Tuesday, December 15, 2020

সনাতন ধর্মে বিগ্রহ আরাধনায় শাস্ত্রীয় প্রমাণঃ

 সনাতন ধর্মে বিগ্রহ আরাধনায় শাস্ত্রীয় প্রমাণঃ 

বৈদিক শাস্ত্রে পরমেশ্বর ভগবান স্বয়ং শ্রীবিগ্রহ পূজা পরিচর্যার মাধ্যমে তাঁর আরাধনার নির্দেশ দিয়েছেন ।ঋকবেদে বলা হয়েছে, "যিনি বহুলোকের কীর্তনীয় শ্রীবিষ্ণুকে হব্য দান করেন, যিনি যুগপৎ স্ত্রোত্র উচ্চারণের দ্বারা তাঁর পূজা করেন এবং মনুষ্যগণের হিতকর বিষ্ণুর পরিচর্যা করেন, তিনি মর্ত্যধন ইচ্ছে করে শীঘ্রই প্রাপ্ত হন( ৭|১০০|১)।" এখানে বিষ্ণু পরমেশ্বরের গুণবাচক নাম যা সর্বব্যাপী অর্থে ব্যবহৃত ।উক্ত মন্ত্রটিতে বিষ্ণুকে হব্যদান, পূজা ও পরিচর্যার কথা বলা হয়েছে ।যদি বিগ্রহ নির্মাণ শাস্ত্রানুমোদিত না হতো তাহলে হব্যদান, পূজা ও পরিচর্যার কথা উল্লেখ থাকতো না।তাছাড়া বেদের সার শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে, " শিলা ( প্রস্তর),দারু( কাঠ) ,ধাতু, ভূমি ( মাটি) আলেখ্য (ছবি),বালুকা, মন ও মণি এই অষ্ট প্রকারে ভগবানের বিগ্রহ প্রকাশিত হন(১১|২৭|১২)।"অর্থাৎ এই আটটি জিনিস পূজার আধার বা পাত্র ।

এই অধ্যায়ের ২৪নং শ্লোকে ভগবান বলেন,"উপযুক্ত মন্ত্রোচ্চারণ এবং শ্রী বিগ্রহের অঙ্গন্যাসের মাধ্যমে পরমাত্মাকে বিগ্রহের মধ্যে আহ্বান করে ভক্তের উচিত আমার আরাধনা করা।" পদ্ম পুরাণে স্পষ্ট বলা হয়েছে, " যে ব্যক্তি মন্দিরে অবস্থিত ভগবানের শ্রীবিগ্রহকে কাঠ- পাথর মনে করে, সে নারকী অর্থাৎ নরকে বাস করে ।"সুতরাং দেখা যায় যে, সনাতন ধর্মে বেদাদি ধর্মগ্রন্থে বিগ্রহ বা প্রতিমা পূজা অনুমোদিত ।তবে ঈশ্বর ও দেবতা এক নন।বিগ্রহে যেমন ঈশ্বরের পূজা করা হয়,তেমনি দেবতার পূজা ও করা হয়।যেমন দেবীদুর্গা, যিনি সাক্ষাত ভগবতী, তিনি কি তাঁর দৈব শক্তিতে মৃত্তিকা নির্মিত বিগ্রহে অবস্থান করতে পারেন না? আর যদি তিনি সেখানে অবস্থান করেন, সেটা কি মূর্তি না কি সাক্ষাত দেবী?

যারা মূর্তি পূজা করেন না,কিন্তু বেদ পাঠ করেন, বেদকে সম্মান করেন এবং পূজা করেন প্রকারান্তরে তো মূর্তি পূজা হলো ।বেদও পরমেশ্বরের বাঙ্ময়ী মূর্তি ।

উপাসনার জন্য যে দেব মন্দির স্থাপন করা হয় যার বিভিন্ন চূড়া থাকে সেটাও মূর্তি ।

সনাতন ধর্মে উপাসনার জন্য দুটো দিক নির্দিষ্ট আছে; পূর্বদিক ও উত্তর দিক ।কারণ পূর্বদিকে সূর্যদেব এবং পশ্চিমদিকে দেবালয় ।তাহলে নির্দিষ্ট দিকে দেবতারা আছেন বলেই তো সেইদিকে উপাসনা করা হয় নির্দিষ্ট লক্ষ্য রেখে ।

কেউ মূর্তি পূজা করুন না করুন অন্যের মতের বিরোধীতা কাম্য নয়।আমি আমার সংগ্রহের আলোকে কতটুকু বুঝাতে পেরেছি কি না জানি না,তবে আমার আলোচনা কারো কিছুটা উপকারে আসলে আমার লিখা সার্থক মনে করবো ।আসলে সনাতন ধর্মে প্রচারের অভাব বলেই প্রসার হচ্ছে না।সবাই এই বিষয়ে জ্ঞান দান করুন এবং খটকা নিরসন করার চেষ্টা করুন ।সনাতনের জয় হোক ।

Monday, December 14, 2020

সনাতন ধর্ম বিশ্বাস, বুকে পোষার ধন ,অন্তরে অনুভবের অনুষঙ্গ।এ ধর্মব্যবস্থা সর্বাধুনিক বলে সর্বজন স্বীকৃত।

 সনাতন ধর্ম বিশ্বাস, বুকে পোষার ধন ,অন্তরে অনুভবের অনুষঙ্গ।এ ধর্মব্যবস্থা সর্বাধুনিক বলে সর্বজন স্বীকৃত।তাই একে জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করে যুগপোযগি করা চলে না ,বা করতে হয় না।অজ্ঞতা মানুষকে লাটিমের মতো কিংবা কলুর বলদের মতো ঘুরায়-এগিয়ে দেয় না ।সনাতন ধর্ম ধারার অনুসারী বাঙ্গালীরা রক্তসঙ্কর জাত বলে বারংবার অভিযুক্ত হলেও অন্তরে তাঁরা তাদের মানস-স্বাতন্ত্র্য এবং স্বভাবের বৈশিষ্ট্য কখনো হারায়নি।প্রমাণে- অনুমানে অনেক জাতির রক্ত জ্ঞাত ও অজ্ঞাত সারে এদের ধমনিতে সঞ্চারিত হয়ে থাকলেও কোটি কোটি বছর ধরে যে বৈদিক শাস্ত্র,শাসন ও সংস্কৃতির ধারা তা তাদের অন্তরে আজও ফল্গুধারার ন্যায় বহমান।এ উপমহাদেশের মানুষ সর্বদা সনাতন সংস্কৃতি, শিক্ষা -ভিত্তিক আজন্ম সংস্কারকে ঐতিহ্যানুগ আদর্শ বলেই মানে ও শ্রদ্ধা করে থাকে ।এই আদর্শ গণমনে গভীর ও ব্যাপক স্থান দখল করে নিয়েছে। সনাতন স্থুলদেহ চর্চা ক্রমশঃ সূহ্ম মানস চর্চায় উন্নীত হয়েছে।

       ভারত উপমহাদেশের কিছুসংখ্যক ব্যক্তি লোভের মোহে রাতারাতি সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলবার সন্ধ্যানে বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের দ্বারে দ্বারে ঘুরে ফিরেছে কালো পিঁপড়ের মতো আবার   রাজার ধর্মই প্রজার ধর্ম ,এই অমানুষিক রীতি নীতি বিভিন্ন সময় জীবণ জীবিকার তাগিদে সনাতনি বাঙ্গালিদের বিভ্রান্ত করলেও মিশ্র রক্ত প্রসূত নব্য সংস্কার তাদের মূল বৈদিক ধারাকে কখনো নিঃস্প্রভো করতে পারেনি। বৈদিক আচার আচরণ সামাজ সংস্কৃতি নিয়ম নীতি প্রথা-পদ্ধতি বিশ্বাসের সবটাই আজও স্থিতিশীল রয়েছে বাঙ্গালীর মর্মমূলে। পরধর্মের ভয়াবহ প্রভাব মাঝে মধ্যে দেখা দিলেও এরা সজাগ সচেতন।মানবিক বোধে এদের চিত্তের প্রসার এবং রুচির বিকাশ ঘটেছিল ।দেশজ সংস্কৃতি, পবিত্র জলবায়ু ও ভৌগলিক মহিমা ভারত উপমহাদেশের মানুষ গুলোর চিত্তহরণ করে রাখে অজ্ঞাত সারে।


        বাঙ্গালী  বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কারণে বিদেশী ধর্ম গ্রণহণ করেছে বটে,কিন্তু কোন ধর্ম ব্যবস্থাই সে অবিকৃত রাখেনি।জৈন,বৌদ্ধ ও ইসলামকে সে নিজের পছন্দ মতো রুপ দিয়ে আপন করে নিয়েছে। নৈরাত্ম্য নিরীশ্বর বৌদ্ধধর্ম এখানে মন্ত্রযান , কালচক্রযান,বজ্রযান-সহজযানে বিকৃতি ও বিবর্তন পায়।বৌদ্ধ চৈত্য হয়ে ওঠে অসংখ্য দেবতা-অপদেবতার আখড়া।জৈনধর্ম পরিত্যক্ত হয়।ইসলাম ওয়াহাবি - ফারায়েজি আন্দোলনের আগে পীরপূজায় অবসিত হয়।ইতিহাস পর্যালোচনা করে মনীষিরা দেখেছেন ,ভারতীয় মুসলমান সূফিদের উপর বৈদান্তিক অদ্বৈততত্বের ও যৌগিক দেহতত্বের গভীর প্রভাব পড়েছিল।এবং চৈতন্যোত্তর যুগে অদ্বৈত তত্বের প্রভাব সর্বব্যাপী ও গাঢ়তর হয়েছিল , আজন্মের সংস্কার বশে তারা দেশ কালের প্রভাব এড়াতে পারেনি।আরও দেখা যায় ভারতীয় যোগানুগ মরমীয়া সাধন পদ্ধতিই এদেশীয় মুসলীম সমাজে বহুল প্রচলিত।বাউল সাধনাও মুসলিম সমাজে সমাদৃত হয়।

        অবশ্য সবধর্মই কালে কালে স্থানে স্থানে বিকৃত হয়, কিন্তু বৈদিক ধর্মের বিকৃতিতে সনাতনীদের স্বভাব ও মনন যত প্রকট,এমনটি অন্যত্র বিরল। সনাতনীরা সর্বকালে তাদের স্বাতন্ত্র্য রক্ষা করতে পেরেছে,কারণ  বৈদিক আদর্শে সংস্কৃতিতে তারা আস্থা ও আনুগত্য হারায়নি।যারা বেদাদি শাস্ত্রনিষ্ঠ কিছুতেই কখনো বিচলিত হয়নি।তার অন্যতম কারণ ভারত উপমহাদেশের অধিবাসীরা মুখে যে বুলি আওড়ায় না কেন ,আসলে তারা ঐতিহ্য প্রথা ও সনাতন সংস্কৃতিকে সর্বদা মান্য করে শ্রদ্ধা করে বলে আয়ুবর্ধক যোগাসন তার প্রিয়,শক্তি দায়ক তন্ত্র তার অতি প্রিয়। ভারত উপমহাদেশের লোকেরা সর্বদা অমরত্বকামী।তাদের কাছে ভবসমুদ্র পারি দিতে পুন্যকর্মই মন-পবনের নাও।আত্মকল্যাণ ও আত্মমোক্ষ লাভের জন্য তারা সদ্ গুরুর দীক্ষা কামনা করে।বৈষয়িক জীবণকে তুচ্ছ জেনে তাদের কাছে অভিনন্দিত হয়েছে সেই প্রাচীণ বৈদিক মুনি-ঋষি-যোগীদের দিকনির্দেশনা।সনাতন ধর্মাবলম্বীরা প্রাচীণ অথচ সর্বাধুনিক  সংস্কৃতির ধারক বাহক  ।এরা সাময়িক ভাবে বিচলিত হলেও বিনষ্ট হয় না,কখনো হবেও না।

মানব সেবা

 মানব সেবা

"""""""""""""""""""

-শ্রী পবিত্র কুমার চক্রবর্ত্তী

"""""""""""""""""""""""""""

মানুষ হইয়া জন্ম লইয়া

আসিয়া ভব মাঝে

নিজেরে নিয়া মগ্ন থাকা

কভু নাহি সাজে।


ঈশ্বর মানবে পাঠাল ভবে

করিতে জীব সেবা,

মানুষ মাঝে এমন মানুষ

শ্রেষ্ঠ আর কেবা।


মানুষ হইয়া যেবা করে

জীব কুলের সেবা

‌মানুষ হইয়া মানুষেরে

ভালবাসে যেবা।


মানুষ লাগিয়া হাসিয়া হাসিয়া

করিলে জীবন দান,

ইতিহাসে তাহার নাম ভবে

থাকিবে  অম্লান।


হিংসা নিন্দা পরচর্চ্চা

লুন্ঠন অপরাধ,

অন্যের ধন চুরি করা

যার বড় সাধ।


সর্ব জাতি ঘৃনা করে

সেই মানুষেরে

তার কোন নাই সম্মান

অবনীর উপরে।


ধর্ম ধর্ম করে কেন

ধরেছ সাধু সাজ,

করিলে কেবল পরের ক্ষতি

ত্যাগ করিয়া লাজ।


কিবা হবে এসব করে

হবেকি লাভবান

পাবেকি কভু এই জগতে

মানুষের সম্মান?


