Tuesday, December 15, 2020

সনাতন ধর্মে বিগ্রহ আরাধনায় শাস্ত্রীয় প্রমাণঃ

 সনাতন ধর্মে বিগ্রহ আরাধনায় শাস্ত্রীয় প্রমাণঃ 

বৈদিক শাস্ত্রে পরমেশ্বর ভগবান স্বয়ং শ্রীবিগ্রহ পূজা পরিচর্যার মাধ্যমে তাঁর আরাধনার নির্দেশ দিয়েছেন ।ঋকবেদে বলা হয়েছে, "যিনি বহুলোকের কীর্তনীয় শ্রীবিষ্ণুকে হব্য দান করেন, যিনি যুগপৎ স্ত্রোত্র উচ্চারণের দ্বারা তাঁর পূজা করেন এবং মনুষ্যগণের হিতকর বিষ্ণুর পরিচর্যা করেন, তিনি মর্ত্যধন ইচ্ছে করে শীঘ্রই প্রাপ্ত হন( ৭|১০০|১)।" এখানে বিষ্ণু পরমেশ্বরের গুণবাচক নাম যা সর্বব্যাপী অর্থে ব্যবহৃত ।উক্ত মন্ত্রটিতে বিষ্ণুকে হব্যদান, পূজা ও পরিচর্যার কথা বলা হয়েছে ।যদি বিগ্রহ নির্মাণ শাস্ত্রানুমোদিত না হতো তাহলে হব্যদান, পূজা ও পরিচর্যার কথা উল্লেখ থাকতো না।তাছাড়া বেদের সার শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে, " শিলা ( প্রস্তর),দারু( কাঠ) ,ধাতু, ভূমি ( মাটি) আলেখ্য (ছবি),বালুকা, মন ও মণি এই অষ্ট প্রকারে ভগবানের বিগ্রহ প্রকাশিত হন(১১|২৭|১২)।"অর্থাৎ এই আটটি জিনিস পূজার আধার বা পাত্র ।

এই অধ্যায়ের ২৪নং শ্লোকে ভগবান বলেন,"উপযুক্ত মন্ত্রোচ্চারণ এবং শ্রী বিগ্রহের অঙ্গন্যাসের মাধ্যমে পরমাত্মাকে বিগ্রহের মধ্যে আহ্বান করে ভক্তের উচিত আমার আরাধনা করা।" পদ্ম পুরাণে স্পষ্ট বলা হয়েছে, " যে ব্যক্তি মন্দিরে অবস্থিত ভগবানের শ্রীবিগ্রহকে কাঠ- পাথর মনে করে, সে নারকী অর্থাৎ নরকে বাস করে ।"সুতরাং দেখা যায় যে, সনাতন ধর্মে বেদাদি ধর্মগ্রন্থে বিগ্রহ বা প্রতিমা পূজা অনুমোদিত ।তবে ঈশ্বর ও দেবতা এক নন।বিগ্রহে যেমন ঈশ্বরের পূজা করা হয়,তেমনি দেবতার পূজা ও করা হয়।যেমন দেবীদুর্গা, যিনি সাক্ষাত ভগবতী, তিনি কি তাঁর দৈব শক্তিতে মৃত্তিকা নির্মিত বিগ্রহে অবস্থান করতে পারেন না? আর যদি তিনি সেখানে অবস্থান করেন, সেটা কি মূর্তি না কি সাক্ষাত দেবী?

যারা মূর্তি পূজা করেন না,কিন্তু বেদ পাঠ করেন, বেদকে সম্মান করেন এবং পূজা করেন প্রকারান্তরে তো মূর্তি পূজা হলো ।বেদও পরমেশ্বরের বাঙ্ময়ী মূর্তি ।

উপাসনার জন্য যে দেব মন্দির স্থাপন করা হয় যার বিভিন্ন চূড়া থাকে সেটাও মূর্তি ।

সনাতন ধর্মে উপাসনার জন্য দুটো দিক নির্দিষ্ট আছে; পূর্বদিক ও উত্তর দিক ।কারণ পূর্বদিকে সূর্যদেব এবং পশ্চিমদিকে দেবালয় ।তাহলে নির্দিষ্ট দিকে দেবতারা আছেন বলেই তো সেইদিকে উপাসনা করা হয় নির্দিষ্ট লক্ষ্য রেখে ।

কেউ মূর্তি পূজা করুন না করুন অন্যের মতের বিরোধীতা কাম্য নয়।আমি আমার সংগ্রহের আলোকে কতটুকু বুঝাতে পেরেছি কি না জানি না,তবে আমার আলোচনা কারো কিছুটা উপকারে আসলে আমার লিখা সার্থক মনে করবো ।আসলে সনাতন ধর্মে প্রচারের অভাব বলেই প্রসার হচ্ছে না।সবাই এই বিষয়ে জ্ঞান দান করুন এবং খটকা নিরসন করার চেষ্টা করুন ।সনাতনের জয় হোক ।

No comments:

Ekadoshi

লক্ষ্মীপুর চন্দ্রগঞ্জ থানা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন

  চন্দ্রগঞ্জ  প্রতিনিধি : বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন...

চারবর্ণের অশৌচ ব্যবস্তা