয় । একই মানুষ  সারা দিনে  কখনও  ব্রাহ্মণের মত, আবার কখনও শূদ্রের মত আচরণ ও  কর্ম সম্পাদন করে । এমতাবস্থায়  বর্ণের  নির্ধারণ  বা নিশ্চয়  কি করে ? আবার এই রকম হলে  কে আর নীচে  যেতে চাইবে ? পান ভোজন  এবং বিবাহ ক্ষেত্রে সঙ্কট উৎপন্ন হবে , ফলে  বর্ণবিপ্লব  হয়ে যাবে এবং 

বর্ণব্যবস্থার স্থিতিতে  অন্যান্য কঠিন বাধা  উপস্থিত

 হবে । এইসব কারণে কর্ম হতে  বর্ণ নির্ণয়  সম্ভব নয় । ভগবান শ্রীকৃষ্ণের  অভিপ্রায়ও এমন নয় ।

 ব্রাহ্মণোচিত সর্বগুণ থাকা সত্বেও ভীষ্ম, বিদুর 

প্রভৃতি  মহান ব্যক্তিগণ ক্ষত্রিয় থেকে ব্রাহ্মণ পদে

উন্নীত হন নাই ।





যদি এবিষয়ে আরও  জানার ইচ্ছে থাকে তাহলে  ছবিতে দেওয়া গীতাটি সংগ্রহ করে নিতে পারেন।   জয় গীতা।

Wednesday, August 3, 2022

 শ্রাদ্ধবাসরে গীতাদান ও গীতাপাঠের বিশেষত্ব নিয়ে অনেকেই

অনেক মন্তব্য করার চেষ্টা করেন,  আপনাদের উদ্দেশ্য 

গীতা থেকেই এবিষয়ে আলোকপাত

করবার চেষ্টা করচ্ছি,  বিশেষ করে গীতার মাহাত্ম্যে 

এবিষয়ে অনেক আলোচনা রয়েছে,  যেমন-



য্দ্ যৎ কর্ম চ সর্বত্র গীতাপাঠ প্রকীর্তিমৎ৷

তত্তৎ কর্ম চ নির্দোষং ভূত্বা পূর্ণত্বমাপ্নুয়াৎ ॥৬৩॥

অর্থ:যে সমস্ত কর্ম গীতাপাঠ সহকারে অনুষ্ঠিত হয়, সে সমস্তই নির্দোষ হয়ে পূর্ণত্ব লাভ করে৷


পিতৃনুদ্দিশ্য যঃ শ্রাদ্ধে গীতাপাঠং করোতি হি৷

সন্ত্তষ্টাঃ পিতরস্তস্য নিরয়াদ্ যান্তি স্বর্গতিম্ ॥৬৪॥

অর্থ:পিতৃগণের উদ্দেশ্যে যে ব্যক্তি শ্রাদ্ধে গীতাপাঠ করেন, তাঁর পিতৃগণ সন্তুষ্ট হন ও নরক থেকে স্বর্গে গমন করেন৷


গীতাপাঠেন সন্ত্তষ্টাঃ পিতরঃ শ্রাদ্ধতর্পিতাঃ৷

পিতৃলোকং প্রয়ান্ত্যেব পুত্রাশীর্বাদতৎপরাঃ ॥৬৫॥

অর্থ: শ্রাদ্ধকালে গীতাপাঠ দ্বারা শ্রাদ্ধতর্পিত পিতৃগণ, সেই পুত্রকে আশীর্বাদ করতে করতে পিতৃলোক গমন করেন৷


গীতাপুস্তকদানঞ্চ ধেনুপুচ্ছ সমন্বিতম্ ৷

কৃত্বা চ তদ্দিনে সম্যক্ কৃতার্থো জায়তে জনঃ ॥৬৬॥

অর্থ:চামর সমন্বিত গীতাগ্রন্থ দান করলে সেই দিনেই মানুষ সম্যক্ ভাবে কৃতার্থতা লাভ করে৷


পুস্তকং হেমসংযুক্তং গীতায়াঃ প্রকরোতি যঃ ৷

দত্ত্বা বিপ্রায় বিদুষে জায়তে ন পুনর্ভবম্ ॥৬৭॥

অর্থ:পণ্ডিত ব্রাহ্মণকে যিনি সুবর্ণ সংযুক্ত গীতা দান করেন, তাঁর আর জন্ম হয় না৷


শতপুস্তকদানঞ্চ গীতায়াঃ প্রকরোতি যঃ

স যাতি ব্রহ্মসদনং পুনরাবৃত্তিদুর্লভম্ ॥৬৮॥

অর্থ:যিনি একশতখানি গীতা দান করেন, তিনি পুনরাবৃত্তিদুর্লভ ব্রহ্মধামে গমন করেন৷


গীতাদানপ্রভাবেন সপ্তকল্পমিতা সমাঃ৷

বিষ্ণুলোকমবাপ্যন্তে বিষ্ণুনা সহ মোদতে ॥৬৯॥

অর্থ:গীতাদান-প্রভাবে সপ্ত-কল্পকাল যাবৎ বিষ্ণুলোকে স্থান লাভ করে জীব পরমানন্দে বিষ্ণুর সঙ্গে বাস করেন৷


সম্যক্ শ্রুত্বা চ গীতার্থং পুস্তকং যঃ প্রদাপয়েৎ৷

তস্মৈ প্রীতং শ্রীভগবান্ দদাতি মানসেপ্সিতম্ ॥৭০॥

অর্থ:যিনি গীতার্থ সম্যকভাবে শ্রবণ করে সেই পুস্তক ব্রাহ্মণকে দান করেন, শ্রীভগবান প্রীত হয়ে তাঁর মনোভীষ্ট পূরণ করেন৷         জয় গীতা

Tuesday, June 28, 2022

গায়াতে পিণ্ডদানের পরেও কি সাংবৎসরিক শ্রাদ্ধ করতে হবে?

 



অমৃতের পুত্র আর্যরা জানেন ইহকালের পরেও একটি কাল আছে শাস্ত্রে তাকে পরকাল বলে।সনাতন আদর্শ পরম্পরাগত সন্তানেরা ইহকাল পরকাল উভয়কালের বিধায়ক।পিণ্ড দান করায় সন্তানের অন্য অভিধা পুত্র। পিণ্ডদান পদ্ধতিকে কেন্দ্র করেই শ্রাদ্ধ পদ্ধতি প্রচলিত।এই শ্রাদ্ধ কথাটি ঋকবেদের পিতৃমেধার স্মার্ত রুপ।সকল শ্রাদ্ধই নৈমিত্তিক কর্মের অন্তর্ভূক্ত। যদিও তা কখনো নিত্য কখনো বা কাম্য বলেও প্রশংসিত হয়েছে।

আজ আমরা গয়াশ্রাদ্ধ ও বার্ষিক শ্রাদ্ধ নিয়ে আলোচনা করবো।গয়াশ্রাদ্ধ, গয়াকৃত্য সনাতন শাস্ত্রে যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়েছে।শুধু আলোচিত বললে ভুল হবে মান্যতাও পেয়েছে । গয়াশ্রাদ্ধ সনাতন পরম্পরাতে পবিত্রতার সাথে পালিত হচ্ছে। এনিয়ে কারও মধ্যে দ্বিধা নেই,নেই কোন সংশয়।গয়াশ্রাদ্ধের নিত্যতা,ও নৈমিত্তিকতা হেতু সকলেই সময় করে পিতৃমাতৃ প্রভৃতি উদ্দেশ্যে তার অনুষ্ঠান করে থাকে।এই শ্রাদ্ধ করলে মৃতক তৃপ্তি লাভ করেন।গয়াশ্রাদ্ধকে নিত্যশ্রাদ্ধ বলা হচ্ছে কারণ তা না করলে পাপ হয়।আর প্রত্যেক শ্রাদ্ধই নৈমিত্তিক তাই গয়াশ্রাদ্ধও নৈমিত্তিক ।সম্প্রতি বিচার না করেই কারো কারো দ্বারা গয়াকৃত্যের পর আর মৃতকের আত্মার তৃপ্তিকর সাম্বৎসরিক শ্রাদ্ধ করতে হবে না এরুপ মন্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিবেশিত হওয়ায় অনেকে বিভ্রান্ত হচ্ছেন।পক্ষে বিপক্ষে বেশ আলোচনা হচ্ছে কেউ কেউ এতে শালিনতা হারায়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতেও পিছপা হচ্ছেননা। তাই এ বিষয়ে আলোচনা প্রাসঙ্গিক মনে করছি। বার্ষিক একোদ্দিষ্ট শ্রাদ্ধ গয়াশ্রাদ্ধের ন্যায় নিত্য ও নৈমিত্তিক। বহুবিধ শাস্ত্রে এই শ্রাদ্ধের নিত্যতা নিরুপিত হয়েছে। আমরা এবিষয়ে মীমাংসার জন্যে যথা সম্ভব প্রমান ও যুক্তি যুক্ত আলোচনায় ব্রতী। বিশ্বাস রাখি সকলে সাগ্রহে তা গ্রহণ করবেন।জগদ্বীশ্বরের কৃপালাভে আর্য শাস্ত্রে দুটি পথ লোক মান্যতা পেয়েছে একটি দেবপূজা অপরটি পিতৃপূজা। এদুকর্মের গুরুত্ব- প্রকাশ করতে গিয়ে বায়ুপুরাণ বলেছে-" পিতৃদৈবতভক্তা যে তে২পি যান্তি পরাং গতিম্ " যাহারা পিতৃ ও দেবভক্ত তাহারা পরমগতি লাভ করে। গয়াকৃত্য ও সাম্বৎসরিক শ্রাদ্ধ উভয়ে একই উদ্দেশ্য সিদ্ধির উপায় অথচ শাস্ত্রবাক্য বোধের তারতম্য হেতু কেউ কেউ সাম্বৎসরিক শ্রাদ্ধকে গুরুত্বহীন বলে মত প্রকাশ করছে।পিতা প্রসন্ন হলে সমস্ত দেবতাই সন্তুষ্ট হন।যে সন্তান প্রাণপনে জীবিত ও মৃত পিতৃমাতৃর তুষ্টি সাধন করতে পারে তাদের জীবন ধন্য,তার জীবন সার্থক।

জীবিত পিতা মাতার সেবা ও দেহান্তরিত পিতা-মাতা প্রভৃতির শ্রাদ্ধ করে বিশ্বের অনেকেই মহাপুরুষের মর্যাদা পেয়েছেন।বৃহন্নারদীয় পুরানের স্পষ্ট নির্দেশনা -" পিতৃন্ যজন্তি যে শ্রাদ্ধে তৈশ্চ বিষ্ণু প্রপূজিত" পিতৃ পূজা করে, বিষ্ণু পূজাই তাদের করা হয়। "একোদ্দিষ্টন্তু যচ্ছ্রাদ্ধং তন্নৈমিত্তিকমুচ্যতে " একজনের উদ্দেশ্য যে শ্রাদ্ধ তা নৈমিত্তিক শ্রাদ্ধ। শ্রাদ্ধে পিতা মাতাই দেবতা।দালভ্য মুনির মতে

 নিত্যং নৈমিত্তিকং কার্য্যং নিত্যং তু পরিলঙ্ঘয়েৎ।

আদৌ নৈমিত্তিকং কুর্য্যাৎ পশ্চান্নিত্যং সমাচরেৎ।


নিত্য ও নৈমিত্তিক কার্য্য একদিনে প্রাপ্ত হলে নিত্য কর্ম না করেও নৈমিত্তিক কর্মের অনুষ্ঠান করবে,কারণ এতে করে নিত্যকর্মও সিদ্ধ হবে।দ্বাদশ মহাজনের অন্যতম মহাজন ভগবান কপিল উল্লেখ করেন

সর্বেভ্যঃ স্মার্তকর্মভ্যঃ শ্রাদ্ধমেকং মহৎ স্মৃতম্।

ন সদ্য: স্মার্ত্তকর্ম বৈ কিন্তু বৈদিককর্ম হি।

সকল স্মার্ত্তকর্ম হতে একমাত্র শ্রাদ্ধকর্মই মহৎ কর্ম; কারণ তা প্রত্যক্ষ শ্রুতিমূলক হওয়ায় অগ্নিহোত্র যজ্ঞতুলয।।