মানুষ হইয়া মানুষেরে

ভালনা ভাসিলে ভবে

পরকালে শুকর হইয়া

 জনম লভিবে।


জনম নিবে নীচু কুলে

গ্লানি ভরা মনে,

বেঁচে থাকবে এই ভবে

 নিন্দার সনে।


সময় থাকিতে কর সেবা

মানবের লাগিয়া

মরিয়াও অমর হইবে

দেখনারে ভাবিয়া।


পরজন্মে ব্রাহ্মণ কিবা

জন্মিবে রাজ কুলে

বিচার করেন ঈশ্বর বিধাতা

যিনি আছেন মূলে।

Sunday, December 13, 2020

জাতির পিতা শেখ মুজিব রহমানের বিজয়ের মাস ১৬ই ডিসেম্বর,

  বিজয় মাস,

"""""""""""""""

-শ্রী পবিত্র কুমার চক্রবর্ত্তী

******************************

শোষণ শাসন অত্যাচার মানুষের উপরে,

করেছিল হানাদার দলে রাত্র দিন ধরে।

শত্রুরা সবে ঝাপিয়ে পড়ল প্রতি ঘরে ঘরে

কেড়ে নিল মা বোনের সম্মান বিবস্ত্র করে

রক্ত গঙ্গা বইয়ে দিল নিষ্ঠুর হানাদার দল

রক্তে রাঙা হল সেদিন পদ্মা মেঘনার জল

দুঃখ কষ্ট সইতে না পেরে বাংলার জনতা

জাগত্র হল সকলে মিলে হয়ে একাগ্রতা

প্রজার মনে শান্তি দিতে বাংলার কান্ডারি

যুদ্ধ ঘোষনা করে দিলেন ন্যায়ের দন্ড ধরি

জাতির পিতা শেখ মুজিব দেখাল মমতা

শত্রু বধে ঝাপিয়ে পড় দিলেন সর্ব ক্ষমতা

যার যাহা আছে অস্ত্র লও সবাই হাতে

প্রতিঘাত্ কর সবাই মিলে শত্রুর আঘাতে

ছিনিয়ে নাও শত্রুর জীবন দিলেন ঘোষনা

সাথে সাথে ঝাঁপিয়ে পড়ে সব মুক্তি সেনা

হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খৃষ্টান সকলে মিলে

যুদ্ধ শুরু করে দিল মাট ঘাট আর বিলে

রক্ত ক্ষয়ি যুদ্ধ করল বাংলার মুক্তি সেনা

মা বোনের ইজ্জত্ দিয়ে রক্ত দিয়ে কেনা

শত্রুরা সবে নিপাত্ গেল মুক্তি পেল মান

মা বোনেরা সম্মান পেল গর্বে গরিয়ান

বিজয় হল সোনার বাংলা ষোল ডিসেম্বরে

জয় বাংলা ধ্বনীত হল প্রতিটি ঘরে ঘরে

আউল বাউল মুখে মুখে কবির কন্ঠ স্বরে

গাইল সবাই মুখে মুখে আমরা অভিলাসি

হে সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি

ঘরে ঘরে উড়ছে সবার বিজয়ের পতাকা

যেখায় আছে সোনার বাংলার সোনার ছবি আঁকা।

              

ধর্ম ও মত বলিতে কি বুঝায়?

 গুরুর পাঠশালা

****************

"ধর্ম ও মত "

*************

       -পবিত্র কুমার চক্রবর্ত্তী

*************************

       *** আজকের আলোচ্য বিষয়-

"ধর্ম ও মত বলিতে কি বুঝায়"---

---------------------------------------------------

প্রিয় সুধী,

          সাধারন মানুষের প্রশ্ন-- এত মত পথের মধ্যে মানুষ আজ দিশেহারা।কি করিয়া মানুষ মুক্তি লাভ করিবে সেই কথা বুঝিয়ে বলুন।

      তাই আজ সাধারন মানুষের দ্বিধাদন্দ মোচনের লক্ষেই আমার আজকের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস ব্যাক্ত করিতেছি।

--+-++---------++++----------++++----------

      বিশ্লেষনঃ-" ধর্ম ও মত"

               *********

     ১। প্রশ্নঃ-ধর্ম কি এবং কাহাকে বলে?

      উত্তরঃ-ধর্ম কি-

   প্রথমে "ধর্ম" - শব্দটি অর্থ জানব-

"""""""""""""""""""""""""""""""

 ঈশ্বরোপসনার পদ্ধতি;  আচার আচরন ও পরকালের বিষয়ে নির্দ্দেশ ও তত্ত্ব জ্ঞান: পুণ্যকর্ম বা সত্যকর্ম; প্রবনতা; ভিরুতা; বিশ্বাস;  স্বধর্ম বজায় রাখা;  ধর্মে বিশ্বাস; সদাচার; মানবের ধর্ম- সদাচার,কর্তব্য ও অকর্তব্য; সুনীতি ও আচরন বিধি; জীব বা বস্তুর নিজস্ব গুন বা ধর্ম; পশুর ধর্ম 

   ইত্যাদি ইত্যাদি ।


  প্রশ্নঃ-ধর্ম কাহাকে বলে?

  উত্তরঃ-"ধর্ম- ঈশ্বরের ইচ্ছায় সৃষ্টির প্রারম্ভে প্রকৃতি যে গুন লাভ করে ,তাহাই ধর্ম।


    প্রিয় সুধী, 

            উপরের শব্দার্থ ও সজ্ঞা দ্বারা আমরা বুঝিতে পারিলাম যে, ধর্ম হচ্ছে প্রকৃতির গুণ।যাহা সর্ব জীব বা পদার্থ সৃষ্টি লগ্নেই ঈশ্বর হইতে লাভ করিয়া থাকে।যাহা মানুষ কোন মতেই সৃষ্টি করিতে পারেন না।কারন তাহা ঈশ্বর কর্তৃক সৃষ্টি হইয়া থাকে।শ্রী বেদও ঈশ্বরের মুখশ্রীত বানী।

     সুতরাং এই ধর্মই- সত্য, সঠিক ও সনাতন। যার দ্বারাই জীব মুক্তি লাভ করিয়া থাকে বা করিবে। কারন প্রকৃতি জাত ধর্মের কোন প্রকার ত্রুটি থাকিতে পারে না।কারন তাহা ঈশ্বর প্রদত্ত । তাই এই পথই অর্থাৎ ঈশ্বর দ্বারা সৃষ্ট পথই মানবের জন্য শ্রেষ্ঠ পথ।ইহাতে দ্বিমতের আর কিছুই নাই।

     শ্রী বেদ  অপৌরষের, নিত্য ,সত্য ও সনাতন । এই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবার পরেও বেদজ্ঞান অক্ষয় থাকিবে। তাই শ্রী ভগবান বলিয়াছে- 

    'বেদজ্ঞানই আমার মত,তাহা কখনোই বিলিন হবেনা বা হইতে পারেনাঊ। আর যে মত মানব কর্তৃক সৃষ্টি হইয়াছে তাহা অচিরেই ধ্বংস হইয়া যাইবে।"

            -শ্রী ভগবান উবাচ


   প্রিয়সুধী, এবার সকলের বিবেকের কাছেই ভাল ও মন্দ বিচারিক ও সিদ্ধান্তের ভার দিয়া দিলাম।

      

 ২।প্রশ্নঃ-" মত"কি এবং কাহাকে বলে?

   উত্তরঃ- প্রথমে  " মত"- শব্দটি অর্থ জেনে নেই-


মত

"""""

 মানুষের মনের ভাব;  অভিমত;  সম্মতি;  সিদ্ধান্ত;

ধারা;  পদ্ধতি;  বিধি;  নিয়ম;  প্রণালী; বিরোধ;   পারস্পরিক আলোচনা।


    প্রশ্নঃ- মত কাহাকে বলে?

    উত্তরঃ- মানুষের চিন্তা বা মননশিলতার মাধ্যমে  যাহা করা হয় তাহাকে "মত" বলে।      অর্থাৎ‌ , মানুষ নিজের মননশীল চিন্তা চেতনার মাধ্যমে যে অভিমত ব্যাক্ত করিয়া থাকেন ,তাহাকেই‌  "মত" বলে।

        সুতরাং, আমরা এই শব্দার্থ ও সজ্ঞা দ্বারা বুঝিতে পারিলাম যে, মতামত শুধুই মানব কর্তৃক সৃষ্টি । যাহার মধ্যে ভগবানকে সম্পৃক্ত করা হয় নি। এতে কাম্যতা রহিয়াছে। সুতরাং মানবের মতামতে  মুক্তির সম্ভাবনা নাই। কারন তাহাতে রজঃগুন ও তমঃগুনে পরিপুর্ন রহিয়াছে। তাই তাহা বর্জনীয়।

      প্রিয় সুধি,এইবার বিচারের ভার আপনাদের।তার পরেও আমি এই টুকুই বলিব যে,সংসারে থাকিয়া স্ত্রী পুত্র স্বামী পরিজন নিয়া নিরবিঘ্নে থাকিয়া নিয়মের মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রিতির উদ্দেশ্যে ভগবত ভক্তির মাধ্যমে ঈশ্বরের সেবা করে যাওয়াই সব চেয়ে উত্তম । যে হেতু স্বামীও স্ত্রী এই দুইয়ের সমন্বয়েই এই সংসার, তাই বৈদিক শান্তিই শ্রেষ্ঠ শান্তি এই চিন্তা করিয়া বিধি সম্মত সৃষ্টিকে বর্দ্ধিত করাই সবচাইতে উত্তম ।


    পৃথিবীতে প্রায় ৪২০০টির বেশি" মত" রহিয়াছে।

   সঙ্গত কারনেই মত গুলোর নাম উল্লেখ্য করা হইল না।

    কি লাভ হইল এত মতামত তৈরী করিয়া,কেউ এমন গেরান্টি দিতে পারিয়াছে যে,আমার মতামত দ্বারা ঈশ্বর লাভ হইয়াছে?

   কিছুই লাভ হয়নি, বরং  লাভ হয়েছে এই টুকুই যে, যতই নিজেকে  মহাপুরুষ তৈরী করুন কেন,তার মতের দ্বারা শুধু সনাতন ধর্ম বিভক্তই হইয়াছে, জোড়া আর দিতে পারেননি। সৃষ্টি হইয়াছে হিংসার,অকল্যান হইয়াছে সাধারন মানবের। কর্মে দোষ থাকবেই। ধর্ম বিষয়ে বাড়াবারি করিয়া জন্ম হার কমিয়া গিয়াছ কিন্তু বৃদ্ধি ঘটাতে পারেনি।শ্রীভগবান কর্মে দোষ থাকার কথা বলিয়াছে কিন্তু কর্মকেতো বাদ দেবার কথা বলেননি।

   তাহা হইলে দোষ  কোথায়? আসল দোষ আমাদের মনে, আমাদের চিন্তা চেতনায়। সেটা হচ্ছে -আধিপত্ত বিস্তারের কৌশল। যাহা সনাতন ধর্মকে কালে কালে করিয়াছে আঘাত প্রাপ্ত।আর দোষ দেওয়া হয়েছে ক্ষমতাহীন ব্রাহ্মণদের, দোষ দেওয়া হয়েছে শ্রুতি ও স্মৃতি শাস্ত্রের । যাহা কোন দিনই সনাতন ধর্মের মানুষ আশা করেননি।

   

  প্রশ্নঃ মানবের ধর্ম কি?

