গুরুর পাঠশালা
****************
"ধর্ম ও মত "
*************
-পবিত্র কুমার চক্রবর্ত্তী
*************************
*** আজকের আলোচ্য বিষয়-
"ধর্ম ও মত বলিতে কি বুঝায়"---
---------------------------------------------------
প্রিয় সুধী,
সাধারন মানুষের প্রশ্ন-- এত মত পথের মধ্যে মানুষ আজ দিশেহারা।কি করিয়া মানুষ মুক্তি লাভ করিবে সেই কথা বুঝিয়ে বলুন।
তাই আজ সাধারন মানুষের দ্বিধাদন্দ মোচনের লক্ষেই আমার আজকের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস ব্যাক্ত করিতেছি।
--+-++---------++++----------++++----------
বিশ্লেষনঃ-" ধর্ম ও মত"
*********
১। প্রশ্নঃ-ধর্ম কি এবং কাহাকে বলে?
উত্তরঃ-ধর্ম কি-
প্রথমে "ধর্ম" - শব্দটি অর্থ জানব-
"""""""""""""""""""""""""""""""
ঈশ্বরোপসনার পদ্ধতি; আচার আচরন ও পরকালের বিষয়ে নির্দ্দেশ ও তত্ত্ব জ্ঞান: পুণ্যকর্ম বা সত্যকর্ম; প্রবনতা; ভিরুতা; বিশ্বাস; স্বধর্ম বজায় রাখা; ধর্মে বিশ্বাস; সদাচার; মানবের ধর্ম- সদাচার,কর্তব্য ও অকর্তব্য; সুনীতি ও আচরন বিধি; জীব বা বস্তুর নিজস্ব গুন বা ধর্ম; পশুর ধর্ম
ইত্যাদি ইত্যাদি ।
প্রশ্নঃ-ধর্ম কাহাকে বলে?
উত্তরঃ-"ধর্ম- ঈশ্বরের ইচ্ছায় সৃষ্টির প্রারম্ভে প্রকৃতি যে গুন লাভ করে ,তাহাই ধর্ম।
প্রিয় সুধী,
উপরের শব্দার্থ ও সজ্ঞা দ্বারা আমরা বুঝিতে পারিলাম যে, ধর্ম হচ্ছে প্রকৃতির গুণ।যাহা সর্ব জীব বা পদার্থ সৃষ্টি লগ্নেই ঈশ্বর হইতে লাভ করিয়া থাকে।যাহা মানুষ কোন মতেই সৃষ্টি করিতে পারেন না।কারন তাহা ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্টি হইয়া থাকে।শ্রী বেদও ঈশ্বরের মুখশ্রীত বানী।
সুতরাং এই ধর্মই- সত্য, সঠিক ও সনাতন। যার দ্বারাই জীব মুক্তি লাভ করিয়া থাকে বা করিবে। কারন প্রকৃতি জাত ধর্মের কোন প্রকার ত্রুটি থাকিতে পারে না।কারন তাহা ঈশ্বর প্রদত্ত । তাই এই পথই অর্থাৎ ঈশ্বর দ্বারা সৃষ্ট পথই মানবের জন্য শ্রেষ্ঠ পথ।ইহাতে দ্বিমতের আর কিছুই নাই।
শ্রী বেদ অপৌরষের, নিত্য ,সত্য ও সনাতন । এই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবার পরেও বেদজ্ঞান অক্ষয় থাকিবে। তাই শ্রী ভগবান বলিয়াছে-
'বেদজ্ঞানই আমার মত,তাহা কখনোই বিলিন হবেনা বা হইতে পারেনাঊ। আর যে মত মানব কর্তৃক সৃষ্টি হইয়াছে তাহা অচিরেই ধ্বংস হইয়া যাইবে।"
-শ্রী ভগবান উবাচ
প্রিয়সুধী, এবার সকলের বিবেকের কাছেই ভাল ও মন্দ বিচারিক ও সিদ্ধান্তের ভার দিয়া দিলাম।
২।প্রশ্নঃ-" মত"কি এবং কাহাকে বলে?
উত্তরঃ- প্রথমে " মত"- শব্দটি অর্থ জেনে নেই-
মত
"""""
মানুষের মনের ভাব; অভিমত; সম্মতি; সিদ্ধান্ত;
ধারা; পদ্ধতি; বিধি; নিয়ম; প্রণালী; বিরোধ; পারস্পরিক আলোচনা।
প্রশ্নঃ- মত কাহাকে বলে?