কপিল মুনি আবার বলেন

এতচ্ছ্রাদ্ধল প্রকথিতং নান্যদিত্যেব সূরভি:।

তস্মাৎ শ্রাদ্ধং তদ্দিনৈব অকৃত্বৈ কদাচন।

যেহেতু পণ্ডিতগণ নৈমিত্তিক কর্মকেই শ্রাদ্ধ বলে মত দিয়েছেন সে কারণে শ্রাদ্ধ দিনে শ্রাদ্ধ না করে অন্য কর্মের অনুষ্ঠান কদাপি করা যাবেনা এতে ঐ অনুষ্ঠিত কর্মও পণ্ড হবে। কণ্বস্মৃতির ৭৮৮ নং  শ্লোক- বলছে

"শ্রাদ্ধং কুর্য্যাৎ প্রযত্নেন শ্রাদ্ধং কৃত্বা বিধানত।"

সযত্নে শ্রাদ্ধানুষ্ঠান কর্তব্য।শ্রাদ্ধ ইহলোক ও পরলোকের মানুষের সাথে অকৃত্রিম যোগসূত্র বজায় রাখে।সাম্বৎসরিক শ্রাদ্ধে বিদেহী আত্মা পরম তৃপ্তি লাভ করে থাকে।তাই গয়াশ্রাদ্ধ করার পরেও এই শ্রাদ্ধ অবশ্য যথা নিয়মে করতে হবে প্রমান পাওয়া যায় পুলস্থ ঋষির বচনে-

মহালয়ে গয়াশ্রাদ্ধে গতাসুনাং ক্ষয়ে অহনি।

তন্ত্রেণ শ্রবণং কৃত্বা শ্রাদ্ধং কুর্যাৎ পৃথক পৃথক।

Monday, April 25, 2022

একাদশী দিন নির্ধারণ করার নিয়ম,

 একাদশী দিন নির্ধারণ নিয়ে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুইদিনে কেন পালিত হয়,  এবিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনাটি দেখলেই বুঝতে পারবেন,  আপনার কি করনীয় এবং কোন সীদ্ধান্ত মেনে চলবেন সেটা আপনার উপর নির্ভর করবে। 


Tuesday, March 15, 2022

মুখাগ্নি' শব্দটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা

 'মুখাগ্নি' শব্দটি বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা 


কেউ কেউ মুখাগ্নি বলতে শবের মুখে আগুন বুঝে থাকেন ।কেউ কেউ মুখ্য অগ্নি বা মুখ্যাগ্নি বলে থাকেন ।অর্থাৎ  শব্দটি তা হওয়া উচিত ছিলো বলে মনে করেন ।আমি ও তাই ভাবতাম ।আবার কেউ কেউ বলেন, মুখাগ্নি শব্দটি শাস্ত্রের কোথাও নেই ।অগ্নিদাতা অর্থে মুখ্য অগ্নিদাতা আছে বলে কেউ কেউ বলেন ।আমি ও ধর্মশাস্ত্রে অগ্নিদাতা শব্দটি পেয়েছি।মুখাগ্নি শব্দটি না পেলেও দীর্ঘদিন যাবত এ শব্দটি শুনে এসেছি ।আবার কেউ কেউ মুখাগ্নি বলতে চুলার মুখে আগুন বলে থাকেন ।অনেকের কাছে সে কথাটি নতুনই মনে হবে ।আমার কাছে ও নতুন ।মুখ শব্দের অর্থ মুখ্য বলে গত পর্বে আলোচনা করেছি ।কেউ কেউ সমর্থন করেছেন ।আবার কেউ কেউ পরিষ্কার কোনো মত দেননি ।যাহোক, আজ  এ বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দেবার জন্য আবার আলোচনা করতে ব্রতী হলাম ।


আমি বাংলা অভিধানে 'মুখাগ্নি ' শব্দটি পেয়েছি।

অভিধানে 'মুখাগ্নি ' শব্দের অর্থ 'হিন্দুদের শব দাহকালে শাস্ত্রবিধি অনুসারে শবের শিরঃস্থানে ( মুখে নয়) অগ্নি দান বা স্পর্শ ' বলা হয়েছে ।সুতরাং 'মুখাগ্নি ' শব্দটির অস্তিত্ব ছিলো বলেই অভিধানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস ।এবার মুখ শব্দের সমার্থক শব্দ বা সরাসরি কোনো অর্থ না পেলেও তা দ্বারা যে মুখ্য বুঝায় তা প্রমাণ করবার চেষ্টা করবো ।


যেমন 'মুখটি ' শব্দের অর্থ হলো 'মুখ্য ' বা প্রধান ।'মুখবংশ ' শব্দের অর্থ হলো ' মুখ্য বা প্রধান বংশ।তাহলে এখানে মুখ শব্দের অর্থ যে মুখ্য বা প্রধান হয় তা দিবালোকের মতো পরিষ্কার ।তাছাড়া মুখোপাধ্যায় =মুখ + উপাধ্যায় অর্থাৎ প্রধান বা মুখ্য উপাধ্যায় ।অবশ্য মুখোপাধ্যায় ব্রাহ্মণদের উপাধিও আছে ।এভাবে মুখাগ্নি = মুখ + অগ্নি অর্থাৎ মুখ্য অগ্নি ।তদনুসারে শব দাহের প্রধান অধিকারী হিসেবে শবের সর্বোত্তম স্থানে অগ্নি দান বা স্পর্শকে মুখাগ্নি বলা হয় বলে আমি মনে করি ।

আমি অন্বেষণ করে জ্ঞান শেয়ার করবার চেষ্টা করি যা আমার ছাত্রজীবন থেকেই নেশা ও পেশা যা অনেকের নেই ।আমি অনেক ক্ষেত্রে মনে করি, যা করছি তা বর্তমান যুগে অচল।তাছাড়া নিজের কেউ গ্রহণ করবার মতো উত্তরসূরি নেই ।আমার নিজের ও কোনো পুত্র সন্তান নেই ।তবে আমাদের বংশে একটি ভ্রাতুষ্পুত্র আছে ।তার  সবেমাত্র উপনয়ন সংস্কার হয়েছে ।শাস্ত্রীয় বিষয় ধারণ করার ক্ষমতা নেই ।আপন দুটো ভাই ও চাকরি ও  বিভিন্ন কারণে শাস্ত্র চর্চায় অনাগ্রহী । আর দুটো মেয়ে ।ওরাও পড়াশোনা ও চাকরির খাতিরে শাস্ত্রবাক্য গ্রহণ করতে অনাগ্রহী ।তবে ভাই ও কন্যা সন্তানরা   আমার উপর নির্ভরশীল এবং আমার শাস্ত্রীয় মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।তাই নিজের স্বার্থ যেখানে নেই সেক্ষেত্রে শাস্ত্র আলোচনা কিছুটা নিষ্ফল ও বটে ।কারণ নিজের আত্মীয়স্বজন ও কিছু ফেইসবুক বন্ধু বলে থাকেন, এগুলো লিখে কোনো লাভ নেই এবং শত্রুতা বাড়ানো।শত্রুতা বাড়ানো  শব্দটির সাথে আমি একমত ।কারণ শাস্ত্রীয় সত্য বিষয় কারো দর্শনের বাহিরে গেলেই বিরাগভাজন হন।তবে কারো না কারো কিছু লাভ  হলেও হতে পারে ।তবে বেশির ভাগই নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত ।আর তা লেখালিখির সুবাদে ও বুঝতে পেরেছি ।


সনাতন ধর্ম বিশাল জ্ঞানের ভাণ্ডার ।এ ভাণ্ডার থেকে জ্ঞান আহরণ করা কঠিন ।আমি ফেইসবুকে পোস্ট করে অনেক জ্ঞানী বন্ধুর জ্ঞানগর্ভ মন্তব্য থেকেও অনেক জ্ঞান আহরণ করতে পারি।সেটা আমার কিছুটা লাভ ।তবে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি ।কারণ মানসিক, শারীরিক ও আর্থিক ক্ষতি ।আসলে এ যুগে কে শুনে কার কথা? আমার এক ফেইসবুক বন্ধু বলেছেন, " আমরা সবাই রাজা ।" আমি বলি,সবাই ভাবে," আমরা সবাই পণ্ডিত ।" 

যাহোক,মুখাগ্নি শব্দটি নিয়ে আমার স্বজ্ঞানপ্রসূত ব্যাখ্যা সন্তোষজনক মনে  হলে একজন ও যদি মন্তব্য করেন তবে আমার শ্রম সার্থক মনে করবো ।আর সন্তোষজনক না হলে ভদ্রোচিত ভাষায় মন্তব্য করলে আমি মন্থন করে  ননী উত্তোলন করতে সক্ষম হবো।

Monday, March 14, 2022

পাপপুরুষ নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা

 পাপপুরুষ প্রসঙ্গেঃ

পাপপুরুষ কে? ' আমি এ  বিষয়ে সংক্ষিপ্ত  আলোচনা করার চেষ্টা করেছি ।

পদ্মপুরাণে বর্ণিত আছে, " সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমেশ্বর ভগবান এ জড় সংসারে স্থাবর জঙ্গম সৃষ্টি করলেন ।মর্ত্যলোকবাসী মানুষদের শাসনের জন্য একটি পাপপুরুষ নির্মাণ করলেন ।এ পাপপুরুষের অঙ্গগুলো বিভিন্ন পাপ দিয়ে নির্মিত হলো ।পাপপুরুষের মাথাটি ব্রহ্মহত্যা পাপ দিয়ে, চক্ষু দুটো মদ্যপান, মুখ স্বর্ণ অপহরণ,দুই কর্ণ গুরুপত্নীগমন, দুই নাসিকা স্ত্রী হত্যা, দুই বাহু গোহত্যা পাপ,গ্রীবা ধন অপহরণ, গলদেশ ভ্রূণহত্যা, বক্ষ পরস্ত্রী গমন,উদর আত্মীয় স্বজন বধ,নাভি শরণাগত বধ,কোমর আত্মশ্লাঘা, দুই উরু গুরু নিন্দা, শিশ্ন কন্যা বিক্রি,মলদ্বার গুপ্ত কথা প্রকাশ পাপ,দুই পা পিতৃহত্যা,শরীরের রোম সমস্ত উপপাতক।এভাবে সমস্ত পাপ দ্বারা ভয়ঙ্কর পাপপুরুষ তৈরি হলো ।" এই পাপপুরুষের নির্মাণ বিষয়ে আজ আমার বিদ্যা দ্বারা মর্মার্থ উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না।আরো ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে ।তাই এ বিষয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত রহিলাম ।অবশ্য আমার সংগ্রহে পদ্মপুরাণ না থাকায় মিলিয়ে দেখতে পারছি না।

বলা হয়ে থাকে একাদশীতে শস্য মধ্যে সমস্ত পাপ অবস্থান করে।তাই চাল,ডাল,আটা, ময়দা, সুজি,সরিষা আদি জাতীয় খাদ্যদ্রব্য একাদশী দিনে বর্জন করা উচিত ।নির্জলা উপবাসে অসমর্থ হলে জল,দুধ, ফলমূল, এমনকি আলু,পেঁপে, কলা, ঘিয়ে বা বাদাম তেল অথবা সূর্যমুখী তেলে রান্না অনুকল্প প্রসাদরূপে গ্রহণ করা যেতে পারে ।রবিশস্য ( ধান,গম,ভুট্টা, ডাল ও সরিষা)ও সোয়াবিন তেল অবশ্যই বর্জনীয় ।

আমার কথা হলো, সনাতন ধর্মে বিভিন্ন মতবাদীরা কোনো কোনো ক্ষেত্রে তিন দিনে একাদশীর উপবাস পালন করেন।স্মার্ত বা শাক্ত মন্ত্রে দীক্ষিতরা যেদিন পালন করেন, গোস্বামী মতে তার পরের দিন এবং নিম্বার্কমতে তার পরের দিন পালন করেন ।তবে পাপপুরুষের অবস্থান কোন দিন বুঝতে হবে? তাহলে কারো ভাষায়,  যেকোনো মতবাদীরা তো পাপান্ন ভক্ষণ করছেন।তাহলে সমাধান কি? 