‌‌উত্তরঃ- 

            ১। কর্তব্য ও অকর্তব্য সমন্ধে জ্ঞান;

            ২।সদাচার;

            ৩।সুনীতি;

             ৪।আচরন বিধি।

     মানুষের সজ্ঞা- যে ব্যাক্তির মধ্যে- কর্তব্য ও অকর্তব্য সমন্ধে জ্ঞান থাকে,থাকে সদাচার,থাকে সুনীতি ও ভাল আচরন বিধি তাহাকেই মানুষ বলিয়া থাকে।


 বিঃদ্রঃ- অবশ্যই মানুষের মধ্যে এই চারটি গুন থাকিতে হইবে। আর না হয় সেতো মানুষই নয়।

      অর্থাৎ মানুষ যখন প্রবল তমঃ গুনের প্রভাবের মোহে পরিয়া বেদ ও স্মৃতি শাস্ত্রকে ব্যাতিরেখে বা ভুলিয়া নিজের বিভিন্ন মতামত সৃষ্টি করেন বা করিতে চাহেন, সেটাই আসুরিক ভাব বা আসুরিক কর্ম।

      সুতরাং সেই ব্যাক্তির সকল কর্মই আসুরিক কর্ম ।শ্রী ভগবান আসুরিক কর্মকে বর্জন কতিবার কথাই বলিয়াছে গীতাতে। তাহাতে মুক্তিতো সেটা স্বপ্নের কথা,বর্ং চুরাশী লক্ষ নরক কুন্ড পুনঃরায় পরিভ্রমন করিতে হইবে ,এতে আর সন্দেহের কিছুই নাই। 

      প্রিয় সুধী, কালে কালে কিছু কিছু মানুষ বিভিন্ন মতামত তৈরী করিয়া শুধু সনাতনকে বিভক্তই করেননি , কলঙ্ক লেপন করিয়াছেন পবিত্র সনাতন ধর্মের সর্ব অঙ্গে। 

    তাই আজ এই দ্বিধাদন্দের সন্ধি লগ্নে কিছু মানুষের অনুরোধে সামান্য ও সল্প পরিসরে  ধর্ম ও মতের উপর তত্ত্ব বিশ্লেষনঃ উপস্থাপন করিতে চেষ্টা করিলাম। তার সমস্ত বিচারিক ভারই আপনাদের উপর। আমি মনেকরি, যে যেমন কর্ম করিবে সে পরবর্তি জন্মে তেমন কর্মফলই ভোগ করিবে ইহা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।

       পরিশেষে সকলের মঙ্গল ও সুসাস্থ কামনা করিয়া আমার ভুলে সমৃদ্ধ জীবনের নিরীখে "ধর্ম‌ ও মত" বিষয়ের উপর ক্ষুদ্র লেখার এখানেই ইতি টানছি।


       ওঁতৎসৎ: জয় শ্রী পবিত্র বেদ,জয় পবিত্র সনতনের জয়,জয় শ্রী বিষ্ণুদেব । 

                """"""""""""""""""""""

Saturday, December 12, 2020

স্রষ্টা ও সৃষ্টির মূল তত্ত্ব

 স্রষ্টা ও সৃষ্টি

**************

-শ্রী পবিত্র কুমার চক্রবর্ত্তী

***********************

স্রষ্টা কি?

উত্তরঃ- যিনি সৃষ্টি করেন।


সৃষ্টি কি?

উত্তরঃ স্রষ্টা যাহা সৃষ্টি করেছেন।


শ্রীবেদ কি?

উত্তরঃ ঈশ্বরের নির্দ্দেশ বা ঈশ্বরের মুখশ্রীত বানী ।


পুরাণ কি?

উত্তরঃ শ্রীবেদের বিস্তারিত আলোচনা।


স্মৃতি কি?

সনাতন ধর্মের মানুষের কল্যানে ও সঠিক পথে পরিচালনার জন্য শ্রীবেদ বা পুরাণ থেকে উদ্ধৃত বিধি বিধান বা বাধ্য বাধকতা সমূহ।


ব্যাসদেব কে?

     উত্তরঃ যিনি এই সকল শাস্ত্র সমূহ সম্পাদনা করেছেন, তিনিই হলেন এক মাত্র সম্পাদক এই ব্যাসদেব। তিনি ব্যাতিত আর কোন সম্পাদক পৃথিবীতে নাই এবং আর কেহ আসিবেও না।তাই এই বিধি বিধানই  চলবে অনন্ত কাল পর্যন্ত।


    যাহারা মোহ বশে এই সকল পবিত্র শাস্ত্র সমূহকে বা শাস্ত্রের বিধি বিধানকে পরিবর্তন করিতে চায় বা করে বা অবমাননা করে বা করিতে চায়, বুঝিতে হইবে যে, তাহার হয় আধা পাগল আর না হয় আসুরিক মনোবৃত্তির ব্যাক্তি।এদেরকে এড়িয়ে চলাই উত্তম ।


    যাহারা মোহবশে সাধারন মানুষকে অসত্য ব্যখ্যা দিয়ে বিভ্রান্ত করিতেছেন,এদের কাছ থেকে শত মাইল দূরে থাকাই উত্তম।

কেহ হয়তো বলবে এত নিষ্ঠুর কথা কেন বললাম? বললাম এই জন্যই যে,শ্রী ভগবান নিজেই বলেছেন যে- যে ব্যাক্তি আমার কথার দোষ ধরে, যে আমার আদেশ উপদেশকে ভালবাসেনা ,তাহাকে আমার শাস্ত্র বলিবে না। 

   এই জন্যই এই কথা বলা  হইল।


     আমরা যদি ভগবানের মুখশ্রীত বানীকেই নিজের বা পৈত্রিক সম্পত্তি বলে মনে করে থাকি,তবে আর ঈশ্বরকে ডাকার প্রহসণ কেন? এই সকল শাস্ত্র নিয়ে নাড়াচারা কেন? পারলে নিজের মত করে ভিন্ন  কিছু করি না কেন?


    বাবা লোকনাথ ৫০ বছর হিমালয়ে কঠিন সাধনা করেছেন। তার পরবর্তীতে বাবা লোকনাথকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন- আমিতো ঈশ্বরকে দেখিনি,তবে তাঁর মহিমাকে উপলব্ধি করতে পেরেছি যে,ঈশ্বরকে লাভ করা অত সহজ সাধ্য ব্যাপার নয়।


    তাহলে যাহারা এখন ধর্ম ধর্ম করে উদাসিন হয়ে যাচ্ছেন তাহারা?

     উত্তরঃ পথভ্রষ্ট তাহারা।


    তাহলে আমাদের উপায়?

উপায় একটাই। তাহা হল- এই কঠিন জড় জগতে বেঁচে থাকার জন্য সৎপথে থেকে সংসারে কর্মও করতে হবে এবং শাস্ত্রের নির্দ্দেশ অনুযায়ী যথা সাধ্য যজ্ঞাদি কর্ম করতে হবে এবং গুরুদেবের আশ্রিত হয়ে পথ চলিতে হবে।


   সর্বশেষে একটাই কথা, যদি আমরা স্রষ্টাকে বিশ্বাস করি, স্রষ্টাকে ভালবাসি-তবে তাঁর সৃষ্টিকেও আমাদেরকে ভালবাসতে হবে ,বিশ্বাস করতে হবে।

  তবেই এই দুঃখ সংসার হইতে আমরা পাব স্বর্গ বা চিরমুক্তি পথ!


    হে মহামতি,ভুলত্রুটি মার্জনা করিবেন!

             জয় রাধে, জয় ব্রহ্মবাদ

Wednesday, December 9, 2020

শাঁখা ও নোয়া,

 শাঁখা ও নোয়া

****************

শ্রী পবিত্র কুমার চক্রবর্তী

************************  

  মঙ্গল চিহ্ন,

প্রভুর চরণ করিয়া স্মরণ

অধমে মিনতি জানাই,

তোমার চরণ সেবিয়া যেনগো

মরণে স্মরণ পাই।


কিবা লিখিব কলম ধরিব

তাহার সাধ্য নাই

প্রভু যদি করেগো কৃপা

তবেতো শক্তি পাই।


শাঁখা আর নোয়ার কথা

বলিব বিস্তারি আজ

ধর্মের কল্যানে করেন বিধি

এমন গুরু কাজ।


শঙ্খাসুর নামেতে অসুর

ছিল মর্ত ধামে

স্ত্রীরূপে ধরিয়া রাখিল তিনি

তুলসীরে বামে।


শঙ্খাসুরে পাইয়া তুলসী

অনন্দে ভরা মন

স্বামীর চরণ ভজে যতনে

দিয়া দেহ মন।


শঙ্খা সুরের অত্যাচার

দেখিয়া দয়াল হরি

বধিবে তাহারে ভাবিল মনেতে

ভাসাতে ধর্মের তরী।


সতী নারীর পতি কভু

মরেনা কোন ক্ষণে

এই বিষয়ে চিন্তিল তিনি

প্রভু নারায়ণে।


ভক্তের বাসনা পূর্ণের লাগিয়া

প্রভু জনার্দন

সতীত্ব করিল ম্লান প্রভু

উদ্ধারে সাধুজন।


নারায়ণ আর শঙ্খ অসুরে

বাঁধিল মহারণ

চক্র দিয়া শঙ্খের দেহ

করিল আক্রমন।


শঙ্খের অস্থি খুলে খুলে

পড়িল সাগর মাঝে

সেই অস্থিতে শঙ্খের জন্ম

আছে পুরাণ মাঝে ।


স্বামীর মৃত্যুতে নারায়ণে 

দিলেন অভিশাপ

তোমার পূজা করিবেনা 

মর্ত্তে নারীজাত।


তোমার শরীরে কলঙ্ক চিহ্ন

দিয়ে গেলাম আমি

অন্যায় ভাবে মেরেছ প্রভু

রণে আমার স্বামী।


প্রভু বলে শোনগো ধনি

তোমায় বর দিলাম

নারী সবে পড়িবে হস্তেতে

শঙ্খবালা নাম।


দোষের লাগিয়া নারী কভু

শাঁখ বাজাবে না

শাঁখ বাজালে অধঃগতি

শাস্ত্রে তাই মানা।


স্বাত্বিক গুণেতে  নারীগণ

শাঁখা রাখিবে হাতে

স্বামীর আয়ু বৃদ্ধি তার

জেন হবে তাতে ।


লোহার আরেক নাম নোয়া

ডাকে জ্ঞানিজনে

ত্বম গুণের প্রতীক তাহা

জানিবেন মনে।


এই কারণে শাঁখা নোয়া

সধবা নারীর ভূষণ

নোয়া শাঁখা পড়ে নারী

করিয়া অনেক যতন।


সংক্ষেপেতে শাঁখা নোয়ার

তত্ত্ব দিলাম ইতি

গাহিলাম তুলসী বাখান

মধুরস গীতি।


অধম পবিত্র রচিলাম

শাঁখা নোয়া তত্ত্ব 

শাস্ত্রের মাঝে ব্যাসদেব

লিখলো যাহা সত্য।   

ব্রাহ্মণ জাতি সর্ব্বদাই পূজনীয়।

ব্রাহ্মণ জাতি সর্ব্বদাই পূজনীয়। তা ভাগবত আদি সকলপুরাণশাস্ত্রে বর্ণনা করেছেন।
কলিকালের আগাম ভবিষ্য বর্ণনা করে যে শাস্ত্র বলাহল তা কল্কিপুরাণ সেখানে ও আমরা পাই যে--
তস্মাদিমে ব্রাহ্মণজাস্তৈঃ পুষ্টাস্ত্রিজগজ্জনাঃ।
জগন্তি মে শরীরাণি তংপোষে ব্রাহ্মণো বরঃ।।
তেনাহং তান্ নমস্যামি শুদ্ধসত্ত্বগুণাশ্রয়ঃ।
ততো জগন্ময়ং পূর্ণং মাং সেবন্তেহখিলাশ্রয়াঃ।। কল্কিপুরাণ প্রথমাংশের ৪/১১,১২
দ্বিজাতি দ্বারাই বেদ প্রকাশ প্রাপ্ত হয়,ঐ বেদ হইতে সংসার সর্ব্ব লোক সুরক্ষিত হইয়াছে।নিখিল লোকই আমার দেহ,সুতরাং আমার দেহপোষণ বিষয়ে দ্বিজাতিই প্রধান সাধন স্বরুপ।এই জন্যই আমিপবিত্র সত্ত্বগুণাশ্রয় হইয়া সেই সকল ব্রাহ্মণকে প্রণাম করি,সকলের আশ্রয় স্বরুপ দ্বিজাতিগণও আমাকে পূর্ণজগন্ময় জ্ঞানে সেবা করেন।।