উত্তরঃ- মানুষের চিন্তা বা মননশিলতার মাধ্যমে যাহা করা হয় তাহাকে "মত" বলে। অর্থাৎ , মানুষ নিজের মননশীল চিন্তা চেতনার মাধ্যমে যে অভিমত ব্যাক্ত করিয়া থাকেন ,তাহাকেই "মত" বলে।
সুতরাং, আমরা এই শব্দার্থ ও সজ্ঞা দ্বারা বুঝিতে পারিলাম যে, মতামত শুধুই মানব কর্তৃক সৃষ্টি । যাহার মধ্যে ভগবানকে সম্পৃক্ত করা হয় নি। এতে কাম্যতা রহিয়াছে। সুতরাং মানবের মতামতে মুক্তির সম্ভাবনা নাই। কারন তাহাতে রজঃগুন ও তমঃগুনে পরিপুর্ন রহিয়াছে। তাই তাহা বর্জনীয়।
প্রিয় সুধি,এইবার বিচারের ভার আপনাদের।তার পরেও আমি এই টুকুই বলিব যে,সংসারে থাকিয়া স্ত্রী পুত্র স্বামী পরিজন নিয়া নিরবিঘ্নে থাকিয়া নিয়মের মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রিতির উদ্দেশ্যে ভগবত ভক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরের সেবা করে যাওয়াই সব চেয়ে উত্তম । যে হেতু স্বামীও স্ত্রী এই দুইয়ের সমন্বয়েই এই সংসার, তাই বৈদিক শান্তিই শ্রেষ্ঠ শান্তি এই চিন্তা করিয়া বিধি সম্মত সৃষ্টিকে বর্দ্ধিত করাই সবচাইতে উত্তম ।
পৃথিবীতে প্রায় ৪২০০টির বেশি" মত" রহিয়াছে।
সঙ্গত কারনেই মত গুলোর নাম উল্লেখ্য করা হইল না।
কি লাভ হইল এত মতামত তৈরী করিয়া,কেউ এমন গেরান্টি দিতে পারিয়াছে যে,আমার মতামত দ্বারা ঈশ্বর লাভ হইয়াছে?
কিছুই লাভ হয়নি, বরং লাভ হয়েছে এই টুকুই যে, যতই নিজেকে মহাপুরুষ তৈরী করুন কেন,তার মতের দ্বারা শুধু সনাতন ধর্ম বিভক্তই হইয়াছে, জোড়া আর দিতে পারেননি। সৃষ্টি হইয়াছে হিংসার,অকল্যান হইয়াছে সাধারন মানবের। কর্মে দোষ থাকবেই। ধর্ম বিষয়ে বাড়াবারি করিয়া জন্ম হার কমিয়া গিয়াছ কিন্তু বৃদ্ধি ঘটাতে পারেনি।শ্রীভগবান কর্মে দোষ থাকার কথা বলিয়াছে কিন্তু কর্মকেতো বাদ দেবার কথা বলেননি।
তাহা হইলে দোষ কোথায়? আসল দোষ আমাদের মনে, আমাদের চিন্তা চেতনায়। সেটা হচ্ছে -আধিপত্ত বিস্তারের কৌশল। যাহা সনাতন ধর্মকে কালে কালে করিয়াছে আঘাত প্রাপ্ত।আর দোষ দেওয়া হয়েছে ক্ষমতাহীন ব্রাহ্মণদের, দোষ দেওয়া হয়েছে শ্রুতি ও স্মৃতি শাস্ত্রের । যাহা কোন দিনই সনাতন ধর্মের মানুষ আশা করেননি।
প্রশ্নঃ মানবের ধর্ম কি?
উত্তরঃ-
১। কর্তব্য ও অকর্তব্য সমন্ধে জ্ঞান;
২।সদাচার;
৩।সুনীতি;
৪।আচরন বিধি।
মানুষের সজ্ঞা- যে ব্যাক্তির মধ্যে- কর্তব্য ও অকর্তব্য সমন্ধে জ্ঞান থাকে,থাকে সদাচার,থাকে সুনীতি ও ভাল আচরন বিধি তাহাকেই মানুষ বলিয়া থাকে।
বিঃদ্রঃ- অবশ্যই মানুষের মধ্যে এই চারটি গুন থাকিতে হইবে। আর না হয় সেতো মানুষই নয়।
অর্থাৎ মানুষ যখন প্রবল তমঃ গুনের প্রভাবের মোহে পরিয়া বেদ ও স্মৃতি শাস্ত্রকে ব্যাতিরেখে বা ভুলিয়া নিজের বিভিন্ন মতামত সৃষ্টি করেন বা করিতে চাহেন, সেটাই আসুরিক ভাব বা আসুরিক কর্ম।
সুতরাং সেই ব্যাক্তির সকল কর্মই আসুরিক কর্ম ।শ্রী ভগবান আসুরিক কর্মকে বর্জন কতিবার কথাই বলিয়াছে গীতাতে। তাহাতে মুক্তিতো সেটা স্বপ্নের কথা,বর্ং চুরাশী লক্ষ নরক কুন্ড পুনঃরায় পরিভ্রমন করিতে হইবে ,এতে আর সন্দেহের কিছুই নাই।
প্রিয় সুধী, কালে কালে কিছু কিছু মানুষ বিভিন্ন মতামত তৈরী করিয়া শুধু সনাতনকে বিভক্তই করেননি , কলঙ্ক লেপন করিয়াছেন পবিত্র সনাতন ধর্মের সর্ব অঙ্গে।
তাই আজ এই দ্বিধাদন্দের সন্ধি লগ্নে কিছু মানুষের অনুরোধে সামান্য ও সল্প পরিসরে ধর্ম ও মতের উপর তত্ত্ব বিশ্লেষনঃ উপস্থাপন করিতে চেষ্টা করিলাম। তার সমস্ত বিচারিক ভারই আপনাদের উপর। আমি মনেকরি, যে যেমন কর্ম করিবে সে পরবর্তি জন্মে তেমন কর্মফলই ভোগ করিবে ইহা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
পরিশেষে সকলের মঙ্গল ও সুসাস্থ কামনা করিয়া আমার ভুলে সমৃদ্ধ জীবনের নিরীখে "ধর্ম ও মত" বিষয়ের উপর ক্ষুদ্র লেখার এখানেই ইতি টানছি।
ওঁতৎসৎ: জয় শ্রী পবিত্র বেদ,জয় পবিত্র সনতনের জয়,জয় শ্রী বিষ্ণুদেব ।
""""""""""""""""""""""