আর তাহলে তো তিনদিন নিষিদ্ধ খাবার বর্জন করতে হবে ।অবশ্য প্রায় একাদশী একই দিনে পড়ে ।একই দিনে না পড়লে তো যারা এসব খাবার ভক্ষণ করছেন তাদের পাপ হচ্ছে ।আমি তা মনে করি না।আমার মতে যারা একাদশীর উপবাস করছেন তারা যদি একাদশী তিথিতে নিষিদ্ধ দ্রব্য গ্রহণ করেন তাদের পাপ হবে, যারা ব্রত পালন করেন না তাদের নয়।


তবে যারা কুম্ভীপাক নরকের এবং বিভিন্ন পাপের পরিণামের ভয় দেখান তাদের কাছ থেকে সঠিক উত্তর জানতে আগ্রহী ।উল্লেখ্য, কেউ কেউ ব্রাহ্মণদের ক্রিটিসাইজ করে বলেন," ব্রাহ্মণদের তো একাদশী লাগে না, কারণ তারা দেবতা ।" উনাদের ধারণা ব্রাহ্মণরা একাদশী করেন না।তা সর্বাংশে সত্য নয়।তবে যারা একাদশী ব্রত বা অন্যান্য ব্রত পালন করেন তাদেরকে সাধুবাদ জানাই ।কিন্তু যারা বাহাদুরি করেন তাদেরকে বলতে হবে তারা সঠিকভাবে শাস্ত্রবিধি  পালন করছেন তো? 

তাছাড়া আমার মনে খটকা লাগে, রবিশস্য ভগবান বা দেবতাকে নিবেদন করে খেতে দোষ কি? পাপপুরুষ কি ভগবানের চেয়ে ও শক্তিশালী ।প্রসাদের মধ্যে ও কি  পাপপুরুষ থাকবে? একথাটা এজন্য বললাম, আমরা সারাজীবন আটা, মুগ, সাগু একাদশীতে তথা একাদশীর উপবাস ভেঙে খেতে দেখেছি।অথচ আজকাল নিষেধাজ্ঞা ।বুঝতে পারছি না।আর সোয়াবিন খাবার কথা বলেন।সোয়াবিন কি আদিযুগে ছিল? আর আলু, সেতো এক দেশের লোকদের প্রধান খাদ্য ।একটি খাওয়া যাবে আরেকটি খাওয়া যাবে না তাতে তো খটকা লাগবেই ।আমাকে অযথা কেউ ভুল না বুঝে সঠিক সমাধান দেবেন বলে আশাবাদী ।আর রবিশস্য খাওয়া যাবে না এ কথাটি কোথায়  আছে উদ্ধৃতি দিলে খুশি হবো।

আমরা জানি, ভগবান সর্বশক্তিমান ।তিনি সর্বত্র বিরাজমান ।পাপপুরুষ খাদ্যের মধ্যে অবস্থান করলে তো বুঝতে হবে পাপপুরুষ একাদশীর দিনে বিভিন্ন খাদ্যে বিরাজমান ।আমার কাছে কিছুটা আশ্চর্য লাগছে ।আর ভগবানের নামে নিবেদন করলেও পাপপুরুষের অস্তিত্ব থাকবে তা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে ।অথচ আমরা' অন্নে ব্রহ্ম রসে বিষ্ণু, ভোক্তাদেব জনার্দন 'এ মন্ত্রটি পাঠ করে খাবার গ্রহণ করি।এ মন্ত্রের শক্তির চেয়ে ও কি পাপপুরুষ শক্তিশালী? 


যাহোক, আমি আবারও বলি, সনাতন ধর্মের বিভিন্ন ব্রত উপবাস পালন করেন তাতে আমার আপত্তি নেই, তবে শাস্ত্রের মর্মার্থ সঠিকভাবে অনুধাবন না করে কাউকে ভয় লাগানো ঠিক নয়।আমার জানামতে, সনাতন ধর্মে কারো উপর ধর্ম পালনে জোর করে না।কার সদগতি হবে কার হবে না তা ভগবান ভালো জানেন।তবে যথাসম্ভব সদাচার বিষয়ে সনাতনীদেরকে পরামর্শ দেয়া কর্তব্য,তবে আতঙ্ক সৃষ্টি করে নয়।

আমার লিখায় ত্রুটি বিচ্যুতির জন্য পরমেশ্বরের নিকট নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থী এবং বিবেকবান সনাতনীদের কাছেও ক্ষমা প্রার্থী ।

Tuesday, February 22, 2022

সময়ের মূল্য,

 সমাজে, দেশে, দুনিয়ায় কিছু মানুষ আছে যারা নীরব। তারা  শুধুই নীরবে নিজের জীবন বয়ে নিয়ে যায় না, তারা অন্যের জীবনকেও তছনছ করে দেয় নীরবে- নিভৃতে। তারা নীরব ঘাতক ছাড়া অন্য কিছু নয়। 

আমরা বলি-"সময়ের ফের।'

প্রতিটি সেকেন্ড মানুষের জীবনে মহামূল্যবান। প্রকৃত অর্থে সময় হল অমূল্য। সময়ের প্রয়োজনে মানুষ - মানুষের কাছে আসে আবার দূরেও চলে যায়। জীবনে কিছু কিছু মানুষের নীরব আবির্ভাব হয় সমস্যার দ্বার খোলে যায়। আবার সময়ের প্রয়োজনে তা মিটেও যায় । সময় যেমন কঠোর, সময় তেমনি কোমল । সময় যেমন মানুষকে নিঃস্ব ও পাগল করে তেমনি, সময়ই আবার সেই নিঃস্বতাকে দূর করে জীবনকে  গতিময় করে উন্মাদনার অবসান ঘটায় ।

 সময়কেও কিছুটা  সময় দিতে হয়।

প্রয়োজন -"ধৈর্যের, বিশ্বাসের,  সঠিক সিদ্ধান্তের ও আত্ম প্রত্যয়ের।"

কথায় আছে -"বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর।” 

দৃঢ় প্রত্যয়ীরা সফলকাম হয় সব ক্ষেত্রেই । নিজের সময়ের সাথে নিজের কর্ম্ম ও ধর্মীয় সত্তার বিশ্বাসবোধ থেকে জন্ম নেয় এক অনিন্দ সুন্দর  মহীরুহ, এ হল প্রকৃত সত্য।  সত্যের প্রতীকী রূপের বলেই হয়তোবা পৃথিবীতে মানুষ বিশ্বাস করতে শেখে  এবং এর বিশ্বাসযোগ্যতা প্রকাশ পায়। তার বিনাশে-ই মনুষ্যত্ব ধ্বংশ হয়।


 তাইতো বলা হয় --"জীবনের জন্য সময় নয়, সময়ের জন্য জীবন । "

আমাদের জীবনের পথচলা হোক সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে । জীবন হোক, জীবনের জন্য।


Friday, February 18, 2022

নারীদের উপনয়ন অধিকার আছে কি নেই,


 উপনয়নে

নারীর অধিকার

"""""""""""""""""""""""

আজকের আলোচনার বিষয় হল-

উপনয়নে নারীদের অধিকার আছে কি নাই। এই বিষয়ে আমাদের প্রাণাধিক  পবিত্র বেদ থেকে নিম্নে ১০টি মন্ত্র অনুবাদ সহ তুলে ধরা হইল-দেখা যাক্ পবিত্র বেদ কি বলে-

পবিত্র বেদ মন্ত্র-১০টি

ব্রহ্মচারীষ্ণংশ্চরতি রোদসী উভে তস্মিন দেবাঃ সন্মানসো ভবনন্তি। স দাধার পৃথিবীং দিবং চ স আচার্যং তপসা পিপর্তি।।১

ব্রহ্মচারীণং পিতরো দেবজনাঃ পৃথগ্ দেবা অনুসংযন্তি সর্বে। 

গন্ধর্বা এনমম্বায়ন্ ত্রয়স্ত্রিংশৎ ত্রিশতাঃ ষটসহস্রাঃ।সর্বানৎস দেবাংস্তপসা পিপর্তি।।২

আচার্য উপনয়মানো ব্রহ্মচারিনং কৃণুতে গর্ভমেন্তঃ। তং রাত্রীস্তিস্র উদরে বিভর্তি তং জাতং  দ্রষ্টমভিসংয্তি দেবা।।৩ 

ইয়ং সমিৎ পৃথিবী দ্যৌর্দ্বিতীয়োতান্তরিক্ষং সমিধ পৃনাতি। ব্রহ্মচারী সমিধা মেখলয়া শ্রমেণ লোকাংস্তেসা পিপর্তি।।৪

পূর্বো জাতো ব্রহ্মণা ব্রহ্মচারী ঘর্মং বসানস্তপসোদতিষ্ঠৎ। তস্মাজ্জাতং ব্রাহ্মণং ব্রহ্ম জেষ্ঠং দেবাশ্চ সর্বে অমৃতেন সাকম।।৫

ব্রহ্মচার্যেতি সমিধা সমদ্ধিঃ কার্ষ্ণং বসানো দীক্ষিতো দীর্ঘশ্মাশ্রুৎ।

স সদ্য এতি পূর্ব স্মাদূত্তর সমুদ্রং লোকানৎসংগৃভ্য মুহুরাচরিক্রৎ।।৬

ব্রহ্মচারী জনয়ন ব্রহ্মাপো লোকং প্রজাপতিং পরমেষ্ঠিনং বিরাজম।

গর্ভো ভূত্বামৃতস্য যোনাবিন্দ্রো হ ভূত্বাসুরাংস্তর্হ।।৭

আচার্যস্ততক্ষ নভসী উভে ইমে উর্বী গভীরে পৃথিবীং দিবং চ। 

তে রক্ষতি তপসা ব্রহ্মচারী তস্মিন দেবাঃ সম্নাসো ভবন্তি।।৮

ইমাং ভূমিং পৃথিবীং ব্রহ্মচারী ভিক্ষামা জভার প্রথমো দিবং চ।

তে কৃত্বা সমিধাবুপান্তে তয়োরার্পিতা

ভূবনানি বিশ্বা।।৯

অর্বাগন্যঃ পরো অন্যো বিস্পৃষ্ঠাদ্ গুহা নিধী নিহিতৌ ব্রাহ্মণস্য।

তো রক্ষতি তপস্যা ব্রহ্মচারী তৎ কেবলং কৃণুতে বৃহ্ম বিদ্বান।।১০

অনুবাদ-

ব্রহ্মচারী(ব্রহ্মচারী শব্দের অর্থ-যিনি বেদাত্মক ব্রহ্মে বিচরণশীল)নিজ  তপস্যা দ্বারা দ্যাবাপৃথিবী  ব্যাপ্ত করতে করতে স্বনিয়মে প্রবর্তিত হচ্ছে।সে ব্রহ্মচারীতে ইন্দ্রাদি সকল দেবগণ অনুগ্রহবুদ্ধিযুক্ত হয়।সে ব্রহ্মচারী নিজ তপস্যায় পৃথিবী ও দ্যুলোক পোষণ করছে এবং সন্মার্গবৃত্তির দ্বারা নিজ গুরুকে পালন করছে।১

পিতৃগণ, দেবজন নামক দেবগণ ও

ইন্দ্রাদি অন্য দেবসকল ব্রহ্মচারীর রক্ষার জন্য পৃথক পৃথক তার অনুগমন করে।সেরূপ অন্ত রিক্ষচারী

বসু প্রভৃতি গন্ধর্বগণ এ ব্রহ্মচারীর অনুগমন করে।তেত্রিশ  দেবতা (অষ্টবসু,একাদশ রুদ্র,দ্বাদশ আদিত্য, প্রজাপতি ও বষটকার) তার বিভূতিরূপ তিনশ তেত্রিশ দেবতা এবং তার বিভূতিরূপ ষট সহস্র সকল দেবতাকে সে ব্রহ্মচারী পালন করে।২

উপনয়ন কালে ব্রহ্মচারী মানবককে( এখানে "মানবক" শব্দটির দ্বারা পুং লিঙ্গ বুঝাচ্ছে) নিজের কাছে  এনে  আচার্য  বিদ্যাশরীরের মধ্যে গর্ভ সঞ্চার করে তিন রাত্রি গুরুগৃহে রাখেন, তখন নিজ দেবতারা তার অভিমুখে আসেন।চতুর্থ দিবসে বিদ্যাময় শরীর থেকে উৎপন্ন ব্রহ্মচারীকে দেখার জন্য দেবতারা তার অভিমুখে আসেন।৩

এ পৃথিবী  ব্রহ্মচারীর প্রথম সমিৎ, দ্যুলোক দ্বিতীয় সমিৎ এবং অন্তরিক্ষ অগ্নিতে আধীয়মান সমিধের দ্বারা পূর্ণ হয়। এরূপে ব্রহ্মচারী সমিধ মেখলা ইন্দ্রিয় -নিগ্রহরূপ শ্রম ও দেহসন্তাপক অন্যান্য নিয়মের দ্বারা পূর্বোক্ত পৃথিবীব্যাদির পালন করে।