ভগবান কল্কি আর বললেন যে
ভূদেবা ব্রাহ্মণা রাজন্! পূজ্যা বন্দ্যাঃসুদুক্তিভিঃ।
চতুরাশ্রম্যকুশল মম ধর্ম্ম প্রবর্ত্তকাঃ।।
বালাশ্চাপি জ্ঞানবৃদ্ধাস্তপোবৃদ্ধা মম প্রিয়াঃ।
তেষাং বচঃ পালয়িতুম্ অবতারাঃ কৃতা ময়া।।প্রথমাংশের৪/২৩,২৪
বিপ্রগণ ভূদেব বলিয়া পরিগণিত,সুতরাং তাঁহাদিগের অর্চনা করা ও সৎকথা দ্বারা তাঁহাদিগের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা বিধেয়।তাঁহারা গার্হস্থ্যাদি সকল আশ্রমে অবস্থান পূর্ব্বক আমার ধর্ম্ম প্রচার করিয়া থাকেন।বিপ্রগণের মধ্যে যাঁহারা বালক,তাঁহারাও জ্ঞানবৃদ্ধ,তপোবৃদ্ধ ও মৎপ্রিয় সন্দেহ নাই।তাঁহাদের মুখবিনিঃসৃত বাণী সফল করিবার জন্যই আমি মর্ত্ত্যে আগমন করিয়া থাকি।
ভগবানে এই অপার করুণা আমি নত মস্থকে শ্মরণ করি।হরে কৃষ্ণ।।

Tuesday, December 8, 2020

সত্যকাম জাবালা ব্রাহ্মণ হলো কি করে?

সত্যকাম জাবালা, 
সে যুগে যুবকেরা ব্রহ্মচর্য নিয়ে বেদাধ্যায়ন করতো। সত্যকাম জাবাল একদিন মাকে বললো সেও গুরুকুলে যাবে এবং মাকে তার পরিচয় দেওয়ার জন্য গোত্র কি জানতেে চাইলো। আগে নামের শেষে গোত্র লিখে পরিচয় দেওয়ার রীতি ছিল। সত্যকাম যেহেতু পিতৃ পরিচয় জানতো না তাই মাকে গোত্রের কথা জিজ্ঞাসা করে।
মাতা জাবালা বললেন, "পুত্র তোমার গোত্র আমি জানি না। আমি বহু লোকের পরিচর্যা করে এবং বহু লোকের সঙ্গে বাস করে তোমাকে পেয়েছি। এজন্য তুমি কার দ্বারা জাত হয়েছ তা আমি সঠিক ভাবে জানি না, সেজন্য তোমার গোত্র কি বলতে পারব না। তোমার পরিচয় জানতে চাইলে তুমি বলবে আমি 'সত্যকাম জাবালা'।" সে গৌতম মুনির কাছে গিয়ে বললো,"আমি আপনার কাছে ব্রহ্মচর্যবাস করবো, এজন্য এসেছি।" প্রথা অনুযায়ী গৌতম তার গোত্র জিজ্ঞেস করলেন। সত্যকাম ও মায়ের কথামত জানালেন তিনি নিজের গোত্র জানেন না, তবে তার নাম সত্যকাম জাবাল। এই বলে মা যা বলেছিলেন সবই অকপটে বললেন।
গৌতম মুনি বললেন কোন অব্রাহ্মণ এরকম বাস্তব সত্য বলতে পারে না। এজন্য তেজের দরকার। ব্রাহ্মণ বলেই সত্যকাম এরূপ সত্য বলেছে। তাই গুরু গৌতম সত্যকামকে ব্রহ্মচর্য দিতে সম্মত হয়ে তাকে যজ্ঞের কাঠ আনতে বললেন এবং জানালেন যে তিনি সত্যকামের উপনয়ন দিবেন কেননা সে সত্য হতে বিচ্যুত হয়নি এবং তৎকালে বেদাধ্যয়নের আগে উপনয়নের প্রথা ছিল। উপনয়নের পর সত্যকাম ব্রহ্মচর্য শিক্ষা করতে লাগলেন।

সনাতন ধর্মে ঈশ্বরের সাকার রূপ অস্বীকারের উপায় নেইঃ

সনাতন ধর্মে ঈশ্বরের সাকার রূপ অস্বীকারের উপায় নেইঃ
সনাতন ধর্মের কিছু কিছু লোক বেদ ও গীতা মানেন; কিন্তু  ঈশ্বরের সাকার রূপ বিশ্বাস করতে চান না ।তা স্ববিরোধী হয়ে গেল না? গীতা হলো ভগবানের বাণী ।ভগবানের বাণী অস্বীকার করা কি সনাতনী দাবি করে সাজে? মোটেই না ।পবিত্র গীতায় ভগবান নিজে বলেছেন, " যখনই ধর্মের পতন ও অধর্মের উত্থান হয়,তখনই আমি নিজেকে সৃষ্টি করি অর্থাৎ দেহ ধারণ করে অবতীর্ণ হই( ৪|৭)।" আবার বলা হয়েছে, " সাধুগণের রক্ষার জন্য, দুষ্টগণের বিনাশের জন্য এবং ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য আমি যুগে যুগে অবতীর্ণ হই (৪|৮)।" এই শ্লোকগুলো ভগবানের নিজের শ্রীমুখের বাণী ।তাৎপর্য হলো, ভগবানের অবতারের উদ্দেশ্য হলো তিনটি; ১. সাধুগণের রক্ষা ২. দুষ্টগণের বিনাশ ৩.ধর্ম সংস্থাপন ।এই তিনটি উদ্দেশ্য নিয়ে ভগবান মায়া প্রভাবে সৃষ্টি করেন।যে দেহ তিনি গ্রহণ করেন তা কর্মফল জনিত ভোগ দেহ নয়,তা মায়িক দেহ,দিব্য দেহ বা লীলা দেহ।তিনি জন্ম রহিত, তবু কি করে জন্ম হয় এ প্রশ্ন উঠে না,কারণ 'মায়া অঘটনঘটনপটিয়সী' ।
অবতার আসলে মায়া মনুষ্য ।ঈশ্বরের দেহধারণ এবং দেহত্যাগ তা সাধারণ মানুষের মতো নয়।কাজেই, ঈশ্বরের সাকার রূপ অস্বীকার করার অবকাশ নেই ।বেদ ও গীতা সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন তুলে না বলে আমার বিশ্বাস ।গীতা ভগবানের বাণী হওয়া সত্ত্বেও প্রশ্ন তুললে মানুষ বেদ নিয়েও প্রশ্ন তুলবে? যারা শুধু শুধু বেদ বেদ বলে চিৎকার করেন,অন্য ধর্মগ্রন্থ মানেন না  তাদেরকে প্রশ্ন করি বেদ কার বাণী? হয়তো বলবেন বেদ ঈশ্বরের বাণী সবাই জানে, আপনি পণ্ডিত হয়ে জানেন না বুঝেন না।আপনারা বলেন ভগবানের বাণী হওয়া সত্ত্বেও ভগবান কত জায়গায় বা  মন্ত্রে নিজে বলেছেন ? অর্থাৎ কত জায়গায় ভগবানের সরাসরি বাণী আছে ? আমার জানামতে, বেশির ভাগ মন্ত্রে মুনিঋষিগণের প্রার্থনা আছে, ভগবান নিজে বলেননি ।তাহলে গীতায় ভগবানের সরাসরি বাণী মানেন না,পরোক্ষভাবে ভগবানের নির্দেশ মানবেন কীভাবে?বেদ যে ভগবানের বাণী তা ব্যাখ্যা দিতে কেউ না পারলে আমি ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করবো ।আমি বেদ ও গীতা কেন, স্মৃতি ও পুরাণ বিশ্বাস করি।তবে স্মৃতি ও পুরাণের কিছু কিছু শ্লোক বিষয়ে আমার নিজের ও খটকা লাগে ।গীতা, স্মৃতি ও পুরাণ যারা মানেন তাদের কাছে আমার  প্রশ্ন নয়,যারা এগুলো মানেন না  এবং শুধু নিরাকারবাদী তাদের কাছে আমার প্রশ্ন ।কেউ প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলে আমাকে অশালীন ভাষায় আঘাত করবেন না,আমি নিজের উত্তর নিজেই খুঁজে নেব।তবে অনেক প্রশ্ন করে দেখেছি, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্টরা নীরব থাকেন।কেন থাকেন  তা আমার জানা নেই ।আশা করি, পুরো বেদ যে ভগবানের বাণী সে বিষয়ে যথার্থ ব্যাখ্যা পাব।
পরিশেষে বলি, পবিত্র ধর্ম ও ধর্মগ্রন্থ বিষয়ে সনাতনী হিসেবে অস্বীকার করার উপায় নেই ।মনের পূর্ণ সন্তুষ্টির জন্য ফেইসবুক বন্ধুদের কাছে শেয়ার করা।ভুল ভ্রান্তির জন্য পরমেশ্বরের নিকট নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থী ।

বিবেকই হলো সর্বোচ্চ আদালত ও বিচারকঃ

বিবেকই হলো সর্বোচ্চ আদালত ও বিচারকঃ

সমস্যায় পড়লে বা বিপদে পড়লে মানুষ অন্য মানুষের পরামর্শ নেয়।অন্যের পরামর্শ নেয়া দোষের নয়।তবে তা যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ।মানুষ বিভিন্ন চরিত্রের থাকে ।বিপদের সময়  পরামর্শ নিতে যেয়ে প্রকৃত মানুষ চেনা যায় ।কেউ স্বভাবতই ভালো মানুষ ।ভালো মানুষ জ্ঞান বশতঃ খারাপ পরামর্শ দিতে পারেন না; কিন্তু অনেক সময় আবেগ বশতঃ ভুল সিদ্ধান্ত দিতে পারেন ।একজন মানুষের মধ্যে সুমন্ত্রী ও কুমন্ত্রী থাকে।খারাপ লোক কুমন্ত্রীর প্ররোচনায় খারাপ পরামর্শ দিয়ে থাকে ।
আমার এক বিপদের সময় একজন বিজ্ঞ লোকের পরামর্শ নিতে যাই।তিনি আমাকে যে পরামর্শ দেন তা মনঃপূত হয়নি ।তিনি বিপদে হাল ছেড়ে দিতে বলেন ।আমি তার কথায় হাল ছেড়ে দেইনি ।পরে পরমেশ্বরের কৃপায় কৃতকার্য হয়েছি।অবশ্য তিনি আমাকে পরবর্তীতে আমার প্রচেষ্টার জন্য ধন্যবাদ জানান ।

কাজেই, বিপদের সময় ধৈর্য ধরে নিজ বুদ্ধি ও বিবেক খাটিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ।বিবেকই হলো সর্বোচ্চ আদালত ও সর্বোচ্চ বিচারক ।বুদ্ধি হলো বিজ্ঞ আইনজীবীর মতো ।বুদ্ধির মধ্যেও সুবুদ্ধি ও কুবুদ্ধি আছে ।উভয় বুদ্ধির সাবমিশন ও যুক্তি তর্ক শুনে বিবেক নামক সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে মন্থন করে  মাখন উত্তোলন করতে হবে ।আসলে অন্যের পরামর্শকে যাচাই বাছাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ।আমি দ্বিতীয় বারের মতো  সমস্যায় পড়ে ঐ বিজ্ঞ জনের কাছে যাই ।আমি উনার পরামর্শ যাচাই বাছাই করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার অপেক্ষায় আছি ।
অবশ্য আমার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো যাচাই বাছাই করা ।আমার স্পষ্টভাষী স্বভাবের কারণে আমাকে সবাই বুঝতে পারে না।
আমার অভিজ্ঞতার আলোকে বুঝতে পেরেছি যে,বিপদ সময় কেউ সুপরামর্শ, আবার কেউ কুপরামর্শ দেয়।তবে সুবিধা হলো তাদের মন মানসিকতা বুঝা যায় ।তবে বিভিন্ন লোকের পরামর্শ উভয় পক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীর যুক্তি তর্কের মতো কাজ করে ।

