সনাতন ধর্ম বিশ্বাস, বুকে পোষার ধন ,অন্তরে অনুভবের অনুষঙ্গ।এ ধর্মব্যবস্থা সর্বাধুনিক বলে সর্বজন স্বীকৃত।তাই একে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করে যুগপোযগি করা চলে না ,বা করতে হয় না।অজ্ঞতা মানুষকে লাটিমের মতো কিংবা কলুর বলদের মতো ঘুরায়-এগিয়ে দেয় না ।সনাতন ধর্ম ধারার অনুসারী বাঙ্গালীরা রক্তসঙ্কর জাত বলে বারংবার অভিযুক্ত হলেও অন্তরে তাঁরা তাদের মানস-স্বাতন্ত্র্য এবং স্বভাবের বৈশিষ্ট্য কখনো হারায়নি।প্রমাণে- অনুমানে অনেক জাতির রক্ত জ্ঞাত ও অজ্ঞাত সারে এদের ধমনিতে সঞ্চারিত হয়ে থাকলেও কোটি কোটি বছর ধরে যে বৈদিক শাস্ত্র,শাসন ও সংস্কৃতির ধারা তা তাদের অন্তরে আজও ফল্গুধারার ন্যায় বহমান।এ উপমহাদেশের মানুষ সর্বদা সনাতন সংস্কৃতি, শিক্ষা -ভিত্তিক আজন্ম সংস্কারকে ঐতিহ্যানুগ আদর্শ বলেই মানে ও শ্রদ্ধা করে থাকে ।এই আদর্শ গণমনে গভীর ও ব্যাপক স্থান দখল করে নিয়েছে। সনাতন স্থুলদেহ চর্চা ক্রমশঃ সূহ্ম মানস চর্চায় উন্নীত হয়েছে।
ভারত উপমহাদেশের কিছুসংখ্যক ব্যক্তি লোভের মোহে রাতারাতি সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলবার সন্ধ্যানে বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ফিরেছে কালো পিঁপড়ের মতো আবার রাজার ধর্মই প্রজার ধর্ম ,এই অমানুষিক রীতি নীতি বিভিন্ন সময় জীবণ জীবিকার তাগিদে সনাতনি বাঙ্গালিদের বিভ্রান্ত করলেও মিশ্র রক্ত প্রসূত নব্য সংস্কার তাদের মূল বৈদিক ধারাকে কখনো নিঃস্প্রভো করতে পারেনি। বৈদিক আচার আচরণ সামাজ সংস্কৃতি নিয়ম নীতি প্রথা-পদ্ধতি বিশ্বাসের সবটাই আজও স্থিতিশীল রয়েছে বাঙ্গালীর মর্মমূলে। পরধর্মের ভয়াবহ প্রভাব মাঝে মধ্যে দেখা দিলেও এরা সজাগ সচেতন।মানবিক বোধে এদের চিত্তের প্রসার এবং রুচির বিকাশ ঘটেছিল ।দেশজ সংস্কৃতি, পবিত্র জলবায়ু ও ভৌগলিক মহিমা ভারত উপমহাদেশের মানুষ গুলোর চিত্তহরণ করে রাখে অজ্ঞাত সারে।
বাঙ্গালী বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে বিদেশী ধর্ম গ্রণহণ করেছে বটে,কিন্তু কোন ধর্ম ব্যবস্থাই সে অবিকৃত রাখেনি।জৈন,বৌদ্ধ ও ইসলামকে সে নিজের পছন্দ মতো রুপ দিয়ে আপন করে নিয়েছে। নৈরাত্ম্য নিরীশ্বর বৌদ্ধধর্ম এখানে মন্ত্রযান , কালচক্রযান,বজ্রযান-সহজযানে বিকৃতি ও বিবর্তন পায়।বৌদ্ধ চৈত্য হয়ে ওঠে অসংখ্য দেবতা-অপদেবতার আখড়া।জৈনধর্ম পরিত্যক্ত হয়।ইসলাম ওয়াহাবি - ফারায়েজি আন্দোলনের আগে পীরপূজায় অবসিত হয়।ইতিহাস পর্যালোচনা করে মনীষিরা দেখেছেন ,ভারতীয় মুসলমান সূফিদের উপর বৈদান্তিক অদ্বৈততত্বের ও যৌগিক দেহতত্বের গভীর প্রভাব পড়েছিল।এবং চৈতন্যোত্তর যুগে অদ্বৈত তত্বের প্রভাব সর্বব্যাপী ও গাঢ়তর হয়েছিল , আজন্মের সংস্কার বশে তারা দেশ কালের প্রভাব এড়াতে পারেনি।আরও দেখা যায় ভারতীয় যোগানুগ মরমীয়া সাধন পদ্ধতিই এদেশীয় মুসলীম সমাজে বহুল প্রচলিত।বাউল সাধনাও মুসলিম সমাজে সমাদৃত হয়।
অবশ্য সবধর্মই কালে কালে স্থানে স্থানে বিকৃত হয়, কিন্তু বৈদিক ধর্মের বিকৃতিতে সনাতনীদের স্বভাব ও মনন যত প্রকট,এমনটি অন্যত্র বিরল। সনাতনীরা সর্বকালে তাদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করতে পেরেছে,কারণ বৈদিক আদর্শে সংস্কৃতিতে তারা আস্থা ও আনুগত্য হারায়নি।যারা বেদাদি শাস্ত্রনিষ্ঠ কিছুতেই কখনো বিচলিত হয়নি।তার অন্যতম কারণ ভারত উপমহাদেশের অধিবাসীরা মুখে যে বুলি আওড়ায় না কেন ,আসলে তারা ঐতিহ্য প্রথা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সর্বদা মান্য করে শ্রদ্ধা করে বলে আয়ুবর্ধক যোগাসন তার প্রিয়,শক্তি দায়ক তন্ত্র তার অতি প্রিয়। ভারত উপমহাদেশের লোকেরা সর্বদা অমরত্বকামী।তাদের কাছে ভবসমুদ্র পারি দিতে পুন্যকর্মই মন-পবনের নাও।আত্মকল্যাণ ও আত্মমোক্ষ লাভের জন্য তারা সদ্ গুরুর দীক্ষা কামনা করে।বৈষয়িক জীবণকে তুচ্ছ জেনে তাদের কাছে অভিনন্দিত হয়েছে সেই প্রাচীণ বৈদিক মুনি-ঋষি-যোগীদের দিকনির্দেশনা।সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রাচীণ অথচ সর্বাধুনিক সংস্কৃতির ধারক বাহক ।এরা সাময়িক ভাবে বিচলিত হলেও বিনষ্ট হয় না,কখনো হবেও না।
No comments:
Post a Comment