(অতএব সমিদাধাদি কর্ম ব্রহ্মচারীর কর্তব্য ব্রহ্মচারী শব্দটা পুরুষ বাচক)। ৪

সর্ব জগতের কারণ সত্যজ্ঞানাদিলক্ষণ ব্রহ্ম থেকে ব্রহ্মচারী প্রথমে উৎপন্ন হয়েছে। সে উৎপন্ন হয়ে দীপ্ত রূপ আচ্ছাদন করে সমিদাধানাদি তপস্যার  সাথে উত্থিত হয়েছে।অতএব ব্রহ্মচর্যাত্মক তপস্যার দ্বারা ব্রহ্মের থেকে ব্রাহ্মণদের জ্যেষ্ঠত্ব( এই ঋকে ব্রাহ্মণ জাতির শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলা হয়েছে)  উৎপন্ন হয়েছে। তার প্রতিপাদ্য অগ্নি প্রভৃতি সকল দেবগণ অমৃত্বতপ্রাপক স্বোপভোগ্যের সাথে উৎপন্ন হয়েছে। ৫

সকল সন্ধ্যায় অগ্ন্যাধান-জনিত তেজে সন্দীপ্ত,কৃষ্ণাজিন পরিহিত,দীক্ষিত (ভিক্ষাচরনাদি নিয়মযুক্ত অর্থাৎ  উপনয়নকালে বা ব্রহ্মচারীকে ভিক্ষালব্ধ লবন ব্যাতিত আহার করতে হবে, মাটিতে খরকুটার বা সাধারণ বিছানায় শয়ন করিতে হবে,রজগুণা পোশাক ও অলংকারাদি পরিহার করিতে হবে এবং সর্বপোরি একমাত্র মাতা ও গুরু ব্যাতিত নারী বা প্রকৃতি দর্শন  নিষেধ করা হয়েছে)

দীর্ঘ- শ্মাশ্রু ব্রহ্মচারী পূর্ব সমুদ্র থেকে

উত্তর  সমুদ্রে গমন করে অর্থাৎ তার তপস্যার মহিমা ব্যাপ্ত হয়। তিনি পৃথিবী, অন্তরিক্ষাদি লোক হাতে ধরে চলেন,অর্থাৎ সকল লোক বশীভুত হয়।৬

ব্রহ্মচারী ব্রহ্মচর্য  মহিমার দ্বারা ব্রাহ্মণ জাতি,(ব্রাহ্মণ শব্দটি পুরুষ বাচক সুতরাং  এখানে ব্রাহ্মণ জাতিকে নির্দেশ করিতেছে!  ব্রাহ্মণ জাতি বাচক বিশেষ্য পদ আর ব্রহ্মত্ব গুণ বাচক বিশেষ্য পদ। সুতরাং দুটোই আলাদা বিষয়)স্থান পানাদির জন্য গঙ্গাদি নদী, স্বর্গাদি লোক,প্রজাদের স্রষ্টা অবান্তর সৃষ্টিকারী প্রজাপতি, সত্যলোকে অবস্থানকারী আদি ব্রহ্মা পরমেষ্ঠী ও স্থুল- প্রপঞ্চ শরীরাভিমানী বিরাট পুরুষকে উৎপন্ন করেছে।(স্ব স্ব কারণ থেকে উৎপন্ন এদের ব্রহ্মচর্যই নিমিত্ত কারণ বলে তাদের আশ্রয়ভূত ব্রহ্মচারীতে আরোপ করা হয়েছে।)অমরণশীল ব্রহ্মের সত্বঃ, রজঃ ও তমঃ গুণাত্বিকা প্রকৃতিতে প্রথম ব্রহ্মাচারী গর্ভ লাভ করে সব কিছু  উৎপন্ন করেছে।৭

পরিদৃশ্যমান বিস্তীর্ণ  অপরিছন্ন দ্যুলোক ও ভূলোক আচার্য উৎপন্ন করেছেন।সে দ্যাবাপৃথিবীর উৎপাদক

আচার্যকে ব্রহ্মচারী নিজ তপস্যার বা ব্রহ্মচর্যের নিয়মের দ্বারা পালন করে।৮

এ বিস্তীর্ণ পৃথিবী  ব্রহ্মচারী প্রথম ভিক্ষারূপে সংগ্রহ করেছে,পরে দ্বিতীয় ভিক্ষারূপে দ্যুলোক করেছে।

ভিক্ষার দ্বারা লব্ধ এ দ্যাবাপৃথিবীকে সমিধ-রূপে অগ্নির পরিচর্যা  করছে। সকল প্রাণী এ দ্যাবাপৃথিবী  আশ্রয় করে রয়েছে। ৯

দ্যুলোকের উপরিভাগ থেকে অধো ভূলোকে এক বেদরূপ নিধি আচার্য হৃদয়রূপ গুহায় নিহিত হয়েছে।তার প্রতিপাদ্য দেবতারূপ অপর নিধি ওপরে অজ্ঞাত গুহায় নিক্ষিপ্ত রয়েছে। বেদ অধ্যায়নকারী ব্রাহ্মণের

সে নিক্ষিপ্ত  নিধি - দুই ব্রহ্মচারী তপস্যার দ্বারা (ব্রহ্মচর্য নিয়মের দ্বারা) রক্ষা করছে।বেদার্থ রহস্যভিজ্ঞা বিদ্বান শব্দ ও তদর্থাত্মক বেদরাশির অধিষ্ঠানরূপ ব্রহ্ম সাক্ষাৎ  করে থাকেন।১০

আলোচনা-

উপরোক্ত পবিত্র বেদ মন্ত্র থেকে আলোচনা করিলে দেখা যায় যে- উপনয়নে নারীদের অধিকার নাই এবং এটাই পবিত্র বেদের সিদ্ধান্ত। বিবাহের মাধ্যমেই নারীদের দশটি সংস্কার পূর্ণ হয়ে যায়। পবিত্র বেদে কয়েকজন ব্রহ্মজ্ঞানী মন্ত্র দ্রষ্টা নারী দেখা যায়।কিন্তু তাঁদের উপনয়ন হয়েছে এমন কথা বলা নাই।তাহাছাড়া সে নারীদের সৃষ্টি আমাদের সাধারণ মানুষের  মত হয়নি।তাঁরা বিশেষ ভাবে সৃষ্টি হযেছেন অর্থাৎ  তপবলে সৃষ্টি হয়েছেন।সুতরাং  তাদের সাথে আমাদের তুলনা করা পাগলের প্রলাপ ছাড়া আর কিছুই  নয়।

এখানে ব্রহ্মচারীদের আচার সম্পর্কে বলা হয়েছে। ব্রহ্মচর্য চলাকালিন কোন মানবক একমাত্র মাতা ও আচার্যগুরু ব্যাতিত নারী বা প্রকৃতির সকল কিছুই  দর্শন করা যাবে না। মাটিতে শয়ন ও লবন ব্যাতিত খাদ্য গ্রহণ করিতে হয়।

 উক্তমন্ত্রে ব্রাহ্মণ জাতির কথা বলা হয়েছে এই মর্মে যে, ব্রাহ্মণ ব্যাতিত আর কারো বেদ অধ্যাপনা বা গুরুবিদ্যা প্রদান, যজন যাজন করতে পারবেনা সেই বিধায়।

ধর্মের মূল হল বিশ্বাস।সুতরাং  সকল তর্কের উর্দ্ধে গিয়ে আমাদের সকল সনাতনীর উচিৎ  হবে শ্রুতি ও স্মৃতির বিধি বিধান মেনে চলা।

শ্রী রামচন্দ্র,শ্রীকৃষ্ণ তাঁহারা সকলেই  ব্রহ্মজ্ঞ  ও পূর্ণ ব্রহ্মের অবতার।তাহা সত্যেও তাঁহারা কিন্তু অধ্যাপনা বা গুরুবিদ্যা এবং পৌরহিত্য কর্মে যান নাই।তাতে বুঝা গেল যে, তাঁরাও স্মৃতি ও শ্রুতির অবমাননা করেননি।তাহলে আমাদের মত সাধারণ  মানবের মনে এত দ্বিধা দ্বন্দ থাকবে কেন?

পবিত্র বেদে কন্যার (অবিবাহিত নারীর) ব্রহ্মচর্যের কথা বলা হয়েছে, তবে তাহা উত্তম পতি লাভ করার জন্য।সেখানে কিন্তু পৈতার ধারণের কথা বলা হয়নি বা পৌরহিত্য করার কথা বলা হয়নি। এখন বুঝতে গিয়া যদি আমরা ভুল বুঝি দোষ শাস্ত্রের নয়, দোষ আমাদের জ্ঞানের।

উদাহরণ - তুলসী দেবী।যিনি নারায়ণকে স্বমীরূপে পাবার জন্য গভীর বনে গিয়ে ব্রহ্মচর্য  পালন করে ছিলেন।

 সুতরাং  আমাদেরকে  কর্মের ধারা বুঝতে হবে এবং তার পর কর্ম করতে হবে।

 না পারিতো না করব।এই কর্ম ব্যাস্ত জীবনে এমনিতেই  আমরা পথ হারা হয়ে পড়েছি।তার পরে আবার যদি নিজের দম্ভ অহংকারকে জাহির করার জন্য স্মৃতি  ও শ্রুতির করা হয় অপমান, তবে দুঃখের সাথেই বলতে হয়- "হতভাগা এই হিদুজাতি"!

  আজকাল দেখা যায় কিছু কিছু শিক্ষিত ব্যাক্তির মূঢ়তার কারণেই সনাতন ধর্মে হতে চলেছে হিংসা হানাহানী ও বিভাজন।

কিন্তু এর শেষ কোথায়?

 ইহা শেষ হবার নয়, কারণ ধ্বংস না আসিলে প্রকৃতির ভার সমতায় আসবে না। শাস্ত্র বলে - মানুষ ধ্বংসের জন্যই সত্যের হানী ঘটিয়ে  অন্যায় অপরাধ করে চলেছে, করে চলেছে অবিচার জোরজুলুম, নারী ধর্ষণ, লুটপাট,  ধর্মের নামে করে রাজনীতি,জমি দখল রাজ্য দখল ইত্যাদি ইত্যাদি ।

এরে কি ধর্ম বলে,হাঁ?আজ কিছু কিছু  মানুষের কারণে ধর্ম অধর্মে রূপ নিতে চলেছে!

  পরিশেষে আমার সাধারণ  ক্ষুদ্রজ্ঞান থেকে এই টুকুই বলব যে-ধর্ম ও রাষ্ট্র  আমাদের  উপর যে বিধি বিধান  ও  দ্বায়ীত্ব দিয়েছেন  তা যদি সততার সাথে যথা সাধ্য মত পালন করে যেতে পারি,তবেই আসতে পারে মানব জীবনে পরম শান্তি।

  "আধিপত্য বিস্তারের জন্যই মানব মনে সৃষ্টি হয় হিংসা বিদ্বেষ ও বিভাজন, তার জন্য ধর্মকে করা হচ্ছে তার বিশেষ হাতিয়ার।"

বিঃদ্রঃ- লেখাটা খুব বড় হয়ে গেল বলে দুঃখিত। তাই লেখাতে ভুল ত্রুটিও হতে পারে। নিজ গুণে সকল গুণিজন ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশাকরি।

 সবাই  ভাল থাকুন এই কামনা করি!

জয় ব্রহ্মবাদ!


কলমে-

শ্রীপবিত্র কুমার চক্রবর্তী 

চাঁদপুর 

১৩/০২/২০২২ইং

Friday, November 12, 2021

ধর্ম ক্ষেত্রে আবেগ নয়, বিবেকে প্রাধান্য দেয়া অবশ্য প্রয়োজন.