যাহোক পরিশেষে বলি, নিজের বিবেকপ্রসূত সিদ্ধান্তই হলো উত্তম সিদ্ধান্ত ।কারণ বিবেকই হলো সর্বোচ্চ আদালত ও বিচারক।তাই, অন্যের পরামর্শ যাচাই বাছাই করে নিজে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।তবে বিপদের সময় বা সমস্যা কালীন বিজ্ঞ জনের পরামর্শ নেয়া উচিত ।তা নিজের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে সহায়ক ।

Monday, December 7, 2020

নিরাকার ঈশ্বরের মাঝে মাঝেও সাকারের প্রকাশঃ

 নিরাকার ঈশ্বরের মাঝে মাঝেও সাকারের প্রকাশঃ 

নিরাকার ঈশ্বরের বর্ণনা দিতে যেয়ে ভক্তগণ পবিত্র গীতার ৯|৪নং শ্লোকের উদ্ধৃতি দিয়ে থাকেন ।এ শ্লোকের মধ্যে ও যে সাকার রূপের কথা আছে এই বিষয়ে আলোকপাত করবো।বলা হয়েছে, "ময়া ততমিদং সর্বং জগদব্যক্তমূর্তিনা।"সরলার্থ হলো, " সমস্ত জগতে আমি অব্যক্তরূপে পরিব্যাপ্ত আছি (৯|৪)।"

সারবত্তা হলো , মন- বুদ্ধি- ইন্দ্রিয়ের দ্বারা যে জ্ঞান হয়,তা হলো ভগবানের ব্যক্ত রূপ ।আর যা মন- বুদ্ধি ও ইন্দ্রিয়ের গোচর নয় অর্থাৎ মন ইত্যাদি যাকে জানতে পারে না, তাহলো ভগবানের অব্যক্ত রূপ ।

ভগবান উপরোক্ত শ্লোকে ' ময়া ' পদের দ্বারা ব্যক্ত( সাকার) স্বরূপ এবং ' অব্যক্তমূর্তিনা ' পদের দ্বারা অব্যক্ত ( নিরাকার) স্বরূপ সম্বন্ধে বলেছেন ।ময়া মানে আমা দ্বারা এবং অব্যক্তমূর্তিনা মানে অব্যক্ত মূর্তি তথা ইন্দ্রিয়ের অগোচর বুঝানো হয়েছে ।অব্যক্ত শব্দের সাথে মূর্তি শব্দটি সংযোজিত ।এর তাৎপর্য হলো, ভগবান ব্যক্ত ও অব্যক্ত উভয় রূপেই বিরাজিত।এভাবে এখানে ভগবানের ব্যক্ত- অব্যক্ত ( সাকার- নিরাকার) বলার গূঢ় তাৎপর্য হলো সমগ্র রূপের বর্ণনায় অর্থাৎ সগুণ- নির্গুণ, সাকার- নিরাকার ইত্যাদির প্রভেদ তো সম্প্রদায়গুলিতে হয় ,পরমাত্মা প্রকৃতপক্ষে এক ।সগুণ- নির্গুণ একই পরমাত্মার পৃথক্ পৃথক্ বিশেষ গুণ বা বিশেষণ ,ভিন্ন ভিন্ন নাম এবং সাকার- নিরাকার একই পরমাত্মার ভিন্ন ভিন্ন প্রকাশ ।

এমতাবস্থায়, সাকারবাদীরা যেমন নিরাকারবাদীর সমালোচনা করে না,নিরাকারবাদীর ও উচিত সাকার বাদীদের সমালোচনা না করা।তবে কারো খটকা লাগলে প্রশ্ন করা বা জানতে চাওয়া দোষেরকিছু নয়।তবে অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ঈশ্বরের সাকারত্ব ও নিরাকারত্ব নিয়ে বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলে ও সনাতনীদের কাছ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মন্তব্য পাওয়া যায় না।বরং অন্য ধর্মের দু একজন  ফেইসবুক বন্ধু জানা ও বুঝার মানসে আমার লিখা পড়ে প্রশ্ন করেন যা ভালো লাগে ।অনেক সময় লিখতে মন চায় না।কারণ অনেকেই মনে মনে ভাবেন করুণাময় চক্রবর্তীর চেয়ে তো আমাদের অনেক জ্ঞান আছে, তার লিখা পড়ে কি জানতে পারবো, বুঝতে পারবো।আমি তাদেরকে বিনয়ের সহিত বলি, আমার নিজের কোনো উচ্চতর ডিগ্রি নেই,জ্ঞান ও নেই । তবে আমার সংগ্রহ করার অদম্য ইচ্ছা অনেকের চেয়ে বেশি ।

যাহোক, ঈশ্বরের সাকারত্ব ও নিরাকারত্ব নিয়ে আমাদের সনাতন ধর্মের লোকদের মধ্যে মত পার্থক্য বিদ্যমান ।সুতরাং আলোচনার মাধ্যমে তা নিরসন করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। 

পিতৃ প্রেম

 পিতৃ প্রেম

"""""""""

-শ্রী পবিত্র কুমার চক্রবর্ত্তী

""""""""""""""""""""""""""

পিতা সম বন্ধু নাই

এই ভব মাঝে,

পিতা সম প্রিয় কেবা

পাশে রয় কাজে।


বিনা মূল্যে পিতা দেয়

গিরি সম টাকা,

যন্ত্র সম গৃহে মাঝে

ঘুরে যেন চাকা।


রাত দিন কষ্ট করে

পুত্র কন্যা লাগি,

নিজ দেহে জীর্ণ বস্ত্র

সর্ব সুখ ত্যাগী।


শত  ব্যাথা পেয়ে তবু

মুখে রেখে হাসি,

সর্ব কর্ম করে যায়

সবে ভাল বাসি।


পুত্র কন্যা শিখে যেন

বেশি লেখা পড়া,

ধন্য হবে ভব মাঝে

সব মাঝে সেরা।


কত স্বপ্ন থাকে তাঁর

দুটি আঁখি জুড়ে,

মন মাঝে গাঁথা আশা

আসে ঘুরে ঘুরে।


দেব সম সেই পিতা

থাকে গৃহ কোনে,

হৃদে রেখে প্রেম ভাব

পুত্র কন্যা সনে।


পিতা সনে পুত্র কন্যা

থেকে রাত্র দিনে,

দেব তুল্য জ্ঞান করে

চল তাঁর সনে।


পিতা সম গুরু নাই

এই বিশ্ব মাঝে,

কষ্ট কালে পাবে তুমি

ডাক দিলে কাজে।


এই মত পিতৃ প্রেম 

কেবা দিবে ভবে,

ভেবে দেখ এক‌ মনে

পুত্র কন্যা সবে?

ভগবানের সাকার রূপের প্রমাণ,

 ভগবানের সাকার রূপের প্রমাণঃ(১ম পর্ব)

আমরা সকলেই সাকার অর্থাৎ আমাদের রূপ রয়েছে ।আমাদের পিতারও রূপ ছিল, আমাদের পিতার পিতারও রূপ ছিল ।মানব জাতির পিতা মনুরও রূপ ছিল ।সকলের পিতা হলেন ঈশ্বর ।তাহলে তাঁর রূপ থাকবে না কেন? অবশ্যই তাঁর ও  রূপ আছে ।তাইতো তিনি সাকার । ঋগ্বেদে পরমেশ্বরের গুণবাচক শব্দ বিষ্ণুকে জগতের সকলের স্বামী তথা প্রভু ও পালনকর্তারূপে উল্লেখ করা হয়েছে ।বলা হয়েছে, "আমরা সকলের স্বামী, পালনকর্তা, শত্রুরহিত ও সেচন সমর্থ বিষ্ণুর পৌরুষের স্তুতি করি ।তিনি প্রশংসনীয় লোক রক্ষার ত্রিসংখ্যক পদবিক্ষেপের দ্বারা পার্থিব লোক সকল বিস্তীর্ণরূপে পরিক্রম করেছিলেন ( খগ্বেদ-১| ১৫৫|৪)।।" বিষ্ণুর অবয়ব বিষয়ে ঋগ্বেদে বর্ণনা করা হয়েছে ।বলা হয়েছে, " বিষ্ণু বৃহৎ শরীর বিশিষ্ট ও স্তুতি দ্বারা অপরিমেয়, তিনি নিত্য তরুণ ও অকুমার, তিনি আহবে গমন করেন ১|১৫৫|৬)।।"এখানে পরিষ্কার যে ঈশ্বর সাকার এবং তিনি এক।দেবতা বহু ।দেবতা হলেন ঈশ্বরের এক একটি শক্তি ।দেবতাদের নির্দিষ্ট আকার আছে যা মুনিঋষিগণ ধ্যানের মাধ্যমে পেয়েছেন ।ঈশ্বরের নির্দিষ্ট আকার নেই ।তাঁর রূপের তুলনা নেই ।তবে ঈশ্বরের অবতার ঈশ্বরের  এক একটি রূপ বলে তাঁদেরকে ভগবানরূপে উপাসনা করা হয়।

Saturday, December 5, 2020

ব্রাহ্মণদের ঐক্য গড়ে তোলা কি অসম্ভব!

 বাঙালী ব্রাহ্মণদের ঐক্য গড়ে তোলা কি সম্ভব নয়! ******************************************* 

 হ্যাঁ সম্ভব কেবলমাত্র আত্ম-সমালোচনার মাধ্যমে.

★আজকে প্রথম পর্ব★

আমরা বিগত কয়েক দশক ধরে ব্রাহ্মণ বর্ণসম্প্রদায়ের সিংহভাগ লোকই অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দিতে পারিতো নাই-ই বরং তার থেকেও বড় কথা হলো কোন ব্যক্তি বিশেষকে বা সমাজকে ছোট করতে আমরা খুব পছন্দ করি!!

অন্য ব্রাহ্মণ মানুষের চেয়ে বরং দুই কদম এগিয়েই থাকতে বরাবর ভালোবাসি, আর সেজন্যই আজ আমাদের ভেতর কোলাহল (বিবাদ)অন্য সব সম্প্রদায় থেকে অনেক বেশি।

 আমাদের সমাজে কোন ব্যক্তি যদি তাঁর নিজস্ব মতামত দিতে নাই পারে তবে সেই ক্ষেত্রে আমরা নিজেদের কি করে হিন্দুদের বর্ণশ্রেষ্ঠ মানুষ ভাবি???

নিজেদের মনের সংকীর্ণতা যদি দূর করে অন্যের মতামত এর প্রাধান্য নাই দিতে পারি তবে আমরা ঠিক কোন অর্থে শ্রেষ্ঠ মানুষ হই ????

একটা কথার প্রেক্ষিতে একশো কথা উঠবেই তবে সেটা অবশ্যই গঠনমূলক আলোচনা করে সমাধান করা উচিত।

শুধুমাত্র নিজের বাহবা বা পরিচিতি বাড়ানোর জন্য যেই জিনিস সম্পর্কে আমাদের কোন ধারণা নেই তা নিয়ে অহেতুক তর্ক করি, আজকাল আমরা সেই ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি ধাবিত হই।কেউ কিছু বললে সেটা বিচার বিবেচনা করে বা এতটুকু পড়াশোনা করে তারপর সেই ব্যাপারে সমালোচনা করুন, কেউ তো নিষেধ করে নি কিন্তু তারমানে এই নয় যে কেউ কিছু বলতেই পারবে না।কারো মতামত আপনার সাথে মিলতে নাই পারে তাতে কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে ????