 ধর্ম ক্ষেত্রে আবেগ নয়, বিবেকে প্রাধান্য দেয়া  অবশ্য প্রয়োজনঃ

 আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে আবেগের চেয়ে বিবেকের প্রাধান্য দেয়া  প্রয়োজন।তবে ধর্মক্ষেত্রে বিবেকের প্রাধান্য দেয়া অবশ্য প্রয়োজন ।


কর্তব্য কী এবং অকর্তব্য কী, প্রবৃত্তি কাকে বলে এবং নিবৃত্তি কাকে বলে, ধর্ম কী, অধর্মই বা কী? স্বধর্ম কাকে বলে এবং পরধর্মই কাকে বলে  - একে কর্তব্য অকর্তব্যের জ্ঞান বা বিবেক  বলা হয়।অর্থাৎ আমাদের কি কাজ করা উচিত, আর কি কাজ করা অনুচিত, আসক্তি বা অনাসক্তি, কোনটা ধর্মসম্মত, কোনটা অধর্মসম্মত এবং কোনটা নিজের ধর্ম, কোনটা অন্যের ধর্ম তা বিবেচনা করে যা করা হয় তা হলো  বিবেক ।

এখানে স্বধর্ম বলতে নিজেদের বর্ণোচিত কর্তব্য এবং পরধর্ম বলতে অন্যের বর্ণোচিত কর্তব্য বলা হয়েছে ।অর্থ্যাৎ যার উপর যে কাজ অর্পিত তা স্বধর্ম এবং যে কাজ অন্যের উপর অর্পিত তা পরধর্ম ।বিশ্লেষণাত্মক অর্থে বিবেক হলো যার দ্বারা ন্যায়- অন্যায়, ভালো- মন্দ, ধর্মাধর্ম বিচার করা যায় ।

আবেগ হলো অনুভূতির প্রাবল্য বা ব্যাকুলতা বা 

 চিত্তচাঞ্চল্য ।

আমরা কেউ কেউ আবেগের বশে ধর্ম পালন করি।যেমন কোনো ধর্মগ্রন্থ পাঠের আসরে ধর্মীয় বক্তার অভিনয়সুলভ অশ্রু বিসর্জনের দৃশ্য দেখে নিজেরাও কান্নায় ভেঙে পড়ি।নামকীর্তনের কীর্তনীয়ার  ক্রন্দনের অভিনয়  দেখে নিজেরা ক্রন্দনে ঢলে পড়ি।একে অপরকে জড়িয়ে ধরি।কিন্তু পরদিনই যার সাথে গলাগলি করলাম তার থেকে ব্যবসা বা পেশার ক্ষেত্রে জুলুম করে অর্থ আদায় করি।কেউ কেউ মাথায় আঘাত করতেও দ্বিধাবোধ করি না।আর তা যদি বিবেকের তাগিদে হয়  তাহলে আমরা কোনো অনুচিত বা অনৈতিক কাজ করতে পারি না।


কেউ কেউ উপাসনালয়ে প্রবেশ করার পূর্বে অনৈতিক কাজ করেও ভগবানের কাছে নিজ কৃত কর্মের জন্য অশ্রুসজল নয়নে ক্ষমা প্রার্থনা করি।এগুলো হলো আবেগ ।বিবেক থাকলে অনৈতিক কর্ম থেকে বিরত থেকে ঈশ্বর নির্দেশিত কাজ তথা মানবসেবা করবো- তাই হলো প্রকৃত ধর্ম ।আমরা বুঝতে পারি না যে,চিত্তশুদ্ধি না হলে কোনো প্রার্থনাই অনেক সময় কাজে লাগবে না।অনৈতিক কাজও করবো আবার উপাসনালয়ে ঢুকে ক্ষমা চাইবো তা তো খেলার মতোই হলো ।অবশ্য ভীষণ পাপী ব্যক্তি ও যদি তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে উক্ত খারাপ কর্মের পুনরাবৃত্তি না করে তাহলে ভগবান হয়তো ক্ষমা করে দিতে পারেন।

আবেগের বশে মানুষের ক্ষতি করা এবং মনে আঘাত দেয়া ধর্মবিরোধী যার পরিণতি ভালো নয়।তবে আমার দর্শন হলো, যে মানসিক অশান্তিতে ভোগে সে নিজে মানুষের অশান্তি সৃষ্টি করে ।সে নিজে অশান্তি সৃষ্টি করে অথবা অশান্তি সৃষ্টি করতে অন্যকে প্ররোচিত করে।ভগবান তাকে রোগ, সন্তান অথবা স্বামী, স্ত্রী দিয়ে অশান্তিতে রাখেন ।অবশ্য আমাদের সনাতন ধর্মে পূর্বজন্মকৃত কর্ম ফলের উপর ভিত্তি করেও ভগবান  শান্তি বা অশান্তি দেন।

যাহোক, ভগবানের কাছে প্রার্থনা তিনি যেন আমাকে এবং পরম হিতৈষীদের আবেগ দমন করে বিবেককে জাগরিত করার কৃপা করেন তাই প্রার্থনা ।আমার মতে, যাদের  শুধু আবেগ আছে,বিবেক নেই তারা ধার্মিক তো দূরের কথা মানুষই হতে পারে না।কারণ পশুদের ও তো আবেগ আছে ।একমাত্র মানুষেরই বিবেক আছে ।তাই আমাদের বিবেকের সদ্ব্যবহার করা উচিত ।তবেই আমরা ইহলোকে শান্তি  পাবো এবং পরকালে পরম গতি হবে ।

আমার লিখায় আমি অধমও যদি উপকৃত হই তবেই আমার লিখা সার্থক ।

১ -চন্দ্র ২ - পক্ষ,৩- নেত্র।

 🙏নমস্কার সকলকে,

আমরা সকলেই ছোটবেলায় ১ থেকে ১০ এর সংখ্যামালা মনে রাখিবার জন্য একে চন্দ্র, দুয়ে পক্ষ ইত্যাদি পড়িতাম। প্রত্যেকটি সংখ্যার পিছনেই এইরকম কিছু বিশেষ নাম যোগ করা হত। ছড়ার মত করে এইভাবে পড়িলে সহজে মনে রাখা যায় ।

তবে শুধু সংখ্যা মনে রাখিবার জন্য নয় বরং এর মাধ্যমে যে বিশিষ্ট নাম গুলি বলা হতো সেইগুলিও মনে রাখিতে এই ভাবে পড়া হইত।

এই সংখ্যাগুলির পিছনে যে নামগুলি বলা হইত তাহা হইল – ১-এ  চন্দ্র, ২-এ পক্ষ, ৩-এ নেত্র, ৪-এ বেদ, ৫-এ পঞ্চবাণ, ৬-এ ঋতু, ৭-এ সমুদ্র,৮-এ অষ্টবসু, ৯-এ নবগ্রহ এবং ১০-এ দশ দিক। তবে সংখ্যাগুলির পিছনের এই কথাগুলো বলা হইয়াছে যেইগুলির ব্যাপারে কেউ কেউ জানেন আবার অনেকেই সবগুলির ব্যাপারে জানেন না তাই সব কয়টির ব্যাপারে সাধ্যানুসারে কিছু বিবরণ দিবার চেষ্টা করিলাম ।


১) ১-এ চন্দ্র বলিতে চাঁদকে বোঝায়। যেইহেতু চাঁদ একটি রয়েছে তাই এক সংখ্যার সাথে চাঁদের কথা বলা হইয়া থাকে।


২)  এরপরে যাহা বলা হয় তাহা ২-এ পক্ষ। এখানে দুয়ে পক্ষ বলতে মাসের দুটি পক্ষ কে বোঝানো হয়। পক্ষ দুটি হইল কৃষ্ণপক্ষ এবং শুক্লপক্ষ।


৩)  এরপর আসে ৩-এ  নেত্র। এখানে ৩টি নেত্র বলিতে আসলে তিনটি চোখের কথা বলা হয়ে থাকে। আমরা সকলেই দু চোখ বিশিষ্ট আর তৃতীয় চক্ষু হল জ্ঞান চক্ষু। 


৪)  ৪-এ  বলা হয়ে থাকে বেদ। অর্থাৎ এখানে সর্ব প্রসিদ্ধ চারটি বেদের কথা বলা হয়। যেহেতু বেদ  চার সংখ্যাবিশিষ্ট তাই তাহাকে চার সংখ্যার সাথে ধরা হয়। এই চারটি বেদ হইল ঋক্, সাম, যজু এবং অথর্ববেদ।


৫)  এরপর যাহার কথা বলা হয় সেইটি হইল ৫-এ পঞ্চবান। তবে এর ব্যাপারে জানা থাকে না অনেকেরই। হিন্দু ধর্ম অনুসারে কামদেব অথবা মদন দেবের পাঁচটি বাণের কথা বলা হইয়া থাকে। এই পাঁচটি বাণ  হইল---সম্মোহন তাপন, শোষণ, উন্মাদন এবং স্তম্ভন। 


৬)  এরপর আসে ৬-এ  ঋতু। এর ব্যাপারে জানে সকলেই তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই ছয়টি ঋতু হইল গ্রীষ্মকাল, বর্ষাকাল, শরৎকাল, হেমন্তকাল, শীতকাল ও বসন্তকাল।


৭)। এরপর ৭-এ সমুদ্র বলা হয়। পুরাণে বর্ণিত হইয়াছে সাতটি সমুদ্রের নাম। এইগুলি হইল – লবণ, ইক্ষু, সুরা, ঘৃত (সর্পি) দধি-দুগ্ধ ও জল এই হইল   সপ্তসাগর।  এখানে অনেকে মনে করেন

সাতটি মহাসাগর । আধ্যাত্মিকভাবে কিন্তু তাহা নহে বলিয়া মনে হয় । 


৮) ৮-এ অষ্টবসু বলা হয়ে থাকে। হয়তো আজকের সময় অনেকেরই জানা নাই অষ্ট বসুর ব্যাপারে। এই অষ্ট বসু যাদেরকে বলা হত তারা দক্ষ রাজ কন্যার পুত্র। মহাভারতে আটজন বসুর কথা বলা হয়। এরা হইলেন দক্ষ রাজ কন্যা বসুর পূত্র। মহাভারতে ভীষ্ম একটি অতি উল্লেখযোগ্য এবং প্রসিদ্ধ নাম। আর এই ভীষ্ম কোন সাধারণ ব্যক্তি ছিলেন না তিনি ছিলেন অষ্ট বসুর শেষ বসু।  পুরাণ অনুসারে এই অষ্ট বসুদের কখনও দেবতা আবার কখনও মানব কুলে জন্ম নেওয়ায় উপদেবতা বলা হয় ।  অষ্ট বসুর নামগুলি হইল-- ধর, সোম, ধ্রুব, অহ, অনিল, অনল প্রত্যুষ ও প্রভাস। অভিশপ্ত হইয়াই অষ্ট বসুগণ পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেন। ঘটনাচক্রে সাত জনই জন্মের পর-পরই মুক্তি লাভ করেন অভিশাপ থেকে। কিন্তু শেষ বসু অর্থাৎ প্রভাস থেকে যায়। তিনি রাজা শান্তনু এবং দেবী গঙ্গার পুত্র দেবব্রত। যিনি পরে ভীষ্ম নামে পরিচিতি লাভ করেন। 


৯)  এরপরে ৯-এ নবগ্রহ বলা হইয়া থাকে।  আমরা জানি সৌরমণ্ডলের যে নবগ্রহের নাম রয়েছে সেগুলি হইল –সোম (চাঁদ) মঙ্গল, বুধ, শুক্র, পৃথিবী, মঙ্গল, বৃহস্পতি,শনি, ইউরেনাস, নেপচুন ও প্লুটো।  এখানে  নেপচুন ও প্লূটো বাদ পড়িয়াছে , যোগ হইয়াছে রাহু ও কেতু । ৯ সংখ্যার সাথে এখানে যেই নবগ্রহের কথা বলা হইয়াছে সেগুলি হইল রবি, চন্দ্র, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, রাহু ও কেতু। 


১০)  সবশেষে বলা হয় ১০-এ দিকের কথা। যাহা আমাদের  দিকগুলিকে উদ্দেশ্য করিয়া বলা হয়। এগুলি হইল পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ, ঈশান, বায়ু, অগ্নি, নৈঋত, উর্দ্ধ ও অধঃ।

Wednesday, November 10, 2021

সনাতনী সকল মতবাদী এক হোন, sokol sonatoni ebng sokol motobadi ek hon.

 সনাতনী সকল মতবাদী এক হোন( ১ম পর্ব):

সনাতন ধর্মে বিভিন্ন মতবাদী দেখা যায়।কেউ বৈষ্ণব, কেউ শাক্ত,কেউ শৈব, কেউ সৌর, কেউ গাণপত্য ।আবার বৈষ্ণব ও স্মার্ত মতবাদী এ দুটো প্রধান দুভাগে ও বিভক্ত ।

আবার সনাতন মতবাদী বিভিন্ন অবতার, মহাপুরুষ ও গুরুদেবের অনুসারী ।কেউ কৃষ্ণ, কেউ রাম,কেউ ঠাকুর অনুকূল চন্দ্র, কেউ জগদ্বন্ধু সুন্দর, কেউ বাবা লোকনাথ, কেউ স্বরূপানন্দের, কেউ রাম ঠাকুরের,কেউ শ্যামানন্দ বাবা, কেউ সংযোগানন্দ গিরি, কেউ হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুসারী ও শিষ্য ।কেউ কেউ তাদের গুরুদেবকে ঈশ্বর, কেউ অবতার, কেউ মহাপুরুষ হিসেবে দেখেন ও প্রচার করেন। কোনো কোনো মতবাদী অন্য মতবাদীকে কটাক্ষ করে কথা বলেন । আমার কথা হলো, আপনারা ধর্মশাস্ত্রের আলোকে সিদ্ধান্ত নেবেন কে ঈশ্বর ,কে অবতার, কে মহাপুরুষ, কে গুরুদেব।তবে কাউকে কটাক্ষ করা ঠিক নয়।তাদেরকে বুঝিয়ে বলতে হবে ।গ্রহণ করা না করা যার যার ইচ্ছা ।বেদ,গীতা ও প্রকৃত পুরাণের আলোকে বুঝতে হবে কে ঈশ্বর, কে অবতার ও কে গুরুদেব, কে মহাপুরুষ ।আমরা নিজেরা ঈশ্বর বা অবতার বানিয়ে ফেলা ঠিক নয়।কারো অলৌকিক শক্তি থাকলে তাঁকে ঈশ্বর বা অবতার বলা উচিত নয়।কারণ আদি যুগে মুনিঋষিগণ ও অলৌকিক শক্তির অধিকারী ছিলেন ।তাই বলে কেউ অবতার নন।অবশ্য কেউ কেউ অংশাবতার বলে গণ্য ।তাই বলে তাঁরা ঈশ্বর নন।তবে ভগবান হতে পারেন।ঈশ্বরকে ও আমরা ভগবান বলি।তবে অবতার, মহাপুরুষ বা গুরুদেবকে ভগবান বলা যেতে পারে ষড় ঐশ্বর্যের অধিকারী হিসেবে, কিন্তু ঈশ্বর হিসেবে নন।



কেউ কেউ নিজেদের মতবাদ শ্রেষ্ঠ,আবার কেউ কেউ তাদের মতবাদ একমাত্র মতবাদ এবং অন্য মতবাদ কোনো মতবাদ নয় বলে মন্তব্য করেন । কেউ কেউ বলেন,অমুক মতবাদী মোক্ষ বা মুক্তি লাভ করবেন,অমুক মতবাদী স্বর্গে যাবেন,অমুক মতবাদী নরকে যাবেন এসব আলোচনা সনাতন ধর্ম সমর্থন করে না। কোন কাজ করলে কি ফল হয় তাই মূল ধর্মগ্রন্থের আলোকে আলোচনা করা কর্তব্য, কারো রচিত চটিগ্রন্থ বা নিজের নোট করা দর্শনের আলোকে নয়।সনাতন ধর্মের আলোকে  মতবাদ হলে সকল মতবাদই সমান ।ধর্ম কোনো বিজ্ঞাপনের পণ্য নয় যে তার জন্য প্রচার করে বেড়াতে হবে নিজের দল ভারী করার জন্য ।তাদেরকে ধর্মীয় প্রবক্তা তো দূরের কথা ধর্মীয় বক্তাই বলা যায় না।তাদেরকে ধর্ম ব্যবসায়ী বলা যায় ।কে মুক্তি লাভ করবে, কে স্বর্গে যাবে,কে নরকে যাবে তা পরমেশ্বর জানেন।মানুষ বলতে পারেন না।আমার মতে, যারা ধর্ম নিয়ে নিন্দা ও চর্চা করেন এবং কোন্দল করেন তারা প্রকৃত ধার্মিক তো নয়, তারা মানুষ কি না তাই বিচার্য বিষয় ।তবে একথা ঠিক, ভগবান আমাদেরকে সূতা ধরে পুতুলের মতো ঘুরাচ্ছেন এবং যাকে যে ফল দেবার যোগ্য সেই কর্ম তাকে দিয়ে করাচ্ছেন।আমাদেরকে বিবেক দিয়েছেন এবং  কোনটি ভালো ,কোনটি মন্দ তা করার জন্য বিবেক বুদ্ধি দিয়েছেন।যে যেমন কর্ম করবে তেমন ফল পাবে।এমতাবস্থায় ,ধর্ম নিয়ে আমাদের মতানৈক্য মোটেই ঠিক নয়।


আমাদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ বেদ ।তারপর উপনিষদ ও গীতা ।তারপর স্মৃতি ও পুরাণ ।তবে স্মৃতি ও পুরাণের বাক্য শ্রুতির সাথে সাংঘর্ষিক হলে তা মান্য নয়।তাই মূল ধর্মগ্রন্থ ভালোভাবে পাঠ করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।

শ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ বলেছিলেন, " যত মত তত পথ ।সব মতেই ঈশ্বরকে পাওয়া যায় তাঁর কাছে ভক্তের কোনো জাত পাতের বিচার নেই ।হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ সবাই যে নামেই তাঁকে ডাকুক সবই তাঁর কাছে পৌঁছায়।" উনার মতবাদকে শ্রদ্ধা রেখে আমি অন্যান্য ধর্ম বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।তবে যত মত তত পথ বলতে আমি একই পথকেই বুঝি ।কারণ শাক্ত মতের মতে চৌষট্টি রকমের মার্গ বা  পথ আছে তাকেই আমি বুঝি  ।বৈষ্ণব মতের ও চৌষট্টি রকমের মার্গ আছে ।আমার ধারণা অন্যান্য মতেও আছে ।কাজেই, সকল মতবাদীরই একটি পথ এবং গন্তব্যস্থল ও একই।আর তা হলো ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ করা।


এমতাবস্থায়, আমার সবিনয়ে নিবেদন হলো, আসুন আমরা সনাতনী সকল মতবাদী এক হই।নিজ মতবাদে পরম নিষ্ঠা রেখে অন্য মতবাদকে শ্রদ্ধা করি এবং সঠিক বিষয় জানানোর জন্য উদারনীতি প্রয়োগ করি।ধর্ম নিয়ে চর্চা ও নিন্দা না করার জন্য দৃপ্ত শপথ নেই।আমার আলোচনা আমার উপদেশ নয়, পরামর্শ ।গ্রহণ করা না করা আপনাদের ইচ্ছা.

Wednesday, November 3, 2021

ঈশ্বরের নিরাকারত্ব বিষয়ে বেদ ও উপনিষদের মন্ত্র সম্পর্কে আলোচনা

 ঈশ্বরের নিরাকারত্ব বিষয়ে বেদ ও উপনিষদের মন্ত্র সম্পর্কে আলোচনা এবং কিছু ভ্রান্তি নিরসনের ক্ষুদ্র প্রয়াসঃ

সনাতন ধর্মে ঈশ্বর সাকার ও নিরাকার উভয়েই বলা হয়েছে ।পবিত্র বেদ ও উপনিষদে সাকার ও নিরাকার উভয় বিষয়ে বর্ণিত আছে ।

সনাতন ধর্মের কিছু সংখ্যক লোক ঈশ্বরের সাকারত্ব স্বীকার করতে চান না।তারা ও কিছু ধর্মীয় বক্তা নিজেদের মতবাদ রেখে অন্য মতবাদ বিষয়ে অনধিকার চর্চা করেন ।যে যে  মতবাদে বিশ্বাসী সেই মতবাদ নিয়ে থাকেন ,অন্য মতবাদ খণ্ডণ করার কাজে  মহা ব্যস্ত থাকলে নিজ মতবাদ লালন ও পালন করার সময় পাবেন কোথায়? তাছাড়া পরনিন্দা ও পরচর্চা সনাতন ধর্মে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ।অন্য মতবাদের সমালোচনা করা পরনিন্দা ও পরচর্চার শামিল বলে আমি মনে করি।তাছাড়া আজকাল কিছু সংখ্যক আত্মজ্ঞানী বক্তা কিছু কিছু মন্ত্রের ভুল ব্যাখ্যা করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেন । এমন ও বক্তা আছেন যারা মন্ত্র ও শ্লোকের পার্থক্য বুঝেন না।গীতার শ্লোককেও মন্ত্র বলে চালিয়ে দেন।যারা কোনটি মন্ত্র কোনটি শ্লোক বুঝেন না তাদের ব্যাখ্যা কতটুকু সঠিক তা বুঝে নেবার ভার পাঠকদের উপর ছেড়ে দিলাম।  কেউ বুঝে না বুঝে বাহবা দিয়ে থাকেন ।আমি মহামূর্খ এসব মহাজ্ঞানীদের  বেদ ও উপনিষদের মন্ত্রের ভুল ব্যাখ্যা বিষয়ে আলোচনা করবো ।

যজুর্বেদের ৪০|৮নং মন্ত্রের সরলার্থ হলো, "যে এরূপ আত্মাকে জানে, সে ব্রহ্ম লাভ করে ।ব্রহ্ম শুদ্ধ, বিজ্ঞানানন্দ স্বভাব ও অচিন্ত্য শক্তিবিশিষ্ট; তিনি প্রাকৃত শরীর রহিত, অক্ষয়, স্নায়ুরহিত; সত্ত্ব, রজ ও তমগুণের দ্বারা অস্পৃষ্ট এবং কোনো পাপ তাকে স্পর্শ করে না।সে এরূপ উপাসক, সে অনন্তকাল যথাস্বরূপ নিজ প্রয়োজন ভোগ করে থাকে ।তিনি ক্রান্তদর্শী, মনীষী, জ্ঞান বলে সর্বরূপ ও ব্রহ্মরূপ হয়ে ব্রহ্ম লাভ করে থাকেন ।" মহাজ্ঞানীরা 'শরীররহিত' এ শব্দটির উপর ভিত্তি করে ঈশ্বরের কোনো শরীর বা অবয়ব নাই ব্যাখ্যা করে নিরাকারত্ব প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন ।কিন্তু এখানে 'প্রাকৃত শরীররহিত ' বলা হয়েছে ।অর্থ্যাৎ আমাদের মতো শরীর নেই ।ঈশ্বরের শরীর চিন্ময় ।তবে শরীর নেই বলা ঠিক নয়,তাঁর প্রাকৃত শরীর নেই বলতে হবে ।

শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের ৬|৯নং মন্ত্রের সরলার্থ হলো, "এ জগতে তাঁর প্রভু কেহ নেই ,নিয়ন্তা ও কেহ নেই ।এমন কোনো লিঙ্গ বা চিহ্ন নেই যা দ্বারা তাঁকে অনুমান করা চলে ।তিনি সকলের কারণ, ইন্দ্রিয়াধিষ্ঠাতা দেবতাদেরও অধিপতি; তাঁর কোনো জনক বা অধ্যক্ষ নেই ।" মহাজ্ঞানীরা লিঙ্গ শব্দটিকে পুরুষ লিঙ্গ ও স্ত্রীলিঙ্গ ইত্যাদি অর্থে প্রয়োগ করে বলেন যে,ঈশ্বরের কোনো লিঙ্গ নেই ।অর্থাৎ ঈশ্বর স্ত্রী বা পুরুষ নহেন।অথচ সনাতনীদের কেউ কেউ  পুরুষ ও স্ত্রী দেবতা তৈরি করে ঈশ্বর হিসেবে পূজা করে ।এ হলো সাকারবাদীদের বিরোধীতাকারী সনাতনীদের বক্তব্য ।প্রকৃতপক্ষে, এখানে লিঙ্গ শব্দের অর্থ চিহ্ন বা প্রতীক ।অর্থাৎ ঈশ্বরের কোনো  নির্দিষ্ট চিহ্ন বা প্রতীক নেই ।আর ঈশ্বর ও দেবতাকে একত্রে গুলিয়ে ফেলে সনাতনীদের বৃহদাংশ বহু ঈশ্বরবাদী বলে ভুল ধারণা দেন।আসলে দেবতা ও ঈশ্বর এক নয় তা উপনিষদের মন্ত্রেও পরিষ্কার ।উক্ত শ্লোকে ইন্দ্রিয়াদি সকল দেবতার অধিপতি যে ঈশ্বর তা বলা হয়েছে যাতে প্রমাণিত হয় যে, ঈশ্বর ও দেবতা এক নন।


অন্যদিকে সমালোচনাকারীরা জনক অর্থে পিতা বুঝে থাকেন এবং বলেন যে,ঈশ্বরের অবতারদের জনক বা পিতা আছে ,লৌকিক পিতা।কিন্তু তা ঈশ্বরের জনক বা পিতা বলা গ্রহণযোগ্য নয়।আলোচ্য মন্ত্রে  জনক শব্দের অর্থ প্রভু বা মালিক বুঝানো হয়েছে । একটি শব্দের বিভিন্ন অর্থ থাকতে পারে।

প্রসঙ্গক্রমে  ২০|২৫বছর আগের একটি সত্য ঘটনার কথা বলছি।আমি একবার হবিগঞ্জ থেকে গ্রামের বাড়ি যাবার সময় এক ভদ্রলোক তার পাশে বসা লোকদের উদ্দেশ্যে বলতে লাগলেন, " বাংলাদেশের মাইনষে ( মানুষে) কইন (বলেন)  শেখ মুজিব আমরার জাতির জনক মাইনে ( মানে)  জাতির  বাবা মাইনে  আমরার মার জামাই ( স্বামী)।কতো বড় বেক্কল  আমরা ? "  তবে তিনি  বেক্কল এর সমার্থক  আঞ্চলিক কাঁচা শব্দ ব্যবহার করেছিলেন  যা   ফেইসবুকে উল্লেখ করবার মতো নয়।শব্দটি আ+চু যোগে।কেউ প্রতিবাদ করলো না।আমার ও উনার ভঙ্গি দেখে মান সম্মানের ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস হলো না।উনি যদিও আমাদের আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছিলেন; কিন্তু উনার বেশভূষা দেখে কিছু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত মনে হলো ।কিন্তু এখানে বঙ্গবন্ধুকে জাতির তথা বাঙালী জাতির জনক বলা হয়েছে, কোনো বাঙালী লোকের তথা জনগণের জনক বা পিতা বলা হয়নি ।আর এখানে জাতির জনক মানে জাতির তথা বাঙালী জাতির প্রতিষ্ঠাতা পুরুষ বলা হয়েছে ।তাহলে বুঝুন কি অপব্যাখ্যা? এভাবে বিভিন্ন শাস্ত্রের সহজ শব্দেরই যাচ্ছেতাই ব্যাখ্যা করা হচ্ছে ।আর বেদবাক্যের সঠিক ব্যাখ্যা আমার মতো শত পণ্ডিতের পক্ষে ও দুরূহ ।


আর অবতার সরাসরি ঈশ্বর নন, ঈশ্বরের ছায়া শক্তি যার ক্ষমতা ঈশ্বরের মতো বলে সাকারবাদীরা বিশ্বাস করেন।আর দেবতারা হলেন মায়াশক্তি ।কাজেই, এভাবে ভুল বুঝিয়ে দলভারী করা ঠিক নয়।সনাতন ধর্মে দেবতা পূজা বিরোধী একদল মতবাদী আছেন তা জানতাম ।অবশ্য তাদের কেউ কেউ দেবতা পূজা না করলেও দেবতাকে অবজ্ঞা করেন না এবং বলেন যে,কৃষ্ণের পূজা করলে অন্য দেবতার পূজার দরকার নেই ।কিন্তু ফেইসবুক সুবাদে জানতে পারলাম, সনাতনীদের একদল দেবতার অস্তিত্বই অস্বীকার করেন ।আর ঈশ্বর নিরাকার এ বিষয়ে গুরুত্ব দেন । দেবতা ঈশ্বরের শক্তি অস্বীকার করায় অবাক হলাম ।আমি সনাতনী  নিরাকারবাদীদেরকেও সনাতন ধর্মের অংশীদার বলে মনে করি ।তাদের মতবাদকেও শ্রদ্ধা করি।কিন্তু কেউ সাকারবাদীদের বিরোধীতা করলে আমার গুরুতর আপত্তি ।

এবার সনাতনী শুধু  নিরাকারবাদীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ঈশ্বরের যদি চোখ না থাকে, তাহলে সবকিছু দেখেন কীভাবে, আর কান না থাকলে আমাদের সবকথা শুনেন কীভাবে? তাহলে ঈশ্বর সবকিছু দেখেন এবং শুনেন তা কি নিরাকারবাদী সনাতনীরা অস্বীকার করবেন ?তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো, নিরাকারবাদীরা ও বেদ মানেন এবং বেদ ঈশ্বরের বাণী বলে বা ঐশী বাণী বলে মানেন ।ঈশ্বরের মুখ না থাকলে বাণী দেবেন কীভাবে? হয়তো বলবেন, ঈশ্বরের বাণী বা সত্য মুনিঋষিরা উপলব্ধি করেছেন ।দৈববাণী না হলে তাঁরা শুনলেন কীভাবে? আর  বেদ ঈশ্বরের বাণী না হলে তো বুঝতে হবে তা মুনিঋষিগণের চিন্তার ফসল ।

তবে হ্যাঁ, ঈশ্বরের চক্ষু, কর্ণ, মুখ কিরূপ তা ঈশ্বরই জানেন।অবতার হিসেবে ঈশ্বরের সাকার রূপ মানুষ দর্শন করতে পারে; কিন্তু ঈশ্বরের প্রকৃত রূপ দর্শন করা ও উপলব্ধি করা কঠিন ।

সনাতন ধর্মের বেদকে সনাতনী সবাই মানেন, এমনকি অন্য ধর্মের লোক ও স্বীকার করেন।কিন্তু কোনো কোনো সময় নিজ মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে মন্ত্র ও শ্লোকের ভুল ব্যাখ্যা কাম্য নয়।

আমরা সনাতনীরাই যদি ঈশ্বরের সাকার  নিরাকার নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হয় তাহলে অন্য ধর্মের লোক সনাতন ধর্ম সম্পর্কে  নেতিবাচক ধারণা নিলে কি করবেন ? কাজেই ,সনাতনী ভাইবোনদের কাছে অনুরোধ, আসুন আমরা সকল মতকে শ্রদ্ধা করে একই ছায়াতলে আশ্রয় নেই এবং অন্য ধর্মকে ও শ্রদ্ধা করি।তারপরও যদি কেউ নিজস্ব মতবাদ আঁকড়ে ধরতে চান তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই ।তবে অন্য মতবাদের সমালোচনা করতে বিবেক ও বুদ্ধি খাটাবেন।সাকার থেকে নিরাকারে পৌঁছা যায় ।কিন্তু আমরা সনাতনীরা যদি নিরাকার নিয়ে বসে থাকি তাহলে শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিয়েই সন্দেহ সৃষ্টি হবে যা চার্বাক মুনির হয়েছিল ।আমরা কেউ চার্বাক মুনি হতে চাই না,চাই না চার্বাক দর্শনের অনুসারী হতে।

আমার পোস্টের গুরুত্ব অনুধাবন করে আলোচনাসহ ভদ্রোচিত ভাষায় মন্তব্য করলে আমি কৃতার্থ হবো ।আমার জ্ঞান বুদ্ধির জোরে আলোচনা করলাম ।ভুল ভ্রান্তির পরম করুণাময় ও প্রাজ্ঞজনের নিকট ক্ষমা প্রার্থী ।

রাধা তত্ত্ব নিয়ে সংশয় নিরসনের জন্য কিছু প্রামাণিক দলিলাদি সম্পর্কিত কিছু লেখা।

 রাধা তত্ত্ব নিয়ে সংশয় নিরসনের জন্য কিছু প্রামাণিক দলিলাদি সম্পর্কিত কিছু লেখা।

আজ থেকে ৭/৮ বছর আগের কথা। নব্য কিছু পন্ডিতদের পাল্লায় পরেছিলাম। তারা বিভিন্নভাবে শ্রীকৃষ্ণের রাধার কথা অস্বীকার করতো। তারা শ্রীকৃষ্ণকে যোগেশ্বর মানেন, কিন্তু ভগবান মানতে নারাজ। তারা বলে থাকেন শ্রীকৃষ্ণ সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব। ভগবান তথা বিষ্ণুর অবতার নয়। তারা অবশ্য নিরাকারবাদী। বেদ মানে, তবে নিজেদের অনুবাদেরটা।  সায়াণাচার্য কিংবা মহীধরের ভাষ্য তারা মানেন না। 


তাদের একজন আছে, নাম মেনশন করবো না। তিনি অনলাইনে/অফলাইনে সারাদিন রাধাকে নিয়ে অশ্লীল মন্তব্য করতেন।


তারা বলতেন, বৈষ্ণব গ্রন্থ ভাগবতপুরাণেও রাধার উল্লেখ নাই। একজন বিশেষ গোপীনির কথা বলা আছে, কিন্তু রাধার নাম উল্লেখ নাই। মহাভারতে শুধুমাত্র রুক্মীনি দেবীর উল্লেখ আছে। 


কিন্তু,

অনেক ঘাটাঘাটি করার পর, অনেকদিন পর কিছু প্রামাণিক দলিল পেলাম। চাইলে আপনারাও সংগ্রহে রাখতে পারেন।

কিন্তু 'রাধা' হচ্ছেন স্বয়ং ভগবতী। ভগবতীর আরেক অবতার। 


আজ দেখবো আমরা যে সকল শাস্ত্রে শ্রীরাধিকার নানান লীলা প্রত্যক্ষভাবে উল্লেখ আছে 


১)পুরুষবোধিনী ঊপনিষদ

২)গর্গসংহিতা( গোলকখন্ড ১৬ অধ্যায়, দ্বারকাখন্ড ১৮ অধ্যায় প্রভৃতি)

৩)সনদকুমার সংহিতা (৩০২-৩০৩, ৭২, ৭৪)

৪)নারদপঞ্চরাত্রম(২য়,৩য় ও ৫ম অধ্যায় জুড়ে)

৫)বৃহত-গৌতম তন্ত্র

৬)ঊর্ধ্বামনায় তন্ত্র

৭)পদ্মপুরাণ (#ভূমিখন্ডের ৭ম ও ২০তম অধ্যায়, #পাতালখন্ডের বহু অধ্যায় যেমন-৩৯-৪৫,৭১ অধ্যায় জুড়ে, #ব্রহ্মখন্ডের বিস্তৃত অংশজুড়ে যেমন -৭-৯ম অধ্যায়, স্বর্গখন্ডম ৪৬ অধ্যায় প্রভৃতি )

৮)দেবীভাগবতম (সমস্ত ৯ম স্কন্ধ জুড়ে),

৯) ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ( প্রকৃতিখন্ড ও শ্রীকৃষ্ণজন্মখন্ড জুড়ে)

১০)ব্রহ্মান্ডপুরাণ( সমগ্র উত্তরখন্ড জুড়ে, উপদগত পর্ব ৪২,৪৩ অধ্যায়)

১১)নারদপুরাণ ( ৩য় খন্ড ৮৯ অধ্যায় সহ অনেক স্থানে)

১২)শিবপুরাণ(রুদ্রসংহিতার ৩০,৩১ অধ্যায়)

১৩)মৎস্য পুরাণ(১৩ অধ্যায়)

১৪)স্কন্দ পুরাণ(বিষ্ণুখন্ডের শ্রীমদ্ভাগবতমাহাত্মের ১/২২ ও ২/১১-১৩,১৯, বাসুদেব মাহাত্ম্যের ১৬,১৭ প্রভৃতি অধ্যায়, প্রভাসখন্ডের দ্বারকামাহাত্ম্যম ১২ অধ্যায় প্রভৃতি)

১৫)শংকরাচার্যের জগন্নাথ-অষ্টকম(৬ নং শ্লোক)

১৬)শংকরাচার্যের যমুনা-অষ্টকম

১৭)রাধাতন্ত্র

১৮)রাধাপোনিষদ

১৯) মায়াতন্ত্র ২য় পটল

২০) নীলতন্ত্র (২২/৯-১১)

২১)মুক্তমালা তন্ত্র

২২) গোপালতাপনী ঊপনিষদ( আদি ও উত্তরে গান্ধর্বীদেবী হলেন শ্রীরাধিকা)

২৩) চৈতন্যচরিতামৃত( সমস্ত জুড়ে বিবিধ স্থানে)

২৪) চৈতন্য ভাগবত

২৫) বায়ুপুরাণ ১০৪/৫২

২৬) বরাহপুরাণ (১৬৪/৩৩,৩৪)

২৭) সৌভাগ্য লক্ষ্মী তন্ত্র ( ১৩ অধ্যায়) 

২৮) শংকরাচার্যের অচ্যুত অষ্টকম( ৪ নং শ্লোক)

২৯) নির্বাণতন্ত্র (৫ম অধ্যায়)

৩০) শংকরাচার্যের নারায়ন গীতি-স্ত্রোত (১০ নং শ্লোক)


প্রভৃতি.....