আজকাল হ্যারিকেন দিয়ে খুঁজে সেই লোক পাওয়া যায় না, যে জানানোর জন্য আলোচনা করবে,যার থেকে আপনি কথা বলে বা আলোচনা করে কিছু শিখতে পারবেন।

বরং আপনি যদি কারো মতামত এর বিরুদ্ধে কথা বলেন,তবে আপনাকে হেয় প্রতিপন্ন করতে দুই সেকেন্ড সময় নিবে না।আমাদের ব্রাহ্মণ সমাজের মধ্যে এই সমস্যাটা অনেক পুরানো আমরা কেউ কাওকে সহ্য করতে পারি না আর তাই শত্রুভাব কাজ করে বেশি যার কারনেই আজকে আমাদের সংখ্যাটা  নিম্নমুখী!!!


নিজেকে জাহির করার প্রবণতা থাকা ভালো, তবে সেটা যেন মাত্রা অতিক্রম না করে সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত সবাইকে।

তবেই আমরা আমাদেরকে একত্রিত করতে পারবো।

আজ আমাদের কাছে বিবিধ সমস্যা...

সেগুলি সমাধানের নিমিত্ত আমরা খুব কমসংখ্যক মানুষ সাধ্যমত প্রচেষ্টা করছি।। 

আপনারাও সুযোগ সুবিধা মতো আমাদের প্রচেষ্টা সফল করতে এগিয়ে আসুন, মনে রাখবেন একটা সামান্য বীজ থেকে প্রকান্ড বৃক্ষ জন্ম নেয় তাই আপনাদের একটা ক্ষুদ্রতম প্রচেষ্টাও নিজের সমাজের মানুষের কাছে বড় কিছু পুনরুদ্ধারে সফল হবেই।

কয়েকটি বর্তমান সময়ের ব্রাহ্মণ সমাজের কঠিন সমস্যা তুলে ধরতে চেস্টা করছি, যেগুলির হয়তো আমি আপনি সকলেই সম্মুখীন হয়েছি।।


১. ব্রাহ্মণদের প্রধান জীবিকা শাস্ত্রানুযায়ী যাজনিককর্ম, অধ্যাবসায় ইত্যাদি, কিন্তু বর্তমান দিনে আমাদের নিজের সংস্কৃতির কর্ম কয়জন সম্পাদিত করেন যারা করেন তারাও মুস্টিমেয় কিছু মানুষ, যদিও এমনিতেই আজ আমরা আমাদের অসংগঠিত মনোভাবের জন্য দেশের জনজাতির মধ্যে সম্ভবত ৪℅ বা লুপ্তপ্রায় সম্প্রদায়ের মধ্যে পড়ে গেছি, এটা কেউ অস্বীকার করতে পারেন না। 


২.স্বাধীনতার পুর্ববর্তী সময়ে আমাদের বাংলায় বাঙালী ব্রাহ্মণরা সমাজে নানা কাজে নিজেদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অনুসরন করে নানা সমাজ সংস্কারক মুলক কর্ম সম্পাদিত করে গেছেন, তাদের নাম বর্তমানে আমরা ভুলে গেছি,তারা কি আজকের এই ছিন্নমুল ব্রাহ্মণ সমাজের জন্য সংগ্রাম করে গিয়েছিলেন,তারা বাংলার ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন তাদের ধর্ম ও কর্মনিষ্ঠ জীবনের অবদানে।

আর আজ আমরা তাদের উত্তরসুরীরা কি করছি, সামান্য নিজের স্বার্থে নিজেদের সংস্কৃতি ও পিতৃপরিচয় হেয় করছি, আমরা ব্রাহ্মণরা সর্বদা নিজেদের সমালোচনায় জর্জরিত, কে কত বড় পন্ডিত, কে কত ধনী,কে কত মন্দ,কে কত লোভী,কে কত পাপী এই নিয়ে আমাদের সমাজ চলছে, এতে তো পতন অবশ্যম্ভাবী।

৩. আমাদের সমাজে যে সকল ব্রাহ্মণ গন নিজ দক্ষতার ওপর সমাজে নানা কর্মে প্রতিষ্ঠিত, তারাও কেউ কোনদিন নিজ বর্নের অপেক্ষাকৃত অনগ্রসর মানুষদের কর্মে প্রতিষ্ঠিত করতে এগিয়ে আসে না, বাস্তবতা এটাই, যার জন্য ব্রাহ্মণ কুলে জন্মে যদি  নিজের সমাজের মানুষের জন্য সঙ্গতি থাকা স্বত্বেও সহায়তা করতে চেষ্টা করেন না, কেউ কেউ বলেন যে নিজের বর্ণের উপকার করার চাইতে একটা বিধর্মী বা সারমেয় প্রানীর উপকার করা ভালো কারন নিজের ঘরে সর্বদা বিভীষণ জন্মে 😢


৪.বিগত ও বর্তমান দিনে অনেক ব্রাহ্মণ গন দেশ পরিচালনার নানা কাজে নিযুক্ত রয়েছেন, তারাও কেউ কোনোদিন নিজ বর্নের মানুষের জন্য কোন বিশেষ শিক্ষা, কর্মসংস্থান, নিয়ে কোন প্রকার প্রচেষ্টা করেন নি, এগুলো কেউ অস্বীকার করতে পারেন না যার ফলশ্রুতিতে জেনেটিক ভাবেও ব্রাহ্মণ জাতি নিজের অস্তিত্বের চরম সংকটের মুহূর্তে।।। 


 

Friday, December 4, 2020

শূদ্রের অশৌচ বিধি নিয়ে কুমিল্লা মেঘনায় আলোচনার পর সিদ্ধান্ত,

  গীতার বক্তা সঞ্জয়,বিদুর প্রভৃতি অনেকেই শূদ্রবর্ণের শ্রদ্ধেও ব্যক্তিত্ব।আমরা তাদের শুদ্ধ সাত্ত্বিক সনাতন আদর্শের ধারক বাহক।জন্মগতভাবে যারা শূদ্র বর্ণ রয়েছেন তাদের মৃৃৃৃতাশৌচ কিংবা জননাশৌচে ত্রিশদিন অন্তে শুদ্ধ হতাম।এ ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের বংশ পরম্পরায় কখন কোন সন্দেহ বা দ্বিধা দেখা দেয়নি।আমরা সবাই মিলে মিশে তা পালন করতাম।সম্প্রতি আমাদের সমাজে অশৌচ নিয়ে নতুন মত প্রবেশ করে।নিজেদের মধ্যে কলহ দেখা দেয়।পাড়া পড়শিরা এ নিয়ে বিবাদে জড়ায়।এতে জনজীবনে অস্বস্তি নেমে আসে।নব্যপন্থীরা জবরদস্তি করে সর্ববর্ণের দশ দিন অশৌচ পালনে সবাইকে প্রলুব্ধ করতে থাকে।এই সংকট নিরসনে শ্রদ্ধেও চেয়ারম্যান সাহেবের আয়োজনে বিশাল সনাতন ধর্ম সভা অনুষ্ঠিত হয়।সেই অনুষ্ঠানে সর্ববর্ণের দশ দিন অশৌচের পক্ষে বাংলাদেশ হিন্দু সমাজ সংস্কার সমিতির শ্রদ্ধেয় বক্তাদের মধ্যে শ্রীমৎ বিমল চন্দ্র চক্রবর্তীসহ বেশ কয়েক জন বক্তা তাদের মতের স্বপক্ষে আলোচনা করেন ।আর চির প্রাচীণ সনাতন আদর্শের পক্ষে আলোচনা করেন কুড়িগ্রাম থেকে আগত দু'জন বৈদিক শাস্ত্রবেত্তা পণ্ডিত একজন শ্রী পঙ্কজ ভাদোর অপরজন যুক্তিবাগীশ শ্রী রায়ন চক্রবর্তী শুভ মহাশয়।আলোচনায়  এই সিদ্ধান্ত সর্বজন মান্য হয় যে শূদ্র বর্ণের অশৌচ ৩০ দিন।আমরা নিজেদের মধ্যে এ বিষয়ে বিবাদ কলহ নিস্পত্তির জন্য আলোচনা করে পূর্বপুরুষের পালিত এই বিধিবিধানে সম্মত হই।এ নিয়ে আমাদের মধ্য একটা অঙ্গিকার নামা স্বাক্ষরিত হয় ।সনাতন জনসাধারণের হিতার্থে সেটি প্রকাশ করা হলো।


আশা করি আমাদের স্বজাতির সকলেই তাদের পূর্বপুরুষের নিয়ম অনুসারে চলবেন।



যোগীর হৃদয়ে তিনি বাস করেন না। এই কথার তাৎপর্য কি?

 অহং ব্রহ্মাস্মি

নাহং তিষ্ঠামি বৈকুন্ঠে 

যোগীনাং হৃদয়ে ন চ ;

মদ্ভক্তো যত্র গায়ন্তি 

তত্র তিষ্ঠামি নারদঃ।। [ ভাগবত ]

শ্লোক বিশ্লেষণঃ 

নাহং= ন( না) + অহং ( আমি)  

তিষ্ঠামি = বাস করি ;

বৈকুণ্ঠে --- বৈকুণ্ঠ ধামে 

#নাহং তিষ্ঠামি বৈকুন্ঠ -- আমি বৈকুণ্ঠে থাকি না। 

যোগীনাং হৃদয় ন চ = যোগীদের হৃদয়েও না অর্থাৎ যে সকল যোগী রিপুজয়ী হতে পারেন নি, আমি নারায়ণ তাদের হৃদয়েও থাকি না ; কিন্তু যোগসাধনা করে যে সকল যোগী রিপু জয়ী হতে পেরেছেন আমি তাদের হৃদয়ে আবির্ভূত হই। 

যোগীদের হৃদয়ে যদি ভগবান আবির্ভূত না হতেন তবে তিনি গীতায় বলতেন না যে,  হে অর্জুন,  যোগী কর্মী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ; যোগী, জ্ঞানী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ; কাজেই হে অর্জুন,  তুমি হও। 

গীতায় যেহেতু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের মাধ্যমে বিশ্ববাসিকে যোগী হতে উপদেশ করেছেন সেহেতু তি নি প্রকৃত যোগীর হৃদয়ে অবশ্যই বাস করেন কিন্তু যোগীর খাতায় নাম লেখালাম কিন্তু ঠিক ঠিক যোগসাধনা করে রিপুজয়ী হলাম না -- এরূপ যোগীর হৃদয়ে তিনি বাস করেন না। 

মদ্ভক্তো = আমার ভক্ত ; ভগবানের ভক্ত কারা?  যারা ভগবানের আদেশ নিষেধ মানেন তারাই ভগবানের ভক্ত। গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের মাধ্যমে বিশ্ববাসীকে যোগী হতে উপদেশ করেছেন ; কাজেই ভগবানের কথা মেনে যারা যোগী হয়েছেন অর্থাৎ যোগদীক্ষা নিয়েছেন, তারাই ভগবানের ভক্ত। 

যত্র -- যেখানে 

গায়ন্তী -- গান করেন অর্থাৎ উপাসনা করেন ; 

তত্র তিষ্ঠামি -- সেখানে বাস করি 

নারদ -- হে নারদ 

#মদ্ভক্তো যত্র গায়ন্তি তত্র তিষ্ঠামি নারদ--- হে নারদ, আমার ভক্তগন অর্থাৎ যোগসাধকগন যেখানে বসে যোগসাধনা করেন, আমি নারায়ণ সেখানেই বাস করি। 


অনুবাদঃ আমি বৈকুণ্ঠে থাকি না ; রিপু জয়ী হন নি এমন যোগীর হৃদয়েও আমি বাস করি না ; কিন্ত যারা রিপুজয়ী হওয়ার জন্য সদা চেষ্টাশীল সেই সকল যোগী যেখানে বসে যোগসাধনা করেন,  হে নারদ,  আমি সেখানেই বাস করি।

Monday, November 9, 2020

Dipanita kali puja, দীপান্বিতা কালীপূজা সময় নির্ধারণ

  <দীপান্বিতা কালীপূজা>


তত্র নিত্যত্বং নৈমিত্তিকত্বং কাম্যত্বঞ্চ জ্ঞেয়ম্।

"দীপান্বিতা পার্ব্বণায় স্মৃতা কাল্যর্চ্চনায় চ। মহানিশি দ্বিতীয়ং স্যাৎ পূর্ব্বেদ্যুর্ব্বাপ্ত্যনাপ্তয়োঃ।।"