যে সকল শাস্ত্রে #পরোক্ষভাবে শ্রীরাধিকার উল্লেখ আছে-

১) মহাভারত( বিশেষ এক গোপীকার উল্লেখ যিনি শ্রীকৃষ্ণ এর প্রাণস্বরূপা)

২) গীতা ( ৭ম ও ৯ম অধ্যায়, গীতায় বর্ণিত উতকৃষ্ট প্রকৃতিই শ্রীরাধিকা- পদ্মপুরাণ, দেবীভাগবতম, ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ,নারদপঞ্চরাত্রমে উল্লেখিত)

৩) শ্রীমদ্ভাগবতম(১০ম স্কন্ধের ৩০ ও ৪৭ অধ্যায় সহ সমস্ত ভাগবতমের অসংখ্য স্থানে)

৪) ব্রহ্মসংহিতা(৫ম অধ্যায়)

৫)বিষ্ণুপুরাণ (১৩/৩২-৩৮)

৬)গোপালতাপনী উপনিষদ

৭)হরিবংশ( বিশেষ এক গোপীকার উল্লেখ)

প্রভৃতি....


(পিডিএফ ফাইল থেকে কিছু স্ক্রিনশট জুড়ে দেওয়া আছে, আপনারাও মিলিয়ে দেখুন 

জয় রাধে /




Monday, November 1, 2021

দেবীকে দ্বীপমালা উৎসর্গ করার বিধান।


 দেবীর দীপযাত্রা

কালীকুলসদ্ভাবে-তুলারাশি গতে ভানৌ যেহর্চ্চয়ন্তি মাহেশ্বরীং।দেববন্মানবা ভূত্বা লভতে সিদ্ধিমুত্তমাম্।।

অর্থাৎ সূর্য্য তুলারাশিতে গমন করলে দেবীর পূজার কথা  বলা হয়েছে।

প্রাণতোষিণী ধৃত বামকেশ্বর বচনে

কার্তিকেহমাতিথৌ দেবী দীপযাত্রাং সমাচরেৎ।

রাত্রৌ মহানিশাযোগে দীপাদিভিঃ অলঙ্কৃতম্।।

কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে দেবীর দীপযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।দেবীকে দীপমালা উৎসর্গের বিধান পাওয়া যায়।যার জন্য এটি দীপান্বিতা অমাবস্যা নামে প্রচলিত।

এটি দেবীর ষোড়শ যাত্রার অন্যতম।

বলা হয়েছে ঘৃতপ্রদীপাভাবে তু তৈলদীপং সমাচরেৎ।

ঘৃতপ্রদীপ উত্তম,অভাবে তৈলপ্রদীপ দাতব্য।

Thursday, October 28, 2021

আদিত্য চক্রবর্তীর অন্নপ্রাশন।



অন্নপ্রাশনের খন্ডিত অংশ। 

অন্নপ্রাশন 


নবজত বালক বালিকার অশৌচ বিধি।

 নবজাত বালক বালিকার অশৌচ বিধি নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা। 


Tuesday, October 26, 2021

নবগৃহ প্রবেশের দিন নির্ধারণ করার নিয়ম

 নবগৃহ প্রবেশের দিন নির্ধারণ করার নিয়ম। 


আমাদের ধর্মবোধ বিশ্বাস ও সংস্কৃতির চেতনা সনাতন

 আমরা বাঙালি।আমাদের ধর্মবোধ বিশ্বাস ও সংস্কৃতির চেতনা সনাতন ; শাশ্বত ও চিরন্তন। যে জাতির জীবনী শক্তি আছে তার আত্মপ্রত্যয় শক্ত বুনিয়াদের উপর প্রতিষ্ঠিত হয়।তারা নিজের সম্বন্ধে কোনও অপ্রিয় সত্য শুনতে যেমন ভয় পায় না, নিজের দোষ ধরতে সঙ্কোচ বোধ করে না তেমনি অন্যের অন্যায়কেও প্রশ্রয় দেয় না। ভাবী বিপদের আশঙ্কায় বিচলিতও হয় না।প্রতিকারের  হিসাব করতে ভয় পায় না।দুর্বল জাতি নিজের শক্তিতে এতো অবিশ্বাসী হয় যে,বিপদের কথাতেই আতঙ্কিত হয়ে ওঠে।মৃত্যুর আগেই তাদের মৃত্যু ঘটে।মরার আগে মরে যাওয়া বাঙালির শোভা পায় না।বাঙালি সত্যপ্রিয় শান্তিকামী জাতি।  গোয়ার্তুমি করে বিভৎস অত্যাচার, ধর্ষণ, পরধন লুণ্ঠন ও ঠুনকো কারনে নরহত্যা তার শোভা পায় না।সে সহসা অশান্তি কলহ- ঝগড়ায় নিজেকে জড়ায় না।তবে নিজ বাস ভূমে পরবাসী করবার অন্যায় পদক্ষেপকে তুড়ি মেরে সঅধিকার প্রতিষ্ঠা করে।হাজার বছরের ইতিহাস তার প্রমাণ দেয়।এর জন্য ঐক্যের বিকল্প নেই।বাঙালী ঐক্যবদ্ধ হও।তবেই গৌরব অক্ষুণ্ণ থাকবে।

Saturday, October 23, 2021

কন্যাসন্তানের জননী বিধবার প্রয়াত স্বামীর মুখাগ্নি ও শ্রাদ্ধ করার অগ্রাধিকার প্রসঙ্গেঃ

 কন্যাসন্তানের জননী বিধবার প্রয়াত স্বামীর মুখাগ্নি ও শ্রাদ্ধ করার অগ্রাধিকার প্রসঙ্গেঃ

 কোনো লোক তার স্ত্রী ও কন্যা সন্তান রেখে মারা গেলে  মুখাগ্নি ও শ্রাদ্ধ ক্রিয়ার অধিকারী নিয়ে সনাতনীদের মাঝে মতানৈক্য দেখা দেয় ।কেউ নিজের মতবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে ,আবার কেউ নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন বিধান দিতে চেষ্টা করেন এবং কেউ বিধান নিতে চেষ্টা করেন যা স্মৃতিশাস্ত্রের সাথে সাংঘর্ষিক ।

কেউ কেউ বলেন, ভ্রাতুষ্পুত্র বা ভাতিজা জীবিত থাকলে সে শ্রাদ্ধ করার অধিকারী । কারণ ভাতিজা  পুত্র তুল্য।এমনকি ভাতিজা ধরাও নিতে পারে।তাহলে মাথা মুণ্ডণ ও করতে পারে।

আমার শাস্ত্রীয় জ্ঞানমতে এরূপ ক্ষেত্রে উনার বিধবা স্ত্রী মুখাগ্নি ও  শ্রাদ্ধের অগ্রাধিকারী ।পতি হলেন স্ত্রীর মহাগুরু ।মহাগুরু নিপাতে স্ত্রীকে এক বছর কালাশৌচ পালন করতে হয়।

শাস্ত্রীয় ব্যবস্থায় বলা হয়েছে, পুরুষের ক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে অধিকারী হলো, জ্যেষ্ঠপুত্র, তার অভাবে পরবর্তী কনিষ্ঠ পুত্র, পৌত্র, প্রপৌত্র, অপুত্রা পত্নী,পুত্রবতী পত্নী, অদত্তা কন্যা, বাগদত্তা কন্যা, দত্তা কন্যা, দৌহিত্র, কনিষ্ঠ সহোদর, জ্যেষ্ঠ সহোদর, কনিষ্ঠ বৈমাত্রেয়, কনিষ্ঠ সহোদর পুত্র, জ্যেষ্ঠ সহোদর পুত্র ( ভাতিজা)। তাহলে দেখা যায়, ভাতিজা অনেক পরে।কিন্তু কেউ কেউ নিজ স্বার্থে অথবা নিজের ইগো প্রতিষ্ঠিত করতে ভাতিজাকে ছেলের জায়গায় এনে বিধান দেন।এমনকি ভাতিজাকে ধরা লওয়ান,মাথা মুণ্ডণ করে শ্রাদ্ধাদি ক্রিয়া করান।কেউ কেউ মৃত ভাইয়ের সম্পত্তি পাবার লোভে এরূপ করাতে পুরোহিতকে গাইড করার চেষ্টা করেন ।

আমি শাস্ত্রজ্ঞ নহি ।তবে শাস্ত্র নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করি এবং অনেক ক্ষেত্রে নিজে জানলেও পণ্ডিত বা শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তিদের শরণাপন্ন হই এবং শেয়ার করে শাস্ত্র ও বিবেকের সাথে মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নেই।

শাস্ত্র নিয়ে লেখালেখি করতে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছি ।কারণ কিছু কিছু আত্মজ্ঞানী বলেন এগুলো লিখার কোনো অর্থ নেই ।অথচ কেউ কেউ বিভিন্ন ফেইসবুক বন্ধুর লিখা সংগ্রহ করে অন্য জায়গায় গিয়ে বাহাদুরি করেন।তাই আমি শাস্ত্রীয় আলোচনায় নিজেকে বোকাই ভাবি।বোকা না হলে কি নিজের খেয়ে মানুষকে জ্ঞান দিতে যাই।বলা হয় বিদ্যা দান করলে বিদ্যা বাড়ে ।এভাবে জ্ঞান দান করলে জ্ঞান বাড়ে ।কিন্তু শাস্ত্রে আবার অপাত্রে জ্ঞান দান নিষেধ করা হয়েছে ।ফেইসবুকে পাত্র বা অপাত্র থাকা অস্বাভাবিক নয়।আমার একটি ছেলে সন্তান ও নেই যে আমার লিখা পাঠ করে কিছু শিখতে পারবে ।অবশ্য ভাতিজা আছে ।সেও ছোট ।দুটো মেয়ে আছে ।হয়তো কিছু শাস্ত্রীয় বিষয় শেখার আছে ।কিন্তু স্মৃতি শাস্ত্রের বিষয় তো তাদের জানার প্রয়োজন নেই ।যাহোক, মনের দুঃখে এ কথাগুলো বললাম কিছু কুলাঙ্গারের জন্য ।অথচ এসব কুলাঙ্গার যুক্তিবাদী হলেও অধমের প্রয়োজন যে পরতে পারে তা ভাবে না।আমি মনে করি সবার প্রয়োজন আছে ।কিন্তু অনেক সময় মনটা নষ্ট হয়ে যায় ।

যাহোক, এ সঙ্কটময় মুহূর্তে আমি আমার ব্যক্তিগত প্রয়োজনেই স্মৃতি শাস্ত্রের বিষয় নিয়ে আলোচনা করলাম ।আমার এক পিসতুতো ভাই আজ বিকালে দেহত্যাগ করেছেন ।উনি এক বিধবা স্ত্রী ও তিনটি কন্যা সন্তান ( বিবাহিতা) রেখে দেহত্যাগ করেন ( ওঁ দিব্যান্ লোকান স গচ্ছতু)।"আমি আমার আলোচনা মোতাবেক বিধান দিয়েছি ।তবু অধিকতর নিশ্চিত হবার জন্য আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম ।সেটা আমার নিজের ব্যাপার।তাই শাস্ত্রজ্ঞ বন্ধুদের মতামত পেলে আমার পূর্ণ সন্তুষ্টি আসবে ।আমার দাদার বিদেহী আত্মার পরম শান্তি কামনা করার জন্য সবিনয়ে অনুরোধ করা হলো ।

আসলে আমার যেকোনো পোস্ট করার পেছনে একটা মহৎ উদ্দেশ্য থাকে ।আজ শাস্ত্রবাক্য ভুল ব্যাখ্যার কারণেই সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে ।আর এগুলো করছে কিছু ধর্ম ব্যবসায়ী নিজেদের স্বার্থে অথবা শাস্ত্রবাক্যে পরিপক্ব জ্ঞানের অভাবে।জ্ঞানের অভাবে ভুল ব্যাখ্যা দিলে আমার কিছু নেই ।কিন্তু জেনে শুনে ভুল ব্যাখ্যা দিলে তার বিচারের ভার পরমেশ্বরের উপর এবং যুক্তিবাদীদের বিচারের ভার প্রকৃতির উপর দিলাম ।

Ekadoshi

লক্ষ্মীপুর চন্দ্রগঞ্জ থানা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন

  চন্দ্রগঞ্জ  প্রতিনিধি : বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন...

চারবর্ণের অশৌচ ব্যবস্তা