"নিশার্দ্ধে না তিথির্নাস্তি উর্দ্ধঞ্চেদ্ভুত সংযুক্তা। তত্রাপি পূজয়েৎ কালীং ভুতযোগং ন লঙ্ঘয়েৎ।।"


যদা তুলার্কে মলমাসপাতঃ, তদা চেৎ পূর্ব্বামাস্যা তুলার্কগতা সতী মহানিশা ব্যাপিনী স্যাৎ, তদা তত্রৈব শ্যামাপূজা কার্য্যা, অন্যথা মহানিশাব্যাপিন্যাং মলান্তর্গতামাবাস্যায়ামপি, ন তু শুদ্ধমাসানুরোধেন বৃশ্চিকার্কে।  দীপান্বিতাশ্যামাপূজায়াস্তুলার্ক এব সর্ব্বতন্ত্রবিহিততৃত্বাৎ "তুলার্কং নৈব লঙ্ঘয়ে," দিতি তুলার্কলঙ্ঘননিষেধাৎ "নৈমিত্তিকানি কাম্যানি" ইত্যাদিদক্ষ বচনাচ্চ।


দীপান্বিতা কালীপূজার নিত্যত্ব, নৈমিত্তিকত্ব ও কাম্যত্ব তিনই আছে।

"দীপান্বিতা অমাবস্যা কালীপূজার জন্য প্রসিদ্ধ। তাহার মধ্যে কালীপূজা, অমাবস্যা দুই দিনে মহানিশা পাইলেও পূর্ব্বদিনে করিবে,না পাইলেও পূর্ব্ব দিনে করিবে।"

মহানিশা চলিয়া গেলে পর অমাবস্যা হইলে, সেই চতুর্দশীযুক্ত অমাবস্যাতে কালীপূজা করিবে, চতুর্দশীযুক্ত অমাবস্যা পরিত্যাগ করিবে না।" 

   যখন সৌর কার্ত্তিকমাস মলমাস পড়িবে, তখন পূর্ব্ব অমাবস্যা সৌর কার্ত্তিকে পড়িয়া মহানিশা পাইলে তাহাতে শ্যামাপূজা করিবে। মলমাসের অন্তর্গত অমাবস্যা মহানিশা পাইলে তাহাতেই শ্যামাপূজা করিবে। কিন্তু সৌর অগ্রহায়ণ মাসে করিবে না। কারণ দীপান্বিতা শ্যামাপূজা সকল তন্ত্রদ্বারাই সৌর কার্ত্তিকমাসে বিহিত হইয়াছে। "দীপান্বিতা শ্যামাপূজার সৌর কার্ত্তিকমাস" ত্যাগ করিবেনা অর্থাৎ সৌর কার্ত্তিকমাসেই দীপান্বিতা শ্যামাপূজা করিবে এইরূপ উক্ত আছে এবং "নৈমিত্তিক অথ চ কাম্য এইরূপ কর্ম্ম অশুদ্ধ কালেও করা যায়" এইরূপ দক্ষের বচন আছে।

Saturday, November 7, 2020

একাদশী লিষ্ট ২০২০/২০২১

 একাদশী কী?  একাদশীতে উপবাস করে বিষ্ণূপূজা করলে সর্বপাপ মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোকে গতি হয় , একাদশীর প্রয়োজনীয়তা , সানাতন ধর্মে একাদশীর গুরুত্ব, একাদশীর মাহাত্ম্য আলোচন,   একাদশী মাহাত্ম্য: একাদশীর মাহাত্ম্য, একাদশী মাহাত্ম্য , একাদশী তালিকা 2020 ২০২১ , ২০২০ , ২০২২, ২০২৩ , 2021 2022, 2023 , একাদশী তালিকা ১৪২৭, পাপমোচনী একাদশী মাহাত্ম্য, নির্জলা একাদশী মাহাত্ম্য, Ekadashi Mahato , Ekadashi mahatmya pdf in bengali , ekadashi mahatmya in bengali pdf ekadasi mahatmya pdf ekadashi list 2020 ekadashi chart 2020


সনাতন ধর্মে জন্মান্তরবাদ, Transmigration in Hinduism

 সনাতন ধর্ম জন্মান্তরবাদে বিশ্বাসীঃ,Transmigration in Hinduism



সনাতন ধর্ম জন্মান্তরবাদে বিশ্বাস করে ।গীতায় বলা হয়েছে, " মানুষ জীর্ণ বস্ত্র ত্যাগ করে অন্য নতুন বস্ত্র গ্রহণ করে ।আত্মাও তেমনি জীর্ণ দেহ ত্যাগ করে অন্য নতুন দেহ গ্রহণ করেন(২|২২)।"

আরো বলা হয়েছে, " তাঁরা সেই বিপুল স্বর্গলোক ভোগ করেন ।ভোগের পর পূণ্য ক্ষয় হলে আবার মর্ত্যলোকে ফিরে আসেন ।এভাবে ত্রিবেদোক্ত ধর্মেরঅনুষ্ঠান করে ভোগকামী ব্যক্তিগণ সংসারে যাতায়াত করে( ৯|২১)।"

এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে পূণ্য বা ভালো কাজের ফলে মানুষ স্বর্গে গমন করে ।যখন পূণ্য ক্ষয় হয়ে যায়, তখন পৃথিবীর মতো কোনো গ্রহে জন্ম নিতে হয়।কর্মের ফল অনুসারে আবার পরবর্তী জন্ম নির্ধারিত হয়।এভাবে ভালো কাজের জন্য স্বর্গেএবং খারাপ কাজের জন্য নরকে গমন করতে হয়।ইহার নাম সংসারচক্র।

শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে, "জীবের উপাধিরূপ লিঙ্গ শরীর তো তার মোক্ষলাভ পর্যন্ত তার সাথে থাকে এবং সূক্ষ্ম পঞ্চভভূত, দশ ইন্দ্রিয় ও মনের কার্যরূপ এই স্থূল  শরীর হলো তার ভোগাধিষ্টান ।এই দুটি পরস্পর মিলিত হয়ে কার্য না করার নামই' মৃত্যু ' এবং এই দুইয়ের পরস্পর মিলিত হয়ে একসাথে প্রকাশ হওয়াকেই 'জন্ম ' বলা হয়(৩|৩১|৪৪)।"

এই শ্লোকে মৃত্যুর সংজ্ঞা বর্ণনা করা হয়েছে ।আত্মা পূর্বের কর্মানুসারে নতুন দেহ প্রাপ্ত হয়।ইহার নাম আত্মার জন্ম এবং যখন বিশেষ কর্মের ফল শেষ হয় আত্মা উক্ত শরীর ত্যাগ করে ইহার নাম মৃত্যু ।প্রকৃত প্রস্তাবে আত্মার কোনো মৃত্যু নেই, শুধু দেহের পরিবর্তন হয় মাত্র ।এই আত্মা সম্পর্কে যার এই জ্ঞান আছে তিনি আত্মার পরিবর্তনের জন্য শোক করেন না।

পবিত্র গীতায় আরো বলা হয়েছে, "যদি রজোগুণের বৃদ্ধিকালে মৃত্যু ঘটে ,তবে কর্মাসক্ত মনুষ্য- যোনিতে জন্ম হয়।আর যদি তমোগুণের বৃদ্ধিকালে মৃত্যু ঘটে তবে পশ্বাদি মূঢ় যোনিতে জন্মে( ১৪|১৫)।" 

এই শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে, রজগুণ সম্পন্ন মানুষ পরবর্তী জন্মে কর্মাসক্ত মানুষ হয় এবং তমগুণ সম্পন্ন মানুষ অর্থাৎ পশু স্বভাবের মানুষেরা মৃত্যুর পর পশু হয়।মানুষ জন্মের পরও কর্ম অনুসারে বিভিন্ন জন্ম হতে পারে ।শুধুমাত্র মানব জন্মের কর্মের বিচার হয়,অন্য কোনো জন্মের বিচার হয় না।যেমন কুকুরের কর্মের জন্য কোনো বিচার হবে না ।কুকুর জন্মটাই একটি শাস্তিস্বরূপ ।

শ্রীমদ্ভাগবতে আরো বলা হয়েছে, " সব নরক ভোগের পর এবং শূকর কুকুরাদি প্রজাপতিতে যত ক্লেশ আছে সেই সমস্ত ভোগ করে শুদ্ধ হবার পর সে আবার মনুষ্য প্রজাতিতে জন্মলাভ করে( ৩|৩০|৩৪)।" 

সুতরাং দেখা যায় যে, সনাতন ধর্মে জন্মান্তরবাদের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে ।তবে যারা  জন্মান্তরবাদ বিশ্বাস করেন না বা করতে চান না তাদেরকে  বুঝানোর জন্য পরবর্তী পোস্টে যথাসাধ্য চেষ্টা করবো । উল্লেখ্য, আমার বিগত পোস্টে পুত্রহীনদের স্বর্গ ও গতি না থাকার বিষয়ে গরুড় পুরাণ  থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছিলাম এবং এই বিষয়ে জানার অভিপ্রায় নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম ।কিন্তু সন্তোষজনক উত্তর পাইনি ।তবে আমার আজকের পোস্ট পুত্রহীন এবং সন্তানহীনদের মনের কষ্ট দূরীভূত হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস ।ভগবানের মুখনিঃসৃত বাণী গীতার আলোকে সুস্পষ্ট যে, মানুষের কর্ম অনুযায়ী ফললাভ  হয়।কোনো পুত্র সন্তান মা বাবার প্রার্থিত ফলদান করতে পারে না।তবে ভগবানের কাছে আবেদন করতে হবে ।আবেদন মঞ্জুর করা না করা ভগবানের ইচ্ছা ।আর শাস্ত্র  নির্দেশিত সকল সদাচার পালন করা কর্তব্য ।নমস্তে কর্মভ্য নমঃ ।ফলদাতা হলেন ভগবান স্বয়ং যার যার কর্মের উপর ভিত্তি করে।আমার লিখা ভালোভাবে পাঠ করে ভদ্রোচিত ভাষায় মন্তব্য ও গঠনমূলক সমালোচনা কাম্য ।আপনাদের মন্তব্য আমার লিখার উৎসাহ বাড়ায়।জানি," গেঁয়ো যোগী ভিখ পায় না।" তবুও আমার ব্লগ বন্ধুদের আন্তরিকতাও একাগ্রতা সহকারে আমার লিখা পাঠ করে  মূল্যায়ন কাম্য

Wednesday, October 28, 2020

ত্রিপুষ্কর যোগ কী, কেনই বা হয় ত্রিপুষ্কর যোগ হয়

 আজকে আমরা জানবো ত্রিপুষ্কর যোগ কী, কেনই বা হয় ত্রিপুষ্কর যোগ. উক্ত যোগে কোনো ব্যাক্তির মৃত্যু হলে 1ম পাদ. 2য় পাদ. ও 3য় পাদে শান্তির বিধান কী? ব্যাখ্যা: কোনো ব্যাক্তির মৃত্যু যদি শনিবার, বা মঙ্গলবারে,  দ্বিতীয়া, সপ্তমী তিথি, দ্বাদশী তিথি,এবং কীর্তিকা পুনর্বসু, উত্তর ফাল্গুনী, বিশাখা উত্তরাষাঢ়া ও পূর্ব ভাদ্রপদ নক্ষত্র যুক্ত হইলে ত্রিপুষ্কর যোগ হয়.  "1"-বার ও তিথিতে এক+এক পাদ করিয়া দুইপাদ,এবং নক্ষত্রের দুইপাদ ধরাহয়,  এই চারিপাদ যোগে চতুষ্পাদ পুষ্কর হয়!আবার ইহাদের মধ্যে ""2."""বারের এক পাদ+নক্ষত্রের দুই পাদ ইহার সম্মিলিত যোগে= ত্রিপাদ পুষ্কর হয়, বা 3."" তিথীর একপাদ+নক্ষত্রের দুই পাদ= ত্রিপাদ পুষ্কর হয়. 4.এছাড়াও বার ও তিথীর এক পাদ+এক পাদ=দুই পাদ+নক্ষত্রের দুই পাদ=চার পাদ পুষ্কর হয়!5.আবার শুধু বার দোষ লাগলে বা  নক্ষত্র দোষের যেকোনো একটি লাগলে=এক পাদ দোষহয়, 6.আবার বার ও তিথীর যে কোনো দুইটি যোগের সম্মিলিত দোষ লাগলে তাহাকে দ্বিপাদ দোষ বলা হয়. 7.আবার শুধু যদি নক্ষত্রের দোষ লাগলে দ্বিপাদ দোষ বলা হয়.এমতাবস্থায় বরাহ সংহিতোক্ত পুষ্করশান্তি প্রয়োগ অনুযায়ী গ্রহশান্তি ওপুষ্করশান্তি অবশ্যই কর্তব্য. ইহা পূর্ণচন্দ্র পঞ্জিকায় লিখিত বিধি গ্রহণ যোগ্য হইতে পারে.একপাদ দোষে ও দ্বিপাদ দোষে. ও ত্রিপাদ দোষে বা চতুষ্পাদ দোষে. সর্ব্বাগ্রে পুস্করাধিপতি দেবতাগণের যথা-- 1.যম.2ধর্ম্ম.3চিত্রগুপ্ত 4.পুষ্কর পুরুষের পূজা. এবং নবগ্রহ মন্ডল প্রস্তুতপূর্ব্বক তাহার উপর গ্রহরূপী জনার্দ্দন অর্থাৎ বিষ্ণুকে স্থাপন পূর্বক শোড়শ উপচারে পূজা অবশ্যই করা উচিত. এছাড়াও তদঙ্গিভুত. """"1""""একপাদ দোষের বিধান"""অষ্টোত্তর শতসংখক সচন্দন তুলসীপত্রদান. ও শ্রীবিষ্ণুর পূজা. 108 দুর্গানাম জপ. ও 108 মধুসূদননাম জপ. একটি মৃত্তিকা নির্মিত পার্থিবশিব পূজা. একবৃত্তি শ্রীবিষ্ণুর সহস্রনাম পাঠ. চন্ডীরপূজা ও একবৃত্তি দেবীমাহাত্ত্ব পাঠ.  গ্রহপূজা, স্তব, স্তোত্র, পাঠান্তে স্ব স্ব সমিধ দ্বারা প্রত্যেকের  হোম করণীয়.*এবার দ্বিপাদ দোষের শান্তির বিধি."""""""উপরিউক্ত দেবতাদের পূজার সহিত. অষ্টোত্তর  শতসংখক সচন্দন তুলসীপত্রদ্বারা শ্রীবিষ্ণুরপূজা, 1000 দূর্গানাম জপ ও 1000 মধুসূদন নামজপ, চারমূর্তি মৃত্তিকানির্ম্মিত পার্থিব শিবেরপূজা,চন্ডীর পূজা ও একরূপ দেবীমাহাত্ব পাঠ, যথাশক্তি কাঞ্চন দান, নবগ্রহের পূজা. ও স্তব স্তোত্র পাঠান্তে স্ব স্ব সমিধ দ্বারা মন্ত্রে হোমকরনীয়.*এবার ত্রিপাদ ও চতুষ্পাদ দোষের শান্তির বিধান বলি তেছি *উপরি উক্ত


 পুস্করাধিপতিদের পূজার সহিত, অষ্টোত্তর সহস্র সংখক সচন্দন তুলসীপত্র দ্বারা শ্রীবিষ্ণুর পূজা ও বিষ্ণু সহস্রনাম পাঠ, 10হাজার সংখক দূর্গানাম জপ ও 10 হাজার সংখক মধুসূদন নামজপ,দ্বাদশটি মৃত্তিকা নির্ম্মিত শিবলিঙ্গেরপূজা, চন্ডীরপূজার সহিত তিনরূপ দেবীমাহাত্ত্বপাঠ, চার আনা ওজনে কাঞ্চনদান,শ্রীবিষ্ণুর সহস্রনাম পাঠ, নবগ্রহপূজা, স্তব ও স্তোত্র পাঠ, শ্রী বিষ্ণুর 108 উড়ম্বর সমিধ দ্বারা বিশেষ হোম, ও শোড়শপচারে শ্রীবিষ্ণুর পূজা. ও প্রত্যেকের স্ব স্ব মন্ত্রের সহিত সমিধ দ্বারা হোম. বলিদান. রক্ষাকরণ. ইত্যাদি.***

Monday, October 19, 2020

উপনয়নের অধিকার অনধিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা

 


উপনয়ন ছাড়া শ্রৌত ও স্মার্ত কাজে অধিকার হয় নাঃউপনয়ন ছাড়া শ্রৌত ও স্মার্ত কোনো কাজে অধিকার হয় না।মনুসংহিতায় বলা হয়েছে, " বেদপ্রদানাদাচার্যং পিতরং পরিচক্ষতে ।ন  হ্যস্মিন্ যুজ্যতে কর্ম কিঞ্চিদামৌঞ্জিবন্ধনাৎ( ২|১৭১)।" সরলার্থ হলো, "উপনয়নের আগে শ্রৌত ও স্মার্ত কোনো কাজে অধিকার হয় না।আচার্য উপনয়ন দিয়ে এবং বেদ অধ্যয়ন করিয়ে উক্ত কাজে অধিকার করিয়ে দেন,তাই আচার্য মহান উপকারক বলে মনু প্রভৃতি এঁকে পিতা বলেছেন ।"নারীদের উপনয়ন সংস্কার না থাকায় শ্রৌত ও স্মার্ত কর্ম হতে বঞ্চিত করা হয়েছে ।এমনকি ব্রাহ্মণ সন্তানদের উপনয়ন না হওয়া পর্যন্ত শ্রৌত ও স্মার্ত কর্ম করার নিষেধ দেয়া হয়েছে ।কাজেই, যারা উপনয়ন সংস্কার ছাড়া শ্রৌত ও স্মার্ত কর্ম করছেন তারা শাস্ত্রীয় বিধানমতে করছেন না।হয়তো কেউ কেউ বলবেন, মনুস্মৃতি সত্য যুগের জন্য প্রযোজ্য ।আমি বলি, মনু হলেন মানব জাতির আদি পিতা ।তাই পিতার কথা আমাদের অবশ্যই মেনে চলা উচিত ।কারণ পিতার কথা কখনো বাসী হয় না।তাছাড়া শ্রুতির সাথে বিরোধ হলে স্মৃতি অবশ্যই অগ্রাহ্য ।আমার ব্যাখ্যা ধর্মশাস্ত্র তথা স্মৃতি শাস্ত্রের আলোকে, আমার কোনো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়।তবে কেউ শাস্ত্র না মেনে শ্রুতি ও  স্মৃতি অধ্যয়ন করলে  সেটা তাদের নিজস্ব দায়িত্ব ।

#অশৌচাবস্থায় নিত্য, কাম্য বা দান হোমাদি,পূজা করা শাস্ত্রে নিষেদ করা হয়েছে কি না আসুন দেখে নিই।

 অশৌচাবস্থায় নিত্য,  কাম্য বা দান হোমাদি,পূজা করা শাস্ত্রে নিষেদ করা হয়েছে।।


বর্তমানে বৈষ্ণব নাম দ্বারি নব্য কৃষ্ণ ভক্তগন গীতা ভাগবত পাঠে আলোচনার নামে ধর্মীয় আলোচনা করতে গিয়ে অশাস্ত্রীয় বিধি দিয়ে থাকেন, উনাদের বক্তব্য হলো :অশৌচ অবস্তায় নিত্যকর্ম্ম অনুসারে নিজ দেব গৃহে পূজা করা যাবে,কারন দেবতা কে অভূক্ত রাখা যাবে না।পুরোহিত গন যে ব্যাবস্থা দিয়ে থাকেন তা সম্পোন্য ভূল,তাই অশৌচ অবস্থায় ও দেবতার পূজা করে জাবে, নিজ ইষ্টদেবতা কে অভূক্ত রাখতে নাই,(এরখম কুযুক্তিদ্বারা শাস্ত্রনিষিদ্ধ কর্ম করাতে উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে নব্য কৃষ্ণভক্ত পাষণ্ডগন।)

আসুন দেখি শাস্ত্রে কি বলা আছে --

(১)প্রথম প্রমাণ-ভগবান বেদব্যাস বলিলেন-

দশাহং প্রাহুরাশৌচং সপিণ্ডেষু বিপশ্চিতঃ।

মৃতেষু বাপি জাতেষু ব্রাহ্মণানাং দ্বিজোত্তমাঃ।।

নিত্যানি চৈব কর্ম্মাণি কাম্যানি চ বিশেষতঃ।

ন কুর্য্যাদ্বিহিতং কিঞ্চিৎ স্বাধ্যায়ং মনসাপি চ।।


অনুবাদঃ ব্যাস বলিলেন-সপিণ্ড জননে বা সপিণ্ড-মরণে ব্রাহ্মণের দশাহাশৌচ মুনিগণ বলিয়াছেন।এই অশৌচ অবস্থায় নিত্য,কাম্য বা অন্য বিহিত কর্ম্ম কিছুই করিবে না এবং মনে ও বেদের আলোচনা করিবে না।

কূর্ম্ম-পুরাণ, উপরিভাগ২৩তম অধ্যায়১-২নং শ্লোক।


 (২)এই নিয়ম শুধু ব্রাহ্মণের জন্য নয়,চার বর্ণের পৃথক পৃথক অশৌচ অবস্থায় যজ্ঞ পুজা দেবগৃহ প্রবেশকরে নিত্য পুজা ও ভূগ নৈবদ্য প্রদান করা নিষেদ,

বেদব্যাস বলিলেন-

দশাহং ব্রাহ্মণস্তিষ্ঠেদ্দানহোমবিবর্জ্জিতঃ।

ক্ষত্রিয়ো দ্বাদশাহঞ্চ বৈশ্যো মাসার্দ্ধমেব চ।।

শূদ্রশ্চ মাসামাসীত নিজকর্ম্মবিবর্জ্জিতঃ।


অনুবাদঃ ভগবান ব্যাস বলিলেন-জন্ম ও মরণ উপলক্ষে ব্রাহ্মণ দশাহ,ক্ষত্রিয় দ্বাদশাহ,বৈশ্য মাসার্দ্ধ যাবৎ দান হোম বর্জ্জন পূর্ব্বক থাকিবে।শুদ্র এক মাস নিজ কর্তব্য বর্জ্জন করিবে।অর্থাৎ নিত্য নৈমিত্তিক কাম্য কর্ম্ম কর্ম্মাদি অনুষ্টান করিবে না।

ব্রহ্মপুরাণ২২১/১৪৭-১৪৮।।


(৩)ঐ একই কথা বলা হয়েছে মার্কেণ্ডপুরাণে

জননাশৌচেও মরণাশৌচে বিপ্রগণ দশদিন যাবৎ দান  হোমাদি  নিত্যকর্ম্ম -বর্জ্জিত হইয়া অবস্থিতি করিবেন এবং ক্ষত্রিয়গণ দ্বাদশদিন,বৈশ্যরা পঞ্চদশ দিন ও শুদ্রগণ একমাস যাবৎ দান ঐরূপ আচরণে থাকিবে।


ততঃ পরং নিজং কর্ম্ম কুর্য্যঃ সর্ব্বে যথেপ্সিতম।


তৎপরে সকলেই শাস্ত্রোক্ত বিধানে স্ব স্ব কর্ম্মের অনুষ্টান করিবে।

মার্কেণ্ডপুরাণ ৩৫/৪০-৪১

অশৌচ অন্তহলে তৎপরে স্ব স্ব কর্ম্মের অনুষ্টন  শাস্ত্রউক্ত ভাবে  সম্পোন্য করিবে।

শাস্ত্র বিধি মান্য করেই আমাদের কে চলতে হবে, কি কর্ম্ম কি অকর্ম্ম তা শাস্ত্র হতেই নির্নয় করতে হবে ইহা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আদেশ।

আর এই আদেশ কে মান্য করা আমাদের সকলের ই কর্তব্য।।

                          জয় শ্রীকৃষ্ণ।।

                   ((শ্রী সমীরণ ভট্টাচর্য্য))

Ekadoshi

লক্ষ্মীপুর চন্দ্রগঞ্জ থানা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন

  চন্দ্রগঞ্জ  প্রতিনিধি : বর্ণাঢ্য আয়োজনে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ থানা শাখার ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন...

চারবর্ণের অশৌচ ব্যবস